মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে বলতে চান মানুষের জীবনের প্রকৃত অর্থ হলো বৃক্ষের মতো শান্ত, সৃজনশীল এবং দানশীল হয়ে ওঠা, যাতে নিজের জীবন যেমন সুন্দর হয়, তেমনি সমাজও উপকৃত হয়। এই পোস্টে জীবন ও বৃক্ষ প্রবন্ধের মূলভাব সহজ ভাষায় লিখে দিলাম।
Table of Contents
জীবন ও বৃক্ষ প্রবন্ধের মূলভাব
‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে লেখক দেখাতে চেয়েছেন যে মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য শুধু বেঁচে থাকা নয়, বরং বড় হয়ে ওঠা এবং আত্মিকভাবে পরিপূর্ণ হওয়া। সমাজে অনেক মানুষ আছে যারা অহংকার, স্বার্থ আর সংকীর্ণতায় ডুবে থেকে অন্যের উন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি করে, আর এদের কারণে সমাজ অগ্রগতি পায় না। মানুষের উচিত এদের মতো না হয়ে বৃক্ষের মতো হওয়া। যে ধীরে ধীরে বাড়ে, শক্তি সঞ্চয় করে, এবং শেষে ফুল-ফল দিয়ে অন্যের উপকার করে। বৃক্ষ নিজের জন্য কিছু রাখে না; সে নীরবে, শান্তভাবে, সহিষ্ণুতায় চারপাশকে সেবা দিতে থাকে। লেখকের মতে মানুষের সাধনাও এমন নীরব ও ধীরস্থির হওয়া উচিত, কারণ তাড়াহুড়ো বা অবিরাম ছুটে চলায় সত্যিকারের সার্থকতা পাওয়া যায় না। মানুষকে শুধু দেহ দিয়ে নয় মন, অনুভূতি, চিন্তা ও মানবিকতা দিয়ে বড় হতে হয়। নিজের অভিজ্ঞতা, প্রেম ও বেদনা থেকেই মানুষের আত্মা পরিপক্ব হয় এবং সেই পরিপক্বতাই মানুষের প্রকৃত অর্জন। বৃক্ষ যেমন ফুল ও ফলে সার্থক হয়, মানুষও তখনই সার্থক যখন তার নিজের প্রাপ্তি অন্যের জন্য দান হয়ে ওঠে। বিজ্ঞান মানুষের জ্ঞান বাড়াতে পারে ঠিকই, কিন্তু মানুষের আত্মাকে পূর্ণতা দিতে পারে না; সে কাজ করে সাহিত্য, শিল্পকলা ও অনুভূতির চর্চা। তাই মানুষের শিক্ষা ও বিকাশের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত আত্মার উন্নতি এবং সৃষ্টিশীলতার বিকাশ।
জীবন ও বৃক্ষ প্রবন্ধের মূলভাব বড় করে
মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে জীবনের প্রকৃত সার্থকতা কী এবং মানুষকে কেমন হলে “বড় মানুষ” বলা যায় তা বোঝাতে বৃক্ষকে প্রধান প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তাঁর মতে, মানুষের জীবনের লক্ষ্য শুধু বেঁচে থাকা নয়, বরং চরিত্রে, জ্ঞান-বোধে, মানবিকতায় এবং আত্মিক শক্তিতে বড় হয়ে ওঠা। সমাজে অনেক মানুষ আছে যারা শুধু নিজের অহংকার, সংকীর্ণতা আর ক্ষমতার ঘোরে অন্যের পথে বাধা সৃষ্টি করে। তারা নিজেদের জীবন সুন্দর করতে জানে না, আবার অন্যকেও বিকশিত হতে দেয় না। এই ধরনের মানুষ সমাজকে এগিয়ে নিতে পারে না। তাই সমাজের প্রয়োজন উদার হৃদয়, গভীর চিন্তা, সূক্ষ্ম বুদ্ধি ও মানবপ্রেমে ভরা মানুষ যারা নিজেদের মতো করে অন্যদের জীবনও সুন্দর ও অর্থবহ করে তুলতে পারে।
লেখকের মতে, মানুষের জীবনের সঠিক প্রতীক হলো “বৃক্ষ”। কারণ একটি বৃক্ষ ধীরে ধীরে বড় হয়, নিজের ভেতর শক্তি সঞ্চয় করে, অবশেষে ফুল-ফল ধরে অন্যের উপকারে আসে। বৃক্ষ নিজের জন্য নয়, বরং চারপাশের মানুষের জন্য ছায়া, ফল, সৌন্দর্য এবং শান্তি বিলায়। তাই বৃক্ষের জীবনে যেমন বৃদ্ধি, সেবা, সহিষ্ণুতা ও নীরব সাধনার পরিচয় পাওয়া যায়, তেমনি মানুষের জীবনেও এসব গুণ থাকা উচিত। মানুষের বৃদ্ধি কেবল দেহে নয় মন, বোধ ও আত্মায়। মানুষকে নিজের অভিজ্ঞতা, প্রেম, শিল্পবোধ, দুঃখ-সুখ, সহমর্মিতা এসবের মাধ্যমে নিজের আত্মাকে পরিপক্ব করে তুলতে হয়। লেখক বলেন, সত্যিকারের সার্থকতা তখনই আসে যখন মানুষের নিজের প্রাপ্তি অন্যের জন্য দান হয়ে ওঠে। যেমন বৃক্ষের ফুল এবং ফল একই সঙ্গে তার নিজের বিকাশ এবং অন্যের উপকার।
এ প্রবন্ধের মূল বক্তব্য হলো মানুষকে হওয়া উচিত বৃক্ষের মতো: শান্ত, সহিষ্ণু, সৃজনশীল, পরোপকারী ও আত্মিকভাবে পরিপূর্ণ। জীবনের উদ্দেশ্য শুধু অস্তিত্ব রক্ষা নয়; বরং নিজের ভেতর যে “আত্মা” তাকে শিল্প, অনুভূতি এবং মানবিকতার দ্বারা পরিপুষ্ট করে এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া, যেখানে মানুষের জীবন সার্থক ও অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুনঃ জীবন ও বৃক্ষ MCQ | বহুনির্বাচনি প্রশ্ন উত্তর