যৌবন মানে সত্য–সুন্দর–নতুন–ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করা। যৌবন মানে ভয় ভীতিকে ভেঙে ফেলে নতুন পৃথিবী গড়ে তোলা। এই পোস্টে যৌবনের গান প্রবন্ধের মূলভাব সহজ ভাষায় লিখে দিলাম।
Table of Contents
যৌবনের গান প্রবন্ধের মূলভাব
কাজী নজরুল ইসলাম এই প্রবন্ধে যৌবনের শক্তি, উদ্যম ও সাহসের কথা গভীরভাবে তুলে ধরেছেন। তাঁর মতে, যৌবন শুধু বয়স নয় এটি মানুষের ভেতরের প্রাণ, শক্তি ও নতুন কিছু করার তেজ। তরুণেরা অন্ধকার ভেঙে আলো ছড়ায়, পুরোনো ভুল ভেঙে নতুন সত্য গড়ে তোলে। কবি নিজেকে বনের পাখির মতো মনে করেন, যে নিজের আনন্দে গান করে, আর সেই গান মানুষকে জাগিয়ে তোলে। তিনি বলেন, সত্যিকারের তরুণ সেই, যার শক্তি অফুরন্ত, যার আশা সীমাহীন এবং যে ভয়কে জয় করতে জানে। অনেক সময় দেখা যায়, বয়স কম হলেও কেউ মানসিকভাবে বুড়ো; আবার কেউ বৃদ্ধ হয়েও হৃদয়ে তরুণ। যৌবন তাঁদের মধ্যেই থাকে, যাঁরা কাজ করেন, দুঃসাহস দেখান এবং মানবতার কল্যাণে এগিয়ে আসেন। কবি উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন যে পর্বতারোহী, বৈমানিক, সৈনিক, বিজ্ঞানী সবাই যৌবনের প্রতীক, কারণ তাঁরা ঝুঁকি নিতে ভয় পান না। তাঁর মতে, পৃথিবীর জীর্ণ, ক্ষতিগ্রস্ত কাঠামো ভেঙে নতুনভাবে গড়ার দায়িত্ব তরুণদেরই। খোদা মানুষকে হাত দিয়েছেন সৃষ্টি করার জন্য, ভিক্ষা করার জন্য নয় এ কথাও তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন। তাই নজরুল মনে করেন, যৌবনই মানুষের সবচেয়ে বড় শক্তি, যা জাতি, দেশ ও পৃথিবীকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
যৌবনের গান প্রবন্ধের মূলভাব বড় করে
কাজী নজরুল ইসলাম এই প্রবন্ধে মূলত যৌবনের শক্তি, উদ্দীপনা, উদ্যম এবং পৃথিবী বদলে দেওয়ার ক্ষমতা। এই চারটি দিককে মহিমান্বিতভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, সত্যিকার অর্থে যৌবন শুধু বয়স নয়, বরং এটি হচ্ছে মানসিক শক্তি, নিত্য-নতুন কিছুকে গ্রহণ করার সাহস, ভুলকে ভাঙার দুঃসাহস, মানবকল্যাণে এগিয়ে যাওয়ার তেজ।
নজরুল নিজেকে ‘কর্মী নয়, ধ্যানী’ বলে নম্রভাবে উপস্থাপন করলেও তার লেখার মাধ্যমে তিনি দেখান যে কবিতাও মানুষের ঘুম ভাঙাতে পারে, সমাজকে আলো দেখাতে পারে। তিনি বলেন, কবি বনের পাখির মতো, সে নিজের আনন্দে গান করে, কিন্তু সেই গান অনেক সময় মানুষের মন জাগিয়ে তোলে। অর্থাৎ, যৌবনের গান হচ্ছে এমন গান, যা অজান্তেই মানুষের মন বদলে দেয়, শক্তি জোগায়।
প্রবন্ধের বড় অংশ জুড়ে তিনি তরুণদের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন। তার মতে যৌবন হলো আলোর দেবতা, যে অন্ধকার ভেদ করে সামনে এগিয়ে যায়। যে জায়গায় ভয়, জড়তা, অন্ধবিশ্বাস, মিথ্যা আর দহনের দাপট বেশি সেই জায়গাতেই তরুণেরা আলো ছড়ায়। তাই তিনি যৌবনকে রঙের খেলা, ভোরের সূর্যোদয় ও নবজন্মের প্রতীক হিসেবে দেখেছেন।
নজরুল দেখিয়েছেন—
বার্ধক্য মানে কেবল বয়স নয়।
অনেকে তরুণ হয়েও মানসিকভাবে পুরোনো, ভীত, নিষ্ক্রিয়। আবার বহু বৃদ্ধ আছেন, যাঁদের ভেতরে থাকে দুঃসাহসী, উজ্জ্বল, অবিনশ্বর যৌবন।
যে মানুষের—
- শক্তি অগাধ
- গতি ঝঞ্জার মতো
- আশা সীমাহীন
- কাজ করার তেজ দুর্দমনীয়
- দুঃসাহস প্রবল
- আর মানবকল্যাণের ইচ্ছা অফুরন্ত
সেই মানুষই সত্যিকার তরুণ।
এই প্রবন্ধে কবি সারা পৃথিবীর উদাহরণ দেন মুসোলিনি, লেনিন থেকে শুরু করে মরু বেদুইন, বরফ পর্বতের অভিযাত্রী, আকাশের পথিক, সমুদ্র-গভীরতার সন্ধানী, দুর্বিক্ষ–ব্যথিত মানুষের সেবক সবাইকে তিনি যৌবনের প্রতীক হিসেবে দেখিয়েছেন। অর্থাৎ, যে কাজের জন্য প্রাণ দিতে হয়, যে স্বপ্নের জন্য জীবন বাজি রাখতে হয় সেইসব কাজ তরুণেরাই করে।
নজরুল বারবার বলেছেন—
যৌবন মানবতা, উদারতা, শক্তি, দয়া, ন্যায়, অগ্রগতি সব কিছুর মূল চালিকা শক্তি।
যে ধর্ম মানুষকে বেঁধে রাখে, পিছিয়ে রাখে, ভয় দেখায় তাকে তিনি বার্ধক্যের প্রতীক বলেছেন। আর যে ধর্ম মানুষকে সামনে এগোতে শেখায়, অন্যায় ভাঙতে শেখায়, নতুন সৃষ্টি করতে শেখায় তা হচ্ছে তরুণদের ধর্ম। তাই তিনি বলেন—
আমাদের ধর্ম ইসলাম, কিন্তু আমাদের প্রাণের ধর্ম যৌবন।
সবশেষে কবি তরুণদের একটি দায়িত্ব তুলে ধরেন—
যে পুরোনো, ক্ষতিগ্রস্ত, জীর্ণ কাঠামো মানবতার জন্য বিপদ তাকে ভেঙে নতুন পৃথিবী গড়তে হবে।
কারণ খোদা মানুষকে হাত দিয়েছেন সৃষ্টি করার জন্য, কাজ করার জন্য ভিক্ষা করার জন্য নয়।
অতএব, পুরো প্রবন্ধের সবচেয়ে বড় কথা হলো যৌবন মানে অদম্য প্রাণশক্তি।
Related Posts
- একটি তুলসী গাছের কাহিনী গল্পের মূল বিষয়বস্তু – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- সাহিত্যে খেলা প্রবন্ধের মূলভাব ও সম্পূর্ণ প্রবন্ধ সহজ ভাষায়
- আমি কিংবদন্তির কথা বলছি অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর -একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- অপরিচিতা গল্পের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর (জ্ঞানমূলক প্রশ্ন) – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন মূলভাব ও প্রমিতরূপ