গরবিনী মা জননী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর

সিকান্দার আবু জাফরের “গরবিনী মা-জননী” কবিতাটি বাংলাদেশকে ‘মা-জননী’ হিসেবে চিত্রিত করে এবং তার সন্তানদের ত্যাগ, সংগ্রাম ও বীরত্বের মাধ্যমে সেই মায়ের গৌরবের স্বরূপ তুলে ধরে। এই পোস্টে গরবিনী মা জননী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর লিখে দিলাম।

গরবিনী মা জননী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর

সৃজনশীল প্রশ্নঃ ১। [বোর্ড বইয়ের প্রশ্ন]
মা দিবসে রত্নগর্ভা স্বীকৃত মায়েদের পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সাহেদা বেগমের বড় ছেলে সাজিদ অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন- আমাদের মা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা। আমরা পিঠাপিঠি পাঁচ ভাই-বোন যখন খুব ছোট, তখনই বাবাকে হারালাম। মাকে কখনো ভেঙে পড়তে দেখিনি। দুঃখ-দারিদ্র্য-অভাব আমাদের নিত্য সঙ্গী ছিল। মা সব সময় আমাদেরকে খুশি রেখে, পড়াশুনা শিখিয়ে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছেন। তোমাকে শত সালাম ‘মা’। তোমার মুখের হাসির জন্য আমরা যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।

ক. সন্ধ্যা দুপুর মার পায়ে কী?

খ. রক্তে ধোওয়া সরোজিনী বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

গ. সাজিদের মাধ্যমে ‘গরবিনী মা-জননী’ কবিতার কোন বিশেষ দিকটি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. “প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উদ্দীপক ও ‘গরবিনী মা-জননী’ কবিতার বক্তব্য একই ধারায় প্রবাহিত”- বিশ্লেষণ কর।

উত্তরঃ

ক. সন্ধ্যা দুপুর মায়ের পায়ে ধুলোর নূপুর বাজে।

খ. ‘রক্তে ধোওয়া সরোজিনী’ বলতে রক্তস্নাত বাংলাদেশকে বোঝানো হয়েছে।

‘গরবিনী মা-জননী’ কবিতায় কবি বাংলাদেশকে সুন্দর পদ্মের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় এ দেশ ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্তে ভিজে গেছে। কবি সেই কথা মনে করে বলেছেন যে, বাংলাদেশ সেই মা, সেই গরবিনী, যে রক্তে ধোওয়া।

গ. সাজিদের মাধ্যমে ‘গরবিনী মা-জননী’ কবিতার যে বিশেষ দিকটি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তা হলো জন্মভূমির প্রয়োজনে বাংলা-মায়ের বীর সন্তানদের যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করার মানসিকতা।

বাংলাদেশ দীর্ঘদিন পরাধীনতার শৃঙ্খলে বন্দি ছিল। আর বাংলার বীর সন্তানরা প্রাণের মায়া ত্যাগ করে বাংলা মাকে মুক্ত করার জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছে।

পিতার মৃত্যু হলেও সাজিদের মা তাদের মানুষের মতো মানুষ করেছেন। উদ্দীপকের সাজিদ তার মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞ। কেননা সাজিদ মায়ের জন্য তাই যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। ‘গরবিনী মা-জননী’ কবিতায়ও বাংলা মায়ের কোলে বেড়ে ওঠা সন্তানরা বাংলা মায়ের জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। বাংলা মাকে মুক্ত করতে তারা বুলেট, ফাঁসি, কারাগার সবকিছু উপেক্ষা করে। প্রয়োজনে জীবন বাজি রাখতেও পিছপা হয় না। তাই সাজিদের মধ্যে ‘গরবিনী মা-জননী’ কবিতার যে বিশেষ দিকটি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তা হলো জন্মভূমির প্রয়োজনে বাংলা-মায়ের বীর সন্তানদের যেকোনো ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতা।

ঘ. “প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উদ্দীপক ও ‘গরবিনী মা-জননী’ কবিতার বক্তব্য একই ধারায় প্রবাহিত”—এই মন্তব্যটি যথার্থ।

জন্মভূমি ও জননী একই। জননী যেমন সন্তানকে লালন-পালন করেন, তেমনি জন্মভূমিও স্নেহ-ছায়া, মায়া, আলো-বাতাস দিয়ে মানুষের সন্তানকে বড় করে তোলেন। তাই সচেতন নাগরিকের কাছে জননী ও জন্মভূমি দুটোই সমান।

