আলাওলের ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতায় কাব্যিক দক্ষতায় ষড়ঋতুর (বসন্ত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত) চিত্রকল্পময় বর্ণনা দিয়েছেন। কেবল প্রকৃতির রূপই নয়, মানুষের মন ও আবেগের উপর এর প্রভাবকেও স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। এই পোস্টে ঋতু বর্ণন কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর লিখে দিলাম।
Table of Contents
ঋতু বর্ণন কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
| সৃজনশীল প্রশ্নঃ ১। [বোর্ড বইয়ের প্রশ্ন] আজ জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে বসন্তের এই মাতাল সমীরণে। ক. মল্লার কী? খ. ‘রৌদ্র ত্রাসে রহে ছায়া চরণে সরণ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতার বসন্ত ঋতুর সাদৃশ্য আছে- ব্যাখ্যা করো। ঘ. “উদ্দীপকটি ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতার সমগ্র ভাব ধারণ করেনি।”- উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ করো। |
উত্তরঃ
ক. মল্লার হলো সংগীতের একটি রাগ; রাত্রির দ্বিতীয় প্রহরে গাওয়া হয়।
খ. ‘রৌদ্র ত্রাসে রহে ছায়া চরণে সরণে’ বলতে গ্রীষ্মকালে সূর্যের তীব্র তাপে মানুষের ছায়া পায়ের নিচে চলে যাওয়ার কথাই বোঝানো হয়েছে।
‘ঋতু বর্ণন’ কবিতায় কবি আলাওল গ্রীষ্মকালের প্রচণ্ড গরমের চিত্র তুলে ধরেছেন। এ সময় সূর্যের তাপ খুব বেশি থাকে। গ্রীষ্ম এলে প্রকৃতির চারপাশ তীব্র গরমে জ্বলে ওঠে। মনে হয় সূর্য তার সমস্ত রাগ নিয়ে আকাশে উঠেছে। এই প্রবল রোদে মানুষের দৈনন্দিন জীবন অসহ্য হয়ে যায়। সূর্যের আলো ঠিক মাথার উপর পড়ে। তাই দুপুরবেলা মানুষের ছায়াও যেন সোজা পায়ের নিচে নেমে আসে। এই অবস্থাটিকেই বোঝানোর জন্য প্রশ্নোক্ত কথাটি বলা হয়েছে।
গ. উদ্দীপকে বসন্ত ঋতুর সৌন্দর্যের কথা বলা হয়েছে, যা ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতায় বসন্তের বর্ণনার সঙ্গে মিল আছে।
‘ঋতু বর্ণন’ কবিতায় বসন্তের অপূর্ব রূপ তুলে ধরা হয়েছে। এই সময়ে চারদিক নানা ফুলে ভরে যায়। দখিনা বাতাস যেন প্রেমের বার্তা নিয়ে আসে। গাছপালায় নতুন পাতা গজায়, চারদিকে ফুলের ছড়াছড়ি দেখা যায়। এতে বনজুড়ে সৌন্দর্য উপভোগের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে।
উদ্দীপকেও বসন্তের সুন্দর রূপের কথা বলা হয়েছে। জোছনার রাতে মানুষ বনে বনে গিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করেছে। বসন্তের মৃদু ও মাতাল হাওয়া সবাইকে সৌন্দর্য দেখার আহ্বান জানায়। বসন্তের এই মনোমুগ্ধকর রূপ ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতাতেও আমরা লক্ষ্য করি।
সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের সঙ্গে ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতায় বর্ণিত বসন্ত ঋতুর স্পষ্ট সাদৃশ্য রয়েছে।
উত্তরের সারকথা: উদ্দীপকে বসন্ত ঋতুর কথা বলা হয়েছে। ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতাতেও বসন্তের সৌন্দর্যের বর্ণনা আছে। এ কারণে উদ্দীপক ও কবিতার মধ্যে সাদৃশ্য স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
ঘ. ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতায় বাংলার ছয়টি ঋতুর সুন্দর রূপ তুলে ধরা হলেও উদ্দীপকে শুধু বসন্ত ঋতুর কথা বলা হয়েছে। তাই উদ্দীপকটি কবিতার সম্পূর্ণ ভাব প্রকাশ করতে পারেনি।
‘ঋতু বর্ণন’ কবিতায় কবি বাংলার ষড়ঋতুর নানা রূপ ও মানুষের মনের সঙ্গে তার সম্পর্ক দেখিয়েছেন। বসন্তে নতুন পাতা ও ফুল ফোটে, গ্রীষ্মে সূর্যের প্রচণ্ড তাপ থাকে, বর্ষায় অবিরাম বৃষ্টি নামে, শরতে আকাশ পরিষ্কার থাকে, হেমন্তে তাম্বুলের মতো লালচে রং দেখা যায় এবং শীতে দীর্ঘ রাত নামে। এই সব পরিবর্তন কবি খুব সুন্দরভাবে কবিতায় তুলে ধরেছেন। প্রকৃতির এই পরিবর্তন মানুষের মনেও প্রভাব ফেলে। যেমন প্রকৃতি বদলায়, তেমনি মানুষের মনও একেক ঋতুতে একেক রকম হয়ে ওঠে।
উদ্দীপকে বসন্তের মধুর হাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এই সময় জোছনার রাতে মানুষ বনে গিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করে। কারণ বসন্তে বন ফুলে ফুলে ভরে ওঠে। এই সৌন্দর্য দেখার আনন্দ সবাই পেতে চায়। বসন্তের এই সুন্দর রূপ দেখানোর জন্যই উদ্দীপকটি লেখা হয়েছে। ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতাতেও বসন্ত ঋতুর প্রায় একই ধরনের বর্ণনা পাওয়া যায়।
উদ্দীপকে শুধু বসন্ত ঋতুর সৌন্দর্যের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতায় বসন্তের পাশাপাশি বাংলার সব ঋতুর রূপ তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত সব ঋতুর সৌন্দর্য বর্ণিত হয়েছে। সেই সঙ্গে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে মানুষের মনের সম্পর্কও দেখানো হয়েছে। কিন্তু উদ্দীপকে বসন্ত ছাড়া অন্য কোনো ঋতুর কথা নেই। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতার সম্পূর্ণ ভাব প্রকাশ করতে পারেনি।
| সৃজনশীল প্রশ্নঃ ২। তানজিম একটি ডিজিটাল কোম্পানিতে কাজ করে। সারাদিন কংক্রিটের জঙ্গলে কাটে তার সময়। একদিন অফিসের ছাদের গার্ডেনে বসে সে লক্ষ করল, একটি কোকিল ডাকছে এবং গম্বুজের ফাঁকে ফুল ফুটেছে একটি লতা। মুহূর্তেই তার মনে পড়ে যায় ছেলেবেলার গ্রামের কথা। যেখানে বসন্ত মানেই আম্রমুকুলের গন্ধ, কোকিলের কুহু ধ্বনি আর মলয়া বাতাস। শহরের এই খণ্ডিত বসন্তও তার হৃদয়ে এক অদ্ভুত প্রশান্তি এনে দেয়। ক. ‘মল্লার রাগ’ কী? খ. “মলয়া সমীর হৈলা কামের পদাতি” – কবি এ কথার মাধ্যমে কী বুঝিয়েছেন? গ. উদ্দীপকের তানজিমের অনুভূতিতে ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতার কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো। ঘ. “প্রকৃতির সান্নিধ্য মানুষের মনকে সর্বদা সজীব রাখে” – উদ্দীপক ও ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতার আলোকে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো। |
| সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৩। গ্রামীণ জীবনের ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। আগে বর্ষায় নৌকাবাইচ, শরতে নবান্ন, বসন্তে বসন্তোৎসব হতো। এখন ক্যালেন্ডারে শুধু তারিখ, প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্ক সংকীর্ণ। রহিম সাহেব বলেন, “ঋতু শুধু আবহাওয়ার পরিবর্তন নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি ও জীবনযাপনের ছন্দ।” ক. ‘গুলাল’ শব্দের অর্থ কী? খ. “নিদাঘ সমএ অতি প্রচণ্ড তপন” – কবি কেন এ কথা বলেছেন? গ. উদ্দীপকের রহিম সাহেবের বক্তব্যের সাথে ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতার সাদৃশ্য কোথায়? ব্যাখ্যা করো। ঘ. “ঋতুবৈচিত্র্যই বাংলার লোকজীবন ও সংস্কৃতির প্রাণ” – উদ্দীপক ও কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ করো। |
| সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৪। জাহিদের স্কুলে ‘প্রকৃতির ডায়েরি’ নামে একটি প্রকল্প দিয়েছে শিক্ষক। তাকে বসন্ত, গ্রীষ্ম ও বর্ষা। এই তিন ঋতুর পরিবর্তন লক্ষ করে রিপোর্ট লিখতে হবে। সে দেখল, বসন্তে ফুল ফুটে, পাখি ডাকে; গ্রীষ্মে গরমে মানুষ ছায়া খোঁজে; বর্ষায় মেঘ ডাকে, প্রকৃতি স্নাত হয়। সে তার ডায়েরিতে লিখল, “প্রকৃতি এক জীবন্ত কবিতা।” ক. ‘বনস্পতি’ কী ধরনের গাছ? খ. “কুসুমিত কিংশুক সঘন বন লাল” – চিত্রটি ব্যাখ্যা করো। গ. জাহিদের ডায়েরির পর্যবেক্ষণ ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতার কোন দিকটিকে সমর্থন করে? ব্যাখ্যা করো। ঘ. “প্রকৃতির পর্যবেক্ষণ মানবমনের কাব্যিক বিকাশে সহায়ক” – উদ্দীপক ও ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতার আলোকে মতামত দাও। |
| সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৫। “এই যে মেঘ ডাকছে, মনে হয় না আকাশ যেন গান গাইছে?” – শিশু সায়েম বলল মায়ের কাছে। মা বললেন, “তাই তো, পুরনো দিনের কবিরা বলতেন, বর্ষার মেঘডম্বরু যেন কৈলাসে মল্লার রাগ।” সায়েম অবাক হয়ে ভাবল, প্রকৃতিকে কি এভাবেও দেখা যায়! ক. ‘কৈলাস’ কোথায় অবস্থিত? খ. “ভ্রমরের বাঙ্কার কোকিল কলরব” – কবি কেন এই শব্দগুলোর উল্লেখ করেছেন? গ. উদ্দীপকের মায়ের ব্যাখ্যার সাথে ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতার কোন পংক্তির মিল আছে? ব্যাখ্যা করো। ঘ. “প্রকৃতিকে কাব্যিক দৃষ্টিতে দেখা মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য” – উদ্দীপক ও কবিতার আলোকে যুক্তি দাও। |
| সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৬। ফারিয়া তার গল্পে লিখেছে, “শীতের সকালে শিশিরভেজা ঘাসে পা ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। রোদ চুপিচুপি এসে গায়ে লাগত। মনে হত, প্রকৃতি যেন আমাকে চন্দন মাখিয়ে দিচ্ছে।” তার শিক্ষক বললেন, “তোমার বর্ণনায় আলাওলের কবিতার ঘ্রাণ পাচ্ছি।” ক. ‘চন্দন চর্চিত’ বলতে কী বোঝায়? খ. “সতত দম্পতি সঙ্গে ব্যাপিত মদন” – পংক্তিটি ব্যাখ্যা করো। গ. ফারিয়ার গল্পের বর্ণনা ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতার কোন ঋতুর সাথে সম্পর্কিত? যুক্তি দাও। ঘ. “মানুষের অনুভূতিতে প্রকৃতির রূপায়ণ সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে” – উদ্দীপক ও ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ করো। |
নিচে ঋতু বর্ণন কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর পিডিএফ ফাইল দেওয়া হল।
ঋতু বর্ণন কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর পিডিএফ
আরও পড়ুনঃ ঋতু বর্ণন কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা লাইন বাই লাইন
Related Posts
- কুহেলী উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী ব্যাখ্যা – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- গন্তব্য কাবুল জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
- সোনার তরী কবিতার MCQ | বহুনির্বাচনি প্রশ্ন উত্তর
- ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন -একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন জ্ঞানমূলক ও অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর