হায়াৎ মামুদের ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ লেখাটি সাহিত্যের শাখাগুলোর বৈচিত্র্য এবং তাদের গঠন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করে, পাশাপাশি বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের অবদানের উপরও আলোকপাত করে। এই পোস্টে সাহিত্যের রূপ ও রীতি মূলভাব- নবম-দশম শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম। বড় মূলভাবটি পড়লে ভালভাবে বুঝতে পারবেন।
Table of Contents
সাহিত্যের রূপ ও রীতি মূলভাব সংক্ষেপে
লেখাটির মূলভাব হলো সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা ও তাদের বৈশিষ্ট্যগুলোর বিশ্লেষণ। লেখক সাহিত্যের বৃহত্তর পরিধির মধ্যে গদ্য, পদ্য, কবিতা, নাটক, ছোটগল্প, উপন্যাস এবং প্রবন্ধের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন।
১. কবিতা: কবিতার প্রধান রূপভেদ হল মহাকাব্য এবং গীতিকবিতা। মহাকাব্য দীর্ঘ কাহিনী বললেও গীতিকবিতা সাধারণত সংক্ষিপ্ত এবং কবির অনুভূতি প্রকাশ করে।
২. নাটক: নাটক প্রাচীনতম সাহিত্যের একটি শাখা, যা দর্শকদের জন্য রচিত। নাটকের গঠন পাঁচ অঙ্কে বিভক্ত এবং এর শ্রেণিবিভাজন ট্র্যাজেডি, কমেডি এবং প্রহসনে হয়।
৩. ছোটগল্প: ছোটগল্পের আকার ছোট হলেও এর কাহিনী সাধারণত একটি বিশেষ মুহূর্ত বা পরিবেশের উপর কেন্দ্রিত হয়। এটি বাংলা সাহিত্যে সদ্য গৃহীত একটি শৈলী।
৪. উপন্যাস: উপন্যাস গদ্যে রচিত একটি দীর্ঘ কাহিনী যা ব্যাপক জনপ্রিয়। বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ঔপন্যাসিক ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র।
৫. প্রবন্ধ: প্রবন্ধ লেখকের চিন্তার স্বচ্ছতা এবং বিষয়বস্তুর প্রাধান্য নিয়ে রচিত হয়। এটি দুই ভাগে বিভক্ত: তন্ময় (বস্তুনিষ্ঠ) এবং মন্ময় (ব্যক্তিগত) প্রবন্ধ।
সাহিত্যের রূপ ও রীতি মূলভাব বড় করে
সাহিত্য অত্যন্ত বিস্তৃত ও বৈচিত্র্যময় একটি ক্ষেত্র। যদিও আমরা সাধারণভাবে ‘সাহিত্য’ বলতে সবকিছু বুঝি, বিশ্লেষণের সময়ে সাহিত্যের বিভিন্ন ধরন—যেমন গদ্য, পদ্য, গল্প, উপন্যাস, কবিতা বা নাটক—এগুলো আলাদাভাবে বিচার করি এবং বোঝার চেষ্টা করি। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখাকে একত্রে বোঝানো হয় যখন আমরা সাহিত্যের রূপের কথা বলি। রীতির অর্থ হলো সেই শাখাগুলোর নির্মাণশৈলীর পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ।
কবিতা
ছন্দোবদ্ধ ভাষায় যা লেখা হয়, তাকে আমরা কবিতা বলি। কবিতার প্রধান দুটি ধরন হলো মহাকাব্য এবং গীতিকবিতা। বাংলা ভাষায় মহাকাব্যের উৎকৃষ্ট উদাহরণ মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্য। মহাকাব্য সাধারণত যুদ্ধ বা বীরত্বের কাহিনীকে ভিত্তি করে লেখা হয়। যেমন প্রাচীন ভারতের দুটি মহাকাব্য হলো রামায়ণ ও মহাভারত। এর বিপরীতে গীতিকবিতা হচ্ছে সংক্ষিপ্ত আকারের কবিতা, যেখানে কবির ব্যক্তিগত অনুভূতির প্রকাশ ঘটে। বাংলা সাহিত্যে গীতিকবিতার আদি নিদর্শন হলো বৈষ্ণব কবিতাবলি।
নাটক
নাটক সাহিত্যের সবচেয়ে প্রাচীন এবং গুরুত্বপূর্ণ শাখা। নাটকের মূল উদ্দেশ্য কেবল পাঠক নয়, দর্শকদের বিনোদন দেওয়া। নাটক পাঁচটি ধাপে বিভক্ত থাকে—প্রারম্ভ, প্রবাহ, উৎকর্ষ, গ্রন্থিমোচন এবং উপসংহার। নাটকের ধরন অনুযায়ী ট্র্যাজেডি, কমেডি ও প্রহসন এই তিনটি প্রধান ভাগে বিভক্ত করা যায়। ট্র্যাজেডির মূল উদ্দেশ্য দর্শকদের মনে ভয় ও করুণার অনুভূতি জাগানো, যা দর্শকদের মনকে শুদ্ধ করে। অন্যদিকে, কমেডি মানব জীবনের কৌতুকপ্রদ দিকগুলো তুলে ধরে এবং আমাদের মধ্যে হাস্যরস সৃষ্টি করে। বাংলা সাহিত্যে মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রথমে ট্র্যাজেডি ও প্রহসন নাটক লিখে এই ধারার সূচনা করেন। তারপরে দীনবন্ধু মিত্র সামাজিক নাটক লিখে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন, যার মধ্যে নীলদর্পণ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ছোটগল্প
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছোটগল্পের প্রকৃতি সম্পর্কে একটি কবিতায় লিখেছিলেন: “শেষ হয়ে হইল না শেষ”, যা ছোটগল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ছোটগল্প সাধারণত উপন্যাসের মতো দীর্ঘ হয় না, বরং গল্পের কোনো একটি বিশেষ অংশ বা মুহূর্তকে কেন্দ্র করে লেখা হয়। ছোটগল্প আকারে ছোট হলেও জীবনের কোনো বিশেষ মুহূর্তকে সংক্ষিপ্ত অথচ প্রাঞ্জলভাবে তুলে ধরতে সক্ষম। বাংলা সাহিত্যে ছোটগল্পের সূচনা মূলত পাশ্চাত্যের প্রভাবেই হয়েছে। মার্কিন ছোটগল্পকার এডগার অ্যালান পো’র মতে, একটি ছোটগল্প এমন হতে হবে যাতে আধ ঘণ্টা থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে তা পড়া শেষ করা যায়।
উপন্যাস
উপন্যাস সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় শাখা। এটি একটি দীর্ঘ কাহিনীকে কেন্দ্র করে গদ্যে লেখা হয়, যেখানে বিভিন্ন চরিত্রের বিকাশ ও ঘটনাপ্রবাহ বিস্তারিতভাবে উপস্থাপিত হয়। বাংলা সাহিত্যে প্রথম সফল উপন্যাসিক ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তার কপালকুণ্ডলা ও বিষবৃক্ষ বাংলা উপন্যাসের ইতিহাসে অমর কীর্তি হয়ে আছে। তারপরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উপন্যাস রচনায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার সহজ অথচ হৃদয়স্পর্শী ভাষায় বাঙালি পাঠকদের মন জয় করে নেন এবং এখনও তিনি সবচেয়ে জনপ্রিয় ঔপন্যাসিকদের মধ্যে একজন। উপন্যাসের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়, যেমন ঐতিহাসিক উপন্যাস, সামাজিক উপন্যাস, মনোবিশ্লেষণধর্মী উপন্যাস ইত্যাদি।
প্রবন্ধ
প্রবন্ধ হলো একটি সাহিত্যিক রচনা, যা পাঠকের জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করতে লেখা হয়। প্রবন্ধের উদ্দেশ্য তথ্য প্রদান হলেও, এটি হতে হয় সাহিত্যিক গুণসম্পন্ন। প্রবন্ধে লেখকের বুদ্ধিবৃত্তিক এবং কল্পনাশক্তির পরিচয় থাকে, যা পাঠককে জ্ঞানের পাশাপাশি আনন্দও প্রদান করে। প্রবন্ধ প্রধানত দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত: তন্ময় (objective) প্রবন্ধ, যেখানে বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়, এবং মন্ময় (subjective) প্রবন্ধ, যেখানে লেখকের ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি প্রকাশ পায়।
Related Posts
- জসীমউদ্দীনের কবর কবিতার প্রশ্ন উত্তর – ৯ম শ্রেণির বাংলা
- কবর কবিতার মূলভাব, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি – ৯ম শ্রেণির বাংলা
- একাত্তরের দিনগুলি গল্পের মূলভাব- নবম-দশম শ্রেণির বাংলা
- ফেরা গল্পের মূলভাব, প্রশ্ন উত্তর ও বহুনির্বাচনি – ৯ম শ্রেণির বাংলা
- পল্লী মা কবিতার মূলভাব, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি – ৯ম শ্রেণির বাংলা
- জাদুঘর ভ্রমন ৯ম শ্রেণির বাংলা সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি
- মানুষ মুহাম্মদ সাঃ গল্পের মূলভাব – ৯ম-১০ম শ্রেণির বাংলা
- আমি কোনো আগন্তুক নই MCQ -৯ম-১০ম শ্রেণির বাংলা
- একাত্তরের দিনগুলি এর সারসংক্ষেপ – নবম-দশম শ্রেণির বাংলা
- নাগরিক সেবায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রশ্ন উত্তর ও MCQ – ৯ম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি