‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ সৈয়দ মুজতবা আলীর এক অসাধারণ বর্ণনা। তিনি তাঁর লেখায় মিশরের মরুভূমি, কায়রোর রাত্রিকালীন সৌন্দর্য এবং প্রাচীন পিরামিডের রহস্যময়তা খুবই জীবন্তভাবে চিত্রিত করেছেন। এই পোস্টে নীলনদ আর পিরামিডের দেশ অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর লিখে দিলাম।
নীলনদ আর পিরামিডের দেশ অনুধাবন প্রশ্ন
১। লেখক কেন সুয়েজ বন্দরে পৌঁছলেন?
উত্তর: লেখক সুয়েজ বন্দরে পৌঁছেছিলেন মিশর ভ্রমনের জন্য। সন্ধ্যের দিকে জাহাজ সেখানে পৌঁছায়, এবং সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখতে দেখতে মরুভূমির দিকে রওনা দেন। এখানে তিনি ভূমধ্যসাগরের ঠান্ডা বাতাস অনুভব করেন এবং সেখানকার বিশেষ দৃশ্যের বর্ণনা দেন।
২। সূর্যাস্তের সময় আকাশের রঙ কেমন ছিল?
উত্তর: লেখক সূর্যাস্তের সময় আকাশের রঙের পরিবর্তন নিয়ে বিস্মিত হন। তিনি বলেন, সূর্যের লাল আর নীল আলো মিশে আকাশ বেগুনি হয়ে উঠছিল, যা তাঁর কাছে একটি অদ্ভুত এবং সুন্দর দৃশ্য মনে হচ্ছিল।
৩। মরুভূমির মধ্যে লেখকের কী ধরনের অনুভূতি ছিল?
উত্তর: লেখক মরুভূমির মধ্যে এক অদ্ভুত, ভূতুড়ে অনুভূতির কথা বলেছেন। তিনি জানান, মরুভূমিতে চন্দ্রালোকের মধ্যে সব কিছু যেন ঝাপসা এবং আবছা হয়ে ওঠে, যা এক রহস্যময় পরিবেশ তৈরি করে।
৪। মরুভূমিতে লেখকের ভয় কী ছিল?
উত্তর: লেখক মরুভূমিতে ভয় পেয়েছিলেন যে যদি মোটর ভেঙে যায় এবং কাল সন্ধ্যের মধ্যে কোনো সাহায্য না আসে, তাহলে তাদের কী হবে? মরুভূমিতে তৃষ্ণা এবং বিপদের নানা কাহিনি তিনি ছোটবেলায় শুনেছিলেন, যা তার মনে ভীতি সৃষ্টি করেছিল।
৫। কায়রোর শহরের পরিবেশ কেমন ছিল?
উত্তর: কায়রোর শহরতলিতে রাত এগারটায় অনেক রেস্তোঁরা এবং ক্যাফে ছিল, যেখানে সবাই খেতে বসেছিল। লেখক বলেন, এখানে রান্নার খুশবাইয়ে রাস্তা ম-ম করছে এবং খিদে মেটানোর জন্য সবাই তাড়াতাড়ি রেস্তোঁরায় ঢুকছিল।
৬। কায়রোর রান্না কেমন ছিল?
উত্তর: কায়রোর রান্না ভারতীয় মোগলাই রান্নার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এখানে মুরগি মুসল্লম, শিক কাবাব, শামি কাবাব ও অন্যান্য ভোজনের একাধিক রকমের আইটেম ছিল, যা লেখকের কাছে নতুন এবং মুখরোচক মনে হয়েছিল।
৭। কায়রো শহরের সৌন্দর্যের বর্ণনা দাও?
উত্তর: লেখক কায়রোর সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, শহরের বিভিন্ন রেস্তোঁরা, সিনেমা হল এবং ক্যাবারে কিউবু এবং নানা জাতির মানুষের উপস্থিতি দেখে শহরের জীবন পূর্ণতায় উদ্দীপ্ত ছিল। কিন্তু এসবের মধ্যেও লেখক বিশেষ করে মসজিদের মিনারের সৌন্দর্য নিয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন।
৮। কায়রোর রাতের পরিবেশ কেমন ছিল?
উত্তর: কায়রোর রাতের পরিবেশ ছিল অনেক প্রাণবন্ত এবং চঞ্চল। লেখক বলেন, রাস্তায় নানা জাতি ও সম্প্রদায়ের লোকেরা হাঁটছিল, এবং এখানকার বায়স্কোপও খোলামেলা ছিল। সেই সঙ্গে, কায়রো শহরটা যেন পুরো রাতটাই জীবন্ত ছিল।
৯। নীল নদের জল কী কাজে ব্যবহার হয়?
উত্তর: নাইল নদীর জল মিশরের চাষাবাদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লেখক বলেন, এই নদীর জল মিশরের চারপাশে চাষের ফসল পৌঁছানোর জন্য ব্যবহৃত হয়, যা মিশরের অর্থনৈতিক জীবনের একটি মূল অংশ।
১০। পিরামিড সম্পর্কে লেখকের অভিজ্ঞতা কী ছিল?
উত্তর: লেখক পিরামিডের সামনে দাঁড়িয়ে তার বিশালতা দেখে অবাক হয়েছিলেন। তিনি বলেন, পিরামিডের উচ্চতা এত বড় যে, কাছ থেকে দেখতে তা বোঝা যায় না। তিনি এর নির্মাণ ইতিহাস এবং ফারাওদের বিশ্বাস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
১১। সুয়েজ বন্দরের সূর্যাস্তের দৃশ্যের বর্ণনা দাও
উত্তর: লেখক সুয়েজ বন্দরে সূর্যাস্তের দৃশ্য বর্ণনা করেছেন, যেখানে সূর্যের লাল আলো মিশে আকাশে বেগুনি রঙ ধারণ করছিল। এই দৃশ্য তার কাছে ছিল অদ্ভুত এবং মনোমুগ্ধকর, যেখানে আকাশের রং ক্রমশ বদলাচ্ছিল।
১২। লেখক উটের চোখকে ভূতের চোখ মনে করেছিলেন কেন?
উত্তর: লেখক প্রথমে উটের চোখকে ভূতের চোখ মনে করেছিলেন, কারণ তারা সবুজ রঙের ছিল এবং তার মনে হয়েছিল এটি কোনও ভূতের উপস্থিতি। পরে তিনি বুঝতে পারলেন যে, এটা আসলে উটের চোখ, যেগুলোর ওপর হেডলাইট পড়েছিল।
১৩। কায়রোর মানুষদের মধ্যে কী ধরনের বৈচিত্র্য ছিল?
উত্তর: লেখক কায়রোর নানা মানুষের বৈচিত্র্য লক্ষ্য করেছিলেন, যেমন সুদানি, নিগ্রো, এবং মিশরের স্থানীয় মানুষের মধ্যে শারীরিক ও সাংস্কৃতিক পার্থক্য ছিল। বিশেষভাবে, সুদানি লোকদের দীর্ঘ আলখাল্লা পরা এবং নিগ্রোদের কালো চামড়া লেখকের চোখে খুব সুন্দর মনে হয়েছিল।
১৪। মিশরের রান্না এবং ভারতীয় রান্নার তুলনা কর।
উত্তর: লেখক মিশরের রান্না ভারতের মোগলাই রান্নার মতো তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, এখানে মুরগি মুসল্লম, শিক কাবাব, শামি কাবাবসহ অনেক ধরনের ভোজনের আইটেম পাওয়া যায়, যা ভারতীয় রান্নার থেকে খুবই মিল থাকে।
১৫। পিরামিডের গঠন সম্পর্কে লেখকের ধারণা কী ছিল?
উত্তর: লেখক পিরামিডের গঠন নিয়ে বিস্মিত হন এবং বলেন, পিরামিডের উচ্চতা দেখে তা ঠিক কতো উঁচু বোঝা যায় না। তিনি আরও জানান, পিরামিড তৈরিতে প্রচুর পাথর ব্যবহৃত হয়েছিল এবং এর নির্মাণে বহু মানুষের পরিশ্রম লেগেছিল।
১৬। পিরামিডের ইতিহাস সম্পর্কে লেখ।
উত্তর: লেখক পিরামিডের ইতিহাস নিয়ে বলেন, ফারাওরা বিশ্বাস করতেন তাদের দেহ যদি মৃত্যুর পর পচে যায়, তাহলে তারা পরলোকে অনন্ত জীবন পাবেন না। তাই তাদের মমি বানিয়ে পিরামিডের ভিতরে রাখা হত, যাতে কেউ তার দেহের ক্ষতি করতে না পারে।