রানার কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর

সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘রানার’ কবিতায় রানার শুধু একজন ব্যক্তি নয়; সে এক সংগ্রামী শ্রেণির প্রতিনিধি। তার কাঁধে আছে মানুষের আশা, দুঃখ, প্রেম, সংগ্রাম—সবকিছুর বোঝা। সে ছুটে চলে, অথচ তার নিজের জীবনে আলো নেই। এই পোস্টে রানার কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর লিখে দিলাম।

রানার কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন

১। ‘রানার’ কবিতার কবির নাম কী?
উত্তর: সুকান্ত ভট্টাচার্য

২। ‘রানার’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত?
উত্তর: ছাড়পত্র।

৩। সুকান্ত ভট্টাচার্য কবে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: ৩০শে শ্রাবণ ১৩৩৩ বঙ্গাব্দে।

৪। সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্মস্থান কোথায়?
উত্তর: কলকাতার কালীঘাটে।

৫। সুকান্ত ভট্টাচার্যের পৈতৃক নিবাস কোথায়?
উত্তর: গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া।

৬। সুকান্ত ভট্টাচার্য কবে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর: ২৯শে বৈশাখ ১৩৫৪ বঙ্গাব্দে।

৭। সুকান্ত ভট্টাচার্য মৃত্যুকালে কত বছর বয়সে ছিলেন?
উত্তর: মাত্র একুশ বছর বয়সে।

৮। ‘রানার’ শব্দটি কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?
উত্তর: এখানে ‘রানার’ শব্দটি ‘ডাক হরকরা’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

৯। রানার কে?
উত্তর: ডাক হরকরা

১০। রানার কোথায় ছুটছে?
উত্তর: রাতের অন্ধকারে পথে পথে

১১। রানারের পথচলার গতি কেমন?
উত্তর: দ্রুতগামী ও দুর্বার

১২। রানারের জীবন কেমন?
উত্তর: কষ্টময় ও পরিশ্রমে ভরা

১৩। কবিতায় রানারের চলার সঙ্গে কোন প্রাণীর তুলনা করা হয়েছে?
উত্তর: হরিণের সঙ্গে

১৪। রানারের চলার সময় কী বাজে?
উত্তর: ঝুমঝুম ঘণ্টা

১৫। রানার কী বহন করে?
উত্তর: চিঠি ও সংবাদ

১৬। রানার কেন দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছুটে চলে?
উত্তর: নতুন খবর পৌঁছে দেওয়ার জন্য

১৭। রানারের ঘরে কে অপেক্ষা করে?
উত্তর: তার প্রিয়া

১৮। রানারের প্রিয়ার কী অবস্থা?
উত্তর: সে বিনিদ্র রাত কাটায়

১৯। রানারের পিঠে কী ধরনের বোঝা থাকে?
উত্তর: মানুষের সুখ-দুঃখের খবর

২০। রানারের সবচেয়ে বড় ভয় কী?
উত্তর: কখন সূর্য উঠে যায়

২১। রানার কেন ভয় পায়?
উত্তর: পথে দস্যুর ভয় আছে

২২। রানারের দুঃখ কে বোঝে?
উত্তর: পথের তৃণ

২৩। রানারের দুঃখ ঢাকা পড়ে কোথায়?
উত্তর: রাতের কালো অন্ধকারে

২৪। কবিতায় ‘ভোর’ কিসের প্রতীক?
উত্তর: নতুন দিনের সূচনা ও মুক্তির প্রতীক

২৫। কবিতায় ‘রাত্রি’ কিসের প্রতীক?
উত্তর: দুঃখ, কষ্ট ও সংগ্রামের প্রতীক

২৬। রানারের জীবন কিসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?
উত্তর: অজানা পথের যাত্রীর সঙ্গে

২৭। রানার কীভাবে দুঃখের চিঠি বহন করে?
উত্তর: নিরবভাবে

২৮। রানারের দুঃখ কিসে ঢাকা পড়ে?
উত্তর: রাতের অন্ধকারে

২৯। রানারকে কী নিয়ে ছুটতে বলা হয়েছে?
উত্তর: শপথের চিঠি

৩০। ‘অগ্রগতির মেলে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: নতুন দিনের বার্তা

