অপরিচিতা গল্পের মূল কথা সহজ ভাষায় – HSC বাংলা ১ম পত্র

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘অপরিচিতা’ গল্পটিতে এক কথায় নারীর মর্যাদা আর আত্মসম্মানের গল্প। এই পোস্টে অপরিচিতা গল্পের মূল কথা সহজ ভাষায় – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম। বড় মূলভাবটি পড়লে ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।

অপরিচিতা গল্পের মূল কথা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘অপরিচিতা’ গল্পে অনুপম একজন ধনী পরিবারের ছেলে, যে ছোটবেলা থেকেই অতিরিক্ত আদরে বড় হওয়ায় নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারে না। তার জীবনের সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় তার মা ও মামা, যিনি বয়সে সামান্য বড় হলেও অত্যন্ত স্বার্থপর। মামা বিয়ের ক্ষেত্রে এমন মেয়ে চায়, যার বাবার টাকা নেই কিন্তু দিতে অসুবিধা হবে না এবং যে মাথা নিচু করে শ্বশুরবাড়িতে আসবে। বন্ধুর পরামর্শে অনুপমের বিয়ে ঠিক হয় শম্ভুনাথ সেনের মেয়ে কল্যাণীর সঙ্গে। শম্ভুনাথ ধনী না হলেও সম্মানী ও আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন মানুষ। বিয়ের দিন মামা সন্দেহের বশে কনের গয়না যাচাই করতে চাইলে শম্ভুনাথ অপমানিত বোধ করেন। তিনি মেয়ের সম্মানকে গয়নার চেয়ে বড় মনে করে বিয়ে ভেঙে দেন। অনুপম কিছু বলার সুযোগ না পেয়ে লজ্জা ও কষ্ট নিয়ে ফিরে আসে। তবু কল্যাণীকে না দেখেও অনুপমের মনে তার প্রতি গভীর টান জন্মায়। এক বছর পর সে জানতে পারে কল্যাণী এখনও বিয়ে করেনি। চার বছর পরে ট্রেনে অনুপম ও তার মা এক মধুর কণ্ঠ শুনে চমকে ওঠে। পরে জানতে পারে সেই কণ্ঠের মেয়েটিই কল্যাণী। সে নারীশিক্ষার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছে এবং বিয়ে করবে না বলে জানায়। অনুপম মামার প্রভাব ছেড়ে কল্যাণীর পাশে থাকে। শুধু তার কাজে সাহায্য করেই সে জীবনের শান্তি ও তৃপ্তি খুঁজে পায়।

অপরিচিতা গল্পের মূলভাব বড় করে

অনুপম একজন ধনী পরিবারের ছেলে। ছোটবেলা থেকেই সে খুব আদরে বড় হয়েছে। তাই সে একটু লাজুক, নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারে না। সবাই তাকে “ভালোমানুষ” বলে, কিন্তু আসলে তার জীবনের সব সিদ্ধান্ত নেয় তার মা আর মামা। মজার ব্যাপার হলো, মামা বয়সে অনুপমের থেকে মাত্র ছয় বছরের বড় হলেও সংসারে তার প্রভাব অনেক বেশি। মামার চিন্তাভাবনা খুব স্বার্থপর। বিয়ের ব্যাপারে সে চায় মেয়ের বাবার যেন টাকা থাকে, কিন্তু দিতে যেন অসুবিধা না হয়, আর মেয়েটি যেন মাথা নিচু করে তাদের বাড়িতে আসে।

অনুপমের বন্ধু হরিশের পরামর্শে শম্ভুনাথ সেন নামের একজন ভদ্রলোকের পনেরো বছরের মেয়ে কল্যাণীর সঙ্গে অনুপমের বিয়ের কথা ঠিক হয়। শম্ভুনাথ সেন খুব ধনী নন, কারণ তিনি পূর্বপুরুষের সম্পত্তি হারিয়েছেন, কিন্তু তিনি একজন সম্মানী ও সজ্জন মানুষ। বিয়ের দিন আসতেই অনুপমের মামার সন্দেহ আর লোভ মাথাচাড়া দেয়। তিনি বিয়ের আগেই কনের গয়না পরীক্ষা করতে চান এবং এজন্য একজন সেকরা বা স্বর্ণকার নিয়ে আসেন। তার উদ্দেশ্য ছিল, গয়নাগুলো আসল কি না তা যাচাই করা।

এই প্রস্তাব শম্ভুনাথ সেনের কাছে খুব অপমানজনক মনে হয়। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, মেয়ের সম্মান ও বিশ্বাস তার কাছে সোনাদানার চেয়েও বেশি মূল্যবান। তাই তিনি সঙ্গে সঙ্গে বিয়ে ভেঙে দেন। অনুপম তখনও কিছু বলতে পারে না, কারণ কেউ তার মতামত চায়নি। সে খুব অপমানিত ও কষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে।

এই অপমানের পরও আশ্চর্য ঘটনা ঘটে। অনুপমের মনে কল্যাণীর জন্য এক গভীর টান তৈরি হয়। সে তো মেয়েটিকে ঠিক করে দেখেওনি। শুধু বন্ধুর মুখে শোনা কথা আর নিজের কল্পনার উপর ভর করেই তার মনে ভালোবাসা জন্মায়। সেই অচেনা মেয়েটিই তার মনে জায়গা করে নেয়। এক বছর পর অনুপম শোনে, কল্যাণী এখনও বিয়ে করেনি।

চার বছর পরে একদিন ট্রেনে ভ্রমণের সময় অনুপম ও তার মা একটি মিষ্টি কণ্ঠ শুনতে পায়, “গাড়িতে জায়গা আছে।” পরদিন তারা জানতে পারে, সেই কণ্ঠের মেয়েটিই কল্যাণী। সে এখনও অবিবাহিতা এবং নারীশিক্ষার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছে। তখন অনুপম মামার প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত করে। সে কল্যাণী ও তার বাবার কাছে গিয়ে আগের ঘটনার জন্য ক্ষমা চায়। এরপর সে কল্যাণীর কাজে সাহায্য করতে শুরু করে।

কল্যাণী অনুপমকে জানায়, সে দেশসেবার ব্রত নিয়েছে এবং “মাতৃ-আজ্ঞা”-র কারণে বিয়ে করবে না। অনুপম এতে দুঃখ পেলেও আশা ছাড়ে না। সে কল্যাণীর পাশে থাকে একজন সহকারী হিসেবে, কোনো দাবি না করে। শুধু সেই “অপরিচিতা” হিসেবেই তাকে পাশে পেয়ে, “জায়গা আছে” এই কথাটুকু শুনে সে মনে শান্তি পায়। আর এতেই সে নিজের জীবনকে সার্থক মনে করে।

আরও পড়ুনঃ বিলাসী গল্পের মূল বিষয়বস্তু সহজ ভাষায়

অপরিচিতা গল্পের MCQ | বহুনির্বাচনি প্রশ্ন উত্তর

Related Posts

Leave a Comment