মাসি পিসি গল্পের মূলভাব সহজ ভাষায়

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মাসি পিসি’ গল্পটিতে আহ্লাদি নামের এক তরুণীর জীবনের দুঃখের কাহিনী নিয়ে রচিত। আহ্লাদি, যিনি পিতৃমাতৃহীন ও নিঃস্ব, তার জীবন হয়ে ওঠে নির্মম অত্যাচারের শিকার। এই পোস্টে মাসি পিসি গল্পের মূলভাব সহজ ভাষায় – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম।

মাসি পিসি গল্পের মূলভাব

“মাসি-পিসি” গল্পটি আহ্লাদি নামের এক নির্যাতিত তরুণী ও তার মাসি ও পিসির সংগ্রামের কাহিনী, যারা নিজেরা দরিদ্র বিধবা হয়েও আহ্লাদিকে তার হিংস্র স্বামী জগুর হাত থেকে বাঁচাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আহ্লাদি মারধর ও অত্যাচার থেকে বাঁচতে মায়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে, আর মাসি-পিসি তাকে নিজেদের সন্তানের মতো আগলে রেখেছে, শহরে শাকসবজি বিক্রি করে তাদের সংসার চালায়। জগু আইনের হুমকি দেয় ও কৈলেশের মাধ্যমে বার্তা পাঠায় যে আহ্লাদিকে না দিলে মাসি-পিসিকে জেল হবেনা, কিন্তু তারা অত্যাচারের কথা মনে করে কোনমতেই মেয়েকে ফেরত দিতে রাজি হয় না। এক রাতে দারোগা ও চৌকিদার তাদের বাড়ি ঘেরাও করলে তারা সাহস করে বঁটি ও কাটারি হাতে বেরিয়ে আসে এবং পাড়ার লোকজনকে ডেকে সমবেত করে, ফলে সেদিন রক্ষা পায়। গল্পের শেষে তারা সারারাত জেগে কাঁথা জলে ভিজিয়ে ও অস্ত্র পাশে রেখে প্রস্তুতি নেয়, কারণ তারা জানে যে জগু বা গাঁয়ের দুর্বৃত্তরা আবারও হামলা করতে পারে। এই গল্পে দুটি সাধারণ নারী কীভাবে সমাজ ও আইনের হুমকির মুখেও একটি তরুণীর জীবন রক্ষার জন্য লড়াই করে, সেই অদম্য মানবিক সংহতি ও সাহসের ছবি ফুটে উঠেছে।

মাসি পিসি গল্পের মূল কথা বড় করে

গল্পটি শুরু হয় একটি খালের পাড়ে, ভাটার সময়। মাসি ও পিসি নামে দুজন প্রৌঢ়া বিধবা এবং তাদের ভাইঝি আহ্লাদি একটি সরু নৌকায় (সালতিতে) করে শহরের বাজার থেকে ফিরছে। আহ্লাদি তরুণী, সে তার স্বামী জগুর মারধর ও অত্যাচার থেকে বাঁচতে মায়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। মাসি (মায়ের বোন) ও পিসি (বাবার বোন) আহ্লাদিকে তাদের নিজের মেয়ের মতো লালন-পালন করছে এবং তাকে জগুর হাতে ফিরে দিতে রাজি নয়।

কাহিনী:

খালের পাড়ে খড় তুলছিল কৈলেশ ও অন্যান্য লোকজন। মাসি-পিসির নৌকা এলে কৈলেশ তাদের ডেকে জগুর হুমকির কথা জানায়। জগু বলেছে, সে এবার আইনের পথ নেবে, বৌকে জোর করে আটকে রাখার অপরাধে মাসি-পিসিকে জেল হবেনা। কৈলেশ পরামর্শ দেয়, আহ্লাদিকে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দিতে।

মাসি-পিসি একবাক্যে প্রত্যাখ্যান করে। তারা বলে, “মেয়া মোরা পাঠাব না।” তারা জগুর অত্যাচারের কাহিনী মনে করে: আহ্লাদি প্রায় মরতে মরতে বাপের বাড়ি ফিরেছিল। তারা জগুকে জানত খুনি স্বভাবের, লোভী। মাসি-পিসির কাছে আহ্লাদি শুধু ভাইঝি নয়, তাদের যুদ্ধ করে বাঁচানো একটি জীবন।

ফ্ল্যাশব্যাকের মাধ্যমে জানা যায়, মাসি-পিসি দরিদ্র বিধবা। দুর্ভিক্ষ ও মহামারির সময় আহ্লাদির বাবা-মা মারা যায়। তখন থেকেই তারা আহ্লাদিকে আগলে রেখেছে। নিজেদের রুটিরুজি তারা সংগ্রহ করে শহরে শাকসবজি বিক্রি করে। দুজনে একসাথে সালতি বেয়ে যাতায়াত করে। একসময় তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ থাকলেও আহ্লাদিকে রক্ষার সংকল্পে তারা একমনা হয়েছেন।

বাড়ি ফিরে রান্নার সময় কানাই চৌকিদার এসে খবর দেয়, দারোগাবাবু তাদের কাছারিতে ডাকেন। মাসি-পিসি বুঝতে পারে, এটা জগু বা গাঁয়ের দুর্বৃত্ত গোকুলের চক্রান্ত। তারা রাতেই আহ্লাদিকে জোর করে নিয়ে যাবার ফন্দি করছে।

মাসি-পিসি কাপড় ছেড়ে বঁটি ও বড় কাটারি (দা) হাতে নিয়ে বের হয়। তারা কানাই ও পেয়াদাদের বলতে থাকে, “এসো, বঁটির কোপে গলা ফাঁক করব।” তাদের সাহসী ভঙ্গি দেখে কানাই ও সঙ্গীরা পিছু হটে। এরপর মাসি-পিসি গলা ফাটিয়ে পাড়ার লোকজনকে ডাকে “ও বাবাঠাকুর! ও ঘোষ মশাই!”। পাড়ার লোকজন জড়ো হয়, ফলে সেদিন রক্ষা পায় তারা।

ঘটনার পর মাসি-পিসি নিশ্চিন্ত হতে পারে না। তারা সারা রাত জেগে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। কাঁথা-কম্বল জলে ভিজিয়ে রাখে, যাতে আগুন লাগলে তা নিভানো যায়। বঁটি-দা পাশে রেখে তারা জেগে বসে থাকে। আহ্লাদিকে রক্ষার জন্য মরণপণ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।

আরও পড়ুনঃ মাসি পিসি গল্পের MCQ | বহুনির্বাচনি প্রশ্ন উত্তর

Related Posts

Leave a Comment