সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘ঝরনার গান’ কবিতাটি ঝরনার গতিকে কেন্দ্র করে রচিত, যেখানে ঝরনাকে মানবিক রূপ দান করা হয়েছে। এটি প্রকৃতির মাঝে এক প্রাণচাঞ্চল্য ও আনন্দের গীতিময় প্রকাশ। এই পোস্টে ঝর্ণার গান কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর লিখে দিলাম।
Table of Contents
ঝর্ণার গান কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন
১। ‘ঝরনার গান’ কবিতাটি কে লিখেছেন ?
উত্তর : সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
২। ‘ঝরনার গান’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত?
উত্তর: বিদায় আরতি।
৩। সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: কলকাতার কাছাকাছি নিমতা গ্রামে।
৪। সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত কোন সালে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে।
৫। সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত কতদূর পড়াশোনা করেন?
উত্তর: বি.এ. শ্রেণি পর্যন্ত।
৬। ছন্দে দক্ষতার কারণে সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত কী নামে পরিচিত?
উত্তর: ছন্দের যাদুকর।
৭। সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত কোন সালে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর: ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে।
৮। মৃত্যুকালে সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের বয়স কত ছিল?
উত্তর: মাত্র চল্লিশ বছর।
৯। ঝরনার গতি কেমন?
উত্তর : চঞ্চল ও অদম্য
১০। ঝরনার কণ্ঠস্বর কিসের মতো?
উত্তর : বুলবুলির বোলের মতো
১১। কবিতায় ঝরনার সাথে কোন পরীর তুলনা করা হয়েছে?
উত্তর : নৃত্যরত পরীর
১২। ঝরনার চরণ কোথায় পড়ে?
উত্তর : শিলার উপর
১৩। ‘বিলাই’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: বিতরণ করি বা পরিবেশন করি।
১৪। ঝরনার পায়ের সাথে কোন অলংকারের তুলনা করা হয়েছে?
উত্তর : নূপুর
১৫। ঝরনা কোন শব্দে সঙ্গীত সৃষ্টি করে?
উত্তর : ঝিলমিল শব্দে
১৬। ঝরনার গতির সাথে কোন প্রাণীর গতি তুলনা করা হয়েছে?
উত্তর : বুলবুলি
১৭। ‘মখমল’ কী ধরনের কাপড়?
উত্তর: কোমল ও মিহি কাপড়।
১৮। ঝরনার পাশে কোন পাখিদের উল্লেখ আছে?
উত্তর : শালিক ও শুক
১৯। ঝরনার চলার পথে কোন গাছের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর : বন-ঝাউ
২০। ঝরনার পানির রং কেমন ?
উত্তর : ফটিক জল
২১। ‘চকোর’ কী ধরনের পাখি?
উত্তর: একটি পাখি, কবি-কল্পনায় যেটি চাঁদের আলো পান করে।
২২। ঝরনার শব্দ কিসের মতো মনে হয়?
উত্তর : নূপুরের রিনিঝিনি শব্দের মতো
২৩। ঝরনা কোন গিরির ললাট স্পর্শ করে?
উত্তর : হিম গিরির
২৪। ঝরনা কোন পরিবেশে প্রবাহিত হয়?
উত্তর : নির্জন প্রাকৃতিক পরিবেশে
২৫। ‘তান’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: সুর।
২৬। ঝরনা কোন বস্তুকে নিজের মতো ভাবে?
উত্তর : নাচের উৎসবের হার
২৭। ঝরনা কোন সময় প্রবাহিত হয়?
উত্তর : দিবস-রাত, সাঁঝ-সকাল
২৮। ঝরনা কোন দিকে ধায়?
উত্তর : সুন্দরের সন্ধানে
২৯। ঝরনার সঙ্গীতের প্রকৃতি কেমন?
উত্তর : তরল শ্লোকের মতো
৩০। ঝরনার সুর কী সৃষ্টি করে?
উত্তর : মুগ্ধতা
৩১। ‘আংরাখা’ কেমন পোশাক?
উত্তর: লম্বা ও ঢিলা পোশাকবিশেষ।
৩২। ঝরনা কোন পাহাড়ের ভয়কে পাত্তা দেয় না?
উত্তর : ঝুম-পাহাড়
৩৩। ঝরনা কিসের সন্ধানে ছোটে?
উত্তর : সৌন্দর্যের
৩৪। ঝরনার চলার পথে কোন গাছের রঙ পরিবর্তন হয়?
উত্তর : ডালচিনি
৩৫। ঝরনার চলার পথ কেমন?
উত্তর : খেয়ালী ও অলসতামুক্ত
৩৬। ঝরনা কী শুনতে পায়?
উত্তর : ‘ফটিক জল’ হাঁক
৩৭। ‘উপল’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: পাথর।
৩৮। ঝরনা কার তৃষ্ণা মেটাতে চায়?
উত্তর : সৌন্দর্য অনুসন্ধানকারীদের
৩৯। ঝরনা কাদের পথ অবলম্বন করে?
উত্তর : যারা সুন্দরের পিপাসু
৪০। ঝরনার তুলনা কোন পাখির সাথে করা হয়েছে?
উত্তর : চকোর
৪১। ‘বিভোল’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: অচেতন, বিভোর, বিবশ, বিহ্বল।
৪২। ঝরনা কোন পথে যেতে চায় না?
উত্তর : নিষ্ক্রিয়তার পথে
৪৩। ঝরনা কিসের অনুসন্ধান করে?
উত্তর : মুগ্ধতার
৪৪। ঝরনা কীভাবে চলছে?
উত্তর: চপল পায়ে ধেয়ে
৪৫। ঝরনা কী গাইছে?
উত্তর: পরীর গান
৪৬। ‘বিজন’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: নির্জন, জনশূন্য, নিভৃত।
৪৭। “পুলক” কোথায় অনুভূত হচ্ছে?
উত্তর: সকল গায়ে
৪৮। ঝরনার প্রাণ কেমন?
উত্তর: বিভোল
৪৯। শিলার উপর ঝরনার কী অবস্থা?
উত্তর: শিথিল
৫০। ‘হিম’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: তুষার বা বরফ।
৫১। ঝরনার মন কেমন?
উত্তর: দোদুল
৫২। কখন ঝিঁঝিঁর ডাক শোনা যায়?
উত্তর: দুপুর-ভোর
৫৩। ঝরনা কী বাজায়?
উত্তর: নিজের পায়ে তাল
৫৪। ‘শুক’ কী ধরনের পাখি?
উত্তর: টিয়ে পাখি।
৫৫। ঝরনা কীভাবে গান গায়?
উত্তর: একলা
৫৬। ঝুম-পাহাড় কী করে?
উত্তর: ভয় দেখায়
৫৭। ঝুম-পাহাড় কীভাবে ভয় দেখায়?
উত্তর: চোখ পাকিয়ে
৫৮। ‘থল’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: স্থল।
৫৯। ঝরনার কী নেই?
উত্তর: শঙ্কা
৬০। ঝরনার পায়ে কী?
উত্তর: নূপুর
৬১। ‘ফটিক জল’ কীসের ডাক?
উত্তর: চাতক পাখির ডাক, যা ‘ফটিক জল’ শব্দের মতো শোনায়।
৬২। নূপুর কী দিয়ে তৈরি?
উত্তর: টগর-ফুল
৬৩। ঝরনা কীভাবে হাসে?
উত্তর: খিলখিলিয়ে
৬৪। ঝরনা কার বোল সাধে?
উত্তর: বুলবুলির
৬৫। বন-ঝাউয়ের কী আছে?
উত্তর: ঝোপ
৬৬। ‘উপল ঘায়’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: পাথরের আঘাতে।
৬৭। কালসারেরা কী করে?
উত্তর: চরে বেড়ায়
৬৮। শিং কোথায় আছে?
উত্তর: শিলায়
৬৯। চাতক পাখির ডাক কেমন শোনা যায়?
উত্তর: ‘ফটিক জল’ শব্দের মতো।
৭০। ডালচিনির কী ধরে?
উত্তর: রং
৭১। ঝরনা কী দুলিয়ে যায়?
উত্তর: অচল-ঠাঁট
৭২। ঝরনা কী নাড়িয়ে যায়?
উত্তর: ডালিম-ফাট টিলা
৭৩। শালিক ও শুক কী করে?
উত্তর: মুখ বুলায়
৭৪। শালিক ও শুক কোথায় মুখ বুলায়?
উত্তর: থল-ঝাঁঝির মখমলে
৭৫। ঝরনার অঙ্গ কীভাবে ঝলমলে?
উত্তর: জরির জাল আংরাখায়
৭৬। ‘ঝুম পাহাড়’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: নীরব বা নির্জন পাহাড়।
৭৭। ‘ঝাঁঝি’ কী ধরনের উদ্ভিদ?
উত্তর: একপ্রকার জলজ গুল্ম বা বহুদিন ধরে জমা শেওলা।
৭৮। ‘চন্দ্রমা’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: চাঁদের আলো।
ঝর্ণার গান কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন
১। ‘চকোর চায় চন্দ্রমা’ কথাটি বুঝিয়ে লেখ:
উত্তর: চকোর পাখি চাঁদের আলোকে খুব ভালোবাসে। কবির কল্পনায় মনে করা হয়, এই পাখি শুধু চাঁদের আলো পান করে বেঁচে থাকে। তাই ‘চকোর চায় চন্দ্রমা’ বলতে বোঝানো হয়েছে– সুন্দর ও মহিমাময় কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। যেমন চকোর পাখি চাঁদকে চায়, তেমনি ঝরনা চায় অপূর্ব সৌন্দর্যকে। এখানে ‘চকোর’ হলো তৃষ্ণার্ত আত্মা, আর ‘চন্দ্রমা’ হলো সে সৌন্দর্য বা আদর্শ, যা সে পেতে চায়। কবি বুঝাতে চেয়েছেন, সৌন্দর্যের প্রতি এই আকর্ষণ একান্ত ও নিরন্তর।
২। ‘নিজের পায় বাজাই তাল’ বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন:
উত্তর: এখানে কবি ঝরনার আত্মনির্ভর ও স্বতঃস্ফূর্ত চলার কথা বলেছেন। ঝরনা নিজের চলার মধ্যে নিজেই ছন্দ সৃষ্টি করে। তার গতিশীল পায়ের ধ্বনি তালবদ্ধ ছন্দে বাজে, যেন সে নিজেই নিজের নৃত্য ও সঙ্গীত রচনা করছে। এটি বোঝায় স্বাধীনতা, প্রেরণা ও প্রাণবন্ততা। কারও সাহায্য ছাড়া ঝরনা নিজের পথ নিজেই বেছে নেয়। প্রকৃতির অন্য কেউ সঙ্গ না দিলেও সে নিজে একা একা চলতে পারে। কবি এখান থেকে আত্মবিশ্বাস ও উদ্দীপনার শিক্ষা দিতে চেয়েছেন।
৩। ‘আমরা চাই মুগ্ধ চোখ’—বুঝিয়ে লেখ:
উত্তর: কবি বলছেন, আমাদের চোখ শুধু সাধারণ কিছু দেখতে চায় না। আমরা এমন কিছু দেখতে চাই যা আমাদের বিস্মিত করে, আনন্দে ভরিয়ে তোলে। ‘মুগ্ধ চোখ’ মানে সেই দৃষ্টি, যা সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়। যেমন চকোর পাখি চাঁদের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকায়, তেমনি কবি বা শিল্পীর চোখ চায় অনন্য, অপূর্ব কিছু দেখতে। এই চোখ শুধু বাহ্যিক নয়, অনুভব করার মতো চোখ। কবি বলতে চেয়েছেন, সুন্দরকে অনুভব করাই আমাদের সবচেয়ে বড় তৃষ্ণা।
৪। ‘সুন্দরের তৃষ্ণা যার’ ঝরনা তার কাছে কী আশা করে?
উত্তর: এই পঙ্ক্তিতে ঝরনা তাদের সঙ্গী হতে চায়, যাদের মনে সৌন্দর্যের তৃষ্ণা আছে। যারা প্রকৃতিকে ভালোবাসে, সৌন্দর্য খুঁজে পায় প্রতিটি ধ্বনি ও রূপে, তাদের সাথেই ঝরনা এগিয়ে যেতে চায়। ঝরনা শুধু জলধারা নয়, সে এক ধরনের কবিতার মতো, সুরের মতো, সৌন্দর্যের বাহক। সে চায় কেউ তার সৌন্দর্য অনুধাবন করুক, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাক। তাই সে এমন মানুষের আশায় ধাই, যার হৃদয় আছে অনুভব করার মতো।
৫। “কোন গিরির হিম ললাট ঘামল মোর উদ্ভবে”—কথাটি ব্যাখ্যা কর:
উত্তর: ঝরনা নিজেকে প্রাণবান রূপে তুলে ধরছে। ঝরনার উৎপত্তি হয়েছে বরফে ঢাকা পর্বতের শীর্ষ থেকে। সেখানে যখন বরফ গলেছে, তখনই জন্ম নিয়েছে ঝরনা। তাই কবি বলছেন, সেই শীতল পাহাড়ের ‘হিম ললাট’ অর্থাৎ বরফাচ্ছাদিত চূড়া, যেন ঝরনার জন্মের সময় ঘেমে উঠেছিল। এটি এক কাব্যিক রূপক, যা ঝরনার আবির্ভাবকে আরো সৌন্দর্যময় করে তোলে। এতে বোঝায়, কঠোর, নির্জন পাহাড়ও একসময় প্রাণের উৎস হয়।
৬। “উপল-ঘায় দিই ঝিলিক, ঝিলমিলাই দিগ্বিদিক।” — বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: ঝরনা বলছে, তার জলধারা পাথরে আঘাত করে চারদিকে ঝলমল করে ওঠে। ‘উপল’ মানে পাথর, আর ‘ঝিলিক’ মানে আলোছায়ার খেলা। জল যখন পাথরের গায়ে পড়ে, তখন সূর্যের আলোতে তা চিকচিক করে। এই দৃশ্য চারদিকে আলো ও জলের ঝিলমিল ভাব তৈরি করে। ঝরনার এই গতিশীলতা চারদিকে প্রাণের স্পন্দন ছড়িয়ে দেয়। এতে প্রকৃতির সৌন্দর্য আরো বেশি ফুটে ওঠে। কবি বুঝাতে চেয়েছেন, ঝরনার চলা শুধু জলবাহিতা নয়, সে এক শিল্প, এক সৌন্দর্যের প্রকাশ।
৭। ‘শঙ্কা নাই, সমান যাই'”— পঙ্ক্তি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ঝরনা তার নির্ভীক ও দৃঢ়চেতা মনোভাব তুলে ধরেছে। সামনে ভয়ঙ্কর পাহাড় থাকলেও সে ভয় পায় না। কঠিন পথও তাকে থামাতে পারে না। ঝরনা সমানভাবে এগিয়ে চলে, বাধা-বিপত্তিকে জয় করে। এখানে ‘শঙ্কা নাই’ বলতে বোঝানো হয়েছে—কোনো ভয় নেই, আর ‘সমান যাই’ মানে—সব পথে সমভাবে চলা। কবি এভাবে ঝরনার মধ্য দিয়ে সাহস ও দৃঢ়তার আদর্শ তুলে ধরেছেন। এটি আমাদের শেখায়, বাধা যতই হোক, লক্ষ্য ঠিক থাকলে এগিয়ে যেতে হবে।
৮। “কণ্ঠাতেই তৃষ্ণা যার / নিক না সেই পাঁক ছেঁকে” — বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: কবি বলেন, যার গলায় বা মনে সত্যিকারের তৃষ্ণা নেই, সে যেন বিশুদ্ধ সৌন্দর্য লাভের চেষ্টা না করে। ‘পাঁক’ মানে ময়লা বা কাদা, ‘ছেঁকে’ মানে পরিশ্রুত করা। কবি বোঝাতে চেয়েছেন, যারা শুধু বাইরের প্রয়োজন বা ভান করে তৃষ্ণা দেখায়, তারা সুন্দর বা শুদ্ধ কিছুর আসল মানে বুঝতে পারে না। সৌন্দর্য পাওয়ার জন্য মনেও সৎ তৃষ্ণা থাকতে হয়। শুধু বাহ্যিক চেষ্টা করলে প্রকৃত রস বা সৌন্দর্য পাওয়া যায় না। ঝরনা সেইসব মানুষদের কাছে যেতে চায়, যাদের তৃষ্ণা সত্যি ও অন্তর থেকে আসে।
৯। “পুলক মোর সকল গায়, বিভোল মোর সকল প্রাণ”— ব্যাখ্যা কর:
উত্তর: এই পঙ্ক্তিতে ঝরনা তার আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের অনুভূতি প্রকাশ করছে। ‘পুলক’ মানে আনন্দের রোমাঞ্চ, আর ‘বিভোল’ মানে প্রেমে বা আনন্দে গভীরভাবে মগ্ন হওয়া। ঝরনা বলছে, তার শরীরের প্রতিটি অংশে আনন্দের স্পন্দন চলছে। তার প্রাণভরেও রয়েছে এক ধরনের মুগ্ধতা ও আনন্দের বিস্তার। এটি বোঝায় ঝরনার প্রাণবন্ততা ও সৌন্দর্যের গভীরতা। কবি প্রকৃতির এক জীবন্ত ও মুগ্ধ রূপকে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন।
১০। ‘ঝর্ণার গান’ কবিতায় সৌন্দর্যপিপাসুদের প্রতি কেন ঝরনার অনুরাগ প্রকাশ পেয়েছে?
উত্তর: কবিতায় ঝরনা নিজেকে এক সুন্দর ও কাব্যময় সত্তা হিসেবে তুলে ধরেছে। সে বলে, যারা প্রকৃতিকে ভালোবাসে, সৌন্দর্যকে অনুভব করতে জানে, তাদের জন্যই সে বয়ে চলে। ঝরনা তাদেরই খোঁজে, যাদের মনে সত্যিকারের রস আস্বাদনের আকাঙ্ক্ষা আছে। তারা কোনো লোভ বা প্রয়োজনবশত নয়, বরং হৃদয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে সৌন্দর্য খোঁজে। তাই ঝরনা শুধু তাদের জন্যই তার সৌন্দর্য উজাড় করে দেয়। কবি এইভাবে আমাদের শিক্ষা দেন—শুধু বাহ্যিক চোখে নয়, হৃদয়ের চোখে দেখতে শিখতে হবে।
১১। ঝরনাটিকে কবি কেন পরীর মতো কল্পনা করেছেন?
উত্তর: কবি ঝরনার গতিকে অত্যন্ত চঞ্চল, মাধুর্যময় ও ছন্দবদ্ধ মনে করেছেন। ঝরনার প্রবাহ যেমন ছুটে চলে নিরবধি, তেমনি পরীরাও কল্পনায় লীলায়িত, হাসিখুশি ও অদৃশ্য। ঝরনার সেই খিলখিল হাসির মতো শব্দ, তার দোল খাওয়া চলাফেরা এবং রূপের ঝিলিক কবির মনে পরীর ভাব এনে দেয়। এই কল্পনায় কবি ঝরনার গানে যেন এক স্বপ্নিল জগতের সৌন্দর্য দেখতে পান। তাই তিনি ঝরনাকে পরীর সঙ্গে তুলনা করেছেন।
১২। ঝরনার পথ চলাকে কবি কিভাবে ব্যাখ্যা করেছেন?
উত্তর: কবি ঝরনার পথচলাকে চঞ্চল পায়ে নিরবিচারে ছুটে চলা হিসেবে দেখিয়েছেন। সে থামে না, ক্লান্ত হয় না; দিনের পর দিন, সকাল-সন্ধ্যা, একা একাই ছুটে চলে। কোথাও যদি নীরবতা থাকে, বা কেউ থাকে না গান গাইতে, তবুও ঝরনা নিজেই তাল বাজিয়ে নিজের গানে মেতে থাকে। এটি যেন প্রকৃতির একটি স্বাধীন আত্মা, যা নির্জনে নিজের ছন্দে বাঁচে।
১৩। ঝরনা ভয় পায় না কেন?
উত্তর: ঝরনা ভয় পায় না কারণ তার গতির মধ্যে আছে সাহস ও আত্মবিশ্বাস। পাহাড় যতই চোখ পাকিয়ে ভয় দেখাক না কেন, ঝরনা তাতে কিছুমাত্র বিচলিত হয় না। সে নিজের ছন্দে, নিজের পথে এগিয়ে চলে। ঝরনার এই দুঃসাহসী ভাব প্রকৃতির শক্তির প্রতীক। কবি বোঝাতে চেয়েছেন, প্রকৃত সুন্দর এবং প্রাণবন্ত কিছু কখনোই ভয়কে মাথায় রাখে না।
১৪। ঝরনার গতিতে প্রকৃতির সৌন্দর্য কিভাবে ফুটে উঠেছে?
উত্তর: ঝরনার প্রতিটি ধাপে প্রকৃতির রূপ আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সে শিলার উপর দিয়ে লাফিয়ে চলে, ডালিম ফাটায়, বন-ঝাউয়ের ফাঁকে দিয়ে যায়, আর চারপাশে জলে-হাওয়ায় দোল তোলে। পাথরের গায়ে তার জল পড়লে ঝিলিক দেখা যায়, ফুলের মত সে ফুটে ওঠে সৌন্দর্যে। ঝরনার গতি শুধু শব্দে নয়, রঙে-রূপেও প্রকৃতিকে প্রাণবন্ত করে তোলে।
১৫। ঝরনার গানকে কেন ‘তরল শ্লোক’ বলা হয়েছে?
উত্তর: ‘তরল শ্লোক’ অর্থ হালকা ও সুন্দর ছন্দময় কথা। ঝরনার জলধারা যেমন সহজে ও সুরে বয়ে চলে, তার সঙ্গে মিলে যায় কবিতার ছন্দ। ঝরনার শব্দ যেন একটি কবিতার মতো গুনগুন করে, তার স্রোত যেন সুরের ঢেউ। তাই কবি একে ‘তরল শ্লোক’ বলে উল্লেখ করেছেন। এটি প্রকৃতির কবিতা, যা কথা না বলেও হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
১৬। ঝরনার দৃষ্টি কীসের খোঁজে ছুটে চলে?
উত্তর: ঝরনা সৌন্দর্যের খোঁজে ছুটে চলে। সে কোন পাঁকে থেমে থাকে না, বরং সে চায় সেই জলের সন্ধান যেটি শুদ্ধ, সুন্দর ও তৃষ্ণা নিবারণকারী। কবি বলেন, যার গরজ শুধু জল পাওয়ার জন্য, সে পাতকুয়ায় যাক। কিন্তু ঝরনা চায় রূপের, মুগ্ধতার, স্বপ্নের জল। তাই সে ছুটে চলে মুগ্ধ চোখের সন্ধানে।
১৭। ঝরনার ধ্বনি কিভাবে প্রকৃতিকে জাগিয়ে তোলে?
উত্তর: ঝরনার ধ্বনি একটি চিরবহমান সংগীতের মতো। তার শব্দ বনের নিস্তব্ধতা ভেঙে দেয়, নিস্তেজ প্রকৃতিকে প্রাণ দেয়। ঝরনার ঝমঝম শব্দ যেন পাথর-শিলার বুকে বাজানো ঢোলের মতো, যা নির্জনতাকে সজীব করে তোলে। সে যেন প্রকৃতির মৃদু এক সুর, যা নিঃশব্দতাকেও কথা বলায়।
১৮। ঝরনা কেন কারো খবর রাখে না?
উত্তর: ঝরনা নিজের ছন্দে মেতে থাকে। সে কাকে পিছনে ফেলে আসছে, কে ডাকছে, কোন পাহাড় তাকে ঠেকাতে চাইছে—সেসবের কোনো খেয়াল সে রাখে না। তার মন শুধু খেলায়, গানে, লীলায়। তাই সে কারো সংবাদ পায় না বা তার প্রয়োজনও বোধ করে না। এইভাবে ঝরনা একজন স্বাধীন সত্তার প্রতীক।
১৯। ঝরনার চলাফেরার ভঙ্গি কেমন?
উত্তর: ঝরনার চলাফেরা চঞ্চল, উচ্ছ্বসিত ও আনন্দময়। সে লাফিয়ে চলে, ঝাঁপিয়ে পড়ে, পাথরের গায়ে আঘাত করে, আর চারদিকে ঝিলমিল আলো ও রঙের সৃষ্টি করে। তার এই চলা যেন একটি প্রাণবন্ত নৃত্য, একটি ছন্দময় পদক্ষেপ। ঝরনার গতির মধ্যে শুধু গতি নয়, আছে প্রাণ, খুশি আর নান্দনিকতা।
আরও পড়ুনঃ বৃষ্টি কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর