নজরুল ইসলামের “আমার পথ” প্রবন্ধে সত্যের সন্ধানে যে দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলা হয়েছে, তা আমাদের আত্ম-উপলব্ধি এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার মূল্যবোধকে আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করতে শেখায়। এই পোস্টে আমার পথ অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর -একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম।
Table of Contents
আমার পথ অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর
১। মানুষ-ধর্মকে সবচেয়ে বড় ধর্ম বলা হয় কেন?
মানবধর্মকে সবচেয়ে বড় ধর্ম বলা হয় কারণ, মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব এবং মানবতাই সকল ধর্মের মূল ভিত্তি। মানুষকে ভালোবাসা, মানুষের কল্যাণ কামনা এবং মানবতাবোধই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কোনো ধর্মই যদি মানবকল্যাণের দিকে নজর না দেয়, তবে তা বাস্তবিক অর্থে ধর্ম হতে পারে না। মানুষের মধ্যে মানবতা বজায় রাখাই প্রকৃত ধর্ম, তাই মানবধর্মকে সবচেয়ে বড় ধর্ম বলা হয়েছে।
২। মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম’- বুঝিয়ে লেখ।
এখানে লেখক বোঝাতে চেয়েছেন যে, ধর্মের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের মঙ্গল এবং মানবধর্মের মধ্যে সমস্ত ধর্মের মূল আত্মা নিহিত। অর্থাৎ, মানবতার প্রতি শ্রদ্ধা এবং মানুষকে ভালোবাসা হলো ধর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। একে অপরকে সহানুভূতির সাথে গ্রহণ এবং মানুষের স্বার্থে কাজ করাই সবচেয়ে বড় ধর্ম। কোন ধর্মের আচার-ব্যবহার ও বিশ্বাস যদি মানবকল্যাণের দিকে না চলে, তবে তা সঠিক ধর্ম হতে পারে না। তাই মানবধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম।
৩। ‘সবচেয়ে বড় দাসত্ব’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
এখানে ‘সবচেয়ে বড় দাসত্ব’ দ্বারা বোঝানো হয়েছে পরনির্ভরতা বা অন্যের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা। যখন কেউ তার নিজের শক্তি, সাহস বা সত্যের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে না এবং অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, তখন সে সত্যিকার অর্থে দাসত্বে আবদ্ধ থাকে। এই পরনির্ভরতা তার আত্মবিশ্বাস এবং স্বাধীনতা ধ্বংস করে, ফলে সে ক্রমশ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এজন্য লেখক পরনির্ভরতাকে সবচেয়ে বড় দাসত্ব বলেছেন।
৪। ‘আগুনের সম্মার্জনা’ বলতে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে কী বোঝানো হয়েছে?
এখানে ‘আগুনের সম্মার্জনা’ দ্বারা বোঝানো হয়েছে সমাজে অসত্য, কুসংস্কার, ভণ্ডামি ও মিথ্যার বিরোধিতা এবং এগুলিকে পুড়িয়ে নির্মূল করার শক্তি। আগুন শুদ্ধির প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, যেভাবে আগুন সবকিছু পুড়িয়ে শুদ্ধ করে, তেমনি লেখক সমাজের অশুদ্ধতা, অসত্য এবং অন্যায়কে ধ্বংস করে শুদ্ধতার পথে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। এটি একটি বিদ্রোহী সত্তার প্রকাশ, যা সমাজকে নতুনভাবে গড়ার উদ্দেশ্যে।
৫। মেয়েলি বিনয়ের চেয়ে অহংকারের পৌরুষ অনেক অনেক ভালো-কেন?
‘মেয়েলি বিনয়’ অর্থাৎ অত্যধিক নম্রতা, সাধারণত দুর্বলতার প্রতীক হয়ে থাকে, কারণ এটি নিজের সত্য এবং আত্মবিশ্বাসকে নীরবে অস্বীকার করে। অপরদিকে, ‘পৌরুষ’ এখানে আত্মবিশ্বাস এবং শক্তির প্রতীক। অহংকার নয়, বরং নিজের সত্য এবং আত্মবিশ্বাসের শক্তি প্রকাশ করা ‘পৌরুষ’ হিসেবে গণ্য হয়, যা একটি শক্তিশালী ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তোলে। লেখক মনে করেন, এই ধরনের পৌরুষই প্রকৃত শক্তি এবং জীবনযুদ্ধে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।
৬। ‘ধূমকেতু’ হবে আগুনের সম্মার্জনা-কেন?
ধূমকেতু’ হবে আগুনের সম্মার্জনা কারণ, ‘ধূমকেতু’ সেই শক্তি যা আগুনের মতো প্রলয়ঙ্কর এবং ধ্বংসাত্মক। এটি সমাজের সমস্ত মিথ্যা, জাত-পাতের বিভেদ, কুসংস্কার এবং সামাজিক অশুদ্ধতা পুড়িয়ে শুদ্ধ করবে। লেখক এখানে ধূমকেতুকে একটি প্রতীক হিসেবে দেখছেন যা সমাজের পুরোনো, ভন্ডামিপূর্ণ ধারণাগুলো ধ্বংস করে নতুন এক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবে। আগুনের সম্মার্জনার মাধ্যমে এই পরিবর্তন আসবে, এবং সমাজ নতুন রূপে জন্ম নেবে।
৭। ‘আমার কর্ণধার আমি’ বলতে লেখক কী বুঝিয়েছেন?
এখানে ‘আমার কর্ণধার আমি’ দ্বারা লেখক বোঝাতে চেয়েছেন, নিজের জীবনের পথপ্রদর্শক এবং গন্তব্য নির্ধারণের জন্য অন্যের ওপর নির্ভর না করে, নিজের অভ্যন্তরীণ শক্তি, নীতি এবং আদর্শের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। লেখক বলেন, যখন একজন মানুষ তার সত্য এবং আদর্শকে চিনে নেয়, তখন সে নিজের জীবনকে সংকোচহীনভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম হয়। আত্মবিশ্বাস এবং নিজস্ব মূল্যবোধই তাকে সত্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়।
৮। আপনার সত্যকে আপনার পথপ্রদর্শক বলে জানা অহংকার নয় কেন?
‘আপনার সত্যকে আপনার পথপ্রদর্শক বলে জানা অহংকার নয়’ কারণ, এখানে আত্মবিশ্বাস ও নিজের মূল্যবোধের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হচ্ছে। যখন কেউ তার সত্যকে গ্রহণ করে এবং তা অনুসরণ করে, তখন সে নিজের পথপ্রদর্শক হিসেবে সেই সত্যকে মান্য করে। এটি অহংকার নয়, বরং আত্মবিশ্বাসের প্রকাশ। লেখক মনে করেন, এটি আসলে আত্মমর্যাদা এবং নিজের বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধার প্রতীক, যা অন্যের দাসত্বের পরিবর্তে স্বাধীনতার পথে চলার আহ্বান জানায়।
৯। পরাবলম্বন কেন আমাদের নিষ্ক্রিয় করে তোলে?
পরাবলম্বন মানুষের আত্মবিশ্বাস এবং জীবনশক্তিকে ক্রমাগত ক্ষয় করে। যখন মানুষ অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়, তখন তার নিজস্ব শক্তি ও সক্ষমতা নষ্ট হতে থাকে। পরাবলম্বী ব্যক্তি কখনোই নিজের সত্তাকে সম্পূর্ণরূপে বিকাশ করতে পারে না, এবং সে একসময় অলস, কর্মবিমুখ হয়ে পড়ে। তার নিজস্ব চিন্তাভাবনা এবং কর্মক্ষমতা দেউলিয়া হয়ে যায়, এবং সে সবসময় অন্যের সহানুভূতির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
১০। ‘নিজেকে চিনলে আর কাউকে চিনতে বাকি থাকে না।’ প্রাবন্ধিকের এ মতামতটি বুঝিয়ে লেখ।
এই উক্তির মাধ্যমে লেখক বলতে চেয়েছেন যে, যদি একজন ব্যক্তি নিজের প্রকৃত সত্তাকে বুঝতে পারে এবং নিজের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, এবং আদর্শ সম্পর্কে সচেতন থাকে, তবে সে বাইরের কোনো শক্তি বা প্রভাবের কাছে নত হবে না। যে ব্যক্তি নিজের শক্তি এবং সত্ত্বা জানে, তাকে বাইরের কোনো বিপদ বা পরাশক্তি ভয় দেখাতে পারে না। তাই নিজেকে জানলেই, পৃথিবীর অন্য সব কিছু জানার প্রয়োজনীয়তা অনেকটাই ফুরিয়ে যায়।
১১। প্রাবন্ধিকের মতে, এদেশের নতুন জাত গড়ে উঠবে না কেন?
লেখক মনে করেন, এই দেশ নতুন জাত গড়ার জন্য প্রস্তুত নয় যতদিন না দেশের ঐশ্বর্য ও সম্পদ বিদেশি শক্তির দ্বারা লুট হতে থাকে এবং আমাদের মধ্যে এই লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ গড়ে ওঠে। আমাদের ঐশ্বর্য বিদেশীরা নিয়ে যাচ্ছে এবং আমরা তাদের দাসত্ব করছি, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে নতুন জাত গড়ে উঠবে না। যখন পর্যন্ত আমরা আমাদের সম্পদ এবং স্বাধীনতার জন্য লড়াই করব না, ততদিন একটি শক্তিশালী নতুন জাত গড়ে ওঠা সম্ভব নয়।
১২। স্পষ্ট কথা বলার সময় বিনয়ভাব থাকে না কেন?
স্পষ্টভাবে কথা বলার সময় কোনো কিছু গোপন রাখা বা আড়াল করা হয় না, ফলে এতে স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা বিনয়ের অভাব অনুভূত হয়। স্পষ্টতার মধ্যে একটি দৃঢ়তা থাকে, যা অনেক সময় অহংকার বা স্পর্ধা বলে মনে হতে পারে। তবে, এটি প্রকৃতপক্ষে আত্মবিশ্বাস এবং সত্যের প্রতি আস্থার প্রকাশ। যখন কোনো কথায় বিনয়ের অতিরিক্ত প্রদর্শন থাকে, তখন সেটা আসলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে।
১৩। ‘যার ভেতরে ভয়, সেই বাইরে ভয় পায়’- লেখ।
যখন মানুষের অন্তরে সত্য বা আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকে, তখন তার মধ্যে অমূলক ভয় কাজ করে। এই ভয় তখন বাইরে থেকেও তাকে আতঙ্কিত করে। যে ব্যক্তি নিজের অন্তরের শক্তি ও সত্য জানে না, সে বাইরের ভয়কে অনেক বেশি অনুভব করে। আর যে ব্যক্তি নিজের ভেতরের শক্তি উপলব্ধি করতে পারে, সে বাইরের কোনো ভয়কে গুরুত্ব দেয় না। এজন্য লেখক বলেছেন, “যার ভেতরে ভয়, সেই বাইরে ভয় পায়।”
১৪। ‘আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে।’ বুঝিয়ে লেখ।
এখানে লেখক বলেছেন, যে ব্যক্তি তার নিজের আত্মাকে বা ভেতরের সত্যকে চিনতে পারে, সে প্রকৃত আত্মনির্ভরতা অর্জন করতে পারে। মানুষের ভেতরে এক অদ্বিতীয় শক্তি রয়েছে, যার মাধ্যমে সে পৃথিবীর সব কিছু জয় করতে সক্ষম। এই শক্তি চেনার জন্য ধ্যান এবং জ্ঞান জরুরি। যখন মানুষ তার সত্যকে জানে এবং তার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে, তখন সে বাইরে থেকে কোনো সাহায্য বা নির্ভরশীলতার প্রয়োজন অনুভব করে না। তখন তার আত্মবিশ্বাস, শক্তি ও সাহস তাকে নিজের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়।
আমার পথ প্রবন্ধের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১৫। “আর যাদের এই তথাকথিত দম্ভ আছে, শুধু তারাই অসাধ্য সাধন করতে পারে।”- উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
এখানে ‘দম্ভ’ শব্দটি অহংকার বা আত্মবিশ্বাসের পরিপূরক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। লেখক বলছেন, যে ব্যক্তির মধ্যে দৃঢ় আত্মবিশ্বাস এবং নিজের সত্যের প্রতি বিশ্বাস রয়েছে, সেই ব্যক্তি প্রায়শই সামাজিক বা রাজনৈতিক বাধা উপেক্ষা করে অসম্ভব কাজগুলোও সম্ভব করে তোলে। এই দম্ভ বা আত্মবিশ্বাস তাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়। প্রবন্ধে লেখক নিজেকে “আমিই আমার কর্ণধার” বলে উল্লেখ করেছেন, যা একটি আত্মবিশ্বাসের প্রকাশ। এটি কোনো মন্দ দম্ভ নয়, বরং নিজেকে জানার এবং নিজের শক্তির প্রতি আস্থার এক পরিচয়। আত্মবিশ্বাসের শক্তি, দম্ভ, মানুষের আত্মসম্মান এবং শক্তি বৃদ্ধি করে, যা তাকে সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করতে সাহায্য করে।
১৬। পরাবলম্বনই আমাদের নিষ্ক্রিয় করে ফেলে বলতে কী বুঝিয়েছেন?
এখানে লেখক বুঝাতে চেয়েছেন যে, পরাবলম্বন বা অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা মানুষকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। যখন আমরা আমাদের শক্তির বদলে অন্যের সাহায্য বা উপকারিতার ওপর নির্ভর করি, তখন আমাদের নিজস্ব শক্তি, দক্ষতা ও স্বাধীনতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ধরনের পরাবলম্বন আমাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব তৈরি করে, এবং আমাদের ক্রিয়াশীলতা কমিয়ে দেয়। লেখক বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজে জানে, নিজের শক্তি বুঝে তার জীবন পরিচালনা করে, সে কখনো অন্যের শাসনে বা দাসত্বে থাকবে না।
১৭। খুব বেশি বিনয় কেন মানুষকে ছোট ও নীচু করে? ব্যাখ্যা কর।
খুব বেশি বিনয় বা অপ্রকৃত অনুকম্পা মানুষকে ছোট এবং নীচু করে কারণ এটি কখনও কখনও নিজের সত্যকে অস্বীকার করার মতো হয়ে দাঁড়ায়। অত্যধিক বিনয় দেখাতে গিয়ে কেউ নিজের মূল্য, আত্মবিশ্বাস বা শক্তি ভুলে যায়। এক্ষেত্রে, বিনয় আসলে দুর্বলতার লক্ষণ হয়ে পড়ে, যা মানুষকে নিজের সামর্থ্যকে প্রকাশ করতে বাধা দেয়। যখন কেউ নিজের সত্য ও শক্তি অস্বীকার করে, তখন তার মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দেয় এবং তিনি নিজেকে ছোট মনে করেন। অতিরিক্ত বিনয় নিজের শক্তির প্রতি অশ্রদ্ধা এবং আত্মবিশ্বাসের অভাবের পরিচায়ক।
১৮। ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের উদ্দেশ্য কী? ব্যাখ্যা কর।
‘আমার পথ’ প্রবন্ধের উদ্দেশ্য ছিল হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে যে ভেদাভেদ এবং দ্বন্দ্ব বিদ্যমান, তা দূর করে মানবধর্ম প্রতিষ্ঠা করা। কবি নজরুল ইসলাম প্রবন্ধে বিশেষভাবে ইংরেজ শাসনের সময় হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে যে জাতিগত ও ধর্মীয় বিভাজন তৈরি হয়েছিল, তার প্রতি সমালোচনা করেছেন। তিনি মানবতার জন্য একীভূত সমাজের আহ্বান জানিয়েছেন, যেখানে সকল ধর্ম এবং জাতির মানুষ একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে। ধর্মীয় বিভেদ ও ঘৃণা দূর করে মানবতার মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত করতে এই প্রবন্ধে কবি নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল মানুষের মধ্যে একতার অনুভূতি জাগানো, যা জাতির জন্য মঙ্গলজনক হবে।
১৯। “আমি সে দাসত্ব হতে সম্পূর্ণ মুক্ত।”- ব্যাখ্যা কর।
এখানে ‘দাসত্ব’ শব্দটির মাধ্যমে লেখক পরনির্ভরতা বা অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা বুঝিয়েছেন। যে ব্যক্তি নিজের সত্য এবং শক্তির ওপর বিশ্বাস রাখে, সে কখনো অন্যের দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকে না। লেখক এখানে নিজের আত্মবিশ্বাস এবং স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করেছেন। যে ব্যক্তি তার নিজের আত্মবিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে, সে অন্যের কাছে মাথা নত করে না। এটি একটি আত্মসম্মান এবং আত্মনির্ভরতার প্রকাশ, যেখানে ব্যক্তিগত শক্তির ওপর নির্ভর করে জীবনের পথ চলা হয়।
২০। আগুনের ঝান্ডা দুলিয়ে’ লেখক কেন পথে বের হলেন?
লেখক ‘আগুনের ঝান্ডা দুলিয়ে’ পথে বের হয়েছেন, কারণ তিনি দেশের জন্য মঙ্গলকর কাজ করতে চেয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, সত্যের পথে চলতে পারলে সমাজের অসত্য, কুসংস্কার, দ্বন্দ্ব এবং বিভাজন দূর করা সম্ভব। আগুনের ঝান্ডা এখানে একটি প্রতীক—যা সমাজের অশুদ্ধতা দূর করবে এবং মানুষকে একত্রিত করবে। লেখক মানুষে-মানুষে মিলন এবং ধর্মীয় ভেদাভেদ দূর করতে চেয়েছিলেন, যাতে সব মানুষ মানবধর্মের দিকে এগিয়ে আসে। সমাজে ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং মানবতার পক্ষে কাজ করাই ছিল তার উদ্দেশ্য।
২১। যে মিথ্যাকে চেনে সে কেন তাকে ভয় করে না?
যে ব্যক্তি মিথ্যাকে চিনতে পারে, সে আর মিথ্যার প্রতি ভয় পায় না। কারণ, সত্যের সাথে পরিচিত হলে মিথ্যার কোনো অস্তিত্ব বা শক্তি থাকে না। যে ব্যক্তি নিজেকে এবং তার সত্যকে জানে, সে মিথ্যার ক্ষতি বা ভয় থেকে মুক্ত থাকে। সত্যের প্রতি পূর্ণ আস্থা থাকলে মিথ্যা তাকে ভয় দেখাতে পারে না। সেই ব্যক্তি যিনি সত্য জানেন, তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস এবং শক্তি থাকে, যা তাকে মিথ্যাকে সহজেই অতিক্রম করতে সাহায্য করে।
২২। প্রাবন্ধিক ভুল করতে রাজি আছেন কেন?
প্রাবন্ধিক ভুল করতে রাজি আছেন, কারণ তিনি জানেন যে, ভুলের মধ্য দিয়েই মানুষ শিখতে পারে এবং অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে। জীবনে ভুলের মাধ্যমে মানুষ তার ভুল শোধরাতে শিখে এবং সঠিক পথ খুঁজে পায়। তবে, তিনি ভণ্ডামি বা মিথ্যার দিকে চলে যেতে রাজি নন। তিনি মনে করেন, ভুল করেও যদি তা শোধরানোর সুযোগ পাওয়া যায়, তবে তা ভালো, কিন্তু যদি কেউ ভুলকে সত্য বলে ধরে নেয়, তাহলে তা দুঃখজনক। প্রাবন্ধিক শিখতে এবং সংশোধন করতে চান, কিন্তু মিথ্যার প্রতি সহানুভূতির বা দাসত্বের জায়গা থেকে বিরত থাকতে চান।
২৩। লেখক কোথায় আদত সত্যের মিল খুঁজে পেয়েছেন? বুঝিয়ে দাও।
লেখক আদত সত্যের মিল মানুষের মধ্যে মিলনে, আত্মার মিলনে এবং মানবধর্মে খুঁজে পেয়েছেন। লেখক মনে করেন, মানবধর্মই প্রকৃত ধর্ম, যা সকল ধর্মের মূল এবং সকল মানুষের জন্য সমান। মানবতার মূল ভিত্তি হলো মানুষের একে অপরের প্রতি সহানুভূতি, ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা। এই মিলনই হলো আদত সত্য, যেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণের কোনো ভেদাভেদ নেই। যখন মানুষ একে অপরকে আত্মিকভাবে বোঝে এবং মিলিত হয়, তখন সত্যের পূর্ণ উপলব্ধি ঘটে।
২৪। কবি নিজেকে ‘অভিশাপ রথের সারথি’ বলে অভিহিত করেছেন কেন?
কবি নিজেকে ‘অভিশাপ রথের সারথি’ বলে অভিহিত করেছেন কারণ, তিনি সমাজের অন্যায় এবং অশুদ্ধতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। ‘অভিশাপ রথ’ এক ধরনের বিপ্লবী শক্তি যা সমস্ত অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে। কবি নিজেকে এই সংগ্রামের অগ্রভাগে রেখেছেন এবং বলেছেন, তিনি সমাজের ভুল এবং অবিচারের বিরুদ্ধে একটি “অভিশাপ” হতে প্রস্তুত। এটি তার আত্মবিশ্বাস এবং সামাজিক পরিবর্তন আনতে তার প্রতিজ্ঞা প্রকাশ।
২৫। রাজভয়-লোকভয় প্রাবন্ধিককে বিপথে নিয়ে যাবে না কেন?
প্রাবন্ধিকের মধ্যে যে আত্মবিশ্বাস এবং দিব্যজ্ঞান রয়েছে, তা তাকে বিপথে যেতে বাধা দেয়। তিনি জানেন তার উদ্দেশ্য কী, এবং তার সত্যের ওপর পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে। এই বিশ্বাসের কারণে, তিনি রাজভয় বা লোকভয়কে কোনোদিন তার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে দেবেন না। তার মনে সত্যের শক্তি রয়েছে, যা তাকে সকল ধরনের ভয় এবং শঙ্কা অতিক্রম করতে সাহায্য করে। তিনি জানেন, যে সত্যের পথে চলতে পারে, সে কখনো বিপথে যাবে না।
২৬। “যার মনে মিথ্যা, সেই মিথ্যাকে ভয় করে”- কেন?
যে ব্যক্তি মিথ্যাকে চিনতে পারে না এবং তার ভেতরে নিজের সত্যের অস্তিত্ব নেই, সে মিথ্যার ভয় পায়। মানুষের মনে যখন মিথ্যা থাকে, তখন সে অস্থির হয়, কারণ তাকে মনে হয়, তার মিথ্যা একদিন প্রকাশিত হবে। যে ব্যক্তি নিজের সত্যকে জানে, তার অন্তরে কোনো ভয় থাকে না, কারণ সে জানে তার সত্যই শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হবে। তবে, যিনি মিথ্যা বিশ্বাস করে থাকেন, তাকে মিথ্যা থেকে মুক্তির কোনো পথ খুঁজে পেতে ভয় হয়।
Related Posts
- প্রতিদান কবিতার মূলভাব বা পাঠ পরিচিতি সহজ ভাষায়
- আমার পথ প্রবন্ধের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন উত্তর – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- বিলাসী গল্পের মূল বিষয়বস্তু সহজ ভাষায় – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- একটি তুলসী গাছের কাহিনী গল্পের মূল বিষয়বস্তু – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- তাহারেই পড়ে মনে কবিতার MCQ PDF সহ প্রশ্ন ও উত্তর
- ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার মূলভাব – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- তাহারেই পড়ে মনে কবিতার মূলভাব – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- আঠারো বছর বয়স কবিতার ব্যাখ্যা – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার ব্যাখ্যা – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর -একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা