সোনার তরী কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর

‘সোনার তরী’ কবিতায় নদীর ধারে দাঁড়িয়ে থাকা কৃষক প্রতীকী অর্থে সাধারণ মানুষ ও শিল্পস্রষ্টাকে বোঝায়। তার ‘সোনার ধান’ কেবল ফসল নয়, বরং সারাজীবনের শ্রম, স্বপ্ন ও সৃষ্টির প্রতীক। এই পোস্টে সোনার তরী কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর লিখে দিলাম।

সোনার তরী কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন

১। ‘সোনার তরী’ কবিতার রচয়িতা কে?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

২। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কি বলা হয়?
উত্তর: তাঁকে বিশ্বকবি বলা হয়।

৩। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: তিনি ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই মে জন্মগ্রহণ করেন।

৪। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: তিনি ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।

৫। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যসাধনার যুগ কোন নামে পরিচিত?
উত্তর: তাঁর সাহিত্যসাধনার যুগ ‘রবীন্দ্রযুগ’ নামে পরিচিত।

৬। রবীন্দ্রনাথ কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা?
উত্তর: তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা।

৭। রবীন্দ্রনাথ কত বছর বয়সে প্রথম কাব্য প্রকাশ করেন?
উত্তর: তিনি মাত্র পনেরো বছর বয়সে প্রথম কাব্য প্রকাশ করেন।

৮। রবীন্দ্রনাথের প্রথম কাব্যের নাম কী?
উত্তর: তাঁর প্রথম কাব্যের নাম ‘বনফুল’।

৯।‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের ইংরেজি নাম কি?
উত্তর: গীতাঞ্জলি কাব্যের ইংরেজি নাম ‘Song Offerings’ ।

১০। রবীন্দ্রনাথ কোন পুরস্কারে ভূষিত হন?
উত্তর: তিনি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।

১১। রবীন্দ্রনাথ কবে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন?
উত্তর: তিনি ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

১২। ‘মানসী’ কী ধরনের গ্রন্থ?
উত্তর: ‘মানসী’ একটি কাব্যগ্রন্থ।

১৩। ‘সোনার তরী’ কী ধরনের রচনা?
উত্তর: ‘সোনার তরী’ একটি কাব্যগ্রন্থ।

১৪। ‘শেষ লেখা’ কী?
উত্তর: ‘শেষ লেখা’ রবীন্দ্রনাথের একটি কাব্যগ্রন্থ।

১৫। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর: তিনি ১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।

১৬। ‘গরজে মেঘ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: মেঘের গর্জন বা বজ্রধ্বনি বোঝানো হয়েছে।

১৭। কবিতায় কৃষক কোথায় বসে আছে?
উত্তর: নদীর কূলে একা বসে আছে।

১৮। ‘রাশি রাশি ভারা ভারা’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: প্রচুর ধান জমা হওয়া বোঝায়।

১৯। বর্ষা আসার সময় কৃষক কী করছিল?
উত্তর: ধান কাটছিল।

২০। কবিতায় ধানখেতটি কেমন?
উত্তর: একখানি ছোটো খেত।

২১। ধানখেতটি কিসের মতো মনে হয়?
উত্তর: জলের মাঝে একটি দ্বীপের মতো।

২২। পরপারে কৃষক কী দেখতে পায়?
উত্তর: মেঘে ঢাকা গ্রাম।

২৩। গ্রামখানি কখন দেখা যায়?
উত্তর: প্রভাতবেলায়।

২৪। নদীতে কে আসে?
উত্তর: গান গাইতে গাইতে এক মাঝি আসে।

২৫। মাঝি কী নিয়ে আসে?
উত্তর: পাল তোলা একটি তরী।

২৬। মাঝিকে দেখে কৃষকের কী মনে হয়?
উত্তর: তাকে চেনা মনে হয়।

২৭। কৃষক মাঝিকে কী বলে ডাক দেয়?
উত্তর: ‘ওগো’ বলে ডাক দেয়।

২৮। মাঝিকে কৃষক কী অনুরোধ করে?
উত্তর: নৌকা কূলে ভিড়াতে অনুরোধ করে।

২৯। ‘কোন বিদেশে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: অজানা বা চিরন্তন গন্তব্য।

৩০। বক্তা মাঝিকে কী নিয়ে যেতে বলে?
উত্তর: তার সোনার ধান।

৩১। ‘আমার সোনার ধান’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: কৃষকের শ্রেষ্ঠ ফসল।

৩২। প্রতীকী অর্থে ‘সোনার ধান’ কী?
উত্তর: কবির সৃষ্টিকর্ম।

৩৩। নৌকাটি কিসে ভরে গেছে?
উত্তর: সোনার ধানে ভরে গেছে।

৩৪। শেষে কৃষক কোথায় পড়ে থাকে?
উত্তর: শূন্য নদীর তীরে।

৩৫। ‘গরজ’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: গরজ অর্থ গর্জন করা।

৩৬। ‘ভারা’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘ভারা’ অর্থ ধান রাখার পাত্র।

৩৭। ‘ক্ষুরধারা’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ক্ষুরের মতো ধারালো প্রবাহ বা স্রোত।

৩৮। ‘খরপরশা’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ধারালো বর্শা।

৩৯। কবিতায় ‘আমি’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: সাধারণ অর্থে কৃষককে বোঝানো হয়েছে।

৪০। প্রতীকী অর্থে ‘আমি’ কাকে নির্দেশ করে?
উত্তর: শিল্পস্রষ্টা কবিকে নির্দেশ করে।

৪১। ‘আমি একেলা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: কৃষক বা শিল্পস্রষ্টা কবির নিঃসঙ্গ অবস্থাকে বোঝানো হয়েছে।

৪২। ‘বাঁকা জল’ এখানে কিসের প্রতীক?
উত্তর: অনন্ত কালস্রোতের প্রতীক।

৪৩। ‘তরুছায়ামসী মাখা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: গাছের ছায়ার কালো রঙে ঢাকা গ্রাম বোঝানো হয়েছে।

৪৪। ওপারের গ্রামটিকে কেমন?
উত্তর: মেঘে ঢাকা ও গাছের ছায়ায় আচ্ছন্ন রূপে চিত্রিত করা হয়েছে।

৪৫। ‘গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে’—কে আসে?
উত্তর: একজন মাঝি আসে।

৪৬। মাঝি কীসের প্রতীক?
উত্তর: নির্মোহ মহাকালের প্রতীক।

৪৭। মাঝিকে চেনা মনে হওয়ার কারণ কী?
উত্তর: সে শিল্পস্রষ্টা কবির কল্পনার পরিচিত সত্তা।

৪৮। ‘ওগো, তুমি কোথা যাও কোন বিদেশে?’—এখানে ‘বিদেশ’ কীসের প্রতীক?
উত্তর: চিরায়ত শিল্পলোকের প্রতীক।

৪৯। ‘বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে’—এর অর্থ কী?
উত্তর: নৌকা তীরে ভেড়ানোর জন্য আকুল অনুনয়।

৫০। ‘আমার সোনার ধান’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: কৃষকের শ্রেষ্ঠ ফসল।

৫১। ব্যঞ্জনার্থে ‘সোনার ধান’ কী?
উত্তর: শিল্পস্রষ্টা কবির সৃষ্টিসম্ভার।

৫২। ‘থরে বিথরে’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: স্তরে স্তরে, সুবিন্যস্তভাবে।

৫৩। ‘সোনার তরী’ কোন কাব্যগ্রন্থের কবিতা?
উত্তর: ‘সোনার তরী’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সোনার তরী’ কাব্যগ্রন্থের কবিতা।

৫৪। ‘সোনার তরী’ কবিতাটি কতদিন ধরে আলোচিত হয়ে আসছে?
উত্তর: শতাধিক বছর ধরে কবিতাটি আলোচিত হয়ে আসছে।

৫৫। কবিতায় কৃষককে কোন অবস্থায় দেখা যায়?
উত্তর: প্রবল স্রোতের মধ্যে ছোট ধানখেতে নিঃসঙ্গ অবস্থায়।

৫৬। ধানখেতটি কিসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?
উত্তর: জেগে থাকা একটি দ্বীপের সঙ্গে।

৫৭। কৃষক কী নিয়ে অপেক্ষা করছিল?
উত্তর: উৎপন্ন সোনার ধানের সম্ভার নিয়ে অপেক্ষা করছিল।

৫৮। চারদিকের ‘বাঁকা জল’ কৃষকের মনে কী সৃষ্টি করে?
উত্তর: ঘনঘোর আশঙ্কা সৃষ্টি করে।

৫৯। খরস্রোতা নদীতে কাকে দেখা যায়?
উত্তর: পাল তোলা সোনার নৌকা নিয়ে এক মাঝিকে দেখা যায়।

৬০। কৃষক মাঝির কাছে কী প্রার্থনা জানায়?
উত্তর: সোনার ধান নৌকায় তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

৬১। কৃষকের পরিণতি কী হয়?
উত্তর: শূন্য নদীর তীরে আশাহত হয়ে পড়ে থাকে।

৬২। কবিতাটিতে কোন দর্শন নিবিড়ভাবে মিশে আছে?
উত্তর: কবির গভীর জীবনদর্শন।

৬৩। মহাকালের স্রোতে কী ভেসে যায়?
উত্তর: মানুষের জীবন ও যৌবন ভেসে যায়।

৬৪। মহাকালের স্রোতে কী বেঁচে থাকে?
উত্তর: মানুষের সৃজনশীল কর্মসম্ভার বেঁচে থাকে।

৬৫। ‘সোনার তরী’ কোন ছন্দে রচিত?
উত্তর: ‘সোনার তরী’ মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত।

সোনার তরী কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন

১। ‘সোনার তরী’ কবিতার কৃষক ধান নিয়ে কূলে বসে ছিলেন কেন?
উত্তর: কৃষক সারা বছর পরিশ্রম করে যে ধান ফলিয়েছে, তা নিয়ে সে নদীর কূলে বসে ছিল। তার আশা ছিল, কোনো নৌকা এসে ধানগুলো নিয়ে যাবে। চারদিকে ভয়ংকর স্রোত থাকায় সে নিজে নদী পার হতে সাহস পায়নি। তাই সে অপেক্ষা করছিল একজন মাঝির জন্য। এই অপেক্ষা আসলে জীবনে স্বীকৃতি ও পরিপূর্ণতার আশার প্রতীক। কৃষকের নিঃসঙ্গ অপেক্ষা মানুষের জীবনের দীর্ঘ প্রতীক্ষাকেই বোঝায়।


২। ‘ভরা নদী ক্ষুরধারা খরপরশা।’—বাক্যটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: এই বাক্যে নদীর ভয়ংকর রূপকে তুলে ধরা হয়েছে। বর্ষার কারণে নদী পানিতে ভরে উঠেছে এবং স্রোত অত্যন্ত তীব্র হয়ে গেছে। ‘ক্ষুরধারা’ ও ‘খরপরশা’ শব্দ দিয়ে নদীর ধারালো ও প্রাণঘাতী স্বভাব বোঝানো হয়েছে। নদী যেন ক্ষুর বা বর্শার মতো আঘাত হানতে পারে। এর মাধ্যমে জীবনের বিপদসংকুল পরিস্থিতির ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। কৃষকের অসহায় অবস্থাও এতে স্পষ্ট হয়।


৩। ‘ধান কাটা হলো সারা’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: ‘ধান কাটা হলো সারা’ বলতে বোঝানো হয়েছে কৃষকের সব ধান কাটা শেষ হয়েছে। অর্থাৎ তার বছরের সমস্ত শ্রমের ফল এখন তার হাতে এসেছে। এখানে শুধু ধান কাটার কথাই নয়, জীবনের সমস্ত কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথাও বোঝানো হয়েছে। প্রতীকী অর্থে এটি মানুষের সৃষ্টিকর্ম সম্পূর্ণ হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। কৃষক এখন তার অর্জন নিয়ে অপেক্ষারত। সে চায় এই অর্জনের যথার্থ মূল্যায়ন হোক।


৪। ‘বাঁকা জল’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘বাঁকা জল’ বলতে নদীর ঘূর্ণায়মান ও এদিক-ওদিক বয়ে চলা স্রোতকে বোঝানো হয়েছে। এটি নদীর স্বাভাবিক শান্ত প্রবাহ নয়, বরং অস্থির ও ভয়ংকর রূপ। প্রতীকী অর্থে ‘বাঁকা জল’ অনিশ্চিত জীবনের প্রতীক। মানুষের জীবনও এভাবে হঠাৎ বিপদের মুখে পড়তে পারে। এই বাঁকা জল কৃষকের মনে গভীর আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। ফলে তার নিরাপত্তাহীনতা প্রকাশ পেয়েছে।


৫। ‘একখানি ছোটো খেত আমি একেলা।’—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: এই পঙ্‌ক্তিতে কৃষকের নিঃসঙ্গ অবস্থার কথা বলা হয়েছে। চারদিকে প্রবল স্রোতের মাঝে তার ছোট্ট ধানখেতটি একা দাঁড়িয়ে আছে। কৃষকও সেই খেতের মতোই নিঃসঙ্গ ও অসহায়। প্রতীকী অর্থে এটি মানুষের একাকিত্বকে বোঝায়। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে মানুষ অনেক সময় একাই থাকে। এখানে কবির নিজের নিঃসঙ্গতাও প্রকাশ পেয়েছে।


৬। ‘দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।’—চরণটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: এই চরণে কৃষকের মনে হওয়া এক অদ্ভুত অনুভূতির কথা বলা হয়েছে। মাঝিকে দেখে তার মনে হয়, সে যেন তাকে আগে থেকেই চেনে। আসলে মাঝি সময় বা মহাকালের প্রতীক। সময় মানুষের কাছে অপরিচিত নয়, তাই তাকে চেনা মনে হয়। কিন্তু সময় কখনো ব্যক্তিগত নয় বলে পুরোপুরি ধরা দেয় না। এই দ্বিধাময় অনুভূতিই এখানে প্রকাশ পেয়েছে।


৭। মাঝি চলে যাওয়ার সময় কোনো দিকে তাকায়নি কেন?
উত্তর: মাঝি এখানে সময় বা মহাকালের প্রতীক। সময় কখনো কারও দিকে তাকিয়ে চলে না বা অপেক্ষা করে না। সে নিজের নিয়মে নির্দিষ্ট পথে এগিয়ে যায়। মানুষের সুখ–দুঃখ, আশা–আকাঙ্ক্ষা সময়কে থামাতে পারে না। তাই মাঝি কোনো দিকে না তাকিয়ে নৌকা চালিয়ে চলে যায়। এতে সময়ের নির্মম ও নিরাসক্ত স্বভাব প্রকাশ পেয়েছে।


৮। ‘চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।’—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: এই পঙ্‌ক্তিতে চারদিকে নদীর ঘূর্ণায়মান স্রোতের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ‘বাঁকা জল’ বলতে এদিক-ওদিক বয়ে চলা অস্থির জলধারাকে বোঝানো হয়েছে। এতে ধানখেতটি ছোট একটি দ্বীপের মতো দেখা যায়। প্রতীকী অর্থে এটি জীবনের অনিশ্চয়তা বোঝায়। জীবনের চারপাশেও এভাবে বিপদ ও অস্থিরতা খেলা করে। কৃষকের অসহায় অবস্থাই এখানে প্রকাশ পেয়েছে।


৯। ‘যাহা লয়ে ছিনু ভুলে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: এই কথার মাধ্যমে কৃষক তার জীবনের অর্জনের কথা বলেছে। যেসব ধান নিয়ে সে এতদিন নদীর ধারে বসে ছিল, সেগুলোই তার জীবনের সব সম্বল। প্রতীকী অর্থে এটি মানুষের শ্রম, স্বপ্ন ও সৃষ্টিকর্মকে বোঝায়। এগুলো নিয়েই সে জীবনের সব কষ্ট ভুলে ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসবই তাকে ছেড়ে যেতে হয়। তাই কথাটিতে গভীর বেদনা প্রকাশ পেয়েছে।


১০। ‘সকলি দিলাম তুলে থরে বিথরে’—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: এই পঙ্‌ক্তিতে কৃষকের সর্বস্ব দানের কথা বলা হয়েছে। সে তার সব ধান নৌকায় তুলে দিয়েছে। ‘থরে বিথরে’ বলতে সাজিয়ে-গুছিয়ে দেওয়ার অর্থ বোঝানো হয়েছে। প্রতীকী অর্থে মানুষ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে নিজের সব সৃষ্টি সময়ের হাতে তুলে দেয়। এখানে কোনো কিছু লুকিয়ে রাখা হয়নি। কৃষকের পূর্ণ আত্মসমর্পণই এতে প্রকাশ পেয়েছে।


১১। কৃষক মাঝির কাছে করুণা প্রত্যাশা করেছেন কেন?
উত্তর: কৃষক মনে করেছিল, মাঝি যদি একটু দয়া করে তাকে নৌকায় স্থান দেয়। সে নিজের সব ধান দিয়ে দিয়েছে, তাই নিজেও যাওয়ার অধিকার আশা করে। প্রতীকী অর্থে মানুষ চায় তার সৃষ্টির সঙ্গে সে নিজেও চিরস্থায়ী হোক। কিন্তু মানুষ জানে সে ক্ষণস্থায়ী। সেই অসহায়তা থেকেই কৃষক করুণা প্রত্যাশা করেছে। এটি মানুষের শেষ আশাটুকুর প্রতিফলন।


১২। সোনার তরীতে কৃষকের ঠাঁই হলো না কেন?
উত্তর: সোনার তরী মানুষের সৃষ্টি ও কর্মের প্রতীক। সেখানে শুধু সৃষ্টিরই স্থান হয়, স্রষ্টার নয়। কৃষক নিজের সব ধান নৌকায় তুলে দিলেও তার নিজের জন্য জায়গা থাকে না। কারণ মানুষ নিজে চিরস্থায়ী নয়। মহাকাল মানুষের কাজ গ্রহণ করে, মানুষকে নয়। তাই সোনার তরীতে কৃষকের ঠাঁই হলো না।


১৩। ‘ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই- ছোটো সে তরী’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: এখানে বলা হয়েছে যে নৌকা ছোট হওয়ায় কৃষকের নিজের জন্য জায়গা নেই। নৌকায় শুধুমাত্র তার ধান বা সৃষ্টি স্থান পেয়েছে। মানুষের নিজের অস্তিত্ব চিরস্থায়ী নয়, তাই সে নৌকায় যেতে পারে না। এটি জীবনের ক্ষণস্থায়িত্বের প্রতীক। মানুষের স্রষ্টা হলেও সময়ের কাছে সে অসহায়।


১৪। ‘আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।’— বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: কৃষকের সমগ্র ধান নৌকায় উঠে গেছে। প্রতীকী অর্থে এটি তার জীবনের সব সৃষ্টিকর্ম বা অর্জনকে বোঝায়। মানুষ জীবনের শেষে নিজের সব কাজ সময়ের হাতে তুলে দেয়। ধান বা সৃষ্টি যায়, কিন্তু মানুষ নিজে থেকে যায় না। এটি মহাকালের ক্ষমতার প্রতিফলন।


১৫। ‘যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী।’— ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সোনার তরী কৃষকের সমস্ত ধান নিয়ে গেছে। প্রতীকী অর্থে এটি মানুষের সমস্ত অর্জন বা সৃষ্টিকর্ম সময় বা মহাকালের হাতে চলে যাওয়া। মানুষ নিজে চিরস্থায়ী নয়, কিন্তু তার সৃষ্টিকর্ম বেঁচে থাকে। এখানে নিঃসঙ্গতা ও মানুষের ক্ষণস্থায়িত্ব প্রকাশ পেয়েছে। জীবনের সব কিছু সময়ের কাছে সঁপে দেওয়া বোঝানো হয়েছে।


১৬। ‘শূন্য নদীর তীরে রহিনু পড়ি’—উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: এই বাক্যে কৃষকের নিঃসঙ্গতা প্রকাশ পেয়েছে। তার ধান নৌকায় চলে গেছে, আর সে একা রয়ে গেছে। নদীর শূন্য তীরে দাঁড়িয়ে সে অসহায় ও বেদনায় পড়েছে। এটি মানুষের মৃত্যুর পরের নিঃসঙ্গতার প্রতীক। জীবন ক্ষণস্থায়ী হলেও সৃষ্টিকর্ম চিরস্থায়ী থাকে।


১৭। তরীটিকে ‘সোনার তরী’ বলা হয়েছে কেন?
উত্তর: নৌকাটি সোনার ধান বহন করছে, তাই এটি ‘সোনার তরী’ বলা হয়েছে। প্রতীকী অর্থে এটি মানুষের সৃষ্টিকর্ম বা অর্জনের প্রতীক। সোনার মতো মূল্যবান কাজগুলো মহাকালের হাতে চলে যায়। তরীতে মানুষের সব সৃষ্টিকর্ম স্থান পায়, কিন্তু মানুষ নিজে স্থায়ী হয় না। তাই কবি এই ধানভরা নৌকাকে ‘সোনার তরী’ হিসেবে উপমায় উল্লেখ করেছেন।


আরও পড়ুনঃ সোনার তরী কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা লাইন বাই লাইন

Related Posts

Leave a Comment