যাবো আমি তোমার দেশে কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর

জসীমউদদীনের ‘যাব আমি তোমার দেশে’ কবিতাটি বাংলার গ্রামীণ জীবন ও প্রকৃতির সাথে মানবিক সম্পর্ক তুলে ধরে। কবি ‘পল্লি-দুলাল’ (গ্রামের প্রিয়জন) এর দেশে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন। এই পোস্টে যাবো আমি তোমার দেশে কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর লিখে দিলাম।

যাবো আমি তোমার দেশে কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন

১। যাবো আমি তোমার দেশে কবিতার কবির নাম কী?
উত্তরঃ জসীমউদদীন।

২। ‘যাব আমি তোমার দেশ’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত?
উত্তর: ধানক্ষেত কাব্যগ্রন্থ থেকে।

৩। জসীমউদ্‌দীন কোন খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে।

৪। কবি জসীমউদ্‌দীনের জন্মস্থান কোথায়?
উত্তর: ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে।

৫। জসীমউদ্‌দীন কী নামে খ্যাত?
উত্তর: পল্লিকবি নামে খ্যাত।

৫। ‘কবর’ কবিতাটি কখন বিখ্যাত হয়?
উত্তর: বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালেই এবং প্রবেশিকা বাংলা সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হলে।

৬। কবি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন অধ্যাপনা করেন?
উত্তর: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

৭। জসীমউদ্‌দীন পরে কোন সরকারি বিভাগে কাজ করেন?
উত্তর: সরকারি তথ্য ও প্রচার বিভাগে।

৮। কবির কোন কাব্য বিদেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে?
উত্তর: নক্সী-কাঁথার মাঠ।

৯। ‘চলে মুসাফির’ কী ধরনের গ্রন্থ?
উত্তর: ভ্রমণকাহিনী।

১০। জসীমউদ্‌দীন কোন উপাধিতে ভূষিত হন বিশ্বভারতী থেকে?
উত্তর: সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রি।

১১। কবি জসীমউদ্‌দীন কখন মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর: ১৯৭৬ সালের ১৩ই মার্চ।

১২। কবি কোথায় যেতে চান?
উত্তরঃ কবি পল্লির সৌন্দর্যময় পরিবেশে যেতে চান।

১৩। কবি কাকে উদ্দেশ করে কথা বলেছেন?
উত্তরঃ কবি পল্লি-দুলালকে উদ্দেশ করে কথা বলেছেন।

১৪। “পল্লি-দুলাল” কাকে বলা হয়েছে?
উত্তর: কবির গ্রাম্য বন্ধু/প্রিয়জনকে

১৫। কবি কার দেশে যেতে চান?
উত্তর: পল্লি-দুলালের দেশে

১৬। কবিতায় আকাশ কোথায় দিক-হারা?
উত্তর: বনের শীষে

১৭। কবিতায় মাঠ কীসে ঘেঁষে আছে?
উত্তর: চরণে (পায়ের কাছে)

১৮। কবিতায় “মেঘ-কনেরা” কী বহন করে?
উত্তর: জলের ঝারি

১৯। কোন গাছের বনের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: বেতস ও কেয়া

২০। ‘বেতসবন’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: বেতবন।

২১। কবিতায় কোন পাখি আসর মাতায়?
উত্তর: ডাহুক মেয়ে

২২। ‘পন্থ’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: পথ।

২৩। কবিতায় পথ কোথায় আঁচড় কাটে?
উত্তর: ধান ও কাউনের ক্ষেতে

২৪। পথের তুলনা করা হয়েছে কীসের সাথে?
উত্তর: হাবা মেয়ের সিঁথির সাথে

২৫। কোন মাঠ পেরিয়ে যেতে হবে?
উত্তর: গাজন-তলির মাঠ

২৬। কবিতায় কবি কী ছড়িয়ে দেবেন?
উত্তর: কদম-কলি

২৭। কবিতায় গ্রাম্য মেয়েরা কী করে?
উত্তর: বনে পাতা মেলে

২৮। ‘শাখী’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: বনের বৃক্ষ।

২৯। কবি কার সাথে দল বাঁধবেন?
উত্তর: পাড়ার দস্যি ছেলেদের সাথে

৩০। কবিতায় কবি কোথায় সাঁতার কাটবেন?
উত্তর: ধল-দীঘিতে

৩১। ‘ধীঘল’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ধীর্ঘ।

৩২। শাপলা লতা কীসের সাথে জড়াবে?
উত্তর: চরণ (পা)

৩৩। হিজল-ঝরা জল কী করবে?
উত্তর: গায়ের বর্ণ রঙিন করবে

৩৪। “কালোৎসবে” কী হবে?
উত্তর: লীলা খেলা

৩৫। কবি কার ডাকে সাড়া দেবেন?
উত্তর: পাখির ডাকে

৩৬। অজানা ফুলকে কী করবেন?
উত্তর: বিয়ের কনে মানবেন

৩৭। কবিতায় “ময়না কাঁটা” কী করবে?
উত্তর: উত্তরীয় জড়াবে

৩৮। ‘কুহেলী’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: কুয়াশা।

৩৯। কবিতায় “ইটেল মাটি” কী করবে?
উত্তর: হোঁচট লাগাবে

৪০। কবিতায় কবি কীভাবে ফিরবেন?
উত্তর: উদাস বেশে

৪১। “সাঁজ-বাগানে” কী দেখা যাবে?
উত্তর: ফুল ফুটেছে

৪২। কবি গাছের শাখা দুলিয়ে কী করবেন?
উত্তর: ফুল পাড়বেন

৪৩। কবিতায় “বিভোল পল্লিবালা” কে?
উত্তর: জল ভরতে আসা গ্রাম্য মেয়ে

৪৪। কবির দেশ কেমন?
উত্তরঃ প্রকৃতির স্নিগ্ধ পরিবেশে ঘেরা গ্রামীণ জনপদ।

৪৫। ‘বুড়াতে’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ভরতে।

৪৬। কবিতায় কোন নদীর নাম এসেছে?
উত্তরঃ পদ্মা ও মেঘনা নদীর নাম এসেছে।

৪৭। কোন পাখির ডাকের কথা কবিতায় উল্লেখ আছে?
উত্তরঃ ডাহুক ও ঘুঘু পাখির ডাকের কথা বলা হয়েছে।

৪৮। কবিতায় কোন ফুলের নাম উল্লেখ আছে?
উত্তরঃ রক্ত-কমল, শাপলা, কদম ফুলের নাম এসেছে।

৪৯। কবিতায় কোন দীঘির নাম উল্লেখ আছে?
উত্তরঃ ধল দীঘির নাম উল্লেখ আছে।

৫০। ‘ধল-দীঘি’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: মস্ত বড় দীঘি।

৫১। গ্রামের ছেলেরা কীভাবে সময় কাটায়?
উত্তরঃ তারা দল বেঁধে খেলে, সাঁতার কাটে ও প্রকৃতির সাথে মিশে থাকে।

৫২। কবিতায় কোন গাছের নাম উল্লেখ আছে?
উত্তরঃ হিজল, শিমুল, বেতস, কেয়া গাছের নাম উল্লেখ আছে।

৫৩। কবির সাথে কে কে থাকবে?
উত্তরঃ পল্লির দস্যি ছেলেরা থাকবে।

৫৪। ‘দস্যি’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: দুষ্ট, দুরন্ত।

৫৫। কবিতায় কোন ধরনের পথের কথা এসেছে?
উত্তরঃ সরু আঁকাবাঁকা পথের কথা এসেছে।

৫৬। কবিতায় কোন উৎসবের নাম এসেছে?
উত্তরঃ গাজন উৎসবের নাম এসেছে।

৫৭। কোন সুবাসের কথা কবিতায় এসেছে?
উত্তরঃ অজানা ফুলের সুবাসের কথা এসেছে।

৫৮। পল্লিবালারা কী নিয়ে ঘাটে আসে?
উত্তরঃ তারা কলসি নিয়ে ঘাটে আসে।

৫৯। কবির দেশে কোন ঋতুর প্রভাব বেশি?
উত্তরঃ বর্ষার প্রভাব বেশি।

৬০। কবিতায় কোন গাছের ছায়ার কথা এসেছে?
উত্তরঃ শিমুল গাছের ছায়ার কথা এসেছে।

৬১। ‘কুন্তল’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: চুল।

৬২। কবিতায় কোন ধরনের বাতাসের কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ দিকহারা বাতাসের কথা বলা হয়েছে।

৬৩। কবি পাখির সাথে কি করতে চান?
উত্তরঃ পাখির সাথে ভাব করতে চান।

৬৪। কবিতায় কোন ঘাটের কথা উল্লেখ আছে?
উত্তরঃ গ্রামের দীঘির ঘাটের কথা বলা হয়েছে।

৬৫। ‘বাসে’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: গন্ধে।

৬৬। কবিতায় কোন পোশাকের কথা উল্লেখ আছে?
উত্তরঃ উত্তরীয় ও আঁচলের কথা আছে।

৬৭। ‘উত্তরীয়’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: চাদর বা গায়ের কাপড়।

৬৮। পল্লিবালার কলসি পানিতে ডুবালে কী হবে?
উত্তরঃ কবির রেখে যাওয়া মালার কথা মনে পড়ে যাবে।

৬৯। কবিতায় কোন বিশেষ মালার কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ পথে পাওয়া মালার কথা বলা হয়েছে।

৭০। কবির দেশে মাঠ কেমন?
উত্তরঃ বিস্তৃত ও সবুজ শস্যে ভরা।

৭১। কবি কোথায় বসে থাকতে চান?
উত্তরঃ দীঘির কোলে বসে থাকতে চান।

৭২। ‘পল্লি-দুলাল’ কাকে বলা হয়েছে?
উত্তর: পল্লির অকৃত্রিম প্রাকৃতিক পরিবেশে বড় হওয়া ছেলেকে।

৭৩। ‘ফুলের বাসে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ফুলের সুগন্ধে।

৭৪। ‘অন্বেষণ’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: অনুসন্ধান করা বা খোঁজ করা।

যাবো আমি তোমার দেশে কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন

১। কবি কেন গ্রামকে ‘তোমার দেশ’ বলেছেন?
উত্তরঃ কবি জসীমউদদীন গ্রামকে এত ভালোবাসেন যে তিনি গ্রামকে ‘তোমার দেশ’ বলেছেন কারণ তার কাছে গ্রাম শুধু একটি জায়গা নয়, এটি তার আপনজনের মতোই প্রিয়। যেভাবে আমরা কাউকে খুব কাছের মানুষ বলে ডাকি, সেভাবেই কবি গ্রামকে এই বিশেষ সম্বোধনে ডেকেছেন। গ্রামের মাটি, বাতাস, নদী, গাছপালা সবই তার হৃদয়ে বিশেষ জায়গা করে আছে। তার এই ভালোবাসার কারণেই তিনি বারবার গ্রামে ফিরে যেতে চান, সেখানকার সাদামাটা কিন্তু সুন্দর জীবন উপভোগ করতে চান।


২। কবিতায় গ্রামের প্রকৃতিকে কীভাবে দেখানো হয়েছে?
উত্তরঃ কবি গ্রামের প্রকৃতিকে এত সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন যে পড়ার সময় আমাদের চোখের সামনে স্পষ্ট ছবি ভেসে ওঠে। তিনি বলেছেন কীভাবে আকাশ বনের মাথায় উঠে আছে, কীভাবে বিশাল মাঠ দিগন্তজোড়া বিস্তৃত, কীভাবে মেঘগুলো জলভরা কলসির মতো দাঁড়িয়ে আছে। বেতবনের কথা বলেছেন, ডাহুক পাখির ডাকের কথা বলেছেন। এই সব বর্ণনায় কবি শুধু দৃশ্যই বলেননি, গ্রামের শব্দ, গন্ধ, আবহাওয়া সবই আমাদের সামনে জীবন্ত করে তুলেছেন। তার এই বর্ণনায় গ্রামের প্রকৃতির প্রতিটি উপাদান যেন আমাদের স্পর্শ করা যায় এমন স্পষ্ট হয়ে ওঠে।


৩। কবি গ্রামের পথ সম্পর্কে কী বলেছেন?
উত্তরঃ কবি গ্রামের ছোট ছোট পথগুলোকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন কীভাবে ধান ও কাউন ক্ষেতের মাঝ দিয়ে চিকন পথগুলো সূতার আঁচড়ের মতো সোজা বা বাঁকা হয়ে চলে গেছে। গরুর গাড়ির দাগে ভরা এই পথগুলো গ্রামের মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সাক্ষী। কবির বর্ণনায় এই সাধারণ পথগুলোও কবিতার মতো সুন্দর হয়ে উঠেছে। তার কথায় পথগুলো শুধু যাতায়াতের মাধ্যম নয়, গ্রামীণ জীবনের স্মৃতি ও ইতিহাস বহন করে। এই পথ ধরে হাঁটলে যেন গ্রামের প্রকৃত সৌন্দর্য আবিষ্কার করা যায়।


৪। কবি গ্রামে গিয়ে ঠিক কী কী করতে চান?
উত্তরঃ কবি গ্রামে গিয়ে নানা রকম কাজ করতে চান যা থেকে আমরা তার গ্রামপ্রেমের গভীরতা বুঝতে পারি। তিনি গ্রামের দুষ্টু ছেলেদের সাথে খেলতে চান, বড় দীঘিতে সাঁতার কাটতে চান, রক্ত কমল ফুল তুলতে চান, পদ্মফুলের সাথে দোল খেতে চান, পাখিদের সাথে ডাকাডাকি করতে চান, অজানা ফুল দেখে মুগ্ধ হতে চান এবং ফুলের মালা তৈরি করে ঘাটে রেখে আসতে চান। এই সব ইচ্ছা থেকে বোঝা যায় কবি কতটা সরল ও আনন্দময় জীবনযাপন করতে চান।


৫। ‘ধল দীঘি’ কবিতায় কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তরঃ ধল দীঘি এই কবিতায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি শুধু জলাধার নয়, গ্রামের সমাজজীবনের কেন্দ্রবিন্দু। এখানে গ্রামের সবাই সাঁতার কাটে, জল আনে, জমায়েত হয়। কবি এই দীঘির পাড়ে ফুলের মালা রেখে যেতে চান, সন্ধ্যায় বসে প্রকৃতির শান্তি উপভোগ করতে চান। দীঘির পানি, তার চারপাশের গাছপালা, সন্ধ্যার কুয়াশা সব মিলে এক অপরূপ দৃশ্য তৈরি করে। কবির বর্ণনায় দীঘি গ্রামের মানুষের মিলনস্থল, বিনোদনের জায়গা এবং প্রকৃতির সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে।


৬। কবিতায় ফুলকে বার বার উল্লেখ করা হয়েছে কেন?
উত্তরঃ কবি জসীমউদদীন তাঁর কবিতায় ফুলের এত বার উল্লেখ করেছেন কারণ ফুলগুলো তাঁর কাছে শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, বরং গ্রামীণ জীবনের রঙিন সত্যিকারের রূপকে ধারণ করে। রক্ত কমল ফুলের কথা বলার মাধ্যমে তিনি গ্রামের দীঘি-পুকুরের সৌন্দর্য আমাদের চোখে ভাসিয়ে তোলেন, অজানা ফুলের সন্ধানে তার কৌতূহলী মন আমাদেরও সেই অনুসন্ধানে উদ্বুদ্ধ করে। কবি যখন ফুলের মালা গাঁথার কথা বলেন, তখন তা শুধু একটি শৌখিন কাজ নয়, বরং গ্রামের সহজ-সরল আনন্দের প্রতীক হয়ে ওঠে। পদ্মফুলের সাথে দোল খাওয়ার বর্ণনায় ফুলের সাথে মানুষের নিবিড় সম্পর্ক ফুটে ওঠে।


৭। গ্রামের মেয়েদের সম্পর্কে কবি কী বলেছেন?
উত্তরঃ কবি জসীমউদদীন গ্রামের মেয়েদের দেখেন প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি হিসেবে, যারা গ্রামীণ সৌন্দর্যকে পূর্ণতা দান করে। তাঁর চোখে গ্রামের মেয়েরা কলস কাঁখে নদী-ঘাটে যাওয়ার সময় পথে ফুল ছড়িয়ে দেয়, যা তাদের সৌন্দর্য ও সৃজনশীলতার পরিচয় বহন করে। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন কীভাবে তারা দীঘির ঘাটে জল ভরতে যায়, সন্ধ্যায় ফুলের মালা সাজায় – এ সব দৃশ্য গ্রাম্য নারীর কর্মব্যস্ত কিন্তু সুশৃঙ্খল জীবনের স্বাক্ষর বহন করে।


৮। কবিতায় পাখিরা কিভাবে কথা বলে?
উত্তরঃ কবি জসীমউদদীন তাঁর কবিতায় পাখির কথা বিশেষভাবে এজন্য বলেছেন যে পাখিরা গ্রামীণ পরিবেশের অপরিহার্য অঙ্গ এবং প্রকৃতির সত্যিকারের সংগীতশিল্পী। ডাহুক পাখির ডাক শোনার মাধ্যমে তিনি আমাদের কানে গ্রামের প্রাকৃতিক সুর বাজিয়ে দেন, ঘুঘুর ডাকের মধ্যে গ্রামের শান্ত সন্ধ্যার বার্তা শোনান। কবির ইচ্ছা পাখির ভাষা বুঝতে পারার, যা আসলে তার প্রকৃতির গভীরে প্রবেশ করার আকাঙ্ক্ষারই প্রকাশ। যখন তিনি পাখির সাথে ভাব বিনিময়ের কথা বলেন, তখন তা শুধু একটি কাব্যিক উক্তি নয়, বরং প্রকৃতির সাথে মানুষের নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনের প্রচেষ্টা।


৯। কবিতার শেষে সন্ধ্যা কিভাবে হয়?
উত্তরঃ কবিতার সমাপ্তিতে সন্ধ্যার বর্ণনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি গ্রামীণ জীবনের এক অনন্য শান্তিময় মুহূর্তকে চিত্রিত করে। কবি যখন দীঘির জলে কুয়াশা পড়ার কথা বলেন, তখন তা শুধু একটি দৃশ্য নয়, বরং গ্রামের সন্ধ্যার রহস্যময় আবহ তৈরি করে। পাখিরা তাদের বাসায় ফেরে, ফুলের গন্ধ বাতাসে ভেসে বেড়ায় – এই সব মিলে একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন জগতের সৃষ্টি হয়, যেখানে সময়ের গতি যেন ধীর হয়ে আসে। এই সন্ধ্যা বর্ণনায় কবি আমাদেরকে শহুরে জীবনের তাড়াহুড়ো থেকে মুক্ত করে এক গভীর প্রশান্তির জগতে নিয়ে যান।


১০। কবি পল্লি-দুলালকে উদ্দেশ্য করে কবিতাটি লিখেছেন কেন?

উত্তরঃ কবি পল্লি-দুলালকে উদ্দেশ্য করে কবিতাটি লিখেছেন কারণ তিনি গ্রামীণ জীবন এবং প্রকৃতির মধ্যে যে বিশাল স্নিগ্ধতা, শান্তি এবং সরলতা রয়েছে, সেটি অনুভব করতে চেয়েছেন। পল্লি-দুলাল, যিনি গ্রামের মায়ের আদরের ছেলে, তার মধ্যে গ্রাম্য পরিবেশের সব সুমিষ্টতা এবং পবিত্রতা দেখতে পান কবি। তাঁর মনোভাব হলো, গ্রামীণ জীবনে যে সুখ এবং আনন্দ রয়েছে, তা শহুরে জীবনে পাওয়া যায় না। কবি সেই শান্তির ও প্রকৃতির অভিজ্ঞতায় নিজেকে মগ্ন হতে চান, তাই তিনি পল্লি-দুলালকে উদ্দেশ্য করে এই কবিতাটি রচনা করেছেন।


১১। কবিতায় কবি পল্লি-দুলালের বর্ণনা কিভাবে করেছেন?

উত্তরঃ কবি পল্লি-দুলালকে এমন একজন চরিত্র হিসেবে বর্ণনা করেছেন যিনি গ্রামীণ পরিবেশে বেড়ে ওঠেন, যেখানে প্রকৃতি এবং ঐতিহ্য তাকে ভালোবাসায় ঘিরে রাখে। তিনি বলেন, “পল্লি মায়ের আদরের ছেলে”, যা বোঝায় যে পল্লি-দুলাল সেই ছেলে, যাকে প্রকৃতি এবং তার মা একসঙ্গে লালন-পালন করেছে। তার মধ্যে গ্রাম্য জীবনের সরলতা, মাধুর্য, এবং সাদাসিধে সুন্দরতা রয়েছে। তিনি যে কোনো জটিলতা বা ভেদাভেদ ছাড়া, সরল ও খাঁটি জীবন যাপন করেন।


১২। কবি কেন ‘পল্লি-দুলাল’ এর দেশে যেতে চান?

উত্তরঃ কবি ‘পল্লি-দুলাল’ এর দেশে যেতে চান কারণ সেখানে এক ধরনের অদ্ভুত শান্তি ও সৌন্দর্য রয়েছে। কবি জানেন, সেখানে প্রকৃতির গভীর সান্নিধ্য, একে অপরের সাহায্যে জীবন যাপন এবং মাটির সাথে সম্পর্কের এক বিশেষ অনুভূতি রয়েছে। পল্লি-দুলালের দেশে যাওয়ার মাধ্যমে তিনি প্রকৃতির সাথে তার আত্মিক সংযোগ স্থাপন করতে চান। সেখানে যাওয়ার ফলে তাকে এক ধরনের আনন্দ এবং শান্তি লাভ হবে, যা শহরের কোলাহলে পাওয়া যায় না।


১৩। কবিতার গ্রাম্য পরিবেশের সৌন্দর্যের বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ কবি গ্রাম্য পরিবেশের সৌন্দর্যকে বিভিন্ন উপমা ও চিত্রকল্পের মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আকাশ যাহার বনের শীষে’’ এবং ‘‘দিক-হারা মাঠ চরণ ঘেঁসে’’—এতে বোঝানো হয়েছে যে গ্রামীণ পরিবেশ এমন এক জায়গা, যেখানে আকাশ এবং মাঠ একাকার হয়ে যায়, এবং সব কিছু যেন একটি গভীর সম্পর্কের মধ্যে প্রবাহিত। তিনি বেত-কেয়ার বনে ডাহুকের ডাক শোনাতে শোনাতে প্রকৃতির আরেক দিক উন্মোচন করেন। সেই সঙ্গে সরু বাঁকা পথ, গাঁয়ের মেয়েদের হাঁটা, ফুলের সুবাস এইগুলো মিলে একটি চমৎকার প্রাকৃতিক দৃশ্যের সৃষ্টি করে।


১৪। ‘ধল-দীঘিতে সাঁতার কেটে আনব তুলে রক্ত-কম – ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ কবি ‘ধল-দীঘি’ তে সাঁতার কেটে রক্ত-কমল তুলতে চান কারণ তিনি ঐ গ্রামের শান্তিপূর্ণ জীবনের অংশ হতে চান। ‘ধল-দীঘি’ একটি বিশাল দীঘি, যেখানে সে সাঁতার কাটতে চান এবং এর মাধ্যমে প্রকৃতির সাথে তার একাত্মতা প্রতিস্থাপন করতে চান। কবি যখন রক্ত-কমল তুলে আনতে চান, তখন এটি শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্যকে প্রতিনিধিত্ব করে না, বরং এই মুহূর্তে কবি নিজেকে সেই পরিবেশে হারিয়ে যেতে চান, যেখানে তার মনে এক ধরনের শান্তি ও প্রশান্তি ছড়িয়ে পড়বে।


১৫। কবি কিভাবে পল্লি-দুলালের সাথে গাঁয়ের পথে হাঁটবেন?

উত্তরঃ কবি পল্লি-দুলালের সাথে গাঁয়ের পথে হাঁটতে চান যেখানে প্রকৃতি এবং জীবনের সহজ সরলতা যেন একে অপরকে একত্রিত করে। তিনি বলেন, গাঁয়ের মেয়েরা কদম-কলি ছড়িয়ে হাঁটে, যা প্রকৃতির প্রতি তাদের ভালোবাসা এবং মাধুর্যকে বোঝায়। কবি মনে করেন, এই পথে হাঁটার মাধ্যমে তিনি প্রকৃতির গন্ধ, বাতাসের স্নিগ্ধতা এবং বায়ুর মিষ্টি অনুভূতি উপলব্ধি করবেন। এটি তার অন্তরকে এক ধরনের সুখের অনুভূতি প্রদান করবে।


১৬। কেন কবি ‘অজানা ফুলের রূপ’ দেখতে চান?

উত্তরঃ কবি ‘অজানা ফুলের রূপ’ দেখতে চান কারণ তিনি চান যে, প্রকৃতির সমস্ত রহস্য এবং সৌন্দর্য তার সামনে উন্মোচিত হোক। ‘অজানা ফুল’ একটি প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, যা নতুন কিছু আবিষ্কারের ইচ্ছাকে প্রকাশ করে। কবি জানেন, প্রকৃতির মধ্যে এমন কিছু আছে যা সরাসরি দেখা যায় না, কিন্তু তা অনুভব করা যায়। তিনি চান, সেই অজানা ফুলের রূপের মধ্যে এমন এক সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে যা তাঁর কল্পনা এবং চিন্তা-ভাবনাকে আরো উঁচু স্তরে নিয়ে যাবে। তার মানে, কবি প্রকৃতির সুগন্ধ এবং রহস্যময়তার মধ্যে একটি গভীর আধ্যাত্মিক উপলব্ধি খুঁজে পেতে চান, যা তার জীবনকে আরও পূর্ণতা দেবে।


১৭। কবি কিভাবে প্রকৃতির মাঝে ‘উত্তরীয়’ ছড়িয়ে দিবেন?

উত্তরঃ কবি প্রকৃতির মাঝে ‘উত্তরীয়’ ছড়িয়ে দিতে চান কারণ তিনি চান তাঁর উপস্থিতি প্রকৃতির অংশ হয়ে উঠুক। ‘উত্তরীয়’ মানে হল গায়ের কাপড় বা চাদর, যা তার সংস্কৃতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত। কবি মনে করেন, যখন তিনি প্রকৃতির মাঝে তার উত্তরীয় ছড়িয়ে দেন, তখন তিনি এক ধরনের সম্মান এবং শুদ্ধতা প্রকাশ করেন। প্রকৃতির সাথে এক হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে তিনি সেই পরিবেশের অংশ হয়ে উঠবেন এবং তার নিজস্ব অস্তিত্বকে প্রকৃতির সঙ্গে মিশিয়ে দেবেন।


১৮। কবি পল্লি-দুলালের দেশকে কিভাবে মন ভরে দেখতে চান?

উত্তরঃ কবি পল্লি-দুলালের দেশকে মন ভরে দেখতে চান সন্ধ্যার অন্ধকার এবং কুয়াশার মধ্যে। তিনি বুঝতে পারেন, যখন চারপাশে অন্ধকার নামে এবং প্রকৃতি ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায়, তখন প্রকৃতির সেই নিঃসঙ্গতা এবং শূন্যতা তাকে সবচেয়ে বেশি অনুভূত হবে। কবি চান, এই নিরালা, নিঝুম পরিবেশে তিনি প্রকৃতির সাথে গভীরভাবে মিলিত হয়ে তার আধ্যাত্মিক শান্তি লাভ করবেন। চারপাশের বনের পাতার সাঁঝবাতি, ডাহুকের ডাক, ঘুঘুর গানের মতো প্রকৃতির কলরবে তিনি হারিয়ে যেতে চান।


আরও পড়ুনঃ আমার দেশ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর

Related Posts

Leave a Comment