“বায়ান্নর দিনগুলো” বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিচারণা সত্যিই একটি গুরুত্বপর্ণী রচনা, যা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তাঁর অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরা হয়েছে। এই পোস্টে বায়ান্নর দিনগুলো অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর -একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা দিলাম।
Table of Contents
বায়ান্নর দিনগুলো অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর (বোর্ড পরীক্ষার)
১। “মানুষের যখন পতন আসে তখন পদে পদে ভুল হতে থাকে”-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: লেখক এ কথা বলেছেন ভাষা আন্দোলনের সময় সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের প্রসঙ্গে। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন শুরু হলে, সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করে। কিন্তু এতে আন্দোলন থামেনি; বরং তা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। মুসলিম লীগ সরকারের অদূরদর্শিতার কারণে পুলিশের গুলিতে অনেক মানুষ প্রাণ হারান। এই প্রেক্ষাপটে লেখক মন্তব্য করেছেন যে, যখন মানুষের পতন আসে, তখন তাদের পদে পদে ভুল হয়।
২। ‘নাশতা খাবার ইচ্ছা আমাদের নাই।’- কে, কেন প্রসঙ্গে একথা বলেছে?
উত্তর: এই উক্তিটি কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দিনের প্রসঙ্গে। তারা ঢাকা জেল থেকে ফরিদপুর জেলে স্থানান্তরিত হলে, অবস্থান জানিয়ে প্রতিবাদ জানানোর কৌশল হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান সকালে নাশতা করতে চেয়েছিলেন। বিনা বিচারে রাজবন্দিদের কারাগারে আটকে রাখার প্রতিবাদে তারা অনশন ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেন। ফরিদপুরে যাওয়ার সময় জেল কর্তৃপক্ষ তাদের গ্রহণ না করায়, তারা সিপাহিদের ব্যারাকের বারান্দায় রাত কাটান। সকালে তিনি সুবেদারকে বলেন, “জেল অফিসাররা না আসলে তো আমাদের জেলে নিবে না, চলেন কিছু নাশতা করে আসি।” এর মাধ্যমে তিনি সহকর্মীদের কাছে তাদের অবস্থান জানাতে চেয়েছিলেন।
৩। “যদি এই পথে মৃত্যু এসে থাকে তবে তাই হবে”-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: শেখ মুজিবুর রহমান এই উক্তি দ্বারা পাকিস্তান সরকারের নিপীড়নের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিবাদ ব্যক্ত করেছেন। পাকিস্তানি সরকার বিনা কারণে জনসাধারণকে জেলে বন্দি করে রাখে। শেখ মুজিব ও মহিউদ্দিন, যাঁরা জেলবন্দি, তাদের মধ্যে অনশন ধর্মঘটের মাধ্যমে সরকারের অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সংকল্প দৃঢ় ছিল। তিনি বলেছেন যে, শোষণের অবসান না হওয়া পর্যন্ত যদি তাদের মৃত্যুও হয়, তারা তা হাসিমুখে গ্রহণ করবেন, কিন্তু প্রতিবাদ থামাবেন না।
৪। “… অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে যদি মরতে পারি, সে মরাতেও শান্তি আছে।”- লেখক এ কথা বলেছিলেন কেন?
উত্তর: এই উক্তিটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। তিনি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। ১৯৫২ সালে পাকিস্তানি শাসনের অপশাসন এবং রাজবন্দিদের বিনাবিচারে আটক রাখার প্রতিবাদে তিনি অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, যদি এই প্রতিবাদের ফলে তার মৃত্যু হয়, তবে সেটিও একটি শান্তির মৃত্যু হবে।
৫। “আমরা অনশন ভাঙব না” উক্তিটি বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: “আমরা অনশন ভাঙব না” উক্তিটি রাজবন্দিদের সংগ্রামী দৃঢ়তা প্রকাশ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সহকর্মী মহিউদ্দিন আহমদ অনশন ধর্মঘট শুরু করেন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অপশাসন ও বিনাবিচারের প্রতিবাদে। তারা দৃঢ়ভাবে জানান যে, তাদের ন্যায্য দাবি না মানা পর্যন্ত তারা অনশন ভাঙবেন না।
৬। “ভরসা হলো, আর দমাতে পারবে না”- কেন?
উত্তর: এই উক্তিটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একুশে ফেব্রুয়ারির ঘটনার পর বলেন, যখন তিনি বাংলাদেশে হরতাল পালনের খবর শোনেন। একুশে ফেব্রুয়ারির ঘটনায় গুলি চালানোর পর জনগণের মধ্যে সচেতনতা ও প্রতিবাদের জোয়ার উঠে। সারাদেশে সাধারণ মানুষ হরতাল পালন করে ভাষার সংগ্রামকে সমর্থন করে, যা বঙ্গবন্ধুর আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে তোলে। এ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তিনি বিশ্বাস করেন, পাকিস্তানি শাসকরা আর জনগণকে দমন করতে পারবে না।
অনুশীলনের জন্য বায়ান্নর দিনগুলো অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
৭। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও মহিউদ্দিনকে কেন নারায়ণগঞ্জ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়?
উত্তর: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও মহিউদ্দিনকে নারায়ণগঞ্জ থানায় নিয়ে যাওয়া হয় কারণ তারা সকাল ১১টায় জাহাজ ধরতে ব্যর্থ হন। ঢাকা থেকে ফরিদপুরে যাওয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জ ঘাট থেকে জাহাজে উঠতে হয়। একটি জাহাজ ছিল সকাল ১১টায় এবং অন্যটি রাত ১টায়। সামান্য দেরি হওয়ায় ১১টার জাহাজ ধরতে না পারায়, পুলিশ তাদের রাত ১টা পর্যন্ত হেফাজতে রাখতে নারায়ণগঞ্জ থানায় নিয়ে যায়।
৮। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লেবুর রস দিয়ে লবণ পানি খেলেন কেন?
উত্তর: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনশনরত অবস্থায় লেবুর রস দিয়ে লবণ পানি খেতে বাধ্য হন, কারণ এতে কোনো ফুড ভ্যালু নেই। অনশনের ফলে তিনি ও মহিউদ্দিনের শারীরিক অবস্থা ক্রমশ অবনতি হতে থাকে। তাদের নাকের ভেতর নল ঢুকিয়ে তরল খাবার খাওয়ানোর ফলে ঘা হয়ে যায়। তাই তারা ফুড ভ্যালু নেই এমন খাবার হিসেবে কাগজি লেবুর রস দিয়ে লবণ পানি গ্রহণ করতেন।
৯। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গোপনে কয়েদিকে দিয়ে কাগজ আনালেন কেন?
উত্তর: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গোপনে কয়েদিকে দিয়ে কাগজ আনান কারাবন্দি অবস্থায় তাদের অবস্থান জানাতে। অনশনের ফলে তার ও মহিউদ্দিনের অবস্থা গুরুতর হয়ে পড়ছিল, এবং তারা বিছানা থেকে উঠতেও পারছিলেন না। তাই তিনি গোপনে কয়েদিকে দিয়ে কয়েক টুকরা কাগজ আনান, যাতে তিনি তার পরিবারের সদস্য ও সহযোদ্ধাদের কাছে তার অবস্থার কথা জানাতে পারেন।
১০। “অনেক লোক আছে, কাজ পড়ে থাকবে না”। -কথাটি ব্যাখ্যা কর
উত্তর: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই উক্তিটি জেলে অনশনরত অবস্থায় বলেন, যখন তার শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়। কর্তব্যরত ডাক্তার বলেছিলেন, “এভাবে মৃত্যুবরণ করে কি কোনো লাভ হবে?” এ প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেন, “অনেক লোক আছে, কাজ পড়ে থাকবে না।” এর মাধ্যমে তিনি বুঝাতে চেয়েছেন যে, দেশের মানুষ এবং তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা তার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জানতেন যে, তার মৃত্যুর ফলে দেশ ও জনগণের স্বার্থে কাজ থেমে যাবে না।
১১। বঙ্গবন্ধু অনশন ধর্মঘট পালন করেছিলেন কেন?
উত্তর: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানত কারামুক্তির জন্য অনশন ধর্মঘট পালন করেছিলেন। পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর শাসকগোষ্ঠীর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে বছরের পর বছর বন্দি করে রাখা হয়েছিল, যা তিনি মেনে নিতে পারেননি। তাই তিনি বাধ্য হয়ে আমরণ অনশন ধর্মঘট পালন করেন, যা তাকে মুক্তি দেওয়ার জন্য সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে।
১২। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তান সরকার মুক্তি দিয়েছিল কেন?
উত্তর: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তান সরকার বাধ্য হয়ে মুক্তি দিয়েছিল তার অনশন ধর্মঘটের কারণে। যখন তিনি জেলে আমরণ অনশন পালন করেন, তখন তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও তিনি তার আদর্শ থেকে সরে আসেননি। তার এই দৃঢ়তা ও প্রতিরোধের ফলে পাকিস্তান সরকার বাধ্য হয়েই তাকে মুক্তি দেয়।
১৩। শেখ মুজিবুর রহমানকে নারায়ণগঞ্জ থানায় নেওয়া হয়েছিল কেন?
উত্তর: জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার কারণে শেখ মুজিবুর রহমানকে নারায়ণগঞ্জ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় জেল থেকে ফরিদপুর জেলখানায় যাওয়ার জন্য তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে জাহাজে করে গোয়ালন্দ ঘাটে পৌঁছাতে হতো। সকালে ১১টায় একটি জাহাজ ছিল, কিন্তু দেরি হওয়ায় তারা ওই জাহাজ ধরতে পারেননি। তাই পুলিশ হেফাজতে রাখার জন্য তাকে নারায়ণগঞ্জ থানায় নেওয়া হয়।
১৪। সরকারের হুকুমে আপনাদের চলতে হয়- কথাটি বলতে কি বুঝানো হয়েছে।
উত্তর: এই উক্তিটি বোঝায় যে, সরকারি কর্মচারীরা সরকারের আদেশ মেনে চলতে বাধ্য। তাদের চাকরি রক্ষার জন্য সরকারী আদেশ নির্বিবাদে পালন করতে হয়, चाहे তা তাদের পছন্দ হোক বা না হোক। সরকারের নির্দেশ পালন করতে তাদের কোনো বিকল্প থাকে না, এখানে সে কথাই বলা হয়েছে।
১৫। মুক্তি দিলে খাব, না দিলে খাব না’-উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: “মুক্তি দিলে খাব, না দিলে খাব না” উক্তিটি শেখ মুজিবুর রহমানের দৃঢ় দেশপ্রেম ও চরিত্রের পরিচয় দেয়। যখন ডেপুটি জেলার তাকে খেতে বললেন, তখন তিনি এ কথা বলেন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তাকে বিনা বিচারে বন্দি করে রেখেছিল। এর প্রতিবাদে তিনি অনশন ধর্মঘট পালন করছিলেন। এই উক্তিতে তার শক্তিশালী মানসিকতা ও দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রকাশ পায়।
Related Posts
- লালসালু উপন্যাসের মূলভাব PDF সহ সংক্ষেপে ও সহজ ভাষায়
- রেইনকোট গল্পের মূলভাব – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- মাসি পিসি গল্পের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর (জ্ঞানমূলক প্রশ্ন)- একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- তাহারেই পড়ে মনে কবিতার ব্যাখ্যা ও সারমর্ম- একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- আমি কিংবদন্তির কথা বলছি জ্ঞানমূলক প্রশ্ন উত্তর -একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- আমার পথ অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর -একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- আঠারো বছর বয়স কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর -একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- প্রতিদান কবিতার ব্যাখ্যা ও মূলভাব – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- সোনার তরী কবিতার লাইন বাই লাইন ব্যাখ্যা ও মূলভাব – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- আমার পথ প্রবন্ধের মূলভাব সহজ ভাষায় – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা