মিনু গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর – ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা

বনফুল রচিত “মিনু” গল্পটি হলো একটি কল্পনাপ্রবণ, বোবা ও আংশিক বধির (কালা) দশ বছরের অনাথ মেয়ের মর্মস্পর্শী গল্প। সে তার দূরসম্পর্কের পিসেমশায় যোগেন বসাকের বাড়িতে আশ্রিত। মিনুর বিশেষত্ব হলো, তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় (অতীন্দ্রিয় উপলব্ধি) এবং কল্পনাশক্তি। এই পোস্টে মিনু গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর – ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম।

মিনু গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন

সৃজনশীল প্রশ্নঃ ১। [বোর্ড বইয়ের প্রশ্ন]
বন্যা সারা সকাল মিসেস সালমার বাসায় কাজ করে, তাকে খালাম্মা বলে ডাকে। সে মিসেস সালমার যাবতীয় কাজে সাহায্য করার চেষ্টা করে। দিবা শাখার একটি স্কুলেও সে পড়ে। পড়ালেখায় সে পিছিয়ে নেই। শুধু প্রকৃতির কোনো কিছুর সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে নি; সে সময়ই বা তার কোথায়? তার নিজের জীবন আর কাজ নিয়েই সে ব্যস্ত। প্রকৃতিতে নয়, নিজের কাজেই সে শান্তি খুঁজে পায়। বন্যা তার কাজ দিয়ে, কথা দিয়ে মিসেস সালমাকে এমন করে নিয়েছে যে মিসেস সালমাও বন্যাকে পরিবারের অন্য সদস্যের মতোই মনে করে।

ক. মিনু কার বাড়িতে থাকত?

খ. ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

গ. অবস্থানগত দিক থেকে উদ্দীপকের বন্যা ও মিনুর মধ্যে যে বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায়, তা ব্যাখ্যা কর।

ঘ. ‘বন্যার শিক্ষা ছিল প্রাতিষ্ঠানিক, আর প্রকৃতি হচ্ছে মিনুর পাঠশালা’- কথাটি বিশ্লেষণ কর।

উত্তরঃ

ক. মিনু তার এক দূরসম্পর্কের পিসিমার বাড়িতে থাকত।

খ. ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলতে চোখ, কান, নাক, জিভ ও ত্বক এই পাঁচ ইন্দ্রিয়ের বাইরে মানুষের বিশেষ ও তীক্ষ্ণ অনুভব করার ক্ষমতাকে বোঝানো হয়েছে।

ছোট মেয়ে মিনু বোবা ও বধির। জোরে চিৎকার করলে সে কথা কিছুটা বুঝতে পারে। আবার মানুষের ঠোঁটের নড়াচড়া ও মুখের ভাব দেখে অনেক কিছু বুঝে নেয়। এই তীক্ষ্ণ অনুভূতিশক্তির সাহায্যে মিনু এমন অনেক বিষয় বুঝতে পারে এবং এমন কাজ করতে পারে, যা সাধারণ মানুষের পক্ষে কঠিন। মিনুর এই বিশেষ অনুভব করার ক্ষমতাকেই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলা হয়েছে।

গ. অবস্থানের দিক থেকে উদ্দীপকের বন্যা ও মিনুর মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়।
এই পৃথিবীতে ভালো ও মন্দ দু’ধরনের মানুষই আছে। ভালো মানুষ পরকেও আপন করে নেয়, আর খারাপ মানুষ আপনজনকেও সহজে দূরে সরিয়ে দেয়।

উদ্দীপকের বন্যা মিসেস সালমার বাড়িতে কাজ করে। সালমা তার আত্মীয় না হলেও বন্যাকে স্কুলে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। এমনকি বন্যার ভালো গুণের কারণে তাকে পরিবারের একজন সদস্যের মতোই মনে করেন। অন্যদিকে ‘মিনু’ গল্পের মিনু দূরসম্পর্কের পিসিমার বাড়িতে থাকলেও তাকে অনেক কাজ করতে হয়। সেখানে বন্যার মতো করে পড়াশোনার সুযোগ সে পায়নি। বন্যা ও মিনু দুজনেই অন্যের বাড়িতে কাজ করে, কিন্তু অবস্থার ভিন্নতার কারণে বন্যা সুযোগ-সুবিধা পায়, আর মিনু বঞ্চিত হয়। এই দিক থেকেই তাদের মধ্যে বৈসাদৃশ্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

ঘ. ‘বন্যার শিক্ষা ছিল প্রাতিষ্ঠানিক, আর প্রকৃতি হচ্ছে মিনুর পাঠশালা’—এই মন্তব্যটি যথার্থ।
শিক্ষা মানুষের জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। শিক্ষা লাভ করা মানুষের জন্মগত অধিকার। শুধু স্কুল-কলেজ থেকেই নয়, মানুষ জীবনের নানা অভিজ্ঞতা ও পরিবেশ থেকেও শিক্ষা অর্জন করে এবং সেই শিক্ষা বাস্তব জীবনে কাজে লাগায়।

উদ্দীপকের বন্যা ও ‘মিনু’ গল্পের মিনুর শিক্ষাগ্রহণের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য আছে। বন্যা সকালে মিসেস সালমার বাড়িতে কাজ করে এবং পরে দিবা শাখার স্কুলে পড়াশোনা করে। সে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে, তবে জীবনের বাইরের বাস্তব জগৎ থেকে তেমন শিক্ষা পায়নি। অন্যদিকে মিনু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না পেলেও প্রকৃতির কাছ থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করেছে।

‘মিনু’ বাকপ্রতিবন্ধী হলেও তার অনুভব করার ক্ষমতা খুব তীব্র। সে অন্যের বাড়িতে কাজ করে এবং প্রকৃতির মধ্যেই শেখার সুযোগ খুঁজে নেয়। উদ্দীপকের বন্যার মতো তার বন্ধুত্ব স্কুলে নয়, বরং প্রকৃতির সঙ্গে। প্রকৃতিই তার শিক্ষা ও সাহচর্যের জায়গা। তাই বলা যায়, বন্যার শিক্ষা ছিল প্রাতিষ্ঠানিক, আর প্রকৃতি ছিল মিনুর পাঠশালা। সুতরাং মন্তব্যটি যথার্থ।


সৃজনশীল প্রশ্নঃ ২।
অরুণ তার বাবা-মাকে খুব কমই দেখে। তারা বিদেশে কাজ করেন। দাদি-দাদার কাছে বড় হচ্ছে অরুণ। সে তার ঘরের দেয়ালে রঙিন চক দিয়ে অদ্ভুত সব জীবজন্তু, রাক্ষস-পরীর ছবি আঁকে। দাদি তাকে ডাকলে সে বলে, “দাদি, ওরা আমার বন্ধু। ওরা আমাকে গল্প শোনায়।” স্কুলের বন্ধুরা তাকে ‘অদ্ভুত’ বলে দূরে রাখে।
ক. ‘ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়’ বলতে মিনুর কী ক্ষমতা বোঝানো হয়েছে?
খ. মিনু কেন কয়লাকে তার শত্রু মনে করত?
গ. উদ্দীপকের অরুণের কল্পনাপ্রবণতা ‘মিনু’ গল্পের কোন দিকটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “নিঃসঙ্গতা শিশুমনে এক বিকল্প জগৎ সৃষ্টির প্রেরণা দেয়” — উদ্দীপক ও গল্পের আলোকে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৩।
গ্রামের প্রতিবন্ধী শিশু রবি কথা বলতে পারে না, কিন্তু সে আশেপাশের সব গাছপালা, পাখি, পশুর সাথে ইশারায় যোগাযোগ করে। তার কাছে রোদ-বৃষ্টি, পাতার শব্দ সবই কথা বলে। একদিন ঘুড়ি উড়ানোর সময় সে আকাশের মেঘকে ইশারায় ডাকে, মনে হয় মেঘ তার হাসি বুঝতে পারে। গ্রামের লোকজন তাকে ‘পাগল’ বলে, কিন্তু রবি তার নিজের জগতে সম্পূর্ণ সুখী।
ক. মিনু শুকতারা কে কী নামে ডাকত?
খ. “সে জগতের সঙ্গে বাইরের জগতের মিল নেই” — লেখক কেন এ কথা বলেছেন?
গ. উদ্দীপকের রবির প্রকৃতির সাথে যোগাযোগের ক্ষমতা ‘মিনু’ গল্পের কোন বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “প্রকৃতিই যাদের ভাষা, তাদের জন্য সমাজের ভাষা অপ্রয়োজনীয়” — উদ্দীপক ও গল্পের আলোকে যুক্তি দাও।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৪।
অনাথ আশ্রমে থাকা সুমি কোন দিনই কথা বলে না। সে একটি পুরোনো পুতুলকে ‘মায়া’ নাম দিয়েছে, তাকে নিয়েই সারাদিন কাটায়। পুতুলটির সাথে খেলা করে, কথা বলে, এমনকি খাওয়ায়ও। কেয়ারটেকার যখন জিজ্ঞেস করে, “সুমি, তুই কেন কথা বলিস না?” সুমি শুধু পুতুলটিকে আরো জড়িয়ে ধরে।
ক. মিনু তার ঘটিটার কী নাম রেখেছিল?
খ. মিনু কেন প্রতিদিন ছাদে যেত?
গ. উদ্দীপকের সুমির পুতুলের প্রতি আকর্ষণ ‘মিনু’ গল্পের মিনুর কোন আচরণের সাথে তুলনীয়? ব্যাখ্যা করো।
. “আবেগ প্রকাশের ভাষা শুধু মুখের কথায় সীমাবদ্ধ নয়” — উদ্দীপক ও গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৫।
মি. রহমান এক বিত্তবান ব্যবসায়ী। তিনি একটি অনাথালয়কে মাসিক অনুদান দেন। পত্রিকায় তাঁর দানের খবর বের হলে তিনি খ্যাতি পান। কিন্তু অনুদানের টাকার বিনিময়ে তিনি অনাথালয়ের শিশুদের দিয়ে তার কারখানায় হালকা কাজ করান। শিশুদের কেউ কেউ মনে করে, তিনি তাদের ‘রক্ষক’।
ক. যোগেন বসাক মিনুকে কীভাবে কাজে লাগাতেন?
খ. “মহৎ হয়ে সুবিধাই হয়েছে যোগেন বসাকের” — লেখক কেন এমন মন্তব্য করেছেন?
গ. উদ্দীপকের মি. রহমানের আচরণ ‘মিনু’ গল্পের কার আচরণের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? যুক্তি দাও।
ঘ. “সমাজে দানশীলতার মুখোশের আড়ালে শোষণ চালানো হয়” — উদ্দীপক ও গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৬।
জর্জেস একটি অটিস্টিক শিশু। সে সংখ্যা আর আকৃতির মধ্যে অদ্ভুত সম্পর্ক খুঁজে পায়। পাতার শিরায়, পাখির ডানায় সে গাণিতিক নকশা দেখে। স্কুলের শিশুরা তাকে বুঝতে না পারলেও তার শিক্ষক লক্ষ্য করেন, জর্জেস প্রকৃতির ভাষায় গণিত শেখে। সে তার খাতায় আঁকে গাছপালার ‘গণিত’।
ক. মিনু উনুনের কী নাম রেখেছিল?
খ. মিনু কেন মনে করত শুকতারা কয়লা ভাঙতে ওঠে?
গ. উদ্দীপকের জর্জেসের প্রকৃতি-বিষয়ক উপলব্ধি ‘মিনু’ গল্পের মিনুর কোন দিকটিকে স্মরণ করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “প্রকৃতি প্রত্যেক শিশুর জন্য এক অনন্য শিক্ষকের ভূমিকা পালন করে” — উদ্দীপক ও গল্পের আলোকে যুক্তি দাও।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৭।
লিমা একটি দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। তার বাবা-মা সারাদিন কাজে ব্যস্ত। সে একা বাড়িতে থেকে রান্নাঘরের বাসনগুলোকে ‘পরিবার’ মনে করে। চামচটাকে বলে ‘ছোটভাই’, প্যানটাকে বলে ‘কাকিমা’। তাদের সাথে সে কথোপকথন চালায়। একদিন তার মা দেখে ফেলে এবং কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, “মা সময় দিতে পারছি না, মাপ করিস।”
ক. মিনু গেলাসগুলোর কী নাম দিয়েছিল?
খ. “মিনুর বিশ্বাস সে-ও তার মতো কয়লা ভাঙতে উঠেছে” — এই বিশ্বাসের কারণ কী?
গ. উদ্দীপকের লিমার বাসনের সাথে কথোপকথন ‘মিনু’ গল্পের কোন প্রবণতারই প্রতিফলন? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “নিঃসঙ্গতা শিশুকে জড়বস্তুর মধ্যেও প্রাণের সন্ধান দেয়” — উদ্দীপক ও গল্পের আলোকে মন্তব্যটি বিচার করো।

নিচে মিনু গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর পিডিএফ ফাইল দেওয়া হল।

মিনু গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর পিডিএফ

আরও পড়ুনঃ মিনু গল্পের MCQ | বহুনির্বাচনি প্রশ্ন উত্তর

Related Posts

Leave a Comment