বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘ফুলের বিবাহ’ গল্প একটি ব্যঙ্গরসাত্মক গদ্যরচনা যেখানে বঙ্কিমচন্দ্র খুব সুন্দরভাবে ফুলেদের মধ্যকার একটি কাল্পনিক ও মজার বিবাহের বর্ণনা করেছেন। এই পোস্টে ফুলের বিবাহ গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর লিখে দিলাম।
Table of Contents
ফুলের বিবাহ গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ১। মৌরি একদিন বাবার কাছে বায়না ধরে বোটানিক্যাল গার্ডেনে বেড়াতে যাবে। বাবা একদিন ওকে নিয়ে বেড়াতে গেলে সে ভীষণ খুশি হয়। নানা জাতের ফুল-ফলের গাছের সমারোহ দেখে সে অভিভূত হয়ে যায়। দীর্ঘদিন সে যেসব ফুল-ফলের নাম শুনেছে সেগুলো আজ নিজ চোখে দেখে খুবই আনন্দিত হয়। অবশেষে সিদ্ধান্ত নেয়- বাড়ির আঙিনায় ছোট্ট একটা বাগান করবে। ক. ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পে কে ঘটকের দায়িত্ব পালন করে? খ. ক্ষুদ্র বৃক্ষটি কেন বিরক্ত হয়েছিল? গ. উদ্দীপকের মৌরির ভালোলাগার বিষয়ের সঙ্গে ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পের সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা কর। ঘ. “মৌরির মাঝে সৃষ্ট প্রতিক্রিয়াই যেন ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পের মূল চেতনা।”- যুক্তিসহ বুঝিয়ে লেখ ৷ |
উত্তরঃ
ক. ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পে ভ্রমর ঘটকের দায়িত্ব পালন করে।
খ. ক্ষুদ্র বৃক্ষটি বিরক্ত হয়েছিল কারণ বড় গাছগুলো তাকে পাত্তা দিত না। তারা নিজেদের খুব বড় মনে করে ক্ষুদ্র বৃক্ষকে তাচ্ছিল্য করত। কেউ তার সঙ্গে মিশত না বা তার কথা শুনত না। তারা মনে করত, এমন একটা ছোট গাছের কোনো দাম নেই। এই অবহেলায় ক্ষুদ্র বৃক্ষ খুব কষ্ট পেয়েছিল। তাই সে রাগ ও দুঃখে বিরক্ত হয়ে পড়েছিল।
গ. উদ্দীপকে মৌরি বোটানিক্যাল গার্ডেনে গিয়ে নানা জাতের ফুল-ফল ও গাছ দেখে খুব খুশি হয়েছিল। সে সেগুলোকে নিজের চোখে দেখে মুগ্ধ হয় এবং বাগান করার স্বপ্ন দেখে। ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পেও দেখা যায়, ছোট গাছটি চায় অন্য গাছদের মতো সে-ও আনন্দে থাকুক, তাকে কেউ ছোট না ভাবুক। গল্পে গাছেদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরি হয়, তারা একসঙ্গে মিলেমিশে থাকে। মৌরির যেমন গাছপালা দেখার আগ্রহ ও ভালোবাসা বেড়েছিল, ঠিক তেমনই ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পে গাছদের মধ্যেও প্রাণ ও অনুভূতির ছবি দেখানো হয়েছে। গল্পটি পাঠকের মধ্যে গাছপালার প্রতি ভালোবাসা ও সচেতনতা জাগায়। মৌরি যেভাবে গাছপালাকে আপন করে নিতে চায়, গল্পেও গাছেরা নিজেদের মতো করে বন্ধুত্ব আর সম্পর্ক গড়ে তোলে। দুটোতেই প্রকৃতিকে ভালোবাসার একটি বার্তা রয়েছে। তাই মৌরির ভালোলাগার বিষয় ও গল্পের মধ্যে সাদৃশ্য দেখা যায়।
ঘ. “মৌরির মাঝে সৃষ্ট প্রতিক্রিয়াই যেন ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পের মূল চেতনা”—এই কথাটি খুবই সত্য। মৌরি যখন বোটানিক্যাল গার্ডেনে নানা রকম ফুল ও ফলের গাছ দেখে, তখন সে গভীর আনন্দ পায়। সে চোখে দেখে ফুলের সৌন্দর্য, গন্ধ ও বৈচিত্র্য, যেগুলো আগে সে শুধু বইয়ে পড়েছে বা গল্পে শুনেছে। এই অনুভূতি তার মনে প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা ও আগ্রহ তৈরি করে। সে সিদ্ধান্ত নেয় নিজের ঘরের আঙিনায় একটি বাগান করবে। এটি তার মনের ভেতর প্রকৃতি ও গাছপালার প্রতি এক ধরনের মমতা এবং যত্নশীলতা গড়ে তোলে। একইভাবে ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পেও লেখক গাছপালা ও ফুলকে প্রাণবন্ত রূপে তুলে ধরেছেন। সেখানে ফুলদের কথাবার্তা, আবেগ এবং সমস্যাগুলো মানুষের মতো করে প্রকাশ পেয়েছে। ক্ষুদ্র বৃক্ষ যেমন ফুলের বিয়েতে ডাক না পেয়ে দুঃখ পায়, তেমনি মৌরি দীর্ঘদিন ধরে যেসব ফুল দেখার ইচ্ছে করত, সেগুলো দেখে আনন্দিত হয়। দু’টি ক্ষেত্রেই দেখা যায়—প্রকৃতির সঙ্গে একটা আবেগের সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে। তাই মৌরির প্রতিক্রিয়া আসলে ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পের প্রকৃতি ভালোবাসার চেতনাকেই নতুনভাবে প্রকাশ করে।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ২। মালিহার পুতুলের নাম সিথি। অনেক দেখে-শুনে পাশের বাড়ির স্নেহার। পুতুল গুড্ডুর সাথে সে সিথির বিয়ে ঠিক করে। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে গুড্ডু। এলো বিয়ে করতে। তার সাথে অনেক বন্ধুও এলো। সিথির বান্ধবীরা। গুডুকে বরণ করে নিল। বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে মালাবদল। হলো। খাওয়া-দাওয়া শেষে স্নেহা গুড্ডু আর সিথিকে নিয়ে নিজ বাড়িতে। চলে গেল। ক. বিয়ের মাস কোনটি? খ. “ঘরে মধু কত?” এখানে মধু দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা কর। গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পের কোন দিকটির সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর। ঘ. “উদ্দীপকটি ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পের সম্পূর্ণ ভাব ধারণ করতে না পারলেও উৎসবের ভাবটি ধারণ করতে পেরেছে।”- বিশ্লেষণ কর। |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৩। মেয়ের বয়স যে পনেরো, তাই শুনিয়া মামার মন ভার হইল। বংশে তো। কোনো দোষ নাই? না, দোষ নাই- বাপ কোথাও তার মেয়ের যোগ্য বর খুঁজিয়া পান না। একে তো বরের হাট মহার্ঘ, তাহার পরে ধনুক-ভাঙা পণ, কাজেই বাপ কেবলই সবুর করিতেছেন- কিন্তু মেয়ের বয়স সবুর করিতেছে না। ক. ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পে কার বিয়ে ছিল? খ. ‘গোলাবের অধিক গৌরব’ কেন?- বুঝিয়ে লেখ। গ. উদ্দীপকটি ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পের কোন বিষয়টির প্রতিনিধিত্ব করছে?- ব্যাখ্যা কর। ঘ. “উদ্দীপকটি ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পের আংশিক প্রতিফলন মাত্র।” উক্তিটির যথার্থতা মূল্যায়ন কর। |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৪। বরযাত্রী হয়ে এসেছেন অজয় ঠাকুর। দেখতে খুবই সহজ-সরল মনে হয়। কিন্তু তার একটা দোষ আছে, তিনি যেখানে যে বিয়েতে যান উসকানিমূলক কথা বলে কন্যাপক্ষ ও বরপক্ষের মধ্যে ঝগড়া বাধিয়ে দেন। আজ নিজের নাতির বিয়েতেও এর নড়চড় হলো না। কন্যাপক্ষের। ৭গেটে আসতে একটু দেরি হওয়ায় তাদেরকে ছোটলোক বলে গালি দিলেন। বললেন আগে জানলে এই ছোট জাতের ঘরে নাতিকে বিয়ে করাতাম না। এটা নিয়ে ছোটখাটো একটা হট্টগোল হয়ে যায়। ক. ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পটি বঙ্কিমচন্দ্রের কোন গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে? খ. মল্লিকা ফুলকে কীভাবে ঘোমটা খোলার জন্য রাজি করানো হলো? ব্যাখ্যা কর। গ. উদ্দীপকের অজয় ঠাকুরের সঙ্গে ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পের কার সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর। ঘ. “উদ্দীপকটি ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পের সম্পূর্ণ বিষয় ধারণ করতে পারেনি।”- মন্তব্যটির মূল্যায়ন কর। |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৫। অবশেষে যথাকালে কম্পিতহৃদয়ে….. একখানি পাতলা রঙিন কাপড়ে মুড়িয়া বরের সম্মুখে আনিয়া উপস্থিত করা হইল। সে এককোণে নীরবে মাথা প্রায় হাঁটুর কাছে ঠেকাইয়া বসিয়া রহিল এবং এক প্রৌঢ়া দাসী তাহাকে সাহস দিবার জন্যে পশ্চাতে উপস্থিত রহিল।….. অপূর্ব জিজ্ঞাসা করিল “তুমি কী পড়?” বসনভূষণাচ্ছন্ন লজ্জাস্তূপের নিকট হইতে তাহার কোনো উত্তর পাওয়া গেল না। দুই-তিনবার প্রশ্ন এবং প্রৌঢ়া দাসীর নিকট হইতে পৃষ্ঠদেশে বিস্তর উৎসাহজনক করতাড়নের পর বালিকা মৃদুস্বরে এক নিঃশ্বাসে অত্যন্ত দ্রুত বলিয়া গেল। ক. ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পের জবা কেমন স্বভাবের? খ. জবার সঙ্গে বিয়ে না দিয়ে কন্যাকর্তা পেছালেন কেন? গ. উদ্দীপকে ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পের কোন দিকটির ঘটেছে?- ব্যাখ্যা কর। প্রতিফলন ঘ. “উদ্দীপক ও ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পের বিষয়টি বাঙালি সংস্কৃতির একটা অংশ ধারণ করেছে।” উক্তিটির যথার্থতা মূল্যায়ন কর ৷ |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৬। গফুর মিয়া হাজির হয়েছেন রামগোপালের বাড়ি। এর আগেও বহুবার । । এসেছেন তিনি। বহু নামিদামি পাত্র দেখিয়েছেন। কিন্তু পছন্দ না হওয়ায় ফিরে যেতে হয়েছে তাকে। অবশ্য এজন্য তাকে প্রতিবারই সম্মানি দেওয়া হয়েছে। এজন্যই তার এত গরজ। অবশেষে আজ রামগোপালের পাত্র পছন্দ হলো। কিছুদিনের মধ্যেই সারা বাড়িতে বিয়ে উপলক্ষ্যে আনন্দের মেলা বসল ৷ ক. বিয়ের পাত্র কে? খ. বরপক্ষের বড় বিপদ দেখা দিল কেন? ব্যাখ্যা কর। গ. উদ্দীপকের গফুর মিয়ার সাথে ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পের কার সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর। ঘ. “গফুর মিয়া ও ভ্রমরের মতো মানুষই বিয়ের অনুষ্ঠান সার্থক করে তোলে।” তুমি কি একমত? ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ কর। |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৭। শিমুলের ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষ্যে সবাই কন্যার বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। বিয়েবাড়ি পৌছানোর সাথে সাথে কন্যাপক্ষের মেয়েরা গেট বন্ধ করে দাঁড়ায়। একজন বলে এক হাজার টাকা না দিলে যাইতে দিমু না। শিমুলের মামা বিরক্ত হয়ে বলে ওঠেন, টাকা কি গাং দিয়া ভাইসা আসে? টাকা দিতে পারব না। গেট ছাড়ো, নইলে বর নিয়া গেলাম। কন্যাপক্ষের একটি মেয়ে বলে, কী কিপ্টা মানুষরে, যান, টাকা লাগব না। লজ্জার খাতিরে বড় খালা তাদের হাতে পাঁচশ টাকা ধরিয়ে দেন। সবাই অত্যন্ত খুশি হয়ে বরকে বরণ করে নেয়। ক. বর কোন সময় বিয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করল? খ. মল্লিকা ফুলের বিয়ে ঠিক হলো কীভাবে? ব্যাখ্যা কর। গ. উদ্দীপকে ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পের কোন বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা কর। ঘ. “উদ্দীপক ও ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পের বিয়ের ঘটনা গ্রামবাংলার প্রতিটি বিয়ের প্রতিচ্ছবি।” উক্তিটির যথার্থতা মূল্যায়ন কর। |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৮। বিনোদ মশাইয়ের মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত হওয়ায় তার ঘুম হারাম হয়েছে। মেয়েকে ভালো ঘরে পাত্রস্থ না করে তার শান্তি নেই। অনেক পাত্র দেখলেন কিন্তু মেয়ের জন্য উপযুক্ত কাউকে বাছাই করতে তিনি বার্ধ হন। এজন্য ঘটকের সাহায্য নেন। ঘটক মেয়ের উপযুক্ত পাত্র খুঁজে বিয়ের ব্যবস্থা করেন। বিনোদ মশাই ঘটকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ক. কে মেয়ে দেখতে চাইল? খ. “ফর্দ দিবেন, কড়ায় গন্ডায় বুঝাইয়া দিবে” বলতে কী বোঝ? ব্যাখ্যা কর। গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পের সাদৃশ্য কোথায়?-বুঝিয়ে দাও। ঘ. “উদ্দীপকটি ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পের আংশিক বিষয়ের প্রতিনিধিত্ব করে।”- মূল্যায়ন কর। |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৯। রুমা আপুর বিয়েতে আমরা সাত দিন আগেই গিয়েছিলাম। নানা রকম আলপনা করা হয়েছিল। গায়েহলুদে আমরা সবাই নাচ-গান করেছিলাম। বিয়ের দিন যখন বরযাত্রী আসে তখন আমরা গেটের ভেতর ঢুকতে দেইনি। পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছে, তারপর ভিতরে আসার অনুমতি পেয়েছে। এরপর বাসরঘরে আমরা অনেকক্ষণ মজা করেছিলাম। দুলাভাইয়ের জুতা লুকিয়ে রেখে তার কাছ থেকে দু হাজার টাকা আদায় করে নিয়েছিলাম। ক. রজনিগন্ধাকে কী বলে তামাশা করা হয়েছিল? খ. “সংসার অনিত্যই বটে- এই আছে এই নাই” বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা কর। গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পের সাদৃশ্য নির্ণয় কর। ঘ. “উদ্দীপকটি ‘ফুলের বিবাহ’ গল্পের আংশিক ঘটনাকে প্রতিফলিত করে।”- মূল্যায়ন কর। |
আরও পড়ুনঃ সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর – ৯ম ও ১০ম শ্রেণির বাংলা
নিচে উত্তরসহ ফুলের বিবাহ গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের পিডিএফ ফাইল দেওয়া হল।