জসীমউদ্দীনের ‘যাব আমি তোমার দেশে’ কবিতায় কবি একজন পল্লি-দুলালের দেশে যাওয়ার আকুল ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সরলতা, এবং গ্রামীণ জীবনের শান্তি বিরাজ করছে। এই পোস্টে যাব আমি তোমার দেশে কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা লিখে দিলাম।
যাব আমি তোমার দেশে কবিতার মূলভাব
জসীমউদ্দীনের ‘যাব আমি তোমার দেশে’ কবিতাটি একজন কবির পল্লিগ্রাম ও প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ। তিনি গ্রামের এক আদরের ছেলেকে ভাই বলে সম্বোধন করে বলেন, “আমি তোমার দেশে যেতে চাই।” সেই দেশে আছে গাছের মাথা ছুঁয়ে আকাশ, দিগন্তবিস্তৃত মাঠ আর বনের ভেতরে ডাহুকের ডাক। গ্রামের সরু বাঁকা পথ যেন কারও কপালের সিঁথির মতো, যা চলে গেছে ধান-লতার ভেতর দিয়ে। সেই পথ দিয়ে গ্রামের মেয়েরা হেঁটে যায়, হাতে থাকে কদমফুল। কবি সেই গ্রামে গিয়ে পাড়ার দস্যি ছেলেদের সঙ্গে খেলা করবেন, দীঘিতে সাঁতার কাটবেন এবং শাপলার ভেতর দিয়ে পা দুলিয়ে আনন্দ করবেন। পাখির সঙ্গে কথা বলবেন, অজানা ফুল দেখে মুগ্ধ হবেন। গাছের ডাল দুলিয়ে রঙিন ফুল তুলবেন মনভরে। গ্রামের ঘাটে মেয়েরা যখন কলস ভরবে, কবি সেখানে রেখে আসবেন গোপনে ফুলের মালা। কেউ দেখে ভাববে—কে যেন ভালোবেসে রেখে গেছে। তারপর সন্ধ্যা নামবে, ডাহুক ডাকবে, ঘুঘু বাসায় ফিরবে, চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে নীরব অন্ধকার। কবি ও তাঁর বন্ধু বসে থাকবেন দীঘির পাড়ে, প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করবেন। এই কবিতায় কবি শহরের কৃত্রিমতা থেকে দূরে গিয়ে প্রকৃতির স্নেহ, শান্তি ও সরলতা খুঁজে পান।
যাব আমি তোমার দেশে কবিতার ব্যাখ্যা
পল্লি-দুলাল, ভাই গো আমার যাব আমি-তোমার দেশে,
আকাশ যাহার বনের শীষে দিক-হারা মাঠ চরণ ঘেঁসে।
দূর দেশীয় মেঘ-কনেরা মাথায় লয়ে জলের ঝারি,
দাঁড়ায় যাহার কোলটি ঘেঁসে বিজলী-পেড়ে আঁচল নাড়ি।
কবিতার শুরুতে কবি পল্লি-দুলালকে সম্বোধন করে বলেন, “ভাই, আমি তোমার দেশে যাব।” এখানে ‘পল্লি-দুলাল’ হলো গ্রামের ছেলে, যাকে কবি খুব আদর করেন। ‘তোমার দেশ’ বলতে কবি গ্রামের পরিবেশ ও প্রকৃতিকে বুঝিয়েছেন, যেখানে শান্তি, আনন্দ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আছে।
পরবর্তী লাইনে কবি গ্রামের দৃশ্য বর্ণনা করছেন। বনের শীর্ষে আকাশ উঁচুতে, আর পায়ের কাছে বিস্তীর্ণ, দিক-হারা মাঠ। এই মাঠে হেঁটে গেলে পায়ের নিচ দিয়ে যেন প্রকৃতির স্পর্শ অনুভূত হয়।
তারপর কবি আকাশে ভেসে থাকা মেঘের কথা বলেন, যেগুলো থেকে বৃষ্টি ঝরে। বৃষ্টির ফোঁটা যেমন মাঠ, গাছ, এবং নদীর সঙ্গে মিশে যায়, তেমনি মানুষের মনকেও আনন্দে ভরিয়ে দেয়।
চতুর্থ লাইনে বলা হয়েছে, গাছের কোলের মতো শাখায় আলো নাচাচ্ছে, যেন প্রকৃতি কবির আনন্দে অংশ নিচ্ছে। সব মিলিয়ে, এই চার লাইনে কবি গ্রামের সৌন্দর্য, বৃষ্টির রোমাঞ্চ এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের মিলনের চিত্র ফুটিয়েছেন।
বেতস কেয়ার বনে যেথায় ডাহুক মেয়ে আসর মাতায়,
পল্লি-দুলাল ভাই গো আমার, যাব সেথায়।
তোমার দেশে যাব আমি, দীঘল বাঁকা পন্থখানি,
কবিতার এই অংশে কবি বর্ণনা করছেন গ্রামের বনের সৌন্দর্য। তিনি বলেন, “বেতসবনে যেখানে ডাহুক পাখি মায়া করে ডাক দেয়, আমি সেখানেই যাব।” এখানে বেতসবন হলো বেতবনের অঞ্চল, আর ডাহুক পাখির ডাক গ্রামের শান্তি, সুন্দর প্রকৃতি এবং প্রাণবন্ত পরিবেশের চিহ্ন।
এরপর কবি আবার পল্লি-দুলালকে সম্বোধন করে বলেন, “পল্লি-দুলাল ভাই, আমি তোমার দেশে যাব।” অর্থাৎ, তিনি শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্যই উপভোগ করতে চান না, সেই গ্রামের মজার, সরল জীবনের সঙ্গে মিলিত হতে চান।
পরবর্তী লাইনে তিনি গ্রামের পথ বর্ণনা করেছেন, “দীঘল, বাঁকা পথ,” যা ধানক্ষেতের মধ্যে দিয়ে গেছে। অর্থাৎ গ্রামের মাঠ আর ধানক্ষেতের মাঝে সরু, বাঁকা পথ ধরে তিনি পল্লি-দুলালের গ্রামে পৌঁছাবেন।
ধান কাউনের ক্ষেতের ভেতর সরু সুতোর আঁচড় টানি,
গিয়াছে সে হাবা মেয়ের এলো মাথার সিঁথির মতো
কোথাও সিঁধে কোথাও বাঁকা গরুর গায়ের রেখায় ক্ষত।
গাজন-তলির মাঠ পেরিয়ে শিমুলডাঙা বনের বায়ে;
এই অংশে কবি গ্রামের মাঠ আর ধানক্ষেতের দৃশ্য বর্ণনা করছেন। তিনি বলেন, ধানক্ষেতের মধ্যে দিয়ে সরু পথের মতো আঁচড় বা রেখা চলে গেছে। এটি এমন, যেন কোনো হাবা মেয়ের মাথার চুলের সিঁথির মতো সরু এবং কিছু অংশ বাঁকা। আবার কোথাও সেই রেখা গরুর গায়ের রেখার মতো ক্ষত খুঁজে পাওয়া যায়।
এরপর কবি বর্ণনা করেন, “গাজন-তলির মাঠ পেরিয়ে শিমুলডাঙা বনের বায়ে।” অর্থাৎ তিনি ধানক্ষেত পেরিয়ে গ্রামের অন্য দৃশ্যে পৌঁছাবেন, যেখানে গাজনের মাঠ শেষ হয়ে শিমুলের ডাঙা বা বন শুরু হয়।
কোথাও গাঁয়ের রোদ মাখিয়া ঘুম-ঘুমায়ে গাছের ছায়ে।
তাহার পরে মুঠি ছড়িয়ে দিয়ে কদম-কলি,
কোথাও মেলে বনে পাতা গ্রাম্য মেয়ে যায় যে চলি।
সে পথ দিয়ে যাব আমি পল্লি-দুলাল তোমার দেশে,
নাম-না জানা ফুলের সুবাস বাতাসেতে আসবে ভেসে।
প্রথম লাইনে, কোথাও গ্রামের রোদ মাখা ঝোপ বা ঘাসের মধ্যে কিছু শান্ত এবং অলস মুহূর্ত “ঘুম-ঘুমায়ে গাছের ছায়া।” অর্থাৎ দুপুরের রোদে গাছের ছায়ায় বিশ্রামরত প্রকৃতি যেন শান্তি ও শীতলতা এনে দেয়।
পরের লাইনে কবি বলেন, “মুঠি ছড়িয়ে দিয়ে কদম-কলি।” এর মানে, তিনি কদম ফুলের কুঁড়ি ছড়াচ্ছেন, যেন প্রকৃতিকে আরও সুন্দর ও আনন্দময় করে তুলছেন।
এরপর তিনি উল্লেখ করেন, “কোথাও মেলে বনে পাতা, গ্রাম্য মেয়ে যায় যে চলি।” অর্থাৎ গ্রামের মেয়েরা বন-পরিবেশে চলাফেরা করছে, যেন প্রকৃতির সঙ্গে তাদের মিলন হয়ে গেছে।
সবশেষে কবি বলেন, “সে পথ দিয়ে যাব আমি পল্লি-দুলাল তোমার দেশে, নাম-না জানা ফুলের সুবাস বাতাসে ভেসে।” অর্থাৎ, সেই সরু পথে হেঁটে তিনি পল্লি-দুলালের গ্রামে যাবেন, আর পথে ঘুরে ঘুরে অজানা ফুলের সুগন্ধ তাকে আনন্দ ও মুগ্ধতা দেবে।
তোমার সাথে যাব আমি, পাড়ার যত দস্যি ছেলে,
তাদের সাথে দল বাঁধিয়া হেথায় সেথায় ফিরব খেলে।
ধল-দীঘিতে সাঁতার কেটে আনব তুলে রক্ত-কমল,
শাপলা লতায় জড়িয়ে চরণ ঢেউ-এর সাথে খাব যে দোল।
এই অংশে কবি, ‘দস্যি ছেলে’ বলতে দুরন্ত, দুষ্টু ছেলেদের বোঝানো হয়েছে যারা গ্রামের খেলার অংশ।
পরের লাইনে কবি বলেন, “ধল-দীঘিতে সাঁতার কেটে আনব তুলে রক্ত-কমল।” অর্থাৎ গ্রামের বড় দীঘিতে সাঁতার কেটে ফুল তুলবেন, বিশেষ করে রঙিন রক্ত-কমল ফুল। এরপর কবি, “শাপলা লতায় জড়িয়ে চরণ ঢেউ-এর সাথে খাব যে দোল।” অর্থাৎ তাঁর পা যখন দীঘিতে ঢুকবে, শাপলার লতায় জড়িয়ে, পানির ঢেউয়ের সঙ্গে মিলিত হয়ে আনন্দে দুলবেন।
হিজল-ঝরা জলের ছিটায় গায়ের বরণ রঙিন হবে
খেলবে দীঘির ঝিলিমিল মোদের লীলা কালোৎসবে।
তোমার দেশে যাব আমি পল্লি-দুলাল ভাই গো সোনার,
সেথায় পথে ফেলতে চরণ লাগবে পরশ এই মাটি-মার।
প্রথম লাইনে বলা হয়েছে, “হিজল-ঝরা জলের ছিটায় গায়ের বরণ রঙিন হবে।” অর্থাৎ দীঘির জলে হিজল গাছের ঝরা পানি স্পর্শ করলে শরীরের রঙ, পোশাক কিংবা প্রকৃতির ছোঁয়ায় জীবনের আনন্দ যেন রঙিন হয়ে উঠবে।
পরের লাইনে কবি বলেন, “খেলবে দীঘির ঝিলিমিল মোদের লীলা কালোৎসবে।” অর্থাৎ দীঘির ঝিলমিল পানিতে কবি ও বন্ধুদের খেলা চলবে, যেন এটি এক আনন্দময়, রঙিন উৎসব ‘কালোৎসব’।
এরপর কবি আবার পল্লি-দুলালকে সম্বোধন করে বলেন, “তোমার দেশে যাব আমি, পল্লি-দুলাল ভাই গো সোনার।” অর্থাৎ, তিনি সেই গ্রামের দিকে যাত্রা করবেন, যেখানে প্রকৃতি, মানুষের সঙ্গে মিলন এবং আনন্দ অপেক্ষা করছে।
“সেথায় পথে ফেলতে চরণ লাগবে পরশ এই মাটি-মার।” অর্থাৎ গ্রামের পথে হেঁটে গেলে মাটির স্পর্শের অনুভূতি, প্রকৃতির ঘ্রাণ এবং সরলতার আনন্দ অনুভূত হবে। কবি গ্রামের মাটির সঙ্গে নিজের সংযোগ প্রকাশ করছেন।
ডাকব সেথা পাখির ডাকে, ভাব করিব পাখির সনে,
অজান ফুলের রূপ দেখিয়া মানবো তারে বিয়ের কনে।
চলতে পথে ময়না কাঁটায় উত্তরীয় জড়িয়ে যাবে,
ইটেল মাটির হোঁচট লেগে আঁচল হতে ফুল ছড়াবে।
এই অংশে প্রথম লাইনে তিনি বলেন, “ডাকব সেথা পাখির ডাকে, ভাব করিব পাখির সনে।” অর্থাৎ পথ চলতে চলতে তিনি পাখির ডাক শুনবেন, সেই পাখির সঙ্গে নিজের কথোপকথন ভাববেন, যেন প্রকৃতির সঙ্গী।
পরের লাইনে কবি বলেন, “অজান ফুলের রূপ দেখিয়া মানবো তারে বিয়ের কনে।” অর্থাৎ গ্রামের পথে অজানা কোনো ফুল দেখতে পেলে তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তাকে ‘বিয়ের কনে’র মতো শ্রদ্ধা ও আনন্দ জানাবেন।
এরপর কবি বর্ণনা করেন, “চলতে পথে ময়না কাঁটায় উত্তরীয় জড়িয়ে যাবে।” অর্থাৎ গ্রামের পথে হাঁটতে হাঁটতে ময়নার পাখি বা অন্য উদ্ভিদ স্পর্শ করলে তাঁর গায়ের কাপড়, ‘উত্তরীয় (চাদর)’, ফুল বা পাতার সঙ্গে জড়িয়ে যাবে।
“ইটেল মাটির হোঁচট লেগে আঁচল হতে ফুল ছড়াবে।” অর্থাৎ গ্রামের ইটেল মাটিতে হেঁটে গেলে পদক্ষেপের সঙ্গে আঁচল থেকে ফুল ঝরে পড়বে।
পল্লি-দুলাল, যাব আমি-যাব আমি তোমার দেশে,
তোমার কাঁধে হাত রাখিয়া ফিরবো মোরা উদাস বেশে।
বনের পাতার ফাঁকে ফাঁকে দেখব মোরা সাঁজ-বাগানে,
ফুল ফুটেছে হাজার রঙের মেঘ-তুলিকার নিখুঁত টানে।
এই অংশে প্রথম লাইনে তিনি পুনরায় বলেন, “পল্লি-দুলাল, যাব আমি-যাব আমি তোমার দেশে।” এখানে তিনি গভীর আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন গ্রামের জীবনের সঙ্গে মিলিত হওয়ার।
পরের লাইনে বলা হয়েছে, “তোমার কাঁধে হাত রাখিয়া ফিরবো মোরা উদাস বেশে।” অর্থাৎ কবি পল্লি-দুলালের সঙ্গে ঘুরবেন, হাত ধরে গ্রামের পথে চলবেন, উদাস হলেও আনন্দে ভরা মনে।
এরপর কবি বর্ণনা করেন, “বনের পাতার ফাঁকে ফাঁকে দেখব মোরা সাঁজ-বাগানে।” অর্থাৎ বনপথে হাঁটতে হাঁটতে তারা গ্রামের বাগানের দৃশ্য দেখবেন। সাঁজ-বাগানগুলো সুন্দরভাবে সাজানো, যা গ্রামের সৌন্দর্যের সঙ্গে মিলিত।
শেষ লাইনে বলা হয়েছে, “ফুল ফুটেছে হাজার রঙের মেঘ-তুলিকার নিখুঁত টানে।” অর্থাৎ বাগানের ফুলগুলো রঙ-বেরঙের, যেন মেঘের তুলি দিয়ে রঙ করা হয়েছে।
গাছের শাখা দুলিয়ে আমি পাড়ব সে ফুল মনের আশে,
উত্তরীয় ছড়িয়ে তুমি দাঁড়িয়ে থেকো বনের পাশে।
যে ঘাটেতে ভরবে কলস গাঁয়ের বিভোল পল্লিবালা,
সে ঘাটেরি এক ধারেতে আসবো রেখে ফুলের মালা।
এই অংশে প্রথম লাইনে তিনি বলেন, “গাছের শাখা দুলিয়ে আমি পাড়ব সে ফুল মনের আশে।” অর্থাৎ, তিনি গাছের শাখা দুলিয়ে ফুল তুলবেন, যেন নিজের আনন্দ ও ভালোবাসার ইচ্ছাকে প্রকাশ করছেন।
পরের লাইনে বলা হয়েছে, “উত্তরীয় ছড়িয়ে তুমি দাঁড়িয়ে থেকো বনের পাশে।” অর্থাৎ পল্লি-দুলাল বা তার সঙ্গী বনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকবে, আর কবি তার সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করবেন।
এরপর কবি বর্ণনা করেন, “যে ঘাটেতে ভরবে কলস গাঁয়ের বিভোল পল্লিবালা, সে ঘাটেরি এক ধারেতে আসবো রেখে ফুলের মালা।” অর্থাৎ গ্রামের সেই ঘাট, যেখানে পল্লিবালারা কলস ভরে পানি আনবে, সেখানে কবি ফুলের মালা রেখে দেবেন।
দীঘির জলে ঘট বুড়াতে পথে-পাওয়া মাল্যখানি,
কুড়িয়ে নিয়ে ভাববে ইহা রেখে গেছে কেই না জানি।
চেনে-না তার হাতের মালা হয়ত সে-বা পরবে গলে,
আমরা দু’জন থাকব বসে ঢেউ দোলা সেই দীঘির কোলে।
এই অংশে প্রথম লাইনে বলা হয়েছে, “দীঘির জলে ঘট বুড়াতে পথে-পাওয়া মাল্যখানি, কুড়িয়ে নিয়ে ভাববে ইহা রেখে গেছে কে, না জানি।” অর্থাৎ গ্রামের দীঘিতে বসে, পানির ধারে যেসব মালা বা ফুল আছে, তা কুড়িয়ে নিয়ে কবি ভাবছেন, এগুলো আগে কে রেখেছিল, তা হয়তো জানে না।
পরের লাইনে বলা হয়েছে, “চেনে-না তার হাতের মালা হয়ত সে-বা পরবে গলে।” অর্থাৎ যে মালা কুড়িয়ে আনা হয়েছে, হয়তো কেউ পরে নেবে, জানে না, কিন্তু তা কোনো সমস্যা নয়।
শেষ লাইনে কবি বলেন, “আমরা দু’জন থাকব বসে ঢেউ দোলা সেই দীঘির কোলে।” অর্থাৎ কবি এবং পল্লি-দুলাল দীঘির ধারে বসে, পানির ঢেউয়ের সঙ্গে মিলিত হয়ে আনন্দ উপভোগ করবেন।
চার পাশেতে বনের সারি এলিয়ে শাখার কুন্তল-ভার,
দীঘির জলে ঢেউ গণিবে ফুল শুঁকিবে পদ্ম-পাতার।
বনের মাঝে ডাকবে ডাহুক, ফিরবে ঘুঘু আপন বাসে,
এই অংশে প্রথম লাইনে বলা হয়েছে, “চার পাশেতে বনের সারি এলিয়ে শাখার কুন্তল-ভার।” অর্থাৎ চারপাশে বন আছে, যার শাখা এত ভারী যে যেন চুলের কুন্তলের মতো ঝুলে আছে।
পরের লাইনে বলা হয়েছে, “দীঘির জলে ঢেউ গণিবে, ফুল শুঁকিবে পদ্ম-পাতার।” অর্থাৎ দীঘির জলে ঢেউ উঠবে, আর পদ্মের পাতা ফুলের সৌন্দর্য এবং সুগন্ধ ছড়াবে।
এরপর কবি বলেন, “বনের মাঝে ডাকবে ডাহুক, ফিরবে ঘুঘু আপন বাসে।” অর্থাৎ বনের মধ্যে ডাহুক পাখি ডাকবে, ঘুঘু নিজের বাসায় ফিরে যাবে।
দিনের পিদীম ঢুলবে ঘুমে রাত জাগা কোন্ ফুলের বাসে।
চার ধারেতে বন জুড়িয়া রাতের আঁধার বাঁধবে বেড়া,
সেই কুহেলীর কালো কারায় দীঘির জলও পড়বে ঘেরা।
এই অংশে কবি দিনের শেষ এবং রাতের গ্রামীণ দৃশ্য বর্ণনা করেছেন। প্রথম লাইনে বলা হয়েছে, “দিনের পিদীম ঢুলবে ঘুমে রাত জাগা কোন্ ফুলের বাসে।” অর্থাৎ দিনের গরম ও ক্লান্তি শেষে মানুষ বা প্রকৃতি শান্তিতে ঘুমাবে, আর রাতের অন্ধকারে কিছু ফুল বা উদ্ভিদ তাজা ও জীবন্ত থাকবে।
পরের লাইনে বলা হয়েছে, “চার ধারেতে বন জুড়িয়া রাতের আঁধার বাঁধবে বেড়া।” অর্থাৎ চারপাশে বন বিস্তৃত, এবং রাতের আঁধার যেন সেই বনকে ঘিরে একটি প্রাকৃতিক বেড়া তৈরি করছে।
শেষ লাইনে বলা হয়েছে, “সেই কুহেলীর কালো কারায় দীঘির জলও পড়বে ঘেরা।” অর্থাৎ কুয়াশা ও রাতের মিলনে দীঘির জল যেন কালো আকাশের মতো চারপাশে ঘেরা হয়ে যায়।
আরও পড়ুনঃ আমার দেশ কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা – ৯ম ও ১০ম শ্রেণি
Related Posts
- একাত্তরের দিনগুলি গল্পের মূলভাব- নবম-দশম শ্রেণির বাংলা
- শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর – ৯ম ও ১০ম শ্রেণি
- স্মৃতিস্তম্ভ কবিতার মূলভাব, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি – ৯ম শ্রেণির বাংলা
- সেই দিন এই মাঠ কবিতার MCQ | বহুনির্বাচনি প্রশ্ন উত্তর
- তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা