আসমানি কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর – ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা

জসীমউদ্দীনের “আসমানি” কবিতাটিতে গ্রাম বাংলার এক দরিদ্র মেয়ে আসমানির কষ্টের জীবনচিত্র ফুটে উঠেছে। কবিতাটি গ্রামীণ বাংলার চরম দারিদ্র্য, শিশুদের অমানবিক দুর্ভোগ এবং সমাজের অবহেলিত অংশের প্রতি গভীর মমত্ববোধ প্রকাশ করে। এই পোস্টে আসমানি কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর – ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম।

আসমানি কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর

সৃজনশীল প্রশ্নঃ ১। [বোর্ড বইয়ের প্রশ্ন]
গ্রামের দরিদ্র কৃষক লালচাঁন মিয়া। বিঘে তিনেক জমি বর্গা চাষ করে। পর-পর দুবছর বন্যা ও খরায় সে জমিতে ফসল ফলে নি। পরিবারকে দু-বেলা পেট ভরে খেতে দিতে পারে না। না খেতে পেয়ে সন্তানদের চোখ কোটরে ঢুকে গেছে, বুকের পাঁজর গোনা যায়। একটি মাত্র মাটির ঘর, তারও আবার ছাউনি নষ্ট হওয়ার উপক্রম। বৃষ্টি বাদলার রাতে ঘরের কোণে বসে রাত কাটাতে হয়। লালচাঁন মিয়ার মতো মানুষগুলোর অভাব যেন পিছু ছাড়ে না।
ক. আসমানিদের গ্রামের নাম কী?
খ. মিষ্টি তাহার মুখটি হতে হাসির প্রদীপ-রাশি, থাপড়েতে নিবিয়ে গেছে দারুণ অভাব আসি। এই চরণ দুটি দ্বারা কী বুঝানো হয়েছে?
গ. আসমানিদের ঘরের সাথে লালচাঁন মিয়ার ঘরটির সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘লালচাঁন মিয়ার মতো মানুষগুলোর অভাব যেন পিছু ছাড়ে না’- ‘আসমানি’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ কর।

উত্তরঃ

ক. আসমানিদের গ্রামের নাম রসুলপুর।

খ. প্রশ্নোক্ত চরণ দুটিতে দারিদ্র্যের কষ্টে জর্জরিত আসমানির বিপর্যস্ত চেহারাটি প্রকাশ পেয়েছে।

আসমানি এক দরিদ্র পরিবারের ছোট মেয়ে। অভাবের তাড়নায় সে কখনো পেট ভরে খেতে পায় না। অনাহারে থাকতে থাকতে তার শরীর এত শীর্ণ হয়ে গেছে যে হাড়গুলো গোনা যায়। অভাবের হিংস্র থাবায় তার মুখের মিষ্টি হাসিটুকুও নিভে গেছে। প্রশ্নোক্ত চরণ দুটিতে ঠিক এই ভাবই বোঝানো হয়েছে।

গ. আসমানিদের ঘরের সঙ্গে লালচাঁন মিয়ার ঘরের অনেক মিল আছে।

দারিদ্র্য মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় অভিশাপ। আমাদের বাংলাদেশের অনেক মানুষ দারিদ্র্যের কষ্টে ভোগে। অভাবের যন্ত্রণায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়ে। খাবার আর কাপড়ের জোগান করতেই তারা হিমশিম খায়। তাই বাড়ি-ঘরের কথা তাদের কাছে গৌণ হয়ে যায়। কবিতার আসমানি এবং উদ্দীপকের লালচাঁন মিয়া দুজনেই অভাবের তাড়নায় দিশেহারা। আসমানিদের ঘরের অবস্থা খুব খারাপ। ঘরটি এত ছোট যে পাখির বাসার মতো মনে হয়। নড়বড়ে খুঁটির ওপর ভেন্না পাতার ছাউনি দেওয়া। একটু বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে। সামান্য হাওয়ায় ঘর নড়বড় করে। উদ্দীপকের লালচাঁন মিয়ার ঘরও আসমানিদের ঘরের মতো জীর্ণ-শীর্ণ। তাদের একটি মাত্র ঘরের ছাউনি প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টির সময় পানি পড়ে। ঠিক এখানেই আসমানিদের ঘরের সঙ্গে লালচাঁন মিয়ার ঘরের মিল দেখা যায়।

ঘ. “লালচাঁন মিয়ার মতো মানুষগুলোর অভাব যেন পিছু ছাড়ে না”—এই কথাটি ‘আসমানি’ কবিতার আলোকে খুব তাৎপর্যপূর্ণ এবং সঠিক।

অভাব মানুষের মনুষ্যত্ববোধকে ধ্বংস করে দেয়। দারিদ্র্যের কষ্টে পড়া মানুষের স্বপ্ন, আশা আর ভালো চিন্তা অভাবের তাড়নায় শেষ হয়ে যায়। এই অভিশাপের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতেই তাদের জীবন শেষ হয়ে যায়।

উদ্দীপকের লালচাঁন মিয়া একজন দরিদ্র কৃষক। পরের জমি বর্গা নিয়ে কোনোরকমে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু দুবছর ধরে বন্যা আর খরায় জমিতে ফসল ফলাতে পারেনি। পরিবারের খাবার-কাপড়ের জোগান দিতে পারে না। লালচাঁন মিয়ার মতো এদেশে অসংখ্য মানুষ রাত-দিন অভাবের সঙ্গে লড়াই করে, কিন্তু অভাব তাদের পিছু ছাড়ে না।

‘আসমানি’ কবিতায় আসমানিরা দারিদ্র্যের কষ্টে জর্জরিত। অভাবের তাড়নায় তারা খাবার পর্যন্ত জোগাড় করতে পারে না। খেতে না পেয়ে বুকের হাড় বেরিয়ে পড়েছে। পাখির বাসার মতো ঘরটি ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। অসুখ হলে ওষুধ-পথ্য জোটে না। শত চেষ্টা করেও তারা অভাবের হাত থেকে মুক্তি পায় না। ঠিক যেমন পায় না উদ্দীপকের লালচাঁন মিয়ার মতো মানুষেরা। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত কথাটি উদ্দীপক ও ‘আসমানি’ কবিতার আলোকে গভীর তাৎপর্যপূর্ণ এবং পুরোপুরি যথার্থ।


সৃজনশীল প্রশ্নঃ ২।
নাদিরার বাবা নেই। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে। তাদের টিনের ঘরটিতে বৃষ্টির পানি পড়ে। এক পাশে ভাঙা কলসিতে বৃষ্টির পানি জমে। সেই পানি পান করে নাদিরা ও তার ভাই। নাদিরার গায়ে পুরোনো স্কুলের ইউনিফর্ম, তাতে তালি দিয়ে দিয়ে পরা। তবুও সে প্রতিদিন স্কুলে যায়। স্কুলের দেয়ালে লেখা আছে, “শিক্ষা সব আলো”, কিন্তু নাদিরার জীবন এখনো অন্ধকারে।
ক. ‘বৈদ্য’ শব্দের অর্থ কী?
খ. “সেই জলেতে রান্না খাওয়া আসমানিদের চলে”— এ থেকে আসমানিদের জীবনের কোন দুরবস্থা বোঝা যায়?
গ. উদ্দীপকের নাদিরার বাসস্থান ও পোশাকের বর্ণনা ‘আসমানি’ কবিতার কোন চরণগুলোর প্রতিফলন?
ঘ. “উদ্দীপকের নাদিরা এবং কবিতার আসমানি দুজনই দারিদ্র্যের শিকার, কিন্তু তাদের প্রতিকূলতা মোকাবেলার পথ ভিন্ন”— উক্তিটির যথার্থতা যাচাই কর।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৩।
গ্রামের বিলের পাড়ে কয়েকটি পরিবারের বাস। বর্ষায় পানি ওঠে তাদের ঘরের ভিতর পর্যন্ত। বিলের পানি দূষিত, কচুরিপানায় ভর্তি। সেই পানিতে গোসল, কাপড় ধোয়া, রান্নার কাজ চলে। শিশুরা জ্বরে, চর্মরোগে ভোগে। স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মী বললেন, “পরিষ্কার পানির ব্যবস্থা ও নিকাশি ব্যবস্থা না হলে এদের স্বাস্থ্য ভালো হবে না।” কিন্তু গরিব মানুষের সেই সামর্থ্য নেই।
ক. ‘পিলে’ রোগটি কী?
খ. “ম্যালেরিয়ার মশক সেথা বিষ গুলিছে জলে”— চরণটি দ্বারা আসমানিদের পরিবেশ সম্পর্কে কী জানা যায়?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত বিলপাড়ের মানুষের জীবনযাত্রার সাথে ‘আসমানি’ কবিতার আসমানিদের জীবনের কী মিল আছে?
ঘ. “উদ্দীপক ও কবিতা দুটিতেই দারিদ্র্য ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ একটি অশুভ চক্র তৈরি করেছে”— মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৪।
রুবিনার বয়স এগারো। সে পাঁচ বছর বয়স থেকে বাবা-মায়ের সাথে ইটভাটায় কাজ করে। তার হাতে-পায়ে ফোস্কা, চোখ লাল ধুলায়। সে স্কুলে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। একদিন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা তাকে স্কুলে ভর্তি করে দেয় এবং তার পরিবারকে বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করতে সাহায্য করে। রুবিনার চোখে আবার আশার আলো ফিরে আসে।
ক. আসমানির চোখের রং কেমন ছিল?
খ. “হয়নি সুযোগ লয় যে সে-সুর গানের সুরে বেঁধে”— আসমানির এই অবস্থার জন্য কী দায়ী?
গ. উদ্দীপকের রুবিনার প্রাথমিক জীবন ও ‘আসমানি’ কবিতার আসমানির জীবনের সাদৃশ্য কোথায়?
ঘ. “উদ্দীপকের রুবিনার জন্য আশার আলো জ্বললেও, ‘আসমানি’ কবিতার আসমানি সেই আলো থেকে বঞ্চিত”— দুটি রচনার এই পার্থক্যটি বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৫।
একজন সাংবাদিক একটি প্রতিবেদনে লিখেন, “গ্রামের অনেক শিশুই অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগছে। তাদের পরিবার কৃষি বা দিনমজুরির ওপর নির্ভরশীল। খাদ্যের অভাব, বিশুদ্ধ পানির অভাব, প্রাথমিক চিকিৎসার অভাব—এগুলো তাদের নিত্যসঙ্গী। সরকারি সাহায্য তাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। এরা সংখ্যায় কম নয়, কিন্তু সমাজের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন।”
ক. জসীমউদ্দীন কবে জন্মগ্রহণ করেন?
খ. “সোনালি তার গার বরনের করছে উপহাস”— চরণটির মাধ্যমে আসমানির দারিদ্র্যের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে?
গ. উদ্দীপকের সাংবাদিকের প্রতিবেদনের মূল বক্তব্য ‘আসমানি’ কবিতার কোন অনুভূতিকে প্রতিধ্বনিত করে?
ঘ. “সাংবাদিকের প্রতিবেদনটি ‘আসমানি’ কবিতার বাস্তবতাকে একটি বৃহত্তর পরিসরে উপস্থাপন করেছে”— উদ্দীপক ও কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৬।
শাহিনা তার ডায়েরিতে লিখেছে, “আমাদের পাড়ার রিকশাচালক কাদের ভাইয়ের ছেলে সোহেল খুব মেধাবী। কিন্তু টাকার অভাবে তার উচ্চশিক্ষা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। গতকাল আমাদের স্কুল থেকে কিছু শিক্ষক ও শিক্ষার্থী মিলে তার জন্য একটি তহবিল সংগ্রহ করলাম। আজ সোহেলের চোখে আমি যে আনন্দ দেখলাম, তা আমাকে নতুনভাবে বাঁচতে শিখিয়েছে।”
ক. ‘নিতুই’ শব্দের অর্থ কী?
খ. “বাড়ি তো নয় পাখির বাসা… একটুখানি হাওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে”— এ বর্ণনা দিয়ে কবি কী বলতে চেয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের সোহেলের সম্ভাবনা ও ‘আসমানি’ কবিতার আসমানির সুপ্ত সম্ভাবনার মধ্যে কী মিল রয়েছে?
ঘ. “উদ্দীপকে সমাজের ইতিবাচক ভূমিকা দেখানো হয়েছে, কিন্তু ‘আসমানি’ কবিতায় সমাজ সেই ভূমিকা থেকে অনুপস্থিত”— দুটি রচনার এই বৈসাদৃশ্য বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৭।
ফেরদৌসির বাবা দিনমজুর। তার সংসারে তিনটি ছেলে-মেয়ে। বাবা দিনে যা আয় করেন, তাতে একবেলা খাওয়াই দায়। ফেরদৌসির পেট ফুলে উঠেছে প্লীহায়, মুখে ক্ষত। ডাক্তার বলেছেন পুষ্টিকর খাবার ও নিয়মিত ওষুধ প্রয়োজন। কিন্তু ফেরদৌসির বাবা তা কিনতে পারেন না। স্কুলের শিক্ষক ফেরদৌসিকে দেখে মনে করেন, এই শিশুর মেধা আছে, কিন্তু অভাব তার সম্ভাবনাকে গ্রাস করছে।
ক. ‘ভেন্না পাতার ছানি’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
খ. “সাক্ষী দেছে অনাহারে কদিন গেছে তার”— চরণটির মাধ্যমে আসমানির কী অবস্থা বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের ফেরদৌসির শারীরিক অবস্থার সাথে ‘আসমানি’ কবিতার আসমানির কোন দিকটির মিল রয়েছে?
ঘ. “উদ্দীপক ও কবিতায় দারিদ্র্য শুধু ক্ষুধার নয়, সম্ভাবনা ধ্বংসেরও কারণ”— বিশ্লেষণ কর।

নিচে আসমানি কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর পিডিএফ ফাইল দেওয়া হল।

আসমানি কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর পিডিএফ

আরও পড়ুনঃ আসমানী কবিতার MCQ | বহুনির্বাচনি প্রশ্ন উত্তর

Related Posts

Leave a Comment