৩১। রানারকে কী করতে বলা হয়েছে?
উত্তর: দুর্বার গতিতে এগিয়ে যেতে

৩২। কবিতায় রানার কোন নতুন বার্তা আনতে চায়?
উত্তর: মুক্তি ও পরিবর্তনের বার্তা

৩৩। রানার কখন ছুটছে?
উত্তর: রাতে

৩৪। রানার কী বহন করছে?
উত্তর: খবরের বোঝা

৩৫। রানার কোথা থেকে কোথায় ছুটছে?
উত্তর: দিগন্ত থেকে দিগন্তে

৩৬। রানারের পিছনে কী সরে যায়?
উত্তর: বন

৩৭। পূর্ব কোণ কী রঙের হয়?
উত্তর: লাল

৩৮। রাতের তারা কীভাবে তাকায়?
উত্তর: মিটমিট করে

৩৯। রানার কেমন করে যায়?
উত্তর: হরিণের মতো

৪০। রানার কোথায় পৌঁছাবে?
উত্তর: শহরে

৪১। কখন পৌঁছাবে?
উত্তর: ভোরে

৪২। রানারের হাতে কী আছে?
উত্তর: লণ্ঠন

৪৩। লণ্ঠন কী শব্দ করে?
উত্তর: ঠনঠন

৪৪। কারা আলো দেয়?
উত্তর: জোনাকিরা

৪৫। মাটি কীভাবে ভিজেছে?
উত্তর: ঘামে

৪৬। রানারের প্রিয়া কোথায় জাগে?
উত্তর: শয্যায়

৪৭। প্রিয়া কেমন রাত কাটায়?
উত্তর: বিনিদ্র

৪৮। রানারের ঘরে কী অভাব?
উত্তর: টাকার

৪৯। রানারের পিঠে কী বোঝা?
উত্তর: টাকার

রানার কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন


১। ‘দস্যুর ভয়, তারো চেয়ে ভয় কখন সূর্য ওঠে।’ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: রানারের পেশা অত্যন্ত কষ্টকর। রাতের আঁধারে পথে চলতে গিয়ে সে দস্যু বা ডাকাতের ভয়ের সম্মুখীন হয়। তবুও তার সবচেয়ে বড় ভয় হলো সময়মতো গন্তব্যে না পৌঁছানো। কারণ, সূর্য উঠলে অর্থাৎ সকাল হলে চিঠি পৌঁছাতে দেরি হবে। এতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ বিলম্বে পৌঁছাবে। তাই রানারের কাছে সময়ের চেয়ে বড় ভয় আর কিছু নেই। দস্যুর ভয় সাময়িক, কিন্তু সময়মতো কাজ না হওয়া তাকে মানসিকভাবে বেশি কষ্ট দেয়। কবি এই চরণে রানারের দায়িত্ববোধ ও সময়নিষ্ঠার কথা বোঝাতে চেয়েছেন।


২। “জীবনের সব রাত্রিকে ওরা কিনেছে অল্প দামে”- ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: রানারদের জীবনের রাতগুলো অন্যদের ঘুম ও আরামের জন্য উৎসর্গ করা হয়। তারা রাত জেগে দূর দূরান্তে সংবাদ পৌঁছে দেয়। অথচ এর বিনিময়ে তারা খুব সামান্য পারিশ্রমিক পায়। তাদের শ্রমের প্রকৃত মূল্য দেওয়া হয় না। কবি এই চরণে শ্রমিক শ্রেণির প্রতি সমাজের অবহেলা তুলে ধরেছেন। রানারের পরিশ্রম অনেক, কিন্তু প্রাপ্তি কম। তাই বলা হয়েছে, তাদের জীবনের রাতগুলো কিনে নেওয়া হয়েছে অল্প দামে।


৩। ‘তার জীবনের স্বপ্নের মতো পিছে সরে যায় বন’- কথাটি বলার কারণ কি?
উত্তর: রানার দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে তার চারপাশের দৃশ্যগুলো দ্রুত পিছিয়ে যেতে থাকে। ঠিক যেমন স্বপ্নের দৃশ্য চোখের সামনে এসে মিলিয়ে যায়, তেমনি বনও তার পেছনে চলে যায়। এই চিত্রটি একটি কল্পনাময় দৃশ্য তৈরি করে। এটি রানারের দৌড়ের গতি ও তার কঠিন জীবনের কল্পনাময় রূপকে তুলে ধরে। কবি এখানে রূপক অর্থে বনকে তার জীবনের গতির সঙ্গে মিলিয়ে দেখিয়েছেন।


৪। রানারের কাছে পৃথিবীটাকে কেন ‘কালো ধোঁয়া’ মনে হয়?
উত্তর: রানারের জীবন দুঃখ-কষ্টে পরিপূর্ণ। ঘরে অভাব, কাজের চাপ, বিশ্রামের সময় নেই—এসব মিলিয়ে তার জীবনে কোনো আনন্দ নেই। এ অবস্থায় তার কাছে পৃথিবী আনন্দের নয়, বরং হতাশার। অভাবের তাড়নায়, ক্লান্ত দেহে, রাতে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে তার মনে হয় পৃথিবীটা যেন অন্ধকারে ঢাকা। তাই সে পৃথিবীটাকে ‘কালো ধোঁয়া’র মতো দেখছে। এই চিত্রকল্পে কবি হতদরিদ্র মানুষের চোখে পৃথিবীর চেহারা ফুটিয়ে তুলেছেন।


৫। “এর দুঃখের চিঠি জানি কেউ পড়বে না কোনো দিনও”- বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: রানার যেসব চিঠি পৌঁছে দেয়, সেগুলো হয়তো অনেক আবেগে লেখা, হয়তো কারও সুখ কিংবা দুঃখের বার্তা। কিন্তু রানারের নিজের জীবনের দুঃখ কেউ জানে না, কেউ জানতে চায়ও না। তার নিজের দুঃখ, অভাব, ক্লান্তির কোনো পাঠক নেই। কবি বলতে চেয়েছেন, সমাজে যারা পরিশ্রম করে, তাদের কষ্ট কেউ বোঝে না। তারা শুধু অন্যের সুখ-দুঃখ পৌঁছে দেয়, কিন্তু নিজের কষ্ট চেপে রাখে।


৬। রানার প্রতিদিন কেন ছুটে চলে?
উত্তর: রানারের দায়িত্ব হলো মানুষের কাছে সংবাদ পৌঁছে দেওয়া। এই দায়িত্ব পালনের জন্য তাকে প্রতিদিন ছুটতে হয়। রাত-দিন, ঝড়-বৃষ্টি কিছুই তাকে থামাতে পারে না। সে জানে, বহু মানুষ অপেক্ষা করছে চিঠির আশায়। রানারের কাছে কাজই শ্রেষ্ঠ। তাই ক্লান্তি, ভয়, বাধা—সব পেরিয়ে সে প্রতিদিন ছুটে চলে। তার এই ছুটে চলা নতুন খবর আনার প্রতীক।


৭। ‘আলোর স্পর্শে কবে কেটে যাবে এই দুঃখের কাল?’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: এই চরণে কবি রানারের জীবনের দীর্ঘ দুঃখ ও কষ্টময় সময়ের অবসান কামনা করেছেন। এখানে ‘আলোর স্পর্শ’ সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে। ‘দুঃখের কাল’ বোঝায় রানারের দারিদ্র্য, ক্লান্তি, অবহেলা ও কষ্টের জীবন। কবি জানতে চেয়েছেন, কবে সেই দিন আসবে, যেদিন রানারও আনন্দ-স্বস্তি পাবে। সে আর কষ্ট করে রাতভর ছুটতে হবে না। আলোর মতো একটি নতুন সময় আসবে, যেটি সব অন্ধকার দূর করে দেবে। কবির এই প্রশ্ন আসলে সমাজের অবহেলিত শ্রমজীবী মানুষের জন্য এক আশা প্রকাশ।


৮। ‘এ রানার দুর্বার দুর্জয়’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: এখানে রানারকে এক অদম্য শক্তির প্রতীক হিসেবে দেখানো হয়েছে। ‘দুর্বার’ মানে যাকে থামানো যায় না, আর ‘দুর্জয়’ মানে যাকে জয় করা যায় না। রানার সমস্ত বাধা, ক্লান্তি, ভয়, অভাব—সবকিছু উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে চলে। তার গন্তব্যে পৌঁছানোই তার একমাত্র লক্ষ্য। তাকে কোনো প্রতিকূলতাই থামাতে পারে না। তাই রানার শুধু একজন ডাক হরকরা নয়, সে এক সংগ্রামী মানুষ। এই চরণের মাধ্যমে কবি তার অদম্য মানসিক শক্তি ও সংগ্রামের প্রশংসা করেছেন।


৯। ‘তবু এই টাকাকে যাবে না ছোঁয়া’—কেন?
উত্তর: রানার পিঠে টাকা ভর্তি চিঠির ব্যাগ নিয়ে চলে, অনেক সময় ব্যাংকের নথিপত্র বা মূল্যবান জিনিসও বহন করে। কিন্তু সে কখনও সেই টাকায় হাত দেয় না। কারণ তার কাজের প্রতি সততা ও দায়িত্ববোধ অত্যন্ত দৃঢ়। সমাজ তার উপর ভরসা করে, আর সেই ভরসা সে কখনও ভাঙে না। নিজের অভাব থাকলেও সে কখনও অন্যের সম্পদে হাত দেয় না। এই চরণে রানারের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও বিশ্বাসযোগ্যতাকে তুলে ধরা হয়েছে।


১০। ‘শপথের চিঠি’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘শপথের চিঠি’ একটি প্রতীক। এটি বোঝায় একটি নতুন যুগের বার্তা, যেখানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ থাকবে, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম চলবে। এই শপথের চিঠি হলো পরিবর্তনের বার্তা, সমাজ বদলানোর অঙ্গীকার। কবি রানারকে আহ্বান করেছেন এই বার্তা পৌঁছে দিতে। যেন মানুষ জেগে উঠে নতুন দিনের সূচনা করে। এই চিঠি শুধু ব্যক্তি বার্তা নয়, এটি একটি সামাজিক বিপ্লবের প্রতীক।


১১। ‘এর জীবনের দুঃখ কেবল জানবে পথের তৃণ’—চরণটির ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: রানারের জীবনে অনেক দুঃখ, ক্লান্তি, অভাব থাকলেও তা কেউ জানে না বা বোঝে না। সে পথে পথে দৌড়ায়, আর সেই পথের ঘাস বা তৃণই শুধু তার ক্লান্তির সাক্ষী থাকে। মানুষ শুধু তার পৌঁছে দেওয়া চিঠির জন্য অপেক্ষা করে, কিন্তু তার কষ্টের খোঁজ রাখে না। কবি এখানে বলতে চেয়েছেন, শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট কেউ অনুভব করে না। তারা সমাজের প্রয়োজন মেটায়, কিন্তু নিজে অবহেলিত থাকে।


১২। ‘এর কথা ঢাকা পড়ে থাকবেই কালো রাত্রির খামে’—কথাটি দিয়ে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: এই চরণে রানারের জীবনের না বলা কথাগুলোকে কবি ‘কালো রাত্রির খামে’ ঢেকে রাখার সঙ্গে তুলনা করেছেন। রানারের জীবন যেমন কষ্টে ভরা, তেমনি সে তার দুঃখ কারও সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারে না। তার কষ্ট, তার অনুভব সব অন্ধকারে চাপা পড়ে যায়। ঠিক যেমন কোনো অজানা চিঠি পড়ে থাকে খামের ভেতর, তেমনি রানারের জীবনও অনুচ্চারিত থাকে। সমাজ শুধু তার কাজ দেখে, তার মন বোঝে না।


১৩। কেন রানার সব সময় দুঃখের বোঝা বয়ে চলে?

উত্তর: রানার দুঃখের বোঝা বয়ে চলে কারণ তার কাজই হলো মানুষের সুখ-দুঃখের খবর পৌঁছানো, যা তার পেশার একটি বড় অংশ। এই সংবাদে কখনও আনন্দ থাকে, কখনও দুঃখ। রানারের জন্য নিজের কষ্ট বা অবস্থা গুরুত্বপূর্ণ নয়, তার দায়িত্ব হলো সেই খবর যথাসময়ে পৌঁছে দেওয়া। তাকে চিরকাল খাটতে হয়, তার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হল মানুষকে তাদের প্রিয়জনদের খবর পৌঁছে দেওয়া, এতে যে ক্লান্তি বা দুঃখ তাকে সহ্য করতে হয়, তা তার জীবনের অংশ হয়ে গেছে।


১৪। কিভাবে রানারের জীবন মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ?

উত্তর: রানারের জীবন মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ তার কাজটি সমাজের জন্য অপরিহার্য। রানার কখনও থামতে পারে না, তাকে সব সময় চিঠি বা সংবাদ পৌঁছে দিতে হয়। তার জীবনের মূল লক্ষ্য হলো অন্যদের দুঃখ-সুখ জানানো এবং তাদের সঙ্গে সংযোগ রাখা। রানার যদি তার দায়িত্ব ঠিকমতো পালন না করত, তবে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ হতে পারত এবং অনেক জরুরি খবর পৌঁছানোর সুযোগ পেত না। তাই রানারের জীবন একটি মানবিক মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করে।


১৫। কবি রানারের কাজের প্রতি এমন আগ্রহ দেখিয়েছেন কেন ?

উত্তর: কবি রানারের কাজের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন কারণ তিনি জানেন যে এই কাজটির মাধ্যমে মানুষের জীবনে একটা পরিবর্তন আনা সম্ভব। রানারের কাজ শুধু দৈনন্দিন দায়িত্ব পালন নয়, এটি সমাজের মধ্যে সংযোগের একটি মাধ্যম। কবি রানারের দুর্দমনীয় মনোভাবকে প্রশংসা করেছেন, কারণ রানার জানে যে তার কাজ একটি বড় দায়িত্ব, যা না করলেই সমাজের গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো সময়মতো পৌঁছানো সম্ভব হবে না। তাই রানারের কাজের প্রতি কবির এই আগ্রহ স্বাভাবিক।


১৬। কিভাবে রানারের জীবন সংগ্রামী এবং সাহসী?

উত্তর: রানারের জীবন সংগ্রামী এবং সাহসী, কারণ তাকে অবিরাম পথ পাড়ি দিতে হয় নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও। তার কাজের মধ্যে ভয় বা অক্ষমতা জায়গা পায় না, সে যেকোনো পরিস্থিতিতেই তার দায়িত্ব পালন করে। সে জানে যে তাকে ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করতে হবে, এবং তার এই কাজের মাধ্যমে মানুষের জীবনে আলো ছড়িয়ে দিতে হবে। রানার কখনো নিজের ব্যক্তিগত দুঃখ বা কষ্টের কথা ভাবেন না, বরং সবসময় সামনে এগিয়ে যায়। সুতরাং, রানারের জীবন একটি অদম্য সংগ্রামের প্রতীক, যা তার দুঃখ এবং ক্লান্তির পরেও থেমে যায় না।


১৭। রানারের জীবনে কোনো দিন বিশ্রাম নেই কেন?

উত্তর: রানারের জীবনে কোনো দিন বিশ্রাম নেই কারণ তার কাজের সত্ত্বায় সে কখনো থামতে পারে না। তার দায়িত্ব হলো প্রিয়জনদের কাছে চিঠি পৌঁছানো, যা কখনো থামানোর মতো কাজ নয়। কোনো দুঃখ, ভয় বা বাধা তাকে থামাতে পারে না। রাত দিন তাকে চলতেই হয়, কারণ তার কাজের গুরুত্ব সমাজে অনেক বড়। রানারের জীবনে বিশ্রাম নেই, কারণ তার দায়িত্ব তাকে যে পথ অনুসরণ করতে বলে, তা হল তার কর্মের প্রতি একনিষ্ঠ থাকা।


১৮। রানারের কাজে সমাজের অগ্রগতি ও পরিবর্তন কিভাবে সম্ভব?

উত্তর: রানারের কাজে অগ্রগতি এবং পরিবর্তন সম্ভব কারণ তার কাজের মাধ্যমে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ খবর দ্রুত পৌঁছানো যায়। রানার সব সময় নতুন খবর আনে, যা সমাজে সচেতনতা এবং অগ্রগতির সঞ্চার করতে পারে। তার কর্মে অবিরত পরিবর্তন এবং উন্নতি ঘটে কারণ সে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে এবং সঠিক সময়ে সঠিক সংবাদ পৌঁছাচ্ছে। রানারের কাজের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে এক ধরনের সামগ্রিক সচেতনতা তৈরি হয়, যার মাধ্যমে সমাজের অগ্রগতি এবং উন্নতি সম্ভব।


১৯। রানারকে কেন ‘দুর্দম’ হিসেবে বলা হয়েছে?

উত্তর: রানারকে ‘দুর্দম’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে কারণ তার মনোবল এবং সংকল্প অপরিসীম। যেকোনো প্রতিবন্ধকতা বা দুর্দশা তাকে তার পথে থামাতে পারে না। সে সর্বদা অদম্য শক্তি নিয়ে তার দায়িত্ব পালন করে। তার কাজের কোনো ক্লান্তি বা বাধা নেই, সে শুধুমাত্র আগের দিকে এগিয়ে চলে। রানার জানে যে তার কাজ কখনো শেষ হবে না, তবে তাকে তার পথ ঠিকমতো অনুসরণ করতে হবে। তার এই দুর্দমনীয় মনোভাব কবিতায় তুলে ধরেছেন, যাতে এই সংগ্রামী চরিত্রের মধ্য দিয়ে সমাজে প্রেরণা আসে।


২০। রানারের দুঃখের কথা শহর ও গ্রামে পৌঁছায় না কেন?

উত্তর: রানারের দুঃখের কথা শহর ও গ্রামে পৌঁছায় না কারণ তার কাজের সঙ্গী হচ্ছে মানুষের সুখ-দুঃখের সংবাদ পৌঁছানো, কিন্তু তার নিজস্ব দুঃখ কেউ জানে না। রানারের জীবনের সমস্ত দুঃখ, কষ্ট এবং অভ্যন্তরীণ সংগ্রাম একেবারে গোপন থাকে। তাকে যেন সবসময় অন্যদের খবর পৌঁছাতে হয়, কিন্তু নিজের কষ্ট প্রকাশের কোনো সুযোগ বা সময় নেই। তার দুঃখের কথা কখনো উচ্চারিত হয় না এবং তা আকাশের মতো আড়াল হয়ে যায়।


২১। রানার তার কাজের মাধ্যমে কিভাবে সমাজের পরিবর্তনে অবদান রাখে?

উত্তর: রানার তার কাজের মাধ্যমে সমাজের পরিবর্তনে অবদান রাখে কারণ তার সংবাদ এবং খবর পৌঁছানোর মাধ্যমে সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি হয়। রানারের কাজ শুধু একটি পেশা নয়, এটি মানুষের জীবনকে সংযোগ করে এবং সমাজের মাঝে এক ধরনের অগ্রগতির সঞ্চার করে। যখন রানার একটি চিঠি বা সংবাদ নিয়ে পৌঁছায়, তা সমাজের বিভিন্ন মানুষের মধ্যে একটি নতুন দৃষ্টি এবং ধারণার জন্ম দেয়। তার কাজের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সহানুভূতি, সম্পর্ক এবং মানবিক মূল্যবোধ বৃদ্ধি পায়, যা সমাজের উন্নতিতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুনঃ বোশেখ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর

Related Posts

Leave a Comment