রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চিত্রা’ কাব্যগ্রন্থের কবিতা ‘দুই বিঘা জমি’-তে দেখানো হয়েছে দরিদ্র কৃষক উপেনের দুঃখগাঁথা। অভাব-অনটনে উপেন তার প্রায় সব জমি বন্ধক রাখতে বাধ্য হয়; অবশিষ্ট ছিল মাত্র দুই বিঘা। এই পোস্টে দুই বিঘা জমি কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর লিখে দিলাম।
Table of Contents
দুই বিঘা জমি কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
| সৃজনশীল প্রশ্নঃ ১। [বোর্ড বইয়ের প্রশ্ন] গাজীপুর চৌরাস্তার কাছে মতিন মিয়ার ছোট্ট এক চায়ের দোকান। আর দোকানের পাশেই ‘ক’ হাউজিং সোসাইটির বিশালাকার অ্যাপার্টমেন্ট গড়ে উঠেছে। একদিন সকালে মতিন দেখে, তার দোকান অ্যাপার্টমেন্টের সীমানা প্রাচীরের মধ্যে আটকে গেছে। সে বুঝে গেল আর কিছুই করার নেই। উপায়ন্তর না দেখে সে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ফ্লাক্সে করে চা বিক্রি করে সংসার চালায় আর উদাস দৃষ্টিতে গগনচুম্বী অট্টালিকাগুলোর দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। ক. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত খ্রিষ্টাব্দে নোবেল পুরস্কার পান? খ. ‘রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে? গ. ‘ক’ হাউজিং সোসাইটির কার্যক্রমে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার বাবু সাহেব চরিত্রের যে দিকটি ফুটে উঠেছে তার বর্ণনা দাও। ঘ. উদ্দীপকের মতিন ‘দুই বিঘা জমির’ শোষিত উপেনের সার্থক প্রতিনিধি কি না- এ বিষয়ে তোমার মতামত যুক্তি সহকারে উপস্থাপন করো। |
উত্তরঃ
ক. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে নোবেল পুরস্কার পান।
খ. উদ্ধৃত চরণটির মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে, সম্পদশালীরা আরও সম্পদের মালিক হওয়ার জন্য গরিবের সর্বস্ব হরণ করে।
ধনীদের লালসা শুধু ধনের প্রতি। তারা ধনসম্পদ পেলে তৃপ্তি পায়। ধন লাভের জন্য তারা যেকোনো অন্যায় কাজ করতে পিছপা হয় না। কবিতায় দেখানো হয়েছে, কৃষক উপেনের সামান্য জমি জমিদারের নজরে পড়ে। দরিদ্র উপেনের শেষ দুই বিঘা জমিও জমিদার মিথ্যা অভিযোগ দেখিয়ে জবরদস্তি করে দখল করে নেয়।
গ. উদ্দীপকে ‘ক’ হাউজিং সোসাইটির কার্যক্রমে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার বাবু সাহেবের চরিত্রের আগ্রাসী মানসিকতার দিকটি স্পষ্টভাবে প্রকাশিত।
আমাদের সমাজে কিছু মানুষ ধন-সম্পদ অর্জনকেই জীবনের প্রধান লক্ষ্য মনে করে। তারা যেকোনো উপায়ে সম্পদ পাওয়ার চেষ্টা করে এবং এতে তৃপ্তি পায়। তাদের শক্তি ও দাপট দিয়ে অন্যায়কেও ন্যায়ের রূপ দিতে চাওয়াই যেন লক্ষ্য। ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতা ও উদ্দীপকে এ ধরনের বাস্তবতা দেখানো হয়েছে।
কবিতার বাবু সাহেবের মতোই ‘ক’ হাউজিং সোসাইটির লোকেরা আগ্রাসী। তারা সাধারণ মানুষের সম্পদ জবরদখল করে সমৃদ্ধি অর্জন করতে চায়। গরিবের সম্পদ অন্যায়ভাবে দখল করা তাদের কাছে নেশার মতো। উদাহরণস্বরূপ, তারা মতিন মিয়ার ছোট চায়ের দোকানের জায়গা দখল করে নেয়, যেমন কবিতায় বাবু সাহেব গরিব কৃষকের জমি দখল করেছিলেন।
ঘ. উদ্দীপকের ‘মতিন সর্বস্ব হারিয়ে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেনেরই সার্থক প্রতিনিধি হয়ে উঠেছে।
আলোচ্য কবিতায় উপেন একজন শোষিত মানুষ। জমিদার অন্যায়ভাবে তার দুই বিঘা জমি জবরদখল করেছে। নিজের ভিটে ছেড়ে উপেন সন্ন্যাসী জীবন বেছে নিয়েছে। জমিদারের শোষণ এত বেশি ছিল যে শেষ সম্বল ভিটেবাড়িও হারাতে হয়েছে।
উদ্দীপকের ‘ক’ হাউজিং সোসাইটি মতিন মিয়াকে কোনো দয়া দেখায়নি। তারা রাতের অন্ধকারে তার দোকান দখল করেছে। দোকান হারানোর পর সে চায়ের ফ্লাস্ক হাতে রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে। ধনীদের নিষ্ঠুর শোষণে তার দুর্দশা উপেনের মতোই। অন্যায় সহ্য করেই তারা বাঁচে।
উদ্দীপকের মতিন মিয়া চা-বিক্রেতা হিসাবেও হাউজিং সোসাইটির দখলের শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়। ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেনও জমিদারের লোভের কারণে সর্বস্বান্ত হয়ে ভিটে ছাড়তে বাধ্য হয়। দরিদ্র কৃষক উপেনের মতোই উদ্দীপকের মতিন মিয়া জীবনযাপন করে। তাই সে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেনের সার্থক প্রতিনিধি হয়ে ওঠেছে।
| সৃজনশীল প্রশ্নঃ ২। [রাজশাহী বোর্ড ২০১৯] ওসমান ওয়াজেদ চৌধুরীর বর্গাচাষি। সে জমির ফসলের তিন ভাগের দু-ভাগ পায়। একবার জমির বন্দোবস্তের কথা বলে জমির মালিক ওয়াজেদ চৌধুরী ওসমানের টিপসহি নিয়ে রাখে। ফসল তোলার সময় ওয়াজেদ চৌধুরীর লোক দুই ভাগ দাবি করলে ওসমান এর কারণ জানতে চায়। মালিকপক্ষ মিথ্যা ঋণের প্রসঙ্গ এনে ওসমানের টিপসহি দেখায়। এতে ওসমান ক্ষিপ্ত হয়ে তীব্র প্রতিবাদ জনায়। বলে- ‘রক্ত চুইষ্যা খাইছে। অজম করতে দিমু না, যা থাকে কপালে।” ওসমানের সাথে বাকি নির্যাতিত চাষিরাও যোগ দেয়। ক. ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতাটি পাঠের উদ্দেশ্য কী? খ. ‘চেয়ে দেখো মোর আছে বড়ো-জোর মরিবার মতো ঠাঁই।’-উক্তিটির কারণ বর্ণনা কর। গ. উদ্দীপকের ওয়াজেদ চৌধুরীর ফসলের দুই ভাগ দাবি ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার কোন বিষয়টির সাথে সম্পৃক্ত? ব্যাখ্যা দাও। ঘ. উদ্দীপকের ওসমানের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করলে উপেনকে ভিটেছাড়া হতে হতো না। উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও। |
| সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৩। [সিলেট বোর্ড ২০১৮] এস. কে. কারখানায় ৯ বছর ধরে কাজ করে কালাম। গত চার বছর ধরে বেতনের টাকার চার ভাগের এক ভাগ মালিকের কাছে জমা রাখে মেয়ের বিয়ের জন্য। এবারের ঈদে মেয়ের বিয়ে ঠিক করে টাকা নিতে গেলে কারখানার মালিক টাকার কথা অস্বীকার করে। কালাম পাওনা টাকার জন্য পীড়াপীড়ি শুরু করলে মালিক তাকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করে দেয়। কালাম অন্য শহরে গিয়ে চাকরি খুঁজে নিয়ে ভালোভাবে জীবন কাটায়। ক. জমিদার উপেনের দুই বিঘা জমি নিতে চাইল কেন? খ. ‘মরিবার মতো ঠাঁই’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা কর। গ. উদ্দীপকে কারখানা মালিকের মধ্যে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার জমিদারের যে আচরণ প্রকাশ পেয়েছে তা ব্যাখ্যা কর। ঘ. উদ্দীপকের কালামের সাথে উপেনের সাদৃশ্য থাকলেও বৈসাদৃশ্যও আছে। কবিতার বিষয়বস্তুর আলোকে মন্তব্যের যৌক্তিকতা মূল্যায়ন কর। |
| সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৪। [ঢাকা বোর্ড ২০১৯] হোসেন একজন বর্গাচাষি। অন্যের জমি চাষাবাদের মাধ্যমে তার সংসার চলে। একমাত্র মেয়ে রহিমাকে লেখাপড়া শেখানোর জন্য স্কুলে পাঠায়। কিন্তু বিত্তবান রহমত আলী বিষয়টা ভালোভাবে নেয় না। ষড়যন্ত্র করে রহমত তাকে ভিটে-মাটিছাড়া করে। হোসেন নিরুপায় হয়ে দূর গ্রামে চলে যায়। রহমত আলীর বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে অমিত পিতার কর্মকান্ডে বিব্রত ও লজ্জিত হয় এবং পিতাকে এ ধরনের অমানবিক আচরণ থেকে বিরত করে হোসেনকে তার ভিটায় ফেরার ব্যবস্থা করে। ক. ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় উপেন কত দিন পর ভিটে-মাটি ছেড়ে পথে বের হলো? খ. ‘তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ’- এ কথা বলার কারণ কী? গ. উদ্দীপকের রহমত আলীর সাথে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ চরিত্রটি ব্যাখ্যা কর। ঘ. ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেন যদি উদ্দীপকের হোসেনের অবস্থায় পড়তেন তাহলে উপেনকে ভিটে-মাটি হারাতে হতো না। মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর। |
| সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৫। [দিনাজপুর বোর্ড ২০১৯] রমিছা বিভিন্ন বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে অতি কষ্টে দুটো সন্তান ও পঙ্গু স্বামী নিয়ে সংসার চালায়। পাঁচ বছর আগে ‘সে একটি স্থানীয় সমিতিতে ডিপিএস খুলেছিল। মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর টাকা তুলতে গিয়ে দেখে ঐ সমিতির অফিসে তালা ঝুলছে। আশেপাশের মানুষের মুখে শুনল, তারা টাকা-পয়সা নিয়ে পালিয়েছে। রমিছা হাহাকার করে। উঠল; কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। ক. কাঙালের ধন কে চুরি করে? খ. ‘যত হাসো আজ যত করো সাজ ছিলে দেবী, হলে দাসী।’ কেন বলেছিল? গ. উদ্দীপকের রমিছা চরিত্রটি ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার যে চরিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ তা বর্ণনা কর। ঘ. উদ্দীপকটি ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় সমাজের এক বিশেষ শ্রেণির প্রতি ইঙ্গিত করে- তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও। |
| সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৬। [সিলেট বোর্ড ২০১৯] দিনমজুর সিরাজ মিয়া একমাত্র পুত্র হাসিবের দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসা করতে গিয়ে প্রায় সর্বহারা। ছেলে বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করার জন্য শেষ সম্বল বসতভিটা বন্ধক রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতিবেশী আজিম মাস্টারের কাছে গেলে তিনি বলেন, “তোমার বসতভিটা হারানোর দরকার নেই, বরং টাকা আমি দিচ্ছি। তুমি ধীরে ধীরে শোধ করে দিও। তোমার ছেলেতো আমার ছেলের। মতোই।” একথা শুনে কৃতজ্ঞতায় সিরাজের চোখে জল নামে। ক. ‘খত’ কী? খ. উপেন সন্ন্যাসী বেশে ঘুরে বেড়াতে লাগল কেন? গ. উদ্দীপকের সিরাজ মিয়ার সাথে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেনের বৈসাদৃশ্য বর্ণনা কর। ঘ. “উদ্দীপকের আজিম মাস্টারের মানসিকতা ও ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার জমিদারের মানসিকতা যদি এক হতো তাহলে। উপেনের এমন করুণ পরিণতি হতো না।” মন্তব্যটি বিচার কর। |
| সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৭। [যশোর বোর্ড ২০১৮] দিনমজুর ভবেশ মেয়ের বিয়ের জন্য মহল্লার ধনী ব্যবসায়ী গোপাল সাহার কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা ঋণ নেয়। ধূর্ত গোপাল সাহা লিখিত প্রমাণ থাকার কথা বলে সাদা কাগজে ভরেশের টিপসই রেখে দেয়। দু’মাস না যেতেই সে দলবল নিয়ে ভবেশের ভিটে-মাটি দখল করে। প্রচার করে জমি নাকি সে কিনে নিয়েছে। ক. আদালতের হুকুম বা নির্দেশনামাকে কী বলে? খ. ‘তাই লিখি দিল বিশ্বনিখিল দুবিঘার পরিবর্তে।’ চরণটি বুঝিয়ে লেখ। গ. উদ্দীপকের গোপাল সাহা কোন দিক থেকে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার জমিদার? ব্যাখ্যা কর। ঘ. উদ্দীপকের ভবেশ কি পঠিত কবিতার উপেন? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও। |
| সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৮। একমাত্র ছেলের চিকিৎসার জন্য প্রতিবেশী রোস্তম পাটোয়ারীর কাছ থেকে কাগজে টিপসই দিয়ে কিছু টাকা ধার নেয় সরল বিশ্বাসী মজিদ। দীর্ঘ দিন পর ছেলেকে সুস্থ করে বাড়ি ফিরে দেখে। পাটোয়ারীর লোকজন তার একমাত্র কৃষি জমিটুকু দখল করে নিয়েছে। মজিদ কারণ জানতে চাইলে পাটোয়ারী সাফ সানিয়ে দেয়, “জমি বিক্রি করেই তো তুমি আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলে। তোমার টিপসই দেওয়া এই কাগজই তার প্রমাণ।” ক. ডিক্রি কী? খ. উপেন তার বসতভিটাকে ‘নিলাজ কুলটা’ বলেছে কেন? গ. উদ্দীপকের মজিদের সাথে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেনের। সাদৃশ্য বর্ণনা কর। ঘ. “উদ্দীপকের রোস্তম পাটোয়ারী যেন ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার ভূস্বামীর যোগ্য প্রতিনিধি।”- উক্তিটি মূল্যায়ন কর। |
নিচে দুই বিঘা জমি কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর পিডিএফ ফাইল দেওয়া হল।