বৃষ্টি কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর

ফররুখ আহমদের “বৃষ্টি” কবিতাটি প্রকৃতির সাথে মানুষের আত্মিক সম্পর্ককে উপস্থাপন করেছে। দীর্ঘ খরার পর আসা বৃষ্টিকে কবি এক আশীর্বাদ হিসেবে দেখেছেন, যা শুধু প্রকৃতিকেই সজীব করে তোলে না, মানুষের মনকেও স্পর্শ করে। এই পোস্টে বৃষ্টি কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর লিখে দিলাম।

বৃষ্টি কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন

১। ‘বৃষ্টি’ কবিতার কবি কে?
উত্তর: ফররুখ আহমেদ।

২। ‘বৃষ্টি’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত?
উত্তর: মুহূর্তের কবিতা।

৩। ফররুখ আহমদ কবে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: ১৯১৮ সালের ১০ই জুন।

৪। ফররুখ আহমদের জন্মস্থান কোথায়?
উত্তর: মাগুরা জেলার মাঝআইল গ্রাম।

৫। ফররুখ আহমদ কোন কলেজ থেকে আই.এ. পাশ করেন?
উত্তর: কলকাতা রিপন কলেজ।

৬। ফররুখ আহমদ কোন কলেজে দর্শনে ও ইংরেজিতে অনার্স পড়েন?
উত্তর: কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ।

৭। ফররুখ আহমদ কোন পেশায় দীর্ঘ সময় যুক্ত ছিলেন?
উত্তর: ঢাকা বেতারে স্টাফ রাইটার হিসেবে।

৮। ফররুখ আহমদের প্রথম কাব্যগ্রন্থ কোনটি?
উত্তর: সাত সাগরের মাঝি।ড

৯। ‘নৌফেল ও হাতেম’ কার রচনা?
উত্তর: ফররুখ আহমদ।

১০। ফররুখ আহমদ কখন মারা যান?
উত্তর: ১৯৭৪ সালের ১৯শে অক্টোবর।

১১। ফররুখ আহমদকে কী ধরনের কবি বলা হয়?
উত্তর: ইসলামি ভাবধারার কবি।

১২। বৃষ্টি আসার প্রতীক্ষা কতদিনের?
উত্তর: বহু প্রতীক্ষিত।

১৩। বৃষ্টি কোথায় এসেছে?
উত্তর: পদ্মা-মেঘনার দুপাশের আবাদি গ্রামে।

১৪। বৃষ্টি কোন দিক থেকে এসেছে?
উত্তর: পূবের হাওয়ায়।

১৫। বৃষ্টির আগমনে আকাশ কেমন হয়েছে?
উত্তর: বিদগ্ধ।

১৬। মাঠ কীভাবে ঢেকে যায়?
উত্তর: কাজল ছায়ায়।

১৭। বিদ্যুৎকে কী উপমায় বর্ণনা করা হয়েছে?
উত্তর: রূপসী পরী।

১৮। বিদ্যুৎ কোথায় সওয়ার হয়েছে?
উত্তর: মেঘে মেঘে।

১৯। বৃষ্টির দিনে অরণ্যের কী প্রতিক্রিয়া হয়?
উত্তর: কেয়া গাছ শিহরায়।

২০। ধানক্ষেত বৃষ্টির কী কামনা করে?
উত্তর: তার স্পর্শ পেতে চায়।

২১। নদীর ফাটলে কী সৃষ্টি হয়?
উত্তর: বন্যা ও পূর্ণ প্রাণের জোয়ার।

২২। বৃদ্ধ ভিখারির হাতের সাথে কী তুলনা করা হয়েছে?
উত্তর: রুক্ষ মাঠের সাথে।

২৩। রুক্ষ মাঠ কী শুনতে চায়?
উত্তর: বর্ষণের সুর।

২৪। বৃষ্টি আসার ফলে কী জেগে ওঠে?
উত্তর: তৃষিত বন ও তৃষাতুর মন।

২৫। তৃষাতুর মন কী করতে চায়?
উত্তর: বহু পথ পাড়ি দিতে চায়।

২৬। বৃষ্টি কবিতায় কোন নদীগুলোর নাম আছে?
উত্তর: পদ্মা ও মেঘনা।

২৭। কোন ধানক্ষেত বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকে?
উত্তর: রৌদ্রে-দগ্ধ ধানক্ষেত।

