একাত্তরের দিনগুলি গল্পের মূলভাব- নবম-দশম শ্রেণির বাংলা

জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’ লেখায় ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে এক পরিবারের সদস্যদের ভয়, উদ্বেগ, ও প্রতিকূলতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এই পোস্টে একাত্তরের দিনগুলি গল্পের মূলভাব- নবম-দশম শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম। বড় মূলভাবটি পড়লে ভালভাবে বুঝতে পারবেন।

একাত্তরের দিনগুলি গল্পের মূলভাব

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে এই লেখায় একটি পরিবারের সদস্যদের দুঃখ, উদ্বেগ এবং যুদ্ধকালীন জীবনের চিত্র ফুটে উঠেছে। শুরুতে, ১৩ই এপ্রিলের বৃষ্টির দিনে করিমের সাথে কথোপকথনের মাধ্যমে লেখক পাড়ার মানুষের উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতা প্রকাশ করেছেন। যুদ্ধের ভয়াবহতা অনুভব করে, লেখক বাগানে কাজ করতে গিয়ে জীবনের ছোট ছোট আনন্দ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকলেও লেখকের ছেলে জামী বাড়িতে পড়াশোনা করছে। লেখক যেভাবে তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চিন্তা করছেন এবং যুদ্ধের সময় মানুষ কিভাবে বাঁচতে চেষ্টা করছে, তা স্পষ্ট হয়েছে। বুদ্ধিজীবীদের ওপর চাপ, যুদ্ধের সংবাদ এবং স্বাধীন বাংলা বেতারের অনুষ্ঠানগুলো লেখকের মনে আশা জাগিয়ে তোলে। ১৬ই ডিসেম্বর, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের দিন লেখক আনন্দে কুলখানির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই দিনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূচনা করে, যা লেখকের জীবনে একটি নতুন আলো নিয়ে আসে। যুদ্ধকালীন সময়ের ভয়, অস্থিরতা এবং অবশেষে বিজয়ের আনন্দকে লেখক এক মানবিক ও আবেগময়ভাবে তুলে ধরেছেন।

একাত্তরের দিনগুলি গল্পের মূলভাব

১৯৭১ সালের ১৩ই এপ্রিল, মঙ্গলবার।

চারদিন ধরে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। শনিবার রাত থেকে শুরু হওয়া এই বৃষ্টি রোববার জুড়ে চলেছে। গতকাল সকালে বৃষ্টি থামলেও আকাশ মেঘে ঢাকা ছিল, মাঝে মাঝে রোদ বেরিয়ে আসলেও মেঘেদের অস্থিরতা কাটেনি। আমি বসার ঘরে জানালার দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম, মনে হচ্ছে, এই দুর্যোগের মেঘ আমার জীবনের ওপরেও ঘনিয়ে আসছে।

সন্ধ্যার দিকে করিম ঘরে ঢুকল। “ফুফুজান, পাড়ার অনেকেই বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আপনারা কোথাও যাবেন না?”

আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, “কোথায় যাব? বুড়ো শ্বশুরকে নিয়ে কোথায় যেতে পারব?” করিমের কথায় এক ধরনের আতঙ্ক ফুটে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খালি হয়ে যাচ্ছে, মানুষ নিরাপত্তার খোঁজে পালাচ্ছে।

“কী আর করা,” করিম বলল, “যা ঘটবে, তা তো ঘটবে। শুনেছেন, নদীতে প্রচুর লাশ ভেসে যাচ্ছে, গুলি খেয়ে মরেছে।”

শুনে আমি শিউরে উঠলাম। “হ্যাঁ, এসব তো প্রতিদিন শুনছি। পচা লাশের দুর্গন্ধে শহরের ঘাটগুলো ভরে গেছে।”

১০ই মে, সোমবার।

কিছুদিন বাগানে যাইনি। সকালে নাশতার পর সেখানে গিয়ে আমার হাই-ব্রিড টি-রোজের গাছগুলো দেখলাম। এ ধরনের গাছের জন্য খুব যত্ন দরকার, কিন্তু গত দুমাসে কিছুই হয়নি। বাগানে গেলে আমার মনে হয়, কিছু সময়ের জন্য দুঃখ-বেদনা ভুলে থাকতে পারি। কিন্তু এখনো মনে হয়, এই সময়ে সুখ খোঁজা অদ্ভুত।

১২ই মে, বুধবার।

জামীর স্কুল খুলেছে, কিন্তু সে যাচ্ছে না। আমরা আলোচনা করেছি—স্কুলে যাওয়া ঠিক নয়। দেশের মধ্যে যুদ্ধ চলছে, হানাদাররা নির্যাতন চালাচ্ছে। জামী বাড়িতে পড়াশোনা করছে, তার বন্ধুদের সঙ্গে পড়া চালিয়ে যাচ্ছে—এটাই আমাদের সময় কাটানোর ভালো উপায়।

১৭ই মে, সোমবার।

রেডিওতে বিখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়ে অনুষ্ঠান হচ্ছে, কিন্তু সরকারের প্রচার তেমন কিছু লাভজনক হচ্ছে না। আজকের কাগজে ৫৫ জন বুদ্ধিজীবী ও শিল্পীর নামের একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু জানি, তাদের অনেকেই বাধ্য হয়ে সই করেছেন। অনেকেই হয়তো সেই বিবৃতিটি দেখেননি।

২৫শে মে, মঙ্গলবার।

আজ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী। ঢাকায় উৎসব চলছে। টেলিভিশনে নতুন একটি কণ্ঠস্বর শুনলাম, স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে। সবাই গুজব করছে, মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা কার্যক্রম শহরে শুরু হয়েছে। সত্যিই, কি আশ্চর্য!

৫ই সেপ্টেম্বর, রবিবার।

শরীফ এবং আমি রুমীকে উদ্ধারের পরিকল্পনা করছি। সবাই বলছে, রুমীর জন্য প্রাণভিক্ষা চেয়ে মার্সি পিটিশন করতে হবে। কিন্তু শরীফ মনে করছে, এটা রুমীর আদর্শকে অপমান করা হবে। আমরা দুই দিন ধরে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছি।

১১ই অক্টোবর, সোমবার।

শরীফ জানাল, মতিয়ুর রহমানের পরিবার করাচি থেকে ঢাকা এসেছে। তার খবর শুনে মন খারাপ হয়ে গেল, পরিচিতদের কথা মনে পড়ছে। এভাবেই সময় চলে যাচ্ছে।

১৬ই ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার।

আজ এক আনন্দের দিন। সকাল থেকে মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসছে, পাকিস্তানি সেনারা নাকি আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে। আবহাওয়া যেন স্বাধীনতার উৎসবের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমি কুলখানির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি—এটি আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণা, আনন্দের একটি মুহূর্ত।

Related Posts

Leave a Comment