লালনের গান ‘সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে’ এই গ্রন্থে মানবধর্ম কবিতা হিসেবে নেওয়া হয়েছে। এই কবিতায় লালন ফকির মানুষের জাত ও ধর্ম পরিচয় নিয়ে গভীর প্রশ্ন তুলেছেন। এই পোস্টে মানবধর্ম কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর -৮ম শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম।
Table of Contents
মানবধর্ম কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
| সৃজনশীল প্রশ্নঃ ১। [বোর্ড বইয়ের প্রশ্ন] ‘জগৎ জুড়িয়া এক জাতি আছে সে জাতির নাম মানুষ জাতি; এক পৃথিবীর স্তন্যে লালিত একই রবি শশী মোদের সাথি। বাহিরের ছোপ আঁচড়ে সে লোপ ভিতরের রং পলকে ফোটে বামুন, শূদ্র, বৃহৎ, ক্ষুদ্র কৃত্রিম ভেদ ধুলায় লোটে।’ ক. ‘কূপজল’ অর্থ কী? খ. ‘জাতপাত নিয়ে বাড়াবাড়ি করা উচিত নয় কেন?- ব্যাখ্যা করো। গ. উদ্দীপক ও ‘মানবধর্ম’ কবিতায় মানুষের যে মিল পাওয়া যায় তা আলোচনা করো। ঘ. উদ্দীপক ও ‘মানবধর্ম’ কবিতায় যে-ধর্ম চর্চার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে তা মূল্যায়ন করো। |
উত্তরঃ
ক. ‘কূপজল’ শব্দের অর্থ- কুয়োর পানি।
খ. মানুষের আসল পরিচয় তার জাতপাত নয়, তাই এসব বিষয় নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করা ঠিক নয়।
লালন ফকির নিজের জাত কী, তা নিজেই জানতেন না। কিন্তু তিনি বুঝতেন, জাতপাত মানুষের মধ্যে অকারণে বিভেদ তৈরি করে। তাঁর মতে, মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো মনুষ্যত্ব। তাই তিনি বিশ্বাস করতেন, জাতপাত নিয়ে অহেতুক গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়।
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘মানবধর্ম’ কবিতার সাদৃশ্য এ স্থানে যে, উভয়ক্ষেত্রে মনুষ্যত্বের পরিচয় প্রদান করা হয়েছে।
‘মানবধর্ম’ কবিতায় বলা হয়েছে, জাত মানুষের শুধু বাইরের পরিচয় বোঝায়। মানুষের পোশাক-আশাক ও সাজসজ্জার সঙ্গে তার জাতের একটা পরিচয় তৈরি হয়। কিন্তু লালন শাহ এসব বাহ্যিক পরিচয়কে কৃত্রিম মনে করেছেন। কারণ তাঁর মতে, মানুষের আসল পরিচয় হলো মনুষ্যত্ব।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে আসলে একটাই জাত আছে তা হলো মানুষ জাতি। একই প্রকৃতি ও পরিবেশে পৃথিবীর সব মানুষ বড় হয়। বাইরে তাদের রং বা পরিচয় আলাদা হতে পারে, কিন্তু ভেতরে সবার রক্তের রং একই লাল। এসব দিক বিবেচনায় বলা যায়, মনুষ্যত্বের পরিচয় তুলে ধরার ক্ষেত্রে উদ্দীপকটি ‘মানবধর্ম’ কবিতার ভাবনার সঙ্গে মিল রাখে।
ঘ. প্রদত্ত উদ্দীপক এবং ‘মানবধর্ম’ কবিতায় মানবধর্ম চর্চার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
মানবধর্ম’ কবিতায় অসাম্প্রদায়িক চেতনা থেকে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি বা মিথ্যা অহংকার করতে নিষেধ করা হয়েছে। লালন শাহ মানুষের জাত-পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কারণ জন্মের সময় বা মৃত্যুর সময় কেউ তসবিহ বা জপমালা ধরে ধর্মীয় পরিচয় বড় করে তোলে না। তখন মানুষ শুধু মানুষ হিসেবেই থাকে।
উদ্দীপকের কবিতাংশে মানুষকে সব জাত-পাতের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষ হিসেবে দেখা হয়েছে। এখানে জাত-পাত কিংবা ধনী-দরিদ্রের ভেদাভেদকে কৃত্রিম বলা হয়েছে। কারণ এসব বিভেদ মানুষের তৈরি। একইভাবে লালন শাহ রচিত ‘মানবধর্ম’ কবিতায় ধর্ম ও বর্ণের পরিচয়ের বাইরে এক মানবধর্মে বিশ্বাস করার কথা বলা হয়েছে।
উদ্দীপক ও ‘মানবধর্ম’ কবিতায় ধর্ম হিসেবে শুধু মানবধর্মকেই সবচেয়ে বড় করে দেখা হয়েছে। মানুষের আসল সার্থকতা মনুষ্যত্বের পরিচয় দেওয়ার মধ্যেই নিহিত। সবার উপরে মানুষ এই বিশ্বাসকে ধারণ করেই আমাদের এগিয়ে চলা উচিত। এই ভাবনাকে সামনে রেখেই উদ্দীপক ও ‘মানবধর্ম’ কবিতায় মানবধর্ম চর্চার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
| সৃজনশীল প্রশ্নঃ ২। বামুন শূদ্র বৃহৎ ক্ষুদ্র কৃত্রিম ভেদ ধুলায় লোটে। রাগে অনুরাগে নিদ্রিত জাগে আসল মানুষ প্রকট হয়, বর্ণে বর্ণে নাইরে বিশেষ নিখিল জগৎ ব্রহ্মময়। বংশে বংশে নাহিকো তফাত বনেদি কে আর গর-বনেদি ক. লালন শাহ্ কী ধরনের কবি? খ. ‘লালন কয়, জেতের কী রূপ, দেখলাম না এ নজরে’- এ কথা দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে? গ. উদ্দীপকে ‘মানবধর্ম’ কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে- তা ব্যাখ্যা কর। ঘ. “উদ্দীপক ও ‘মানবধর্ম’ কবিতার মূল সুর একই”- উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ কর। |
| সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৩। মহাত্মা গান্ধী অহিংস আন্দোলনে অবিসংবাদিত নেতা। তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন। জাত ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে সব মানুষকে তিনি আপন করে নিয়েছিলেন। মানুষকে তিনি সবার উপরে স্থান দিতেন। তাই তিনি মানবতাবাদী মহান নেতা। ক. জগৎজুড়ে লোকে কী নিয়ে গৌরব করে? খ. ‘তসবি’ ও ‘মালা’ দিয়ে জাত ভিন্ন করা যায় না কেন? গ. উদ্দীপকের সাথে ‘মানবধর্ম’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ দিক বিচার কর। ঘ. “উদ্দীপকে মহাত্মা গান্ধীর চেতনা যেন ‘মানবধর্ম’ কবিতার কবির চেতনারই অনুরূপ”- এ বক্তব্যের সত্যতা নিরূপণ কর। |
| সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৪। মার্গারেট ম্যাথিউ প্যারিসের অধিবাসী। খ্রিস্টান হওয়া সত্ত্বেও সব ধর্মের মানুষের সাথেই তিনি প্রাণ খুলে মেশেন। দুর্দিনে মানুষের পাশে দাঁড়ানোকেই তিনি মানুষের ধর্ম বলে জানেন। তাঁর কাছে সাদা-কালো, ধনী-দরিদ্রের কোনো পার্থক্য নেই। মানুষের সেবা করতে পারলে তিনি নিজেকে খুব সুখী মনে করেন। ক. কবি লালন শাহ্ কত খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন? খ. ‘জগৎ বেড়ে জেতের কথা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? গ. ‘মানবধর্ম’ কবিতা ও উদ্দীপকের মধ্যে সাদৃশ্য কোথায়? ব্যাখ্যা কর। ঘ. ‘মানবধর্ম’ কবিতার সমগ্র ভাব উদ্দীপকে প্রকাশ পেয়েছে কি? যুক্তিপূর্ণ মতামত দাও। |
| সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৫। মধ্যবিত্ত পরিবারের যোগেন সন্তানের জন্মদিনে গ্রামের অন্যান্যদের সাথে বিত্তশালী রূপেশ বাবুকেও নিমন্ত্রণ করেন। নিমন্ত্রণে এসে রূপেশ বাবু দেখেন মালিনী শোভা দুই হাতে মসলা বাটছে। এ দৃশ্য দেখে না খেয়ে তিনি জরুরি কাজের কথা বলে বাড়ি চলে যান। তাঁর এ আচরণে উপস্থিত সকলেই মর্মাহত হন। ক. লালন শাহের গুরু কে ছিলেন? খ. কূপজল ও গঙ্গাজল কীভাবে অভিন্ন সত্তা? বুঝিয়ে লেখ। গ. উদ্দীপকে রূপেশ বাবুর আচরণে ‘মানবধর্ম’ কবিতার যে দিকটি ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা কর। ঘ. মালিনী শোভার মতো মানুষের মূল্যায়নের জন্য ‘মানবধর্ম’ কবিতার বক্তব্যের যথার্থতা বিচার কর। |
| সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৬। ইরিনাপুর হিন্দু অধ্যুষিত একটি এলাকা। তবে মুসলমানদের সাথে তাদের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। সম্মিলিতভাবে তারা জমির শেখকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন। পূজা-পার্বণ, বিয়ে-শাদি, ঈদ-উৎসবে বোঝার উপায় থাকে না উৎসব কাদের। এসব ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন জমির শেখ। জনসেবায় অদ্বিতীয় এই ব্যক্তিত্ব সকলের প্রিয় মানুষ। কিন্তু প্রতিবেশী ছমির ব্যাপারী বিষয়টিকে বাড়াবাড়ি বলে মনে করেন। ক. কূপজল ও গঙ্গাজলকে কখন ভিন্ন বলা যায়? খ. ‘মানবধর্ম’ কবিতায় মানবজাতিকে কীভাবে অভিন্ন হিসেবে উপস্থাপন করা হয়? গ. উদ্দীপকের ছমির ব্যাপারীর মানসিকতায় লালনের অনুপস্থিত দিকটি ব্যাখ্যা কর। ঘ. উদ্দীপকের চেয়ারম্যানের মাঝে ফুটে ওঠা দিকটিই যেন ‘মানবধর্ম’ কবিতার মূলকথা- যুক্তিসহ বুঝিয়ে লেখ। |
| সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৭। জীর্ণ-বস্ত্র, শীর্ণ-গাত্র, ক্ষুধায় কণ্ঠ ক্ষীণ- ডাকিল পান্থ, ‘দ্বার খোলো বাবা, খাইনি তো সাত দিন!’ সহসা বন্ধ হলো মন্দির, ভুখারি ফিরিয়া চলে, তিমির রাত্রি, পথ জুড়ে তার ক্ষুধার মানিক জ্বলে! ভুখারি ফুকারি’ কয়, ‘ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয়!’ ক. কীসের মধ্য দিয়ে লালন শাহ্-এর দর্শন প্রকাশ পেয়েছে? খ. গঙ্গাজল ও কূপজল ভিন্ন নয় কেন? বুঝিয়ে লেখ। গ. উদ্দীপকে প্রতিফলিত ভাবটি ‘মানবধর্ম’ কবিতর কোন ভাবের সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর। ঘ. “উদ্দীপকে বর্ণিত মানুষের অসহায়ত্ব মোচনের আহ্বান ‘মানবধর্ম’ কবিতায় ধ্বনিত হয়েছে।”- মন্তব্যটি বিচার কর। |
| সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৮। অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরণ, কান্ডারী! আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তি পণ! ‘হিন্দু না ওরা মুসলিম?’ ওই জিজ্ঞাসে কোন্ জন? কাণ্ডারী! বল ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা’র! ক. জাতের ফাতা কোথায় বিক্রি করার কথা বলা হয়েছে? খ. “জগৎ বেড়ে জেতের কথা, লোকে গৌরব করে যথা-তথা”-বুঝিয়ে লেখ। গ. উদ্দীপকটি ‘মানবধর্ম’ কবিতার সঙ্গে কোন দিক দিয়ে সাদৃশ্যপূর্ণ? ঘ. “সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটিই কবিতার মূল বিষয়বস্তু”- মূল্যায়ন কর। |
নিচে মানবধর্ম কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর পিডিএফ ফাইল দেওয়া হল।