২৮। ‘বৃষ্টি’ কবিতায় কোন ঋতুর প্রভাব দেখা যায়?
উত্তর: বর্ষাকাল।

২৯। বর্ষার মেঘকে কীভাবে চিত্রিত করা হয়েছে?
উত্তর: বিষণ্ণ ও মেদুর।

৩০। কবিতায় ‘অরণ্যের কেয়া’ কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়?
উত্তর: শিহরিত হয়।

৩১। কবিতার শুরুর লাইন কী?
উত্তর: “বৃষ্টি এলো… বহু প্রতীক্ষিত বৃষ্টি”

৩২। মাঠ কীসে ঢেকে গেল?
উত্তর: কাজল ছায়ায়

৩৩। পরী কীসে সওয়ার হয়েছে?
উত্তর: মেঘে মেঘে

৩৪। দিগন্তে কী দেখা যাচ্ছে?
উত্তর: অপরূপ আভা

৩৫। অরণ্যের কোন ফুল শিহরায়?
উত্তর: কেয়া

৩৬। ধানক্ষেত কী পেতে চায়?
উত্তর: বৃষ্টির স্পর্শ

৩৭। নদীর ফাটলে কী আনে?
উত্তর: বন্যা

৩৮। বন্যা কী আনে?
উত্তর: পূর্ণ প্রাণের জোয়ার

৩৯। রুক্ষ মাঠ কী শোনে?
উত্তর: বর্ষণের সুর

৪০। “তৃষিত বন” বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: পানির জন্য কাতর বন

৪১। কবি কোথায় পাড়ি দিতে চান?
উত্তর: বহু পথ

৪২। “বিস্মৃত দিন” কোথায় পড়ে আছে?
উত্তর: নিঃসঙ্গ নির্জনে

৪৩। মেঘের অবস্থা কেমন?
উত্তর: বিষণ্ণ মেদুর

৪৪। কবিতায় কোন গাছের নাম এসেছে?
উত্তর: কেয়া ফুলের গাছ

৪৫। “কাজল ছায়া” বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: ঘন মেঘের ছায়া

৪৬। ফররুখ আহমদ কী ধরনের কবি?
উত্তর: ইসলামী ভাবধারার আধুনিক কবি

৪৭। কবিতায় মানুষের কোন আবেগ ফুটে উঠেছে?
উত্তর: বৃষ্টির জন্য ব্যাকুলতা

৪৮। “তৃষাতপ্ত মন” বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: বৃষ্টির জন্য কাতর মন

৪৯। “মেদুর” শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: মন্থর বা ভারাক্রান্ত

বৃষ্টি কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন

১। রৌদ্র-দগ্ধ ধানক্ষেত আজ বৃষ্টির স্পর্শ পেতে চায় কেন?

বৃষ্টি প্রকৃতির জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হলে মাটি শুকিয়ে যায়, ফসলের ক্ষতি হয় এবং জমির উর্বরতা কমে যায়। কবিতায় বলা হয়েছে, “রৌদ্র-দগ্ধ ধানক্ষেত” অর্থাৎ খরার তাপে পুড়ে যাওয়া ধানক্ষেত এখন বৃষ্টির স্পর্শ পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে। বৃষ্টি হলে শুকিয়ে যাওয়া মাটি আবার প্রাণ ফিরে পাবে, নদীতে পানি বাড়বে, গাছপালা সতেজ হবে এবং প্রকৃতির সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। তাই ধানক্ষেত বৃষ্টির পরশ পেতে চায়, যেন আবার সবুজে ভরে ওঠে, যেন তার মৃত্যু হয় না বরং নতুন জীবন লাভ করে।


২। বৃষ্টিকে ‘বহু প্রতীক্ষিত’ বলা হয়েছে কেন?

ফররুখ আহমেদের ‘বৃষ্টি’ কবিতায় দেখা যায়, দীর্ঘ খরার পর বৃষ্টি এসেছে, যা ছিল বহু মানুষের অপেক্ষার বিষয়। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হলে নদী-নালা শুকিয়ে যায়, গাছপালা মরে যায়, কৃষকের ফসল ঝরে পড়ে এবং মানুষসহ সব জীবজন্তু কষ্ট পায়। কবিতায় বলা হয়েছে, “বৃষ্টি এলো… বহু প্রতীক্ষিত বৃষ্টি”, অর্থাৎ মানুষ ও প্রকৃতি দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছিল। প্রচণ্ড গরম, খরার কষ্ট, ফসলের মরা অবস্থা দেখে মানুষ বৃষ্টির জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল। সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বৃষ্টি এসেছে, তাই এটি “বহু প্রতীক্ষিত”।


৩। ‘বৃষ্টি’ কবিতায় ‘বিষণ্ণ মেদুর’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

“বিষণ্ণ মেদুর” বলতে প্রকৃতির এক ধরনের শীতল, কোমল, ভাবগম্ভীর সৌন্দর্য বোঝানো হয়েছে। দীর্ঘ খরার পর বৃষ্টি আসায় প্রকৃতি যেমন সজীব হয়ে ওঠে, তেমনি তার মধ্যে এক ধরনের ভাবপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। যখন বর্ষার জল মাঠে, গাছে, নদীতে পড়ে, তখন তা প্রশান্তিময় মনে হয়, কিন্তু সেই প্রশান্তির মধ্যেও এক ধরনের গভীর অনুভূতি থাকে। কবি এখানে প্রকৃতির সৌন্দর্যকে আবেগপূর্ণ ও কোমল রূপে দেখিয়েছেন। তাই “বিষণ্ণ মেদুর” বলতে বোঝানো হয়েছে এক ধরণের স্নিগ্ধতা, কোমলতা এবং ভাবগম্ভীর প্রকৃতির পরিবেশ।


৪। ‘বৃষ্টি’ কবিতায় আকাশকে ‘বিদগ্ধ আকাশ’ বলা হয়েছে কেন?

“বিদগ্ধ” শব্দের অর্থ হলো ক্লান্ত, দগ্ধ বা পোড়া। কবিতায় কবি বলেছেন, “বিদগ্ধ আকাশ”, যার অর্থ হলো দীর্ঘ খরার পর আকাশ যেন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। যখন দীর্ঘদিন বৃষ্টি হয় না, তখন আকাশও রুক্ষ, গরম ও মেঘহীন হয়ে ওঠে। খরার কারণে আকাশ শুকনো, তপ্ত ও আগুনের মতো মনে হয়। এই অবস্থায় আকাশও যেন বিদগ্ধ বা পোড়া হয়ে গেছে, কারণ সে অনেক দিন ধরে বর্ষণ করতে পারেনি। বৃষ্টির অভাবে আকাশ যেমন ক্লান্ত হয়ে উঠেছে, তেমনি মানুষও তার আশায় রয়েছে। তাই কবি আকাশকে “বিদগ্ধ” বলে বর্ণনা করেছেন।


৫। ‘বিদ্যুৎ-রূপসী পরী’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

“বিদ্যুৎ-রূপসী পরী” বলতে কবি বিদ্যুৎ চমকানোকে সুন্দরী পরীর সাথে তুলনা করেছেন। এটি এক ধরনের লোকজ উপমা, যেখানে বিদ্যুতের আকস্মিক ঝলকানিকে এক রহস্যময় ও অলৌকিক রূপসী পরীর গতিবিধির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। পরী যেমন হঠাৎ আসে এবং চলে যায়, বিদ্যুতের চমকও ঠিক তেমনই। কবির কল্পনায় বিদ্যুৎ মেঘের মধ্যে এক সুন্দরী রূপসী পরী, যে মেঘের আকাশে ঘুরে বেড়ায় এবং পৃথিবীকে মুহূর্তের জন্য আলোকিত করে।


৬। ‘তৃষিত বনের সঙ্গে জেগে ওঠে তৃষাতপ্ত মন’- ব্যাখ্যা কর:

প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে এক গভীর সম্পর্ক রয়েছে। দীর্ঘ খরার পর যেমন বন শুকিয়ে যায়, গাছপালা পানির অভাবে মরে যায়, তেমনি মানুষের মনও এক ধরনের ক্লান্তি ও বিষাদে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। যখন বর্ষার প্রথম ফোঁটা পড়ে, তখন শুধু বনই নয়, মানুষের মনও সতেজ হয়ে ওঠে। গাছপালা যেমন নতুন প্রাণ ফিরে পায়, তেমনি মানুষের মনেও আনন্দের সঞ্চার হয়। এই কারণে কবি বলেছেন, “তৃষিত বনের সঙ্গে জেগে ওঠে তৃষাতপ্ত মন”। দীর্ঘ অপেক্ষার পর যখন বৃষ্টি নামে, তখন শুধু প্রকৃতি নয়, মানুষের হৃদয়ও উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে।


৭। বর্ষণমুখর দিন বলতে কী বোঝ?

“বর্ষণমুখর দিন” বলতে বোঝায় এমন একটি দিন, যখন সারাদিন ধরে বৃষ্টি হয় এবং চারপাশ জলভারে সিক্ত হয়ে পড়ে। এই দিনে আকাশ মেঘে ঢেকে থাকে, কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়, আবার কখনো মুষলধারে বৃষ্টি নামে। পথঘাট কাদায় ভরে যায়, গাছপালা সজীব হয়ে ওঠে এবং নদী-নালা পানিতে পূর্ণ হয়ে যায়। বর্ষণমুখর দিনে বাতাস স্নিগ্ধ হয় এবং চারদিকে এক শীতল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এ সময় মানুষের মনে আবেগ কাজ করে এবং প্রকৃতি এক নতুন রূপ ধারণ করে।


৮। বন্যাকে নদীর পূর্ণ প্রাণ বলা হয়েছে কেন?

নদী তখনই প্রাণবন্ত থাকে, যখন তার বুকে পর্যাপ্ত পানি থাকে। খরার সময় নদীর পানি শুকিয়ে যায়, তখন নদী তার স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ফেলে। বর্ষার সময় বন্যার কারণে নদীর পানির পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়, তখন নদী আবার তার স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরে পায়। সেই সময় নদীর ঢেউ নতুন শক্তি ও গতির সৃষ্টি করে, চারপাশ সবুজে ভরে ওঠে, মাটি উর্বর হয়। তাই কবি বলেছেন, “নদীর ফাটলে বন্যা আনে পূর্ণ প্রাণের জোয়ার”। বন্যার ফলে নদী তার হারানো শক্তি ফিরে পায় এবং প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।


৯। বনকে তৃষিত বলা হয়েছে কেন?

বন হলো প্রকৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা বৃষ্টি ও জলীয় বাষ্পের ওপর নির্ভরশীল। যখন দীর্ঘদিন বৃষ্টি হয় না, তখন গাছপালা শুকিয়ে যায়, পাতাগুলো বিবর্ণ হয়ে যায় এবং বন তার সতেজতা হারায়। খরার কারণে গাছের শাখা-প্রশাখা নুয়ে পড়ে, নদী-নালা শুকিয়ে যায় এবং চারপাশে এক ধরণের নির্জীব অবস্থা বিরাজ করে। তখন মনে হয় বন যেন পিপাসায় কাতর হয়ে বৃষ্টির অপেক্ষায় আছে। তাই কবি বনকে “তৃষিত” বলেছেন, কারণ তা বৃষ্টির জল পেলে আবার সতেজ ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে।


১০। অরণ্যের কেয়া কেন শিহরায়? ব্যাখ্যা কর।

“অরণ্যের কেয়া শিহরায়” বলতে বোঝানো হয়েছে যে বর্ষার আগমনে বনজ ফুল, বিশেষ করে কেয়া গাছ, আনন্দে ও সতেজতায় নড়ে ওঠে। কেয়া গাছ সাধারণত শুষ্ক আবহাওয়ায় কষ্ট পায়, কিন্তু বৃষ্টি আসলে তার মধ্যে প্রাণের সঞ্চার হয়। বৃষ্টির ফোঁটায় তার পাতায় ও ফুলে নতুন সজীবতা আসে, যা তাকে শিহরিত করে তোলে। শুধু কেয়া নয়, বনভূমির প্রতিটি গাছই বৃষ্টির ছোঁয়ায় নতুন করে প্রাণ ফিরে পায়। তাই কবি কেয়া ফুলের শিহরণকে বর্ষার সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছেন।


১১। নদীর ফাটলে বন্যা কীভাবে পূর্ণ প্রাণের জোয়ার আনে? ব্যাখ্যা কর।

নদী যদি শুকিয়ে ফাটল ধরে, তাহলে সেটি প্রাণহীন হয়ে পড়ে। দীর্ঘ খরার কারণে নদীর জল কমে গেলে তার আশেপাশের জমিগুলো উর্বরতা হারায়, জলজ প্রাণীরা কষ্ট পায়, কৃষিকাজ ব্যাহত হয়। কিন্তু বর্ষাকালে যখন নদীতে প্রচুর পানি আসে, তখন সেটি বন্যার সৃষ্টি করে। নদী তার পুরনো রূপ ফিরে পায়, আশপাশের মাটিকে উর্বর করে এবং ফসলের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। তাই বলা হয়, “নদীর ফাটলে বন্যা পূর্ণ প্রাণের জোয়ার আনে”, অর্থাৎ বন্যা নদীকে নতুন জীবন দেয়।


১২। বর্ষায় মানবমন বিষণ্ণ হয়ে পড়ে কেন?

বর্ষার দিনে প্রকৃতির সৌন্দর্য যেমন চোখকে প্রশান্তি দেয়, তেমনি মানুষের মনে কিছুটা বিষণ্ণতা সৃষ্টি হয়। বৃষ্টি যখন নামে, তখন আকাশ মেঘলা হয়ে ওঠে এবং চারপাশে এক শীতল পরিবেশ তৈরি হয়। অনেক সময় এই আবহাওয়ার মধ্যে মানুষের একাকীত্ব বা কিছু অপ্রাপ্তির অনুভূতি উন্মোচিত হয়। বর্ষাকালে যখন প্রকৃতির মেলবন্ধন ঘটে, তখন মানুষের মনে অতীতের কিছু দুঃখ বা শোক আবার জীবন্ত হয়ে ওঠে। তাই কবি বলেছেন, বর্ষায় মানবমন বিষণ্ণ হয়ে পড়ে।


১৩। ‘রগ ওঠা হাতের মতন’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

যখন একজন বৃদ্ধ বা দুর্বল মানুষের হাতের রগ ওঠে, তখন তা তার শারীরিক কষ্ট বা দুর্বলতার সংকেত হতে পারে। কিন্তু কবি এই তুলনা ব্যবহার করেছেন প্রকৃতির দৃষ্টিতে—যেমন খরা বা পানির অভাবে মাঠ শুকিয়ে যায়, তা দেখে প্রকৃতিরও দুর্বলতা বা ক্লান্তির অনুভূতি সৃষ্টি হয়। রগ ওঠা হাতের মতন বলতে এখানে বোঝানো হচ্ছে যে, প্রকৃতি, বিশেষ করে মাটি ও জমি, একদম শুষ্ক ও ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, যা বৃষ্টির আগমনে জাগ্রত হয়ে উঠবে।


১৪। রূপসী পরী মেঘে মেঘে হয়েছে সওয়ার- বুঝিয়ে লেখ।

কবিতায় “রূপসী পরী মেঘে মেঘে হয়েছে সওয়ার” একটি উপমা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে বিদ্যুৎ এবং মেঘকে সুন্দরী পরীর সাথে তুলনা করা হয়েছে। সাধারণত, বৃষ্টির পূর্বে আকাশে মেঘ জমে এবং মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকায়, যা এক অপার্থিব সৌন্দর্য সৃষ্টি করে। কবি তার এই সৌন্দর্যকে পরী হিসেবে দেখেছেন, যা আকাশে ঘুরে বেড়ায়। পরী সাধারণত সৌন্দর্যের প্রতীক, তাই বিদ্যুৎ-রূপসী পরী মেঘের মধ্যে যেন সওয়ার হয়ে উড়ছে এবং আকাশকে আলোকিত করছে।


১৫। ‘বৃষ্টি এলো… বহু প্রতীক্ষিত বৃষ্টি।’ ব্যাখ্যা কর।

কবিতায় “বৃষ্টি এলো… বহু প্রতীক্ষিত বৃষ্টি” বাক্যটি বৃষ্টির আগমনের জন্য দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষা ও তার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। দীর্ঘ খরার পর, যখন প্রকৃতি শুকিয়ে যাচ্ছে, তখন মানুষ, পশু-পাখি, এবং ফসলের জন্য বৃষ্টির আগমন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বৃষ্টির আগমনে মাটি, নদী, গাছপালা এবং মানুষের মন সবই নবজীবন লাভ করে। কবি এখানে বৃষ্টিকে “বহু প্রতীক্ষিত” বলেছেন, কারণ বৃষ্টি না আসা পর্যন্ত প্রকৃতির অমাবস্যা কাটতে থাকে এবং সকলেই বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছে।


আরও পড়ুনঃ ঝর্ণার গান কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর

Related Posts

Leave a Comment