রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সুভা’ গল্পে সুভা ছিল এক বোবা মেয়ে। কথা বলতে পারত না, কিন্তু তার চোখে-মুখে, আচরণে অনেক কিছু বলা যেত। গ্রামের এক নদীর ধারে ছিল তার ছোট্ট ঘর, প্রকৃতির মধ্যে বড় হয়ে উঠেছিল সে। এই পোস্টে সুভা গল্পের মূলভাব, বিষয়বস্তু ও বহুনির্বাচনি প্রশ্ন উত্তর লিখে দিলাম। গল্পের বিষয়বস্তু পড়লে ভালভাবে বুঝতে পারবেন।
Table of Contents
সুভা গল্পের মূলভাব
‘সুভা’ গল্পের মূল চরিত্র সুভাষিণী ছিল একজন বোবা মেয়ে, যাকে সবাই স্নেহ করে ডাকত সুভা নামে। জন্মের পরেই জানা যায়, সে কথা বলতে পারে না, আর এ নিয়ে তার মা সবসময় দুঃখ পেতেন। সুভার বড় দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে, তাই এখন বাবা-মায়ের একমাত্র চিন্তা ছিল সুভার ভবিষ্যৎ। গ্রামের অন্য বাচ্চারা তার সঙ্গে মিশত না, কারণ সে বোবা বলে তাকে সবাই অদ্ভুত ভাবত। সুভা ছিল একাকী, কিন্তু প্রকৃতি ছিল তার আপন বন্ধু। সে নদীর পাড়ে বসে গরু, বিড়াল আর পাখিদের সঙ্গে সময় কাটাত। তাদের সঙ্গে সে বোবা হলেও গভীরভাবে অনুভব করত ভালোবাসা। গ্রামের এক যুবক প্রতাপের সঙ্গে সুভার বন্ধুত্ব হয়। সে সুভাকে ‘সু’ বলে ডাকত এবং তার সঙ্গে মজা করত। একদিন প্রতাপ জানতে পারে সুভার বিয়ে ঠিক হয়েছে, তখন সে খুব কষ্ট পায়। সুভার মনেও দুঃখ জমে, কারণ সে প্রতাপকে পছন্দ করত। এরপর সুভার পরিবার কলকাতায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সুভা তার প্রিয় পশু-পাখিদের বিদায় জানাতে যায় এবং কাঁদে। সে নদীর পাড়ে বসে যেন প্রকৃতির কাছে নিজেকে রেখে যেতে চায়। শেষে, সুভা বোঝে—যেখানে সে ভালোবাসা পেয়েছে, তা কোনোদিন ভুলবে না। বোবা হলেও প্রকৃতির সঙ্গে তার মনের গভীর ভাষা ছিল, আর সেখানেই সে শান্তি খুঁজে পায়।
সুভা গল্পের বিষয়বস্তু
এক ছিল সুভাষিণী, সবার কাছে যিনি পরিচিত সুভা নামে। তার জন্মের সময় কেউ ভাবেনি, যে সে বোবা হবে। তার বাবা-মা, বিশেষ করে মা, তার বোবা হওয়ার জন্য নিজেদের দোষ হিসেবে দেখতেন। সুভার দুটি বড়ো বোন ছিল—সুকেশিনী ও সুহাসিনী। তাদের নামের সঙ্গে মিল রেখে বাবা সুভার নাম রেখেছিলেন। কিন্তু বোবা হয়ে জন্মানোর ফলে সুভা যেন এক অদ্ভুত অভিশাপে রূপান্তরিত হয়েছিল।
সুভার বড়ো বোনেরা বিবাহিত হয়ে গেছে, এবং এখন সে পিতামাতার জীবনে এক ধরনের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুভা বুঝতে পারত, মা তাকে নিয়ে কতটা চিন্তিত। মা মনে করতেন, সুভার বোবা হওয়া যেন এক লজ্জার বিষয়; তাই তিনি তার প্রতি অনেক সময় বিরক্ত হয়ে থাকতেন। সুভার বাবা, বাণীকণ্ঠ, তাকে একটু বেশি ভালোবাসতেন, কিন্তু সুভার হৃদয়ে ছিল এক গভীর শূন্যতা। সুভার দুটি বড়ো কালো চোখ ছিল, যা তার অনুভূতিগুলো প্রকাশ করত। সে কথা বলার ক্ষমতা না থাকলেও, তার চোখের ভাষা অনেক কিছু বলে দিতে পারত। গ্রামের বাচ্চারা তার সঙ্গে খেলতে সাহস পেত না, কারণ তারা ভাবত সুভা যেন এক রহস্যময় সত্তা। সে ছিল একাকী, নিঃসঙ্গ।
গ্রামের নাম চণ্ডীপুর। নদীটি যেন সুভার মতোই—ছোট, কিন্তু গভীর। নদীর পাড়ে বসে সুভা প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে যেত। নদীর জল, পাখির ডাক, আর চারপাশের কোলাহল যেন তাকে শান্তি দিত। সুভা অনুভব করত, প্রকৃতির এই সব শব্দ যেন তার বোবা হৃদয়ের কথা বলছে। সুভার কিছু নীরব বন্ধু ছিল। তার গাভী, সর্বশী এবং পাঙ্গুলি, যারা তার অনুভূতি বুঝতে পারত। সুভা তাদের সঙ্গে সময় কাটাত, তাদের আদর করত। আর ছিল তার ছোট বিড়াল, যা সবসময় সুভার কোলের কাছে থাকত। সুভা যখন তাদের সঙ্গে থাকত, তখন তার মনের কষ্ট কিছুটা কমে যেত। আরেকজন বন্ধু ছিল প্রতাপ, যে নদীর পাড়ে বসে মাছ ধরত। সে অকর্মণ্য হলেও সুভার সঙ্গে তার একটি বিশেষ বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। প্রতাপ সুভাকে ‘সু’ বলে ডাকত এবং তারা একসঙ্গে হাসিখুশি সময় কাটাত। তবে সুভা কখনো বুঝতে পারত না, কিভাবে প্রতাপকে বোঝাবে যে সে সত্যিই মূল্যবান।
একদিন, প্রতাপ সুভাকে বলল, “তোর বিয়ে হচ্ছে, তাই না? আমাদের ভুলিস না।” এই কথা শুনে সুভার হৃদয়ে ব্যথা বোধ হয়। সে প্রতাপের দিকে তাকিয়ে থাকে, যেন বোঝাতে চায়, সে বিয়ে করতে চায় না। সুভা নদীর তীরে বসে কাঁদতে থাকে, আর তার মনের কষ্ট ফুটে ওঠে। এরপর পরিবারের আলোচনা হয়, এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তারা কলকাতা যাবে। এই পরিকল্পনা সুভার মনে ভয় ধরিয়ে দেয়। সে বাবা-মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, কিন্তু তারা কিছু বলেন না। সুভা যেন অনুভব করে, সে আরও দূরে চলে যাবে। কলকাতায় যাওয়ার দিন আসে। সুভা তার পশু বন্ধুদের বিদায় নিতে যায়। সে তাদের কাছে গিয়ে গলায় ধরে খাবার দেয়, আর চোখের জল ফেলতে থাকে। মনে হয়, সে বলতে চায়, “আমি চলে যাচ্ছি, কিন্তু আমাকে ভুলে যেও না।” শুক্লাদ্বাদশীর রাতে, সুভা নদীর পাড়ে শুয়ে থাকে। সে প্রকৃতিকে বলছে, “তুমি আমাকে যেতে দিও না, মা। আমি চাই, তুমি আমাকে ধরে রাখো।” এই অনুভূতি তাকে গভীর শান্তি দেয়।
গল্পের শেষে, সুভা বুঝতে পারে, তার জীবন নতুন এক অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছে। কিন্তু সে জানে, সে কখনোই ভুলবে না তার শৈশব, তার বন্ধুত্ব, এবং নদীকে। প্রকৃতির সঙ্গে এই সম্পর্ক, এই নির্জনতা, তাকে শক্তি যোগাবে নতুন জীবনের জন্য। এভাবেই সুভা, একজন বোবা মেয়ে হয়েও, নিজের অস্তিত্ব খুঁজে নেয় এবং প্রকৃতির মাঝে শান্তি পায়।
সুভা গল্পের বহুনির্বাচনি প্রশ্ন উত্তর (MCQ)
১। সুভার পূর্ণ নাম কী?
ক) সুহাসিনী
খ) সুভাষিণী
গ) সুকেশিনী
ঘ) সুপ্রিয়া
উত্তরঃ খ) সুভাষিণী
২। সুভা কেন পরিবারের কাছে ‘বোঝা’ বলে বিবেচিত হতো?
ক) সে অলস ছিল
খ) সে বোবা ছিল
গ) সে পড়াশোনা করত না
ঘ) সে জেদি ছিল
উত্তরঃ খ) সে বোবা ছিল
৩। সুভার প্রধান ভাষা কী ছিল?
ক) হাতের ইশারা
খ) বড়ো কালো চোখ
গ) লেখালেখি
ঘ) মুখের ভঙ্গি
উত্তরঃ খ) বড়ো কালো চোখ
৪। সুভার বাবার নাম কী?
ক) বাণীকণ্ঠ
খ) হরিকণ্ঠ
গ) গুণাকর
ঘ) বিপিনচন্দ্র
উত্তরঃ ক) বাণীকণ্ঠ
৫। সুভার মা তাকে কী মনে করতেন?
ক) গর্ভের কলঙ্ক
খ) আশীর্বাদ
গ) আদরের মেয়ে
ঘ) সাধারণ সন্তান
উত্তরঃ ক) গর্ভের কলঙ্ক
৬। সুভার নিকটতম মানব বন্ধু কে ছিল?
ক) গোঁসাইদের ছেলে প্রতাপ
খ) গ্রামের মাঝি
গ) তার বাবা
ঘ) স্কুলের শিক্ষক
উত্তরঃ ক) গোঁসাইদের ছেলে প্রতাপ
৭। প্রতাপ সুভাকে কী নামে ডাকত?
ক) সু
খ) সুভু
গ) বোবি
ঘ) ছোটি
উত্তরঃ ক) সু
৮। সুভা প্রকৃতির কোন জিনিসের সাথে নিজেকে যুক্ত মনে করত?
ক) পাহাড়
খ) নদী
গ) বন
ঘ) মাঠ
উত্তরঃ খ) নদী
৯। সুভার গোয়ালের গরু দুটির নাম কী ছিল?
ক) লক্ষ্মী ও সরস্বতী
খ) সর্বশী ও পাঙ্গুলি
গ) মঙ্গলা ও পুষ্পা
ঘ) রাধা ও শ্যামা
উত্তরঃ খ) সর্বশী ও পাঙ্গুলি
১০। সুভা কলকাতায় যাওয়ার আগে কী করেছিল?
ক) প্রতাপকে চিঠি লিখেছিল
খ) গরুদের বিদায় জানিয়েছিল
গ) নদীতে স্নান করেছিল
ঘ) গাছ লাগিয়েছিল
উত্তরঃ খ) গরুদের বিদায় জানিয়েছিল
১১। “সুভা” গল্পটি কোন সংকলনের অংশ?
ক) গল্পগুচ্ছ
খ) ক্ষণিকা
গ) কথা ও কাহিনী
ঘ) বলাকা
উত্তরঃ ক) গল্পগুচ্ছ
১২। সুভার বোনদের নাম কী ছিল?
ক) সুকেশিনী ও সুহাসিনী
খ) সুপ্রিয়া ও সুজাতা
গ) সুনীতা ও সুমিত্রা
ঘ) সুচরিতা ও সুবর্ণা
উত্তরঃ ক) সুকেশিনী ও সুহাসিনী
১৩। সুভা কোথায় বসে প্রকৃতির শব্দ শুনত?
ক) নদীতীরে
খ) পাহাড়ের চূড়ায়
গ) বাড়ির ছাদে
ঘ) মন্দিরে
উত্তরঃ ক) নদীতীরে
১৪। সুভার মা কেন তাকে দূরে সরিয়ে দিতে চাইলেন?
ক) সে অপরাধ করেছিল
খ) সমাজের চাপ ও বিয়ের সমস্যা
গ) সে পড়াশোনা করতে চায়নি
ঘ) সে বাড়ির কাজ করত না
উত্তরঃ খ) সমাজের চাপ ও বিয়ের সমস্যা
১৫। সুভা কীভাবে প্রতাপকে আশ্চর্য করতে চাইত?
ক) গান গেয়ে
খ) জলকুমারী হওয়ার কল্পনা করে
গ) জাদু দেখিয়ে
ঘ) গল্প বলে
উত্তরঃ খ) জলকুমারী হওয়ার কল্পনা করে
১৬। গল্পে সুভার বয়স কত হলে তাকে বিয়ে দিতে চাওয়া হয়?
ক) ১০ বছর
খ) ১২ বছর
গ) কৈশোরে
ঘ) ২০ বছর
উত্তরঃ গ) কৈশোরে
১৭। সুভার চোখের ভাষাকে গল্পে কীসের সাথে তুলনা করা হয়েছে?
ক) আকাশের মতো উদার
খ) সমুদ্রের মতো গভীর
গ) তারার মতো জ্বলজ্বলে
ঘ) বনের মতো রহস্যময়
উত্তরঃ ক) আকাশের মতো উদার
১৮। সুভা কেন প্রতাপের কাছে মর্মাহত হয়েছিল?
ক) প্রতাপ তাকে তাড়িয়ে দিয়েছিল
খ) প্রতাপ তাকে বিয়ের খবর বলেছিল
গ) প্রতাপ তার সাথে খেলতে চায়নি
ঘ) প্রতাপ মাছ ধরে দেয়নি
উত্তরঃ খ) প্রতাপ তাকে বিয়ের খবর বলেছিল
১৯। সুভা শেষে কোথায় যেতে বাধ্য হয়?
ক) কলকাতা
খ) অন্য গ্রাম
গ) বিদেশ
ঘ) মঠ
উত্তরঃ ক) কলকাতা
২০। প্রতাপের প্রধান শখ কী ছিল?
ক) গান গাওয়া
খ) ছিপ দিয়ে মাছ ধরা
গ) বই পড়া
ঘ) ঘুরে বেড়ানো
উত্তরঃ খ) ছিপ দিয়ে মাছ ধরা
২১। সুভা কীভাবে প্রকৃতির সাথে যোগাযোগ করত?
ক) গান গেয়ে
খ) চোখের ভাষায়
গ) হাতের ইশারায়
ঘ) লিখে
উত্তরঃ খ) চোখের ভাষায়
২২। সুভা কেন নদীতীরে বসে থাকত?
ক) মাছ ধরতে
খ) প্রকৃতির সাথে যোগাযোগের জন্য
গ) লোক দেখতে
ঘ) ঘুমাতে
উত্তরঃ খ) প্রকৃতির সাথে যোগাযোগের জন্য
Related Posts
- নিমগাছ গল্পের মূলভাব, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি
- কান্ডারী হুশিয়ার কবিতার মূলভাব ও প্রশ্ন উত্তর – ৯ম শ্রেণির বাংলা
- নাগরিক সেবায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রশ্ন উত্তর ও MCQ – ৯ম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি
- রানার কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর
- Compare and Contrast Essay: Human Brain and Artificial Intelligence (AI)