উদ্দীপকের সাজিদের মা শত দুঃখ-কষ্ট সহ্য করেও সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ করেছেন। তাই সাজিদও মায়ের জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। অন্যদিকে ‘গরবিনী মা-জননী’ কবিতায় বাংলা-মায়ের কথা বলা হয়েছে, যে মায়ের কোলে সব রকম মানুষের বাস। বাংলা মা তার আলো-বাতাস দিয়ে বাংলার মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। তাই বাংলা-মায়ের দুর্দিনে তার সন্তানরাও তাকে রক্ষা করতে যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।

উদ্দীপক ও ‘গরবিনী মা-জননী’ কবিতার প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও দুই জায়গাতেই প্রকাশ পেয়েছে সন্তানের প্রতি মায়ের স্নেহ-ভালোবাসা আর মায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য। তাই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।


সৃজনশীল প্রশ্নঃ ২।
১৯৭১ সালে ডাক্তার আলীম চৌধুরী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। তাঁকে নির্যাতন করে স্বাধীনতাবিরোধী বক্তব্য দিতে বলা হয়। তিনি বলেছিলেন, “আমি মাত্র একজন ডাক্তার, মানুষের জীবন বাঁচাই। কিন্তু আজ আমার দেশের মানুষ মারছে, আমার মা-বোনের ইজ্জত হরণ করছে। সেই অপরাধীদের আমি কখনো ক্ষমা করতে পারব না। তোমরা আমাকে মেরে ফেলতে পারো, কিন্তু আমার দেশকে দাস করে রাখতে পারবে না।” শেষ পর্যন্ত তাঁকে হত্যা করা হয়।

ক. ‘সরোজিনী’ শব্দের অর্থ কী?

খ. “দুখের ধূপে সুখ পুড়িয়ে/কার ছেলে মুখ উজ্জ্বল রাখে”— কবি এই চরণদ্বয় দ্বারা কী বোঝাতে চেয়েছেন?

গ. উদ্দীপকের ডাক্তার আলীম চৌধুরীর চেতনা ‘গরবিনী মা-জননী’ কবিতার কোন চরণের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ?

ঘ. “উদ্দীপকের শহিদ ডাক্তার ‘গরবিনী মা-জননী’ কবিতার ‘পাগল ছেলে’-দেরই একজন”— বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৩।
একটি গ্রাম্য কবিয়ালের গান:
“ওগো মা বাংলা, তোমার কোলে কত রত্ন ফুটেছে,
কৃষক, মজুর, কবি, বাউল—সবাই তোমার লুটেছে।
তোমার নদীর জলেই ধোয়া হয় সকল হৃদয়ের জ্বালা,
তোমার মাটিতেই তো মিশে আছে কত বীরের লালা।
তোমারই তরে কাঁদে মেয়েরা, তোমারই তরে যায় ছেলে,
তুমি সেই মা, যার নাম শুনেই শত্রু কাঁপে ভয়ে ভেলে।”

ক. ‘ভাগ্যবতী’ বলতে কবি কাকে বুঝিয়েছেন?

খ. “কার চোখে মা নদীর কাজল/সবুজ তৃণের আঁচল বুকে”— বুঝিয়ে লিখ?

গ. উদ্দীপকের কবিয়ালের গানের সাথে ‘গরবিনী মা-জননী’ কবিতার বক্তব্যের কোন দিকটির মিল রয়েছে?

ঘ. “কবিয়ালের গানটি ‘গরবিনী মা-জননী’ কবিতার ভাবেরই লোকায়ত সংস্করণ”— যুক্তি দিয়ে দেখাও।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৪।
রুনা লায়লা একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “১৯৭১ সালে আমি যখন ‘তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা’ গানটি গাইতাম, তখন চোখে পানি চলে আসত। কারণ আমি জানতাম, এই গানটি শুনে আমার দেশের মুক্তিযোদ্ধারা অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। তারা তাদের মাকে রক্ষা করতে যুদ্ধ করছেন। সেই সময় শিল্পী হিসেবে এটাই ছিল আমার সবচেয়ে বড় অস্ত্র।”

ক. ‘উজ্জ্বল’ শব্দের কোমল রূপ কী?

খ. “কার ছেলে মা উপড়ে ফ্যালে/বুলেট ফাঁসির শাসন-কারা”— কবি কোন ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের কথা বলেছেন?

গ. উদ্দীপকের রুনা লায়লার ভূমিকা ‘গরবিনী মা-জননী’ কবিতার কোন প্রেক্ষাপটকে স্মরণ করিয়ে দেয়?

ঘ. “সংগ্রাম কেবল যুদ্ধক্ষেত্রেই হয় না, সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও হয়— বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৫।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ফাতেমা বেগম তার পাঁচটি সন্তানকে নিয়ে ভারতের শরণার্থী শিবিরে ছিলেন। তাঁর বড় ছেলে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছে। তিনি প্রতিদিন নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দু’আ করতেন, “হে আল্লাহ, আমার ছেলে যেন বীরের মতো লড়াই করে, আমার দেশ যেন স্বাধীন হয়। আমার আর যা-ই হোক, আমার সন্তান যেন দাস হয়ে না থাকে।”

ক. ‘দুর্ভাগিনী’ শব্দের বিপরীত শব্দ কী?

খ. “কান্নাফুলের নকশা বোনে”- এই উক্তি দ্বারা কবি কোন শ্রেণীর মানুষের করুণ অবস্থা বোঝাতে চেয়েছেন?

গ. উদ্দীপকের ফাতেমা বেগমের চরিত্র ‘গরবিনী মা-জননী’ কবিতার কোন দিকটিকে প্রতিনিধিত্ব করে?

ঘ. “মাতৃভূমির জন্য মায়েরা শুধু সন্তান হারান না, তারা সন্তানকে উৎসর্গ করারও সাহস দেখান”-মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৬।
বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘরে একটি প্রদর্শনীতে রাখা আছে এক ঝলকানো মাটির কলসি। নিচে লেখা: “এই কলসিটি ১৯৭১ সালে একটি গ্রামের এক কুমার পরিবারের। পাকিস্তানি সেনারা গ্রামে ঢুকলে তারা তাদের সম্পদ লুট করে, বাড়িঘরে আগুন দেয়। এই পরিবারটিও সব হারায়, কিন্তু এই কলসিটা রক্ষা পায়। কারণ, এই কলসিতে তারা তাদের সবচেয়ে প্রিয় জিনিস স্বাধীনতার স্বপ্ন ভরে রেখেছিল।”

ক. ‘পাগল ছেলে’ বলতে কবি কাদের বুঝিয়েছেন?

খ. “যুগ-চেতনার চিত্তভূমি/নিত্যভূমি বাঙলারে”— চরণদ্বয়ের তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।

গ. উদ্দীপকের প্রদর্শনীর বস্তুটি ‘গরবিনী মা-জননী’ কবিতার কোন পেশার মানুষ ও তাদের মনোবলের প্রতীক?

ঘ. “সাধারণ মানুষের হৃদয়েই দেশপ্রেমের সবচেয়ে শক্তিশালী ও স্থায়ী ভিত্তি থাকে”— উদ্দীপক ও কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৭।
একটি বেসরকারি টেলিভিশনের বিশেষ অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষক, মজুর, রিকশাচালক ও দিনমজুরদের জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, “আপনার দেশকে কী দিতে চান?” তাদের উত্তর ছিল আশ্চর্যরকম এক: “আমরা ধনী নই, শিক্ষিতও বেশি নই। কিন্তু আমাদের রক্ত আছে, পরিশ্রম করার শক্তি আছে। আমাদের দেশ যদি কখনো বিপদে পড়ে, আমরা এই রক্ত ও শক্তি দিতে প্রস্তুত। কারণ এই মাটি আমাদের মা। মায়ের টান কোনো টাকায় কেনা যায় না।”

ক. ‘নদীর কাজল’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

খ. “কার ছেলেরা নিত্য হাজার/মরণ-মারের দণ্ড গোনে”— এই পঙ্ক্তি দ্বারা কবি কী বলতে চেয়েছেন?

গ. উদ্দীপকের সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্য ‘গরবিনী মা-জননী’ কবিতার কোন স্তরের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে?

ঘ. “দেশপ্রেম কোনো বিশেষ শ্রেণীর একচেটিয়া সম্পদ নয়, তা সর্বসাধারণের হৃদয়ের ধন”— মন্তব্যটির সত্যতা যাচাই কর।

নিচে গরবিনী মা জননী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর পিডিএফ ফাইল দেওয়া হল।

গরবিনী মা জননী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর পিডিএফ

আরও পড়ুনঃ গরবিনী মা জননী কবিতার MCQ | বহুনির্বাচনি প্রশ্ন উত্তর

Related Posts

Leave a Comment