মমতাদি গল্পের সারাংশ বা মূলভাব – নবম-দশম শ্রেণির বাংলা

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মমতাদি’ গল্প একটি সংগ্রামী নারীর জীবনযুদ্ধের প্রতিফলন। যে নারী নিজের এবং পরিবারের জন্য কঠিন সময়ে নিজের সবটুকু দিয়ে লড়াই করে। এই পোস্টে মমতাদি গল্পের সারাংশ বা মূলভাব – নবম-দশম শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম। বড় মূলভাবটি পড়লে ভালভাবে বুঝতে পারবেন।

মমতাদি গল্পের চরিত্রসমূহ

মমতা: প্রধান চরিত্র, একজন সংগ্রামী নারী, যার স্বামীর চাকরি নেই। পরিবারের দায়িত্ব নিতে বাধ্য হয়ে রান্নার কাজ শুরু করে।

ছোট ছেলে: গল্পের বর্ণনাকারী, মমতার প্রতি কৌতূহলী, স্নেহময় ছেলেটি।

মা: বর্ণনাকারীর মা, যিনি মমতাকে রান্নার কাজ দেন।

মমতার স্বামী: বেকার, মমতার স্বামীর চাকরি না থাকায় সংসারে অভাব নেমে এসেছে।

মমতার সন্তান: মমতার ছোট ছেলে, অসুস্থ, যাকে মমতা যত্ন করে।

মমতাদি গল্পের সারাংশ

মমতা, এক তরুণী, যার স্বামীর চাকরি নেই চার মাস ধরে। সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে সে নিজের সংসারের পর্দা ঠেলে উপার্জনের জন্য বাইরে আসে। তার প্রথম চাকরি হিসেবে সে এক পরিবারের রান্নার কাজ নেয়। মাইনে হিসেবে পনেরো টাকা ঠিক হয়, যা তার প্রত্যাশার থেকে বেশি। কৃতজ্ঞতায় তার চোখে জল এলেও সে তা নীরবে প্রকাশ করে। পরদিন থেকে মমতা কাজে যোগ দেয়। সে চুপচাপ, কাজের প্রতি নিবেদিত, এবং কোনো বাড়তি কথা বলে না। ছোট ছেলে, গল্পের বর্ণনাকারী, মমতাকে ভালোবাসতে চায়, কিন্তু মমতা তাকে উপেক্ষা করে। মমতার চোখেমুখে স্নেহ ঝরে, কিন্তু তার ব্যবহার রূঢ়। সময়ের সাথে মমতা তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে। একদিন, ছোট ছেলে জানতে পারে যে মমতার গালে আঙুলের দাগ রয়েছে। সে সন্দেহ করে যে কেউ তাকে চড় মেরেছে, কিন্তু মমতা তা অস্বীকার করে। মমতার সংগ্রাম বোঝা যায় যখন তার স্বামীর চাকরি হয়, কিন্তু সে কাজ ছাড়তে চায় না। কারণ, স্বামীর সামান্য চাকরিতে সংসারের অভাব মিটবে না। গল্পের শেষে, ছোট ছেলে মমতার বাড়ি যায় এবং তার পরিবারের কষ্ট ও সংকট দেখে। মমতার প্রতি তার মমতা ও ভালোবাসা আরও গভীর হয়। মমতা, যিনি নিজের পরিবারের জন্য লড়াই করছে, তার সংগ্রাম ও ভালোবাসার কাহিনি ছেলেটির মনে গভীর প্রভাব ফেলে।

মমতাদি মূলভাব বড় করে

একদিন সকালে ছোট্ট এক ছেলে তার মায়ের পাশে বসে পড়ছিল। মা ফুলকপি কেটে রান্নার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ গেটের দিকে তাকিয়ে মা দেখলেন, এক মহিলা ধীরে ধীরে তাদের বাড়ির দিকে আসছেন। মহিলার মুখে ক্লান্তির ছাপ, কিন্তু চোখে ছিল এক ধরনের দৃঢ়তা। শাড়ি পরা মহিলাটি এসে বিনীত কণ্ঠে বললেন, “আপনাদের কি রান্নার জন্য কাউকে দরকার?”

মা একটু অবাক হলেন। তারপর বললেন, “তুমি রান্না জানো?”

মহিলা মাথা নিচু করে উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ, আমি রাঁধুনি। যেকোনো কাজ করবো।” তার কথায় যেন একটা লাজুক, কিন্তু তীব্র তাগিদ ছিল।

মা কিছুক্ষণ ভাবলেন, তারপর বললেন, “ঠিক আছে, তুমি কাল সকাল থেকে আসবে।”

মহিলার মুখে তখন এক ধরনের স্বস্তি ফুটে উঠল। ধীরে ধীরে গেটের দিকে হাঁটতে শুরু করলেন। ছেলেটি তাকে থামিয়ে বলল, “তুমি রান্নাঘরটা দেখে যাওনি। আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।” মহিলা হালকা হাসি দিয়ে বললেন, “না, না। কাল দেখবো।”

পরদিন সকালে মমতা নামে সেই মহিলা এসে কাজ শুরু করল। প্রথম দিন থেকেই সে সব কাজ নিখুঁতভাবে করছিল, যেন এই বাড়িতে কাজ করতে সে অভ্যস্ত। কিন্তু ছেলেটি লক্ষ্য করল, মমতা খুব কম কথা বলে, প্রায় চুপচাপ থাকে। ছেলে মাঝে মাঝে তাকে নানা প্রশ্ন করত, কিন্তু মমতা বেশি কিছু বলত না, শুধু তার কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকত।

একদিন ছেলেটি দেখল, মমতার গালে কয়েকটা লাল দাগ। সে উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞাসা করল, “তোমার গালে দাগ কেন?”

মমতা হেসে বলল, “মশা মারতে গিয়ে নিজেই মেরেছি।”

ছেলেটি তার কথা বিশ্বাস করল না। তার মনে হলো, মমতার জীবনে হয়তো কোনো গভীর কষ্ট আছে, যেটা সে লুকিয়ে রেখেছে। তবে ছেলেটি আর কিছু জিজ্ঞাসা করল না।

কিছুদিন পরে, একদিন মমতা হঠাৎ ছেলেটির কাছে এসে বলল, “তুমি কি লেবু খাবে?” ছেলেটি অবাক হলেও খুশি হলো। সেই সময় থেকেই তাদের মধ্যে একধরনের বন্ধুত্ব তৈরি হলো। মমতা ধীরে ধীরে ছেলেটির সঙ্গে মিশতে শুরু করল, মাঝে মাঝে তাকে গল্প শোনাতো, তার ছোটখাটো প্রশ্নের উত্তর দিত।

একদিন মমতা জানাল, তার স্বামীর চাকরি হয়েছে। ছেলেটি খুব খুশি হয়ে মাকে জানালো। মা শুনে মমতাকে বললেন, “তাহলে তো তুমি এখন কাজ ছেড়ে দিতে পারো।”

মমতার মুখ শুকিয়ে গেল। সে কাঁপা গলায় বলল, “আমার স্বামীর চাকরির বেতন খুব কম। তাতে সংসার চলবে না। আমি কাজ করতে চাই।”

মা মমতাকে আশ্বস্ত করে বললেন, “ঠিক আছে, তুমি যদি কাজ করতে চাও, তবে কাজ চালিয়ে যাও।”

সেই দিন মমতা নীরবে কেঁদেছিল, কিন্তু তার কষ্টের কথা কাউকে বলেনি। ছেলেটি বুঝতে পারল, মমতার জীবনে হয়তো অনেক বড় কোনো কষ্ট বা দুঃখ আছে, যা সে কাউকে জানাতে চায় না।

গল্পের শেষে, ছোট ছেলে মমতার বাড়ি যায় এবং তার পরিবারের কষ্ট ও সংকট দেখে। মমতার প্রতি তার মমতা ও ভালোবাসা আরও গভীর হয়। মমতা, যিনি নিজের পরিবারের জন্য লড়াই করছে, তার সংগ্রাম ও ভালোবাসার কাহিনি ছেলেটির মনে গভীর প্রভাব ফেলে।

Related Posts

Leave a Comment