রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সুভা’ গল্পটি মানবিক অনুভূতির যাত্রা এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কের গভীরতা তুলে ধরে। এই পোস্টে সুভা গল্পের মূলভাব বা বিষয়বস্তু – নবম-দশম শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম। বড় মূলভাবটি পড়লে ভালভাবে বুঝতে পারবেন।
Table of Contents
সুভা গল্পের মূলভাব বা বিষয়বস্তু
এক ছিল সুভাষিণী, সবার কাছে যিনি পরিচিত সুভা নামে। তার জন্মের সময় কেউ ভাবেনি, যে সে বোবা হবে। তার বাবা-মা, বিশেষ করে মা, তার বোবা হওয়ার জন্য নিজেদের দোষ হিসেবে দেখতেন। সুভার দুটি বড়ো বোন ছিল—সুকেশিনী ও সুহাসিনী। তাদের নামের সঙ্গে মিল রেখে বাবা সুভার নাম রেখেছিলেন। কিন্তু বোবা হয়ে জন্মানোর ফলে সুভা যেন এক অদ্ভুত অভিশাপে রূপান্তরিত হয়েছিল।
সুভার বড়ো বোনেরা বিবাহিত হয়ে গেছে, এবং এখন সে পিতামাতার জীবনে এক ধরনের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুভা বুঝতে পারত, মা তাকে নিয়ে কতটা চিন্তিত। মা মনে করতেন, সুভার বোবা হওয়া যেন এক লজ্জার বিষয়; তাই তিনি তার প্রতি অনেক সময় বিরক্ত হয়ে থাকতেন। সুভার বাবা, বাণীকণ্ঠ, তাকে একটু বেশি ভালোবাসতেন, কিন্তু সুভার হৃদয়ে ছিল এক গভীর শূন্যতা। সুভার দুটি বড়ো কালো চোখ ছিল, যা তার অনুভূতিগুলো প্রকাশ করত। সে কথা বলার ক্ষমতা না থাকলেও, তার চোখের ভাষা অনেক কিছু বলে দিতে পারত। গ্রামের বাচ্চারা তার সঙ্গে খেলতে সাহস পেত না, কারণ তারা ভাবত সুভা যেন এক রহস্যময় সত্তা। সে ছিল একাকী, নিঃসঙ্গ।
গ্রামের নাম চণ্ডীপুর। নদীটি যেন সুভার মতোই—ছোট, কিন্তু গভীর। নদীর পাড়ে বসে সুভা প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে যেত। নদীর জল, পাখির ডাক, আর চারপাশের কোলাহল যেন তাকে শান্তি দিত। সুভা অনুভব করত, প্রকৃতির এই সব শব্দ যেন তার বোবা হৃদয়ের কথা বলছে। সুভার কিছু নীরব বন্ধু ছিল। তার গাভী, সর্বশী এবং পাঙ্গুলি, যারা তার অনুভূতি বুঝতে পারত। সুভা তাদের সঙ্গে সময় কাটাত, তাদের আদর করত। আর ছিল তার ছোট বিড়াল, যা সবসময় সুভার কোলের কাছে থাকত। সুভা যখন তাদের সঙ্গে থাকত, তখন তার মনের কষ্ট কিছুটা কমে যেত। আরেকজন বন্ধু ছিল প্রতাপ, যে নদীর পাড়ে বসে মাছ ধরত। সে অকর্মণ্য হলেও সুভার সঙ্গে তার একটি বিশেষ বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। প্রতাপ সুভাকে ‘সু’ বলে ডাকত এবং তারা একসঙ্গে হাসিখুশি সময় কাটাত। তবে সুভা কখনো বুঝতে পারত না, কিভাবে প্রতাপকে বোঝাবে যে সে সত্যিই মূল্যবান।
একদিন, প্রতাপ সুভাকে বলল, “তোর বিয়ে হচ্ছে, তাই না? আমাদের ভুলিস না।” এই কথা শুনে সুভার হৃদয়ে ব্যথা বোধ হয়। সে প্রতাপের দিকে তাকিয়ে থাকে, যেন বোঝাতে চায়, সে বিয়ে করতে চায় না। সুভা নদীর তীরে বসে কাঁদতে থাকে, আর তার মনের কষ্ট ফুটে ওঠে। এরপর পরিবারের আলোচনা হয়, এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তারা কলকাতা যাবে। এই পরিকল্পনা সুভার মনে ভয় ধরিয়ে দেয়। সে বাবা-মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, কিন্তু তারা কিছু বলেন না। সুভা যেন অনুভব করে, সে আরও দূরে চলে যাবে। কলকাতায় যাওয়ার দিন আসে। সুভা তার পশু বন্ধুদের বিদায় নিতে যায়। সে তাদের কাছে গিয়ে গলায় ধরে খাবার দেয়, আর চোখের জল ফেলতে থাকে। মনে হয়, সে বলতে চায়, “আমি চলে যাচ্ছি, কিন্তু আমাকে ভুলে যেও না।” শুক্লাদ্বাদশীর রাতে, সুভা নদীর পাড়ে শুয়ে থাকে। সে প্রকৃতিকে বলছে, “তুমি আমাকে যেতে দিও না, মা। আমি চাই, তুমি আমাকে ধরে রাখো।” এই অনুভূতি তাকে গভীর শান্তি দেয়।
গল্পের শেষে, সুভা বুঝতে পারে, তার জীবন নতুন এক অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছে। কিন্তু সে জানে, সে কখনোই ভুলবে না তার শৈশব, তার বন্ধুত্ব, এবং নদীকে। প্রকৃতির সঙ্গে এই সম্পর্ক, এই নির্জনতা, তাকে শক্তি যোগাবে নতুন জীবনের জন্য। এভাবেই সুভা, একজন বোবা মেয়ে হয়েও, নিজের অস্তিত্ব খুঁজে নেয় এবং প্রকৃতির মাঝে শান্তি পায়।
সুভা গল্পের মূলভাব সংক্ষেপে
এক ছিল সুভাষিণী, যিনি সবাই জানতেন সুভা নামে। ছোটবেলায় কেউ কল্পনাও করেনি যে সে বোবা হবে। তার মা, যে আশায় বেঁচে ছিল একটি স্বাভাবিক শিশুর, সুভার বোবা হওয়ায় নিজেকে দোষী মনে করতেন। বাবার ভালোবাসা ছিল প্রচুর, কিন্তু সে সব সময় অনুভব করত এক ধরনের শূন্যতা। সুভার দুটি বড়ো বোন ছিল—সুকেশিনী ও সুহাসিনী। তাদের বিবাহিত জীবনের মধ্যে সুভা যেন এক অচেনা সত্তা। পরিবারে তাকে নিয়ে উদ্বেগ ছিল, বিশেষ করে মায়ের মনে। সুভা বোবা হলেও, তার চোখের ভাষা ছিল গভীর। গ্রামে শিশুদের সঙ্গেও সে খেলতে পারত না, কারণ তারা তার রহস্যময়তায় ভয় পেত। চণ্ডীপুর গ্রামের নদী ছিল তার নীরব সঙ্গী। নদীর পাড়ে বসে প্রকৃতির আওয়াজ শুনতে ভালো লাগত। গাভী, পাঙ্গুলি আর বিড়াল ছিল তার বিশেষ বন্ধু। প্রতাপ, যে মাছ ধরতে আসত, ছিল তার আরেক বন্ধু। প্রতাপ তাকে ‘সু’ বলে ডাকত এবং তাদের মধ্যে একটি অদ্ভুত বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। একদিন, প্রতাপ বলল, “তোর বিয়ে হচ্ছে, তাই না?” কথাটি শুনে সুভার হৃদয়ে এক ব্যথা অনুভব হয়। সে নদীর পাড়ে বসে কাঁদতে শুরু করে, যেন তার মনের কথা প্রকাশ করতে পারে। পরিবারের সিদ্ধান্ত হয়, তারা কলকাতা যাবে। এই পরিকল্পনা সুভাকে আতঙ্কিত করে তুলল। বিদায় নেওয়ার সময়, সুভা তার পশু বন্ধুদের কাছে গেল। তাদের কাছে গিয়ে খাবার দিল, চোখের জল ফেলল। মনে হয়, সে বলতে চাইছে, “আমি চলে যাচ্ছি, কিন্তু আমাকে ভুলে যেও না।” শুক্লাদ্বাদশীর রাতে, নদীর পাড়ে শুয়ে, সে প্রকৃতিকে বলল, “আমাকে যেতে দিও না, মা।” সে জানত, কলকাতায় নতুন একটি অধ্যায় শুরু হচ্ছে, কিন্তু চণ্ডীপুরের স্মৃতিগুলো তার হৃদয়ে চিরকাল থাকবে। সুভা বোবা হয়েও জীবনের গভীরতা অনুভব করেছিল। প্রকৃতির সঙ্গে এই সম্পর্ক, বন্ধুত্ব—সব কিছুই তাকে শক্তি দিত। সে বুঝতে পারে, ভাষার চেয়ে ভালোবাসা ও অনুভূতি আরও বড়।
Related Posts
- জসীমউদ্দীনের কবর কবিতার প্রশ্ন উত্তর – ৯ম শ্রেণির বাংলা
- আমি কোনো আগন্তুক নই জ্ঞানমূলক প্রশ্ন – ৯ম-১০ম শ্রেণির বাংলা
- একাত্তরের দিনগুলি গল্পের মূলভাব- নবম-দশম শ্রেণির বাংলা
- Natures Tapestry Class 9 English Chapter 2 Answer (বাংলা অর্থসহ)
- বনের ধারে বরফ পড়া সাজে কবিতার মূলভাব, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি – ৯ম শ্রেণির বাংলা
- জাদুঘর ভ্রমন ৯ম শ্রেণির বাংলা সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি
- ৯ম শ্রেণির বিজ্ঞান ১ম অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর (বল, চাপ ও শক্তি)
- একাত্তরের দিনগুলি এর সারসংক্ষেপ – নবম-দশম শ্রেণির বাংলা
- বৃষ্টি কবিতার ব্যাখ্যা প্রতি লাইনের – ৯ম শ্রেণির বাংলা
- Compare and Contrast Essay: Human Brain and Artificial Intelligence (AI)