আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর “আমি কিংবদন্তির কথা বলছি” কবিতায় পূর্বপুরুষদের সংগ্রাম, আত্মত্যাগ এবং ঐতিহ্যের ইতিহাসকে স্মরণ করে সকলকে একই চেতনায় উদ্দীপ্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এই পোস্টে আমি কিংবদন্তির কথা বলছি কবিতার ব্যাখ্যা ও মূলভাব – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম।
Table of Contents
আমি কিংবদন্তির কথা বলছি কবিতার মূলভাব
আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর “আমি কিংবদন্তির কথা বলছি” কবিতাটি যেন আমাদের বাঙালি জাতির সংগ্রামের গল্প। কবি তাঁর পূর্বপুরুষদের জীবনের গল্প বলছেন, যারা মাটির সঙ্গে মিশে ছিল, যাদের রক্তজবার মতো রক্তাক্ত পিঠ ছিল। সেই পুরনো দিনের মানুষগুলো নিজেদের আত্মত্যাগ দিয়ে আমাদের জন্য এক ইতিহাস গড়ে গেছে। এই কবিতায় “কবিতা” শব্দটি শুধু শব্দের জাল নয়, এটা যেন সত্যের প্রতিচ্ছবি। কবি বুঝিয়ে দিয়েছেন, যারা এই সত্যের ভাষা বুঝতে পারে না, তারা কখনোই স্বাধীনতার স্বাদ পাবে না। কবিতায় আমরা মায়ের গল্প শুনি, সেই মা যিনি ভালোবাসা দিয়ে আমাদের শিকড় শক্ত করে রাখেন। আমরা শুনি ভাইয়ের গল্প, যে মুক্তির জন্য যুদ্ধে গেছে, ভালোবাসার জন্য যুদ্ধ করেছে। এই কবিতাটি আমাদের শেখায়, স্বাধীনতা আর ভালোবাসা কেবল ব্যক্তিগত কিছু নয়, বরং এগুলো পুরো জাতির জন্য। সেই মাটি, সেই কৃষকের শ্রম, সেই মুক্তিযোদ্ধার সাহস—সবকিছু মিলেই আমাদের আসল পরিচয় গড়ে তোলে। কবি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে, আত্মত্যাগ ছাড়া, সংগ্রাম ছাড়া, এবং ভালোবাসা ছাড়া আমরা আসলেই পুরোপুরি মুক্ত হতে পারি না।
আমি কিংবদন্তির কথা বলছি কবিতার ব্যাখ্যা
১. “আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।”
- কবি তাঁর পূর্বপুরুষদের স্মরণ করে তাঁদের জীবন ও সংগ্রামের গল্প শোনাতে শুরু করছেন। এভাবে তিনি জীবনের মর্ম এবং মানবিক ইতিহাসের প্রতি পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।
২. “তাঁর করতলে পলিমাটির সৌরভ ছিল”
- কবির পূর্বপুরুষ ছিলেন প্রকৃতির সন্তান, যাঁরা মাটির সাথে একাত্ম হয়ে নিজেদের জীবন গড়ে তুলেছেন। তাদের শ্রম ও কাজের মধ্যে প্রকৃতির সৌন্দর্য বিরাজ করে।
৩. “তাঁর পিঠে রক্তজবার মতো ক্ষত ছিল।”
- পূর্বপুরুষরা কষ্টের জীবন কাটিয়েছেন। তাঁদের শরীরে ছিল কঠোর পরিশ্রমের চিহ্ন। ক্ষতচিহ্নগুলো যেন সেই সময়ের সংগ্রাম ও দুঃখের প্রতীক।
৪. “তিনি অতিক্রান্ত পাহাড়ের কথা বলতেন, অরণ্য এবং শ্বাপদের কথা বলতেন।”
- তাঁরা তাদের জীবন সংগ্রামের গল্প বলতেন, যেখানে পাহাড় পার হওয়া, অরণ্য অতিক্রম করা এবং বিপদের মুখোমুখি হওয়ার বর্ণনা রয়েছে। এটা বুঝায় যে তাঁরা বাধা-বিপত্তির মধ্যেও অগ্রসর হয়েছেন।
৫. “পতিত জমি আবাদের কথা বলতেন, তিনি কবি এবং কবিতার কথা বলতেন।”
- পূর্বপুরুষদের কঠোর পরিশ্রমের কথা এখানে উঠে আসে। তাঁরা পতিত জমিকে উর্বর করেছেন এবং মাটির সাথে লড়াই করে নতুন সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছেন। তাঁরা তাঁদের জীবনকেই কবিতার মতো করে গড়ে তুলেছেন।
৬. “জিহ্বায় উচ্চারিত প্রতিটি সত্য শব্দ কবিতা,
কর্ষিত জমির প্রতিটি শস্যদানা কবিতা।”**
- এখানে কবিতা শব্দটি সত্য এবং পরিশ্রমের প্রতীক। কবির কাছে সত্য ও পরিশ্রম এক ধরনের পবিত্রতা বহন করে।
৭. “যে কবিতা শুনতে জানে না, সে ঝড়ের আর্তনাদ শুনবে।”
- যারা জীবনের সত্য উপলব্ধি করতে জানে না, তাদের জীবনে শুধু কষ্ট ও দুর্ভোগই বরাদ্দ। কবিতাকে না বুঝতে পারার মানে হলো কষ্টের প্রতি সংবেদনশীল না হওয়া।
৮. “যে কবিতা শুনতে জানে না, সে দিগন্তের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।”
- যারা জীবন এবং সত্যকে অনুভব করতে জানে না, তারা জীবন থেকে অনেক কিছুই বঞ্চিত হবে। দিগন্ত বোঝাতে এখানে বিস্তৃত সুযোগ ও সম্ভাবনাকে বোঝানো হয়েছে।
৯. “যে কবিতা শুনতে জানে না, সে আজন্ম ক্রীতদাস থেকে যাবে।”
- জীবনের প্রকৃত অর্থ না বোঝা মানে নিজের দাসত্ব থেকে মুক্ত হতে না পারা। কবিতাকে না বোঝা মানে মনের স্বাধীনতা না পাওয়া।
১০. “আমি আমার মায়ের কথা বলছি,
তিনি বলতেন প্রবহমান নদী
যে সাঁতার জানে না তাকেও ভাসিয়ে রাখে।”
- কবি তাঁর মাকে স্মরণ করছেন, যিনি স্নেহময়ী এবং সহানুভূতিশীল। তাঁর মা জানান যে, জীবন ও প্রকৃতি এমন এক ধরনের মা, যা প্রতিটি সন্তানকে ভাসিয়ে রাখে।
১১. “যে কবিতা শুনতে জানে না, সে নদীতে ভাসতে পারে না।”
- যারা জীবনকে সত্যিকারের উপলব্ধি করতে জানে না, তারা জীবনের ধারাকে অনুভব করতে পারে না। এর অর্থ হলো তারা জীবনের প্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবে।
১২. “যে কবিতা শুনতে জানে না, সে মাছের সঙ্গে খেলা করতে পারে না।”
- প্রকৃতির স্নেহময় স্পর্শ অনুভব করতে না পারলে, তারা জীবনের আনন্দ থেকে বঞ্চিত থাকবে।
১৩. “আমি কিংবদন্তির কথা বলছি”
- কবি এখানে কিংবদন্তির মাধ্যমে ঐতিহ্যের কথা বলছেন। তিনি সেই সাহসী পূর্বপুরুষদের জীবন, সংগ্রাম, এবং ভালোবাসার ইতিহাস আমাদের জানাচ্ছেন।
১৪. “আমি বিচলিত স্নেহের কথা বলছি,
গর্ভবতী বোনের মৃত্যুর কথা বলছি”
- কবি প্রিয়জনের মৃত্যু, কষ্ট ও আবেগের কথা স্মরণ করছেন, যা তাঁর জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
১৫. “যে কবিতা শুনতে জানে না, সে সন্তানের জন্য মরতে পারে না।”
- যারা জীবনের প্রকৃত অর্থ বুঝতে পারে না, তারা প্রিয়জনের জন্য আত্মত্যাগ করতে পারবে না। কবিতা বুঝা মানে হলো ত্যাগের মানে বুঝা।
১৬. “যে কবিতা শুনতে জানে না, সে সূর্যকে হৃৎপিণ্ডে ধরে রাখতে পারে না।”
- যারা মুক্তির চেতনা উপলব্ধি করতে পারে না, তারা স্বাধীনতার আসল মূল্যায়ন করতে পারে না। সূর্য এখানে স্বাধীনতা ও প্রাণের প্রতীক।
১৭. “আমি আমার ভাইয়ের কথা বলছি,
যে কবিতা শুনতে জানে না, সে ভালোবেসে যুদ্ধে যেতে পারে না।”**
- কবি এখানে প্রিয়জনের জন্য সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছেন। যারা জীবনের গভীরতা উপলব্ধি করতে জানে না, তারা সত্যিকার অর্থে সংগ্রাম করতে পারবে না।
১৮. “আমরা কি তাঁর মতো কবিতার কথা বলতে পারবো,
আমরা কি তাঁর মতো স্বাধীনতার কথা বলতে পারবো।”
Related Posts
- বিদ্রোহী কবিতার মূলভাব সহজ ভাষায় -একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- সাম্যবাদী কবিতার মূলভাব, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি (MCQ)
- বায়ান্নর দিনগুলো জ্ঞানমূলক প্রশ্ন উত্তর (সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন)
- তাহারেই পড়ে মনে কবিতার মূলভাব – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- মানব কল্যাণ মূলভাব বা মূল বিষয়বস্তু – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- তাহারেই পড়ে মনে কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর -একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- একটি তুলসী গাছের কাহিনী গল্পের মূল বিষয়বস্তু – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- সোনার তরী কবিতার মূলভাব – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- মাসি পিসি গল্পের মূল কথা সহজ ভাষায় – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- আঠারো বছর বয়স কবিতার ব্যাখ্যা – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা