স দিয়ে সাহাবীদের নাম অর্থসহ ও তাদের পরিচয়

সাহাবীরা নবীর সঙ্গী, অনুসারী ও সহযোগী ছিলেন এবং ইসলামের মূল বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এই পোস্টে স দিয়ে সাহাবীদের নাম অর্থসহ ও তাদের পরিচয় দিলাম।

স দিয়ে সাহাবীদের নাম অর্থসহ

নিচে স দিয়ে সাহাবীদের নাম দেওয়া হলো:

ক্রমসাহাবীর নামমূল নামনামের অর্থ
সাঈদ ইবনে আমির আল জুমাহিসাঈদসৌভাগ্যবান
সাইদ ইবনুল আসসাইদসৌভাগ্যবান
সাঈদ ইবনে যায়িদসাঈদসৌভাগ্যবান
সাওবান ইবনে নাজদাহসাওবানকাজী, সমাধানকারী
সাদ ইবনে উবাদাসাদসৌভাগ্যবান
সাদ ইবনে খাইসামাসাদসৌভাগ্যবান
সাদ ইবনে মুয়াজসাদসৌভাগ্যবান
সাদ ইবনে যায়িদ আশহালিসাদসৌভাগ্যবান
সাদ ইবনে রাবিসাদসৌভাগ্যবান
১০সাদ ইবনে হাবতাসাদসৌভাগ্যবান
১১সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাসসাদসৌভাগ্যবান
১২সাফওয়ান ইবনে উমাইয়াসাফওয়ানস্পষ্ট, পরিচ্ছন্ন
১৩সাফিয়া বিনতে আবদুল মুত্তালিবসাফিয়াবিশুদ্ধ, বিশুদ্ধ মহিলা
১৪সাফিয়া বিনতে রাবিয়াসাফিয়াবিশুদ্ধ
১৫সাবিত ইবনে ওয়াকশসাবিতস্থিতিশীল
১৬সাবিত ইবনে কায়েসসাবিতস্থিতিশীল
১৭সাবিত ইবনে দাহ্‌দাহসাবিতস্থিতিশীল
১৮সামুরা ইবনে জুন্দুরসামুরাসাহায্যকারী
১৯সালমা ইবনে সালামাসালমাশান্তি
২০সালমান আল ফারিসীসালমানশান্তি
২১সালমান ইবনে রাবিয়াসালমানশান্তি
২২সালামা আবু হাশিমসালামাশান্তি
২৩সালামা ইবনে হিশামসালামাশান্তি
২৪সালামা ইবনুল আকওয়াসালামাশান্তি
২৫সালিম মাওলা আবু হুজাইফাসালিমনিরাপদ, নিরাপত্তা
২৬সাহল ইবনে সাদসাহলসহজ, নম্র
২৭সাহল ইবনে হান্‌যালিয়াসাহলসহজ, নম্র
২৮সাহল ইবনে হানিফসাহলসহজ, নম্র
২৯সায়িব ইবনে খাল্লাদসায়িবমুক্ত, স্বাধীন
৩০সুরাকা ইবনে মালিকসুরাকাযত্নশীল
৩১সুহাইব ইবনে সিনান আর রুমিসুহাইবস্বাধীন
৩২সুহাইল ইবনে আমরসুহাইলসহজ, নম্র
৩৩সুওয়াইবা আল-আসলামিয়াহসুওয়াইবাহোক আশ্রয়
৩৪সুমামা ইবনে উসালসুমামানিরস্ত্র
৩৫সুলায়মান ইবনে সুরাদসুলায়মানশান্তি
৩৬সাওদা বিনতে জামআসাওদাস্বচ্ছ, পরিষ্কার

স দিয়ে সাহাবীদের নাম অর্থসহ পরিচয়

১। সাঈদ ইবনে আমির আল জুমাহি

সাঈদ ইবনে আমির আল জুমাহি ছিলেন মহানবী মুহাম্মদের একজন গুরুত্বপূর্ণ সাহাবি। তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন খায়বার বিজয়ের পূর্বে এবং মদিনায় হিজরত করেন। মহানবীর সাথে থেকে খাইবারসহ সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। উমর ইবন খাত্তাবের খিলাফতে তিনি হিমশের শাসক হিসেবে নিযুক্ত হন এবং সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেন, অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ না করে দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করেন। ২০ হিজরিতে (৬৪২ খ্রি) তিনি মারা যান। তাঁর জীবন ও আদর্শ আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।

২। সাঈদ ইবনে যায়িদ (রা)

সাঈদ ইবনে যায়িদ (রা) ছিলেন আশারায়ে মুবাশশারাহ’র অন্যতম সাহাবী এবং মহানবী মুহাম্মদের নিকটতম বন্ধু। তিনি ইসলামের প্রথম পর্যায়ে ইসলাম গ্রহণকারী সাহাবীদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর কারণে কুরাইশ নেতা উমার (রা) ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি প্রথম পর্যায়ের মুজাহিদ এবং বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করেও গানীমাত লাভ করেছিলেন। ইয়ারমুক যুদ্ধে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে আনেন। রাসূল (সা) তাকে জীবদ্দশায় জান্নাতী বলে শুভ সংবাদ দেন। সাঈদ ছিলেন একজন শাসক, সাহসী যোদ্ধা এবং গভীর জ্ঞানের অধিকারী।

৩। সাওবান ইবনে নাজদাহ

সাওবান ইবনে নাজদাহ (রা) ছিলেন মুহাম্মদ (সা)-এর বিশেষ খাদেম এবং একজন জ্ঞানী সাহাবী। তিনি ইয়ামানের হিময়ার গোত্রের সন্তান এবং রাসুলের সেবায় জীবন কাটিয়েছেন। রাসুল (সা) তাকে দাস হিসেবে কিনে মুক্ত করেন এবং পরে তিনি রাসুলের পরিবারের সদস্যের মতো জীবন যাপন শুরু করেন।

সাওবান রাসুলের সাথে থেকে বহু জ্ঞান অর্জন করেন এবং হাদিসের প্রচার ও প্রসারে সক্রিয় ছিলেন। তিনি ১৭২টি হাদিস বর্ণনা করেছেন, যার মধ্যে তার ছাত্রদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন সা’দান ইবন তালহা ও আব্দুর রহমান ইবন গানাম। রাসুলের মৃত্যুর পর তিনি ‘রামলা’ চলে যান এবং পরে ‘হিমসে’ বসতি স্থাপন করেন। সেখানে ৫৪ হিজরীতে তিনি ইনতিকাল করেন।

৪। সাফিয়াহ বিনতে আবদুল মুত্তালিব (রা)

সাফিয়াহ বিনতে আবদুল মুত্তালিব (রা) ছিলেন মুহাম্মদ (সা.) ও আলী ইবনে আবি তালিব (রা.) এর ফুপু এবং যুবাইর ইবনুল আওয়ামের মা। তিনি আরবের শ্রেষ্ঠ কবি ছিলেন এবং তার অনেক কবিতা ইতিহাসে পরিচিত। তিনি ইসলাম গ্রহণকারী মুহাম্মদ (সা.) এর ফুফুদের মধ্যে একমাত্র। ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে স্বামী আওয়ামের সঙ্গে মদিনায় হিজরত করেন। সাফিয়াহ খন্দক যুদ্ধে সাহসিকতার সাথে একটি ইহুদীকে হত্যা করেন, যা তাকে প্রথম নারী হিসেবে একজন পুরুষ শত্রুকে হত্যার সম্মান দেয়। উহুদের যুদ্ধে মুসলিম সৈন্যদের একত্রিত করতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

৫। সুরাকা ইবনে মালিক

সুরাকা ইবনে মালিক ছিলেন নবী মুহাম্মদ (সা.) এর একজন সাহাবী এবং কুরাইশ গোত্রের সদস্য। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তিনি নবী ও আবু বকরকে মক্কা থেকে মদিনার দিকে হিজরতের সময় পিছু নেন।

মক্কা থেকে মদিনা যাওয়ার পথে তিনি সাওর পর্বতের কাছে নবীকে ধরার চেষ্টা করেন। আবু জাহেল ১০০০ মাদী উট পুরস্কারের ঘোষণা দেন। যখন সুরাকা তাদের কাছে পৌঁছান, তখন তার ঘোড়া হঠাৎ পড়ে যায়, যা তিনি মুহাম্মদের অলৌকিক নিরাপত্তার নিদর্শন মনে করেন। সুরাকা নবীর কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন। মুহাম্মদ তাকে প্রতিশ্রুতি দেন যে একদিন সুরাকা রাজা খসরুর স্বর্ণের বালা পরিধান করবেন।

মুহাম্মদের মৃত্যুর পর সুরাকা হতাশ হন, কারণ তিনি খসরুর বালার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ না হওয়ার আশঙ্কা করতেন। তবে ওমরের খিলাফতকালে পারস্য বিজয়ের পর সুরাকাকে ডেকে এনে এই বালা পরানো হয়, যা নবীর প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন। এই মুহূর্তে তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন এবং আল্লাহর প্রতি গভীর ভক্তি অনুভব করেন।

Related Posts