শ্রাবণে কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর – ৭ম শ্রেণির বাংলা

সুকুমার রায়ের “শ্রাবণে” কবিতাটি  শ্রাবণ মাসের অবিরাম বর্ষণ এবং সেই বর্ষণের প্রকৃতি ও মানুষের মনে সৃষ্ট প্রভাবকে চিত্রিত করেছে। অবিরাম বর্ষণের চিত্র: কবিতার শুরু থেকেই অফুরান, সারাদিন-সারারাত ধরে চলা বৃষ্টির চিত্র ফুটে উঠেছে। এই পোস্টে শ্রাবণে কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর – ৭ম শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম।

শ্রাবণে কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর

সৃজনশীল প্রশ্নঃ ১। [বোর্ড বইয়ের প্রশ্ন]
উদ্দীপক (১) আজিকার রোদ ঘুমায়ে পড়িছে- ঘোলাটে মেঘের আড়ে,
কেয়া বন পথে স্বপন বুনিছে- ছল ছল জলধারে।
কাহার ঝিয়ারী কদম্ব শাখে- নিঝুম নিরালায়,
ছোট ছোট রেণু খুলিয়া দিয়াছে- অস্ফুট কলিকায়।

উদ্দীপক (২) কেউবা রঙিন কাঁথায় মেলিয়া বুকের স্বপনখানি,
তারে ভাষা দেয় দীঘল সূতার মায়াবী আখর টানি।

ক. প্রাণখোলা বর্ষায় কে স্নান করে?

খ. ‘উন্মাদ শ্রাবণ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

গ. ১ম উদ্দীপকে ‘শ্রাবণে’ কবিতায় বর্ণিত বর্ষার কোন দিকটি চিত্রিত হয়েছে? বর্ণনা কর।

ঘ. ২য় উদ্দীপকটি ‘শ্রাবণে’ কবিতার শেষ চরণে প্রতিফলিত হয়েছে কি?- যুক্তিসহ বিচার কর।

উত্তরঃ

ক. প্রাণখোলা বর্ষায় গাছপালা স্নান করে।

খ. ‘উন্মাদ শ্রাবণ’ বলতে শ্রাবণ মাসের অবিরাম বর্ষণের কথা বোঝানো হয়েছে।

শ্রাবণ মাসে অবিরাম বৃষ্টি হয়। রাত-দিন সব সময় টুপটাপ করে বৃষ্টি পড়তেই থাকে। এক মুহূর্তের জন্যও থামে না। প্রকৃতির বুকে যেন শ্রাবণ ঝরঝর করে জল ঝরানোর উৎসবে মেতে ওঠে। কবি তাই শ্রাবণ মাসের অবিরাম ধারায় বৃষ্টি হওয়ার জন্য শ্রাবণকে উন্মাদ বলেছেন। কারণ উন্মাদ যেমন একই কাজ বারবার করে, তেমনি শ্রাবণ মাসেও অবিরাম বৃষ্টি ঝরতে থাকে।

গ. ১ম উদ্দীপকে ‘শ্রাবণে’ কবিতায় বর্ণিত বৃষ্টিস্নাত প্রকৃতির দিকটি চিত্রিত হয়েছে।

রূপসী বাংলার ছয়টি ঋতু আছে। গ্রীষ্মের রুক্ষতা শেষ হলে বর্ষা আসে। বর্ষা আসার সঙ্গে সঙ্গে ফুল-ফলে ভরে ওঠে প্রকৃতি। বৃষ্টির ধারায় স্নান করে প্রকৃতি সজীব ও সুন্দর হয়ে ওঠে। প্রকৃতিতে ফিরে আসে প্রাণের স্পন্দন।

‘শ্রাবণে’ কবিতায় বৃষ্টিস্নাত প্রকৃতির অসাধারণ রূপ ফুটে উঠেছে। এখানে প্রকৃতি অবিরাম বর্ষায় স্নান করে সজীব ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। গ্রীষ্মের রোদের চিহ্ন ধুয়ে-মুছে যায়। প্রাণখোলা বর্ষায় গাছপালা মাথা তুলে দাঁড়ায়। ‘শ্রাবণে’ কবিতার এই প্রাকৃতিক ছবিটি ১ম উদ্দীপকেও চিত্রিত হয়েছে। উদ্দীপকে বলা হয়েছে, মেঘের আড়ালে রোদ ঘুমিয়ে পড়েছে। চারদিকে ছলছল জলে কেয়া বনে স্বপ্ন সৃষ্টি করে। কদম ফুল ফুটে ওঠে। বৃষ্টির ধারায় কদম ফুল তার রেণু মেলে ধরে। বৃষ্টির দিনে প্রকৃতি যে রূপ ধারণ করে, উদ্দীপক ও কবিতায় তারই ছবি ফুটে উঠেছে। তাই আমরা বলতে পারি যে, ১ম উদ্দীপকে ‘শ্রাবণে’ কবিতায় বর্ণিত বৃষ্টিস্নাত প্রকৃতির দিকটি চিত্রিত হয়েছে।

ঘ. হ্যাঁ, ২য় উদ্দীপকটি ‘শ্রাবণে’ কবিতার শেষ চরণে প্রতিফলিত হয়েছে।

বৃষ্টির দিনে শুধু প্রকৃতিতে পরিবর্তন আসে না, মানুষের মনেও পরিবর্তন আসে। বৃষ্টিস্নাত প্রকৃতির সঙ্গে মানবমনও হয়ে ওঠে সংবেদনশীল। বৃষ্টির ধারা যেন মানুষের হৃদয়ের দরজা খুলে দেয়।

বৃষ্টির দিনে মানুষ বাইরে কোনো কাজ করতে পারে না। ঘরের মধ্যে বসে থাকতে হয়। তাই বৃষ্টির দিনে বাংলার মেয়েরা, পল্লি-বধূরা, মায়েরা বসে বসে কাঁথা সেলাই করে যে কথাটি ২য় উদ্দীপকে প্রকাশ পেয়েছে। তারা রঙিন কাঁথায় মেলে ধরে বুকের মধ্যে লুকানো স্বপ্ন ও আশার কথা। সুতার টানে সেই স্বপ্নকে ভাষা দেয়। তাদের সেই কাঁথায় জড়িয়ে থাকে জীবনের নানা সুখ-দুঃখের কাহিনি। ‘শ্রাবণে’ কবিতায় কবি বলেছেন, বৃষ্টির দিনে মানবমনে বাজে নিঃঝুম ধুকধুক শব্দ। বৃষ্টির দিনে মানবমনেও জেগে ওঠে নানা রকম আশা-দুরাশা, সুখ-দুঃখের কথা।

উদ্দীপক ও ‘শ্রাবণে’ কবিতা দুই জায়গাতেই বর্ষা ঋতুর বৃষ্টির দিনে মানুষের মনে যে পরিবর্তন ঘটে, সেই কথা প্রকাশ পেয়েছে। প্রকাশ পেয়েছে মানুষের সুখ-দুঃখ ও স্বপ্নের কথা। তাই আমরা বলতে পারি যে, ২য় উদ্দীপকটি ‘শ্রাবণে’ কবিতার শেষ চরণে প্রতিফলিত হয়েছে।


সৃজনশীল প্রশ্নঃ ২।
“বৃষ্টির শব্দে আমার জানালার কাচ কাঁপে, মনে হয় যেন কেউ অনবরত ছোটো ছোটো মুক্তার মালা ভেঙে ফেলছে। এই শব্দের মাঝে হারিয়ে যায় শহরের কোলাহল। বৃষ্টির পর গাছের পাতাগুলো যেন হাজার হাজার চোখ, ঝলমলে হয়ে ওঠে। কিন্তু এই প্রাণের উৎসবের মাঝেও কেন জানি মনে পড়ে যায় অনেক দূরের, অনেক পুরনো কিছু কথা।”

ক. ‘বারিধার’ শব্দের অর্থ কী?

খ. “ধুয়ে যায় যত তাপ জর্জর গ্রীষ্মের”- কবি কেন এ কথা বলেছেন?

গ. উদ্দীপকের বর্ণনায় ‘শ্রাবণে’ কবিতার কোন দুটি দিকের প্রতিফলন ঘটেছে?

ঘ. “উদ্দীপকের শেষ বাক্যটি ‘শ্রাবণে’ কবিতার ‘ধরণীর আশাভয়’ অংশটির সাথে সাযুজ্য রেখেছে”- বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৩।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ড. রেহানা একটি টিভি সাক্ষাৎকারে বলেন, “বাংলাদেশের কৃষি প্রধানত বর্ষার ওপর নির্ভরশীল। শ্রাবণের অবিরাম বৃষ্টি মৃতপ্রায় মাটিতে প্রাণ সঞ্চার করে, জলাশয়গুলোকে পূর্ণ করে। এটি কেবল প্রাকৃতিক ঘটনা নয়, এটি আমাদের অর্থনীতি ও সংস্কৃতির প্রাণস্পন্দন। তবে অতিবৃষ্টিও আবার বন্যার মতো দুর্যোগ ডেকে আনে।”

ক. ‘জর্জর’ শব্দের অর্থ কি?

খ. “নদীনালা ঘোলাজল ভরে উঠে ভরসায়”-‘ভরসায়’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

গ. উদ্দীপকে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞের বক্তব্যের কোন দিকটি ‘শ্রাবণে’ কবিতার বর্ণনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ?

ঘ. “উদ্দীপকটি ‘শ্রাবণে’ কবিতার প্রাকৃতিক দিকটিকে একটি বৃহত্তর ব্যবহারিক প্রেক্ষাপটে স্থাপন করেছে”- যুক্তি দিয়ে দেখাও।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৪।
ছোট্ট মেয়ে মাহি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে। সে তার মায়ের কাছে বলল, “মা, দেখো বৃষ্টি পড়ছে টিপটিপ করে। মেঘেরা কী যেন বলছে! আমার মনে হয় তারা গান গাইছে: ‘পড় পড় পড়, জল পড়, ধরণীকে ভরিয়ে দে’। গাছেরা নাচছে, ফুলেরা হাসছে। কিন্তু মা, আমার কেন জানি একটু ভয়ও করছে?”

ক. সুকুমার রায়ের বিখ্যাত ছড়াগ্রন্থের নাম কী?

খ. কবি শ্রাবণকে উন্মাদ বলেছেন কেন?

গ. উদ্দীপকের মাহির বৃষ্টি দর্শনের অনুভূতির সাথে ‘শ্রাবণে’ কবিতার কোন অনুভূতির মিল রয়েছে?

ঘ. “উদ্দীপকের মাহির চোখে ‘শ্রাবণে’ কবিতার প্রাণচাঞ্চল্য ও গূঢ় আশঙ্কা উভয়ই প্রতিফলিত হয়েছে”- বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৫।
“বৃষ্টি থেমে গেছে। এখন চারদিক নিস্তব্ধ। গাছের পাতায় জমে থাকা জলফোঁটা একটার পর একটা পড়ছে টপ টপ শব্দে। এই নীরবতায় যেন প্রকৃতি তার গোপন কথাগুলো ফিসফিস করছে। এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে, সমস্ত পৃথিবী এক অপার্থিব শান্তিতে ভরে গেছে।”

ক. ‘নিঃঝুম’ শব্দের অর্থ কী?

খ. “শেষ নাই শেষ নাই বরষার প্লাবনের”- কবি কেন বারবার ‘শেষ নাই’ বলেছেন?

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত বৃষ্টি-পরবর্তী দৃশ্যের সাথে ‘শ্রাবণে’ কবিতার বর্ষণকালীন দৃশ্যের প্রধান বৈসাদৃশ্য কী?

ঘ. “উদ্দীপক ও কবিতার দৃশ্য দুটি বর্ষারই দুই রূপ, একত্রে যার পূর্ণতা পাওয়া যায়”- মন্তব্যটি যাচাই কর।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৬।
একজন চিত্রশিল্পী তার ক্যানভাসে আঁকেন শ্রাবণের এক অপূর্ব চিত্র: আকাশ গাঢ় ধূসর, যেখান থেকে রুপালি সুতোয়ের মতো ঝরছে বৃষ্টি। নিচে সবুজ গাছপালা মাথা উঁচু করে ধরে আছে পানির মোটা ফোঁটাগুলো। একটি ছোট নদী তার কূল উপচে পড়েছে, কিন্তু তার জলে মিশে আছে আনন্দের একটি ছোঁয়া। দর্শক এই ছবি দেখে বলে, “এটি শুধু বৃষ্টির ছবি নয়, এটি বাংলার প্রাণের ছবি।”

ক. কবিতায় ‘ছাত পিটে’ কে বৃষ্টি পড়ছে?

খ. “জলেজলে জলময় দশদিক টলমল”- এই চিত্রকল্পটি ব্যাখ্যা কর।

গ. উদ্দীপকের চিত্রশিল্পীর আঁকা ছবিটি ‘শ্রাবণে’ কবিতার কোন কোন চরণের চিত্রময় প্রকাশ?

ঘ. “উদ্দীপকের দর্শকের উক্তি ‘শ্রাবণে’ কবিতার কবির দৃষ্টিভঙ্গিকেই সমর্থন করে”- বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৭।
“শ্রাবণ এলেই আমার মনে পড়ে যায় ছেলেবেলার কথা। আমরা তখন গ্রামে থাকতাম। বৃষ্টিতে ভিজে কাদামাখা হয়ে খেলতাম। মা বিরক্ত হতেন ঠিকই, কিন্তু দাদুরা বলতেন, ‘বৃষ্টিতে ভিজে প্রাণ জুড়োও।’ সেই বৃষ্টির গন্ধ, মাটির গন্ধ এখনো আমার স্মৃতিতে ভাসে। আজ শহরে বসে এসি ঘরে বৃষ্টি দেখি, কিন্তু সেই অনুভূতি আর ফিরে পাই না।”

ক. ‘অফুরান নামতা’ বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?

খ. “ধরণীর আশাভয় ধরণীর সুখদুখ”- চরণটির মাধ্যমে কবি কী প্রকাশ করতে চেয়েছেন?

গ. উদ্দীপকের বক্তার স্মৃতির কোন দিকটি ‘শ্রাবণে’ কবিতার প্রাণখোলা বর্ষার সাথে মিলে যায়?

ঘ. “উদ্দীপকের বক্তার আক্ষেপ ‘শ্রাবণে’ কবিতার উৎসবমুখর ভাবের পরিপূরক, প্রতিদ্বন্দ্বী নয়”- উদ্দীপক ও কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ কর।

নিচে শ্রাবণে কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর পিডিএফ ফাইল দেওয়া হল।

শ্রাবণে কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর পিডিএফ

আরও পড়ুনঃ শ্রাবণে কবিতার MCQ | বহুনির্বাচনি প্রশ্ন উত্তর

Related Posts

Leave a Comment