জীবনানন্দ দাশের “সেইদিন এই মাঠ” কবিতাটিতে জীবনের অস্থায়িত্ব, প্রকৃতির চিরন্তনতা, এবং মানুষের অনুপস্থিতির মাঝেও জীবনের চলমানতা—এই তিনটি বিষয় অসাধারণভাবে একসাথে মিশে গেছে। এই পোস্টে সেই দিন এই মাঠ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর লিখে দিলাম।
Table of Contents
সেই দিন এই মাঠ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন
১। ‘সেই দিন এই মাঠ’ কবিতাটির রচয়িতা কে?
উত্তর: জীবনানন্দ দাশ।
২। ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত?
উত্তর: ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে।
৩। জীবনানন্দ দাশ কবে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: ১৮৯৯ সালে।
৪। জীবনানন্দ দাশ কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: বরিশাল শহরে।
৫। জীবনানন্দ দাশের পিতার নাম কী?
উত্তর: সত্যানন্দ দাশ।
৬। জীবনানন্দ দাশের মাতার নাম কী?
উত্তর: কুসুমকুমারী দাশ।
৭। কুসুমকুমারী দাশ কি ছিলেন?
উত্তর: তিনি ছিলেন একজন স্বভাবকবি।
৮। জীবনানন্দ দাশ কোন বিষয়ে এম.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন?
উত্তর: ইংরেজি সাহিত্যে।
৯। এম.এ. পাশ করার পর জীবনানন্দ দাশ কোন পেশায় যুক্ত হন?
উত্তর: অধ্যাপনায়।
১০। জীবনানন্দ দাশ কী ধরনের কবি হিসেবে পরিচিত?
উত্তর: আধুনিক জীবনচেতনার কবি।
১১। জীবনানন্দ দাশ কখন মারা যান?
উত্তর: ১৯৫৪ সালের ২২শে অক্টোবর।
১২। জীবনানন্দ দাশ কোথায় মারা যান?
উত্তর: কলকাতায় ট্রাম-দুর্ঘটনার পর।
১৩। কবিতায় ‘সেইদিন’ বলতে কোন দিনকে বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: কবির মৃত্যুর পরের দিন।
১৪। “সেই দিন এই মাঠ স্তব্ধ হবে নাকো জানি”— এখানে ‘স্তব্ধ’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: নিঃশব্দ বা থেমে যাবে না।
১৫। “এই নদী নক্ষত্রের তলে”— এখানে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: নদী রাতের আকাশের নিচে প্রবাহমান থাকবে।
১৬। কবি কখন চলে যাবেন?
উত্তর: কবির মৃত্যুর পর।
১৭। কবির চলে যাওয়ার পর কী থেমে যাবে না?
উত্তর: প্রকৃতির স্বাভাবিক ধারা।
১৮। ‘লক্ষ্মীপেঁচা’ কী করবে?
উত্তর: গান গাবে।
১৯। লক্ষ্মীপেঁচা কার জন্য গান গাবে?
উত্তর: তার লক্ষ্মীটির তরে।
২০। কবি কীসের স্বপ্ন দেখেন?
উত্তর: সোনার স্বপ্নের।
২১। কবির মতে স্বপ্ন কখন ঝরে পড়ে?
উত্তর: পৃথিবীতে অনন্তকাল ধরে।
২২। ‘খেয়ানৌকো’ কোথায় এসে লাগে?
উত্তর: চরের খুব কাছে।
২৩। কবির মতে পৃথিবীর গল্পগুলো কী হবে?
উত্তর: চিরকাল বেঁচে থাকবে।
২৪। ‘এশিরিয়া’ কোন ধরণের স্থান?
উত্তর: প্রাচীন সভ্যতা।
২৫। ‘বেবিলন’ কী?
উত্তর: প্রাচীন ঐতিহাসিক নগরী।
২৬। কবি কোথায় স্বপ্ন দেখেন?
উত্তর: নদী ও নক্ষত্রের তলায়।
২৭। কবির মৃত্যুর পর কী বেঁচে থাকবে?
উত্তর: প্রকৃতি ও পৃথিবীর গল্প।
২৮। ‘শিশিরের জল’ কী বোঝায়?
উত্তর: ভোরের জলকণা।
২৯। ‘এই নদী নক্ষত্রের তলে’—এর অর্থ কী?
উত্তর: নদী রাতের আকাশের নক্ষত্রের নিচে প্রবাহিত হবে।
৩০। কবিতায় কবি কোন দুটি প্রাচীন সভ্যতার কথা বলেছেন?
উত্তর: এশিরিয়া ও বেবিলন।
৩১। “নক্ষত্রের তলে” কী দেখবে?
উত্তর: স্বপ্ন (সোনার স্বপ্ন)।
৩২। “আমি চলে যাব বলে”—কবি কোথায় চলে যাবেন?
উত্তর: মৃত্যুর পরে বা পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়া।
৩৩। চালতাফুল কীসে ভিজবে না?
উত্তর: শিশিরের জলে।
৩৪। “নরম গন্ধের ঢেউয়ে” কী ঘটবে না?
উত্তর: চালতাফুলের গন্ধ ছড়াবে না।
৩৫। লক্ষ্মীপেঁচা কাকে উদ্দেশ্য করে গান গাবে?
উত্তর: তার লক্ষ্মীকে (প্রিয়জন বা সঙ্গিনী)।
৩৬। “লক্ষ্মীপেঁচা” কীসের প্রতীক?
উত্তর: একাকীত্ব বা শোকের।
৩৭। “খেয়ানৌকোগুলো” কোথায় এসে লেগেছে?
উত্তর: চরের কাছে।
৩৮। “এশিরিয়া ধুলো” ও “বেবিলন ছাই” দিয়ে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: প্রাচীন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ (সময়ের জয়)।
৩৯। “সোনার স্বপ্ন” বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: মানুষের ক্ষণস্থায়ী সুখ ও আকাঙ্ক্ষা।
সেই দিন এই মাঠ কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
১। ‘সোনার স্বপ্নের সাধ’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তরঃ ‘সোনার স্বপ্নের সাধ’ বলতে কবি মানুষের মনের গভীর আকাঙ্ক্ষা ও মহৎ স্বপ্নকে বোঝাতে চেয়েছেন। এই স্বপ্ন মানুষের সুন্দরের প্রতি আগ্রহ, প্রকৃতি ও জীবনের প্রতি ভালোবাসার প্রতিফলন। কবির মতে, প্রকৃতি ও মানবসভ্যতার চিরন্তন রূপের মাঝে এই স্বপ্ন বারবার ফিরে আসে। সময় বদলায়, মানুষ চলে যায়, কিন্তু মানুষের স্বপ্ন ও সাধ পৃথিবীতে থেকেই যায়। প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং মানুষের আকাঙ্ক্ষা কখনো শেষ হয় না, তা চিরকাল বেঁচে থাকে। কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে, স্বপ্ন কখনোই নিঃশেষ হয় না, বরং নতুন প্রজন্মের মাঝে নতুনভাবে ফিরে আসে।
২। “সেই দিন এই মাঠ স্তব্ধ হবে নাকো জানি।” চরণটিতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ এই চরণে কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে, তিনি মৃত্যুবরণ করলেও প্রকৃতির গতি থেমে থাকবে না। মানুষ ক্ষণস্থায়ী হলেও প্রকৃতি চিরকাল বেঁচে থাকে এবং তার নিজস্ব নিয়মে চলে। কবির অনুপস্থিতিতেও মাঠে বাতাস বইবে, নদী বহমান থাকবে, নক্ষত্রের নিচে প্রকৃতি স্বাভাবিক নিয়মে চলবে। প্রকৃতির এই চিরন্তন রূপ কখনো স্তব্ধ হয় না, বরং পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই টিকে থাকে। সভ্যতা ও সমাজ বদলে গেলেও প্রকৃতি তার নিজস্ব সৌন্দর্য ও প্রাণময়তা ধরে রাখে। কবি প্রকৃতির এই ধ্রুব ও অবিনশ্বর রূপের কথা বলেছেন।
৩। “এশিরিয়া ধুলো আজ- বেবিলন ছাই হয়ে আছে”- কেন?
উত্তরঃ কবি এখানে ইতিহাসের কথা তুলে ধরেছেন, যেখানে এশিরিয়া ও ব্যাবিলন একসময় সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী সভ্যতা ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেছে, এখন তারা শুধুই ধুলোর স্তূপ। এটি বোঝায় যে, মানুষের গড়া সাম্রাজ্য ও সভ্যতা চিরস্থায়ী নয়, সময়ের সঙ্গে তা বিলীন হয়ে যায়। অন্যদিকে, প্রকৃতি চিরন্তন এবং তার সৌন্দর্য যুগ যুগ ধরে অবিকল রয়ে গেছে। সভ্যতার উত্থান-পতন হলেও প্রকৃতির স্বাভাবিক কার্যক্রম চলতে থাকে। কবি এই চরণে মানবসভ্যতার ক্ষয়িষ্ণু প্রকৃতি এবং প্রকৃতির চিরন্তনতা তুলে ধরেছেন।
৪। “সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে”- বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তরঃ এই চরণে কবি মানুষের মহৎ স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা ও সাধনার কথা বলেছেন, যা কখনো কখনো হারিয়ে যায় বা নষ্ট হয়। সময়ের প্রবাহে মানুষের অনেক স্বপ্ন পূরণ হয় না, কিংবা বাস্তবতার আঘাতে তা ঝরে পড়ে। তবে প্রকৃতির নিয়মে নতুন স্বপ্ন জন্ম নেয়, নতুন মানুষ আসে, নতুন আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়। কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে, মানুষের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা বারবার ফিরে আসে, যদিও কিছু স্বপ্ন সময়ের সঙ্গে হারিয়ে যায়। প্রকৃতি এবং মানবজীবনের এই চক্রাকার গতিই কবিতার মূল ভাব।
৫। ‘বেবিলন ছাই হয়ে আছে’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ ‘বেবিলন ছাই হয়ে আছে’ বলতে বোঝানো হয়েছে যে, একসময় সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী ব্যাবিলনীয় সভ্যতা এখন কেবল অতীতের ধ্বংসস্তূপ। এটি ইতিহাসের পরিবর্তনশীল প্রকৃতিকে নির্দেশ করে, যেখানে মানুষের গড়া শক্তিশালী সাম্রাজ্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিলীন হয়ে যায়। ব্যাবিলন একসময় বাণিজ্য, সংস্কৃতি ও জ্ঞানের কেন্দ্র ছিল, কিন্তু আজ তা শুধুই ইতিহাস। কবি এই চরণের মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন যে, মানবসভ্যতা ধ্বংস হলেও প্রকৃতি চিরকাল বহমান থাকে।
৬। ‘পৃথিবীর এইসব গল্প বেঁচে রবে চিরকাল’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ কবি এখানে বোঝাতে চেয়েছেন যে, মানুষের ব্যক্তিগত জীবন ফুরিয়ে গেলেও পৃথিবীর সৌন্দর্য ও প্রকৃতির ঘটনা চিরকাল টিকে থাকবে। সভ্যতা ও ইতিহাস বদলালেও প্রকৃতির নিজস্ব নিয়ম কখনো থেমে থাকবে না। নদী, মাঠ, খেয়ানৌকা, বাতাস—সবকিছু তার নিজস্ব গতিতে চলতে থাকবে। মানুষ আসে-যায়, রাজ্য ধ্বংস হয়, নতুন সভ্যতা গড়ে ওঠে, কিন্তু প্রকৃতি ও তার গল্প বেঁচে থাকে। কবি বুঝিয়েছেন যে, প্রকৃতির মাঝে জীবনের এক অনন্ত ধারা রয়েছে, যা মৃত্যুকে অতিক্রম করে টিকে থাকে। তাই মানুষের অস্তিত্ব ক্ষণস্থায়ী হলেও প্রকৃতির সৌন্দর্য ও তার কাহিনি চিরন্তন।
৭। ‘এই নদী নক্ষত্রের তলে’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তরঃ কবি এখানে নদীর চিরন্তন স্রোত এবং তার মহাজাগতিক সম্পর্ক বোঝাতে চেয়েছেন। নদী দিনরাত প্রবাহমান, তার ওপর আকাশের নক্ষত্ররা আলোক ছড়িয়ে দেয়। এটি প্রকৃতির এক অবিচ্ছেদ্য রূপ, যা যুগে যুগে একইভাবে টিকে থাকে। মানুষ আসে-যায়, কিন্তু নদী ও আকাশের এই দৃশ্য অপরিবর্তিত থাকে। এটি প্রকৃতির চিরস্থায়ী রূপের প্রতীক, যেখানে সময়ের কোনো প্রভাব পড়ে না। কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে, প্রকৃতির এই সৌন্দর্য চিরকালীন, যা মানুষের ক্ষণস্থায়ী জীবনের বিপরীতে অবিনশ্বর।
৮। কবি চলে যাওয়ার কথা বলেছেন কেন?
উত্তরঃ কবি এখানে তাঁর নিজের মৃত্যুর কথা বলেছেন, যা মানবজীবনের অনিবার্য সত্য। তিনি জানেন যে, তিনি একদিন এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবেন, কারণ মানুষের জীবন সীমিত। তবে তাঁর চলে যাওয়ায় পৃথিবীর কিছুই থেমে থাকবে না, প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে চলতে থাকবে। চালতাফুল শিশিরে ভিজবে, লক্ষ্মীপেঁচা ডাকবে, নদী বয়ে যাবে—এই সবকিছু কবির অনুপস্থিতিতেও অব্যাহত থাকবে। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, ব্যক্তি মানুষ মরে গেলেও প্রকৃতি ও পৃথিবীর সৌন্দর্য চিরকাল বেঁচে থাকে।
৯। “চারিদিকে শান্ত বাতি- ভিজে গন্ধ- মৃদু কলরব” বলতে তুমি কী বোঝ?
উত্তরঃ এই চরণে কবি এক গভীর রাতে প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্য ও পরিবেশের ছবি এঁকেছেন। ‘শান্ত বাতি’ বলতে বোঝানো হয়েছে মৃদু আলো, যা চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে। ‘ভিজে গন্ধ’ বলতে বোঝানো হয়েছে শিশিরে ভেজা মাটির ও ফুলের মৃদু সুবাস, যা রাতের বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে। ‘মৃদু কলরব’ বলতে বোঝানো হয়েছে রাতের নীরবতার মাঝে প্রাকৃতিক কিছু মৃদু শব্দ, যেমন পাখির ডাক, বাতাসের মৃদু শব্দ। কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে, প্রকৃতি রাতের বেলা এক রহস্যময় ও প্রশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে, যা মানুষকে এক অদ্ভুত অনুভূতিতে ভরিয়ে তোলে।
১০। ‘নরম গন্ধের ঢেউ’ বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ ‘নরম গন্ধের ঢেউ’ বলতে বোঝানো হয়েছে প্রকৃতির মৃদু ও মনোমুগ্ধকর সৌরভ, যা বাতাসে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে। শিশিরে ভেজা চালতাফুল, ঘাস, মাটির সৌরভ—এসব মিলে প্রকৃতিতে এক অপূর্ব সুবাস সৃষ্টি করে। এই সুবাস ঠিক ঢেউয়ের মতো বাতাসের সঙ্গে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় প্রবাহিত হয়। কবি এখানে প্রকৃতির কোমল ও শান্ত সৌন্দর্য তুলে ধরেছেন, যা অনুভব করা যায় কিন্তু ছোঁয়া যায় না। এটি প্রকৃতির এক রহস্যময় রূপ, যা মানুষকে মোহিত করে এবং প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করে।
১১। ‘সেই’ ও ‘এই’ শব্দ দুটো ব্যবহার করেছেন কেন?
উত্তরঃ কবি ‘সেই’ ও ‘এই’ শব্দ দুটি ব্যবহার করেছেন অতীত ও বর্তমানের মধ্যে একটি যোগসূত্র তৈরির জন্য। ‘সেই’ শব্দটি ভবিষ্যতের কোনো নির্দিষ্ট দিনের ইঙ্গিত দেয়, যে দিন কবি থাকবেন না। আর ‘এই’ শব্দটি বর্তমানকে বোঝায়, যেখানে কবি এখনো জীবিত এবং প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। এই দুটি শব্দের ব্যবহারের মাধ্যমে কবি বুঝিয়েছেন যে, সময় বদলালেও প্রকৃতির রূপ-রস-গন্ধ একই থাকবে। মানুষ মরণশীল, কিন্তু প্রকৃতির সৌন্দর্য চিরন্তন। তাই কবি তাঁর অনুপস্থিতিতেও প্রকৃতির অপরিবর্তনীয় রূপের কথা তুলে ধরেছেন।
১২। ‘লক্ষ্মীপেঁচা গান গাবে না কি তার লক্ষ্মীটির তরে?’ ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ এই চরণে কবি লক্ষ্মীপেঁচার ডাকের মাধ্যমে প্রকৃতির চিরন্তন নিয়মের কথা বলেছেন। লক্ষ্মীপেঁচা তার সঙ্গীর জন্য ডাক দিতেই থাকবে, এটি কখনো বন্ধ হবে না। কবি বোঝাতে চেয়েছেন, তাঁর জীবন শেষ হলেও প্রকৃতির স্বাভাবিক কার্যক্রম চলতে থাকবে। এটি প্রকৃতির এক অমোঘ নিয়ম, যেখানে এক জীবনের অবসান হলেও প্রকৃতি তার স্বাভাবিক গতিতে বহমান থাকে। পেঁচার ডাকও সেই ধারাবাহিকতার অংশ, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে অব্যাহত থাকবে।
১৩। খেয়ানৌকাগুলো চরের কাছে লাগানোর বিষয়টি উল্লেখ করে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তরঃ কবি খেয়ানৌকার প্রসঙ্গ টেনে প্রকৃতির চিরাচরিত নিয়ম ও জীবনচক্রের কথা বলেছেন। খেয়ানৌকা নদীতে যাত্রী পারাপার করে, আবার রাত হলে চরের কাছে এসে থামে। এটি জীবন ও প্রকৃতির এক প্রতীক, যেখানে দিনের কাজ শেষে বিশ্রাম আসে, আবার পরদিন নতুন করে যাত্রা শুরু হয়। কবি বোঝাতে চেয়েছেন, মানুষের জীবন ফুরিয়ে গেলেও পৃথিবীর কার্যকলাপ থেমে থাকে না। নতুন জীবন, নতুন দিন, নতুন যাত্রা চলতে থাকে একই নিয়মে, যেমন খেয়ানৌকা প্রতিদিন তার কাজ করে চলে।
১৪। ‘সেইদিন এই মাঠ’ কবিতায় সৌন্দর্যের অমরত্বের দিকটি কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে?
উত্তরঃ কবিতাটিতে প্রকৃতির চিরকালীন সৌন্দর্যের কথা বলা হয়েছে, যা কখনো ম্লান হয় না। কবি জানেন, তিনি একদিন পৃথিবী থেকে চলে যাবেন, কিন্তু প্রকৃতির রূপ-রস-গন্ধ অমর থাকবে। শিশিরভেজা চালতাফুল, নরম গন্ধের ঢেউ, লক্ষ্মীপেঁচার ডাক, খেয়ানৌকার চলাচল—এই সবকিছু যুগে যুগে একই রকম থাকবে। সভ্যতা ধ্বংস হলেও প্রকৃতি তার সৌন্দর্য বজায় রাখবে। কবি এখানে প্রকৃতির অমরত্ব ও মানুষের ক্ষণস্থায়ী জীবনের মধ্যে একটি তুলনা করেছেন, যা প্রকৃতির চিরন্তন রূপকে আরও স্পষ্ট করে তোলে।
১৫। ‘আমি চলে যাব বলে’ কথাটি কেন বলা হয়েছে?
উত্তরঃ কবি এখানে তাঁর মৃত্যুর অনিবার্য সত্যের কথা বলেছেন। পৃথিবীতে কেউই চিরস্থায়ী নয়, তাই একদিন কবিকেও চলে যেতে হবে। তবে তাঁর চলে যাওয়ায় প্রকৃতির কোনো পরিবর্তন ঘটবে না। প্রকৃতি আগের মতোই সুন্দর থাকবে, নদী বইবে, ফুল ফুটবে, শিশির পড়বে, পাখিরা ডাকবে। কবির এই উপলব্ধি মানবজীবনের ক্ষণস্থায়িত্ব ও প্রকৃতির চিরন্তনতা বোঝায়। এটি মানুষের সীমাবদ্ধ অস্তিত্বের বিপরীতে প্রকৃতির মহিমাকে তুলে ধরেছে।
আরও পড়ুনঃ উমর ফারুক কবিতার জ্ঞানমূলক ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর
http://toyota-porte.ru/forums/index.php?autocom=gallery&req=si&img=3235