গন্তব্য কাবুল গল্পের মূলভাব সহজ ভাষায়

সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘গন্তব্য কাবুল’ ভ্রমণকাহিনীতে বিশ্ব যতই কঠিন বা অপরিচিত হোক, মানুষের সহানুভূতি, আন্তরিকতা ও রসবোধ যে কোনো ভ্রমণকে স্মরণীয় করে তোলে। আর অচেনা দেশেও মানুষের মনের উষ্ণতাই একজন যাত্রীর সবচেয়ে বড় সঙ্গী। এই পোস্টে গন্তব্য কাবুল গল্পের মূলভাব সহজ ভাষায় লিখে দিলাম।

গন্তব্য কাবুল গল্পের মূলভাব

‘গন্তব্য কাবুল’ ভ্রমণকাহিনীতে লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর ভারত থেকে আফগানিস্তানের দিকে যাত্রাপথের মজার অভিজ্ঞতা, রঙিন চরিত্র, এবং পথের নানা বিচিত্র ঘটনা সহজ-সরল ও হাস্যরসাত্মক ভাষায় তুলে ধরেছেন। কলকাতা থেকে রওনা হওয়ার পর থেকেই তিনি দেখান, কীভাবে বিদেশি পরিবেশে মানুষ প্রথমে ভয় পায়, কিন্তু মানুষের আন্তরিকতা সেই ভয়কে দূর করে দেয়। ট্রেনে ফিরিঙ্গি, সর্দারজি, পাঠান প্রত্যেকেই তাকে নিজের মতো করে সাহায্য করেছে, আর সেই সাহায্যের ভেতরে ছিল দেশ-ভেদে মানুষের মানসিকতার বৈচিত্র্য। সর্দারজির মাধ্যমে তিনি বুঝেছেন, পোশাক বা বাহ্যিক চেহারা নয়, মানুষকে চেনার আসল পরিচয় হলো তার মন। পেশাওয়ারে পৌঁছে শেখ আহমদ আলীর যে আন্তরিক অভ্যর্থনা, তা লেখককে অচেনা পরিবেশেও আপন করে তোলে। লেখক দেখান, পাঠানদের আতিথেয়তা কতটা আন্তরিক এবং অতিথিকে ঘরের মানুষের মতো ধরে নেওয়ার প্রবণতা কত গভীর। এরপর খাইবার পাসের ভয়ংকর, রুক্ষ, পাথুরে পথের বর্ণনায় তিনি যাত্রার কঠিন দিকটি তুলে ধরেন, যেখানে প্রকৃতি, গরম, পাহাড়—সবকিছুই যেন একসঙ্গে ত্রাস তৈরি করে। তবু যাত্রাপথের মানুষের রঙিন আচরণ, নানা ভাষার মিশ্রণ, ব্যবসায়ীদের আলাদা আলাদা রীতি। এসব ভ্রমণকে আনন্দময় করে তোলে।

গন্তব্য কাবুল গল্পের মূলভাব বড় করে

‘গন্তব্য কাবুল’ ভ্রমণকাহিনীতে সৈয়দ মুজতবা আলী নিজের কাবুল যাত্রার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে হাস্যরস, মানুষের স্বভাব, ভাষার মজা, ভয়ের অনুভূতি সবকিছুকে খুব জীবন্ত করে তুলেছেন। গল্পের শুরুতেই তিনি দেখান, বিদেশযাত্রার উত্তেজনার মাঝেই হঠাৎ একাকীত্ব তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে, কারণ পরিচিত জায়গা থেকে দূরে অজানা দেশে যাওয়া সত্যিই ভয়ের ব্যাপার। কিন্তু যাত্রাপথে যাদের সঙ্গে দেখা হয় যেমন ফিরিঙ্গি যাত্রী, দয়ালু সর্দারজি, কিংবা ছয়ফুটেরও বেশি লম্বা পাঠান। তাঁরা সবাই একেকজন আলাদা চরিত্র হয়ে লেখককে সাহস ও আনন্দ দেন। সায়েবের সঙ্গে খাবার ভাগাভাগির ঘটনাটি যেমন হাস্যকর, তেমনি দেখায় মানুষ আসলে ভেতরে ভেতরে কতটা একইরকম। ধর্ম, জাতি, ভাষা ভিন্ন হলেও মানুষের চাহিদা, আচরণ, মন সব একই রঙের।

পেশাওয়ারের শেখ আহমদ আলী লেখকের প্রতি যে আন্তরিক আত্মীয়তার মত আচরণ করেন, তা দেখে লেখক বুঝতে পারেন যে অচেনা দেশে মানুষের ভালবাসাই সত্যিকারের শক্তি। লেখক দেখান, পাঠানদের অতিথিপরায়ণতা কত গভীর তারা অতিথিকে নিজের পরিবারের সদস্যের মতো সম্মান করে। আবার খাইবার পাসের মতো ভয়ংকর গিরিপথেও মানুষের মিছিল, ব্যবসায়ীদের ওঠানামা, রঙিন পোশাক আর বিচিত্র অস্ত্র সব মিলিয়ে এক দুঃসাহসিক পরিবেশ। কঠিন পাহাড়, দাউদাউ রোদ, বিপদে ভরা পথ। এসবের মধ্যেও যাত্রীরা নির্ভয়ে সামনে এগিয়ে চলে, কারণ মানুষের মধ্যে থাকা বিশ্বাস আর সহযোগিতাই তাদের শক্তি দেয়।

এই ভ্রমণকাহিনীর মধ্য দিয়ে লেখক বোঝাতে চান যে পৃথিবীর যেখানেই যাই না কেন, মানুষকে বোঝা, তার সঙ্গে মিশে যাওয়া, তার ভাষা-সংস্কৃতি সম্মান করা। এইসবই আমাদের জীবনে নতুন রঙ যোগ করে। ভ্রমণ শুধু স্থান বদল নয়; মানুষকে জানার দরজা খোলে। অপরিচিত দেশে একজন বাংলার মানুষও মানুষের ভালবাসায় কতটা নিরাপদ থাকতে পারে। এটাই লেখক সবচেয়ে বেশি অনুভব করেন। তাই লেখক শেষ পর্যন্ত বুঝতে পারেন, এই পৃথিবীতে মানুষের পরিচয় পোশাকে নয়, ভাষায় নয়, বরং হৃদয়ের আন্তরিকতায়। আর সেই মানবিকতাই তাঁর কাবুল যাত্রাকে সুন্দর, স্মরণীয় ও মধুর করে তুলেছে।

আরও পড়ুনঃ গন্তব্য কাবুল MCQ | বহুনির্বাচনি প্রশ্ন উত্তর

Related Posts

Leave a Comment