“বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ” কবিতার অংশটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদবধ-কাব্যে’র ষষ্ঠ সর্গ থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে তাদের সম্পর্ক, দেশপ্রেম, বিশ্বাসঘাতকতা এবং নৈতিকতার প্রশ্ন আলোচিত হয়েছে। এই পোস্টে বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতার মূলভাব – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম।
Table of Contents
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতার মূলভাব
“বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ” অংশটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদবধ-কাব্য’ এর ষষ্ঠ সর্গ থেকে নেওয়া। এই কাব্যটি মোট নয়টি সর্গে বিভক্ত, যেখানে মেঘনাদের যুদ্ধের কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। এখানে দেখা যায়, রামচন্দ্র যখন স্বর্ণলঙ্কায় আক্রমণ করেন, তখন রাবণ এবং তার পুত্র মেঘনাদ অসহায় হয়ে পড়ে। মেঘনাদ, যিনি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যুদ্ধের আগে একটি যজ্ঞে অগ্নিদেবের পূজা করতে যান। কিন্তু লক্ষ্মণ সেই যজ্ঞাগারে ঢুকে মেঘনাদকে চ্যালেঞ্জ করেন। যখন মেঘনাদ লক্ষ্মণের উপস্থিতি টের পান, তখন তার মধ্যে বিভীষণের প্রতি ক্রোধ এবং ঘৃণা জন্ম নেয়। মেঘনাদের কাছে মাতৃভূমি, ভ্রাতৃত্ব ও জাতিসত্তার প্রতি ভালোবাসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সে বিশ্বাসঘাতকতা ও দেশদ্রোহিতার বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রকাশ করে। মাইকেল মধুসূদন দত্ত, যিনি উনিশ শতকের বাংলা নবজাগরণের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান, এই কাব্যে বাল্মীকি রামায়ণকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছেন। তিনি রাম-লক্ষ্মণকে হীনরূপে এবং রাবণ ও মেঘনাদকে মানবীয় গুণাবলির ধারক হিসেবে দেখিয়েছেন। এই অংশটি ১৪ মাত্রার অমিত্রাক্ষর ছন্দে লেখা হয়েছে। এখানে দুটি পঙ্ক্তির শেষে মিল নেই এবং চরণের মধ্যে ৮ + ৬ মাত্রার বিভাজন রয়েছে। এই কাব্যাংশের ছন্দে ভাব প্রকাশের প্রবাহ খুব ভালোভাবে বজায় রাখা হয়েছে, যা কাব্যের সৌন্দর্য ও গভীরতা বাড়ায়।
বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতার মূলভাব সহজ ভাষায়
“বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ” অংশটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের “মেঘনাদবধ-কাব্য” এর ষষ্ঠ সর্গ থেকে নেওয়া। এখানে মেঘনাদ, যিনি রাবণের পুত্র, তার পিতৃব্য বিভীষণের প্রতি অত্যন্ত হতাশ এবং ক্রুদ্ধ অবস্থায় কথা বলেন।
মেঘনাদ জানাচ্ছেন যে, তাঁর শত্রু লক্ষ্মণ, যিনি রামচন্দ্রের ভাই, নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ঢুকে পড়েছেন। মেঘনাদ বিভীষণের কাছে অভিযোগ করেন যে, এই কাজটি ঠিক হয়নি। তিনি ভাবছেন, বিভীষণ কিভাবে তাঁর সতী জননীকে রক্ষা করতে পারেন, যখন তাঁর শত্রুরা এমন অত্যাচার করছে। তিনি বিভীষণের প্রতি প্রশ্ন রাখেন, কেন তিনি রামচন্দ্রের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন, এবং তাকে দেশপ্রেমের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেন। এখানে মেঘনাদ তার মাতৃভূমির প্রতি প্রেম এবং দেশদ্রোহের বিরুদ্ধে তার ঘৃণা প্রকাশ করেছেন। তিনি বিভীষণেকে বলছেন, যে রামচন্দ্র বা লক্ষ্মণকে তিনি কখনো শ্রদ্ধা করবেন না। তাঁর কাছে রাবণ এবং তাঁর পরিবারের মান সঙ্গেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
মেঘনাদ মনে করেন, বিভীষণ নিজের জাতি, ভ্রাতৃত্ব এবং দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করছেন। সে বলে, যদি বিভীষণ ধর্মের প্রতি সম্মান রেখে থাকেন, তাহলে কেন তিনি রামের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন? এদিকে বিভীষণ তাকে বোঝাতে চান, যে তিনি রামচন্দ্রের দাস, এবং তিনি শত্রুর বিরুদ্ধে কিছু করতে পারবেন না। কিন্তু মেঘনাদ এতে খুবই রেগে যান এবং বিভীষণের দেশপ্রেম এবং বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে তীব্র কথা বলেন। মেঘনাদের এই দুঃখ ও ক্ষোভের মধ্যে মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা এবং রাক্ষসদের মধ্যে সংঘাতের একটি প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। তিনি আত্মপরিচয় ও জাতি সংহতির গুরুত্ব বোঝাতে চেষ্টা করছেন, এবং বিভীষণকে তার অবস্থান পরিবর্তনের জন্য তীব্র ভাষায় নির্দেশ দিচ্ছেন।
Related Posts
- রেইনকোট গল্পের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন উত্তর (সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন)- একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন উত্তর – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- মানব কল্যাণ মূলভাব বা মূল বিষয়বস্তু – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- আমি কিংবদন্তির কথা বলছি অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর -একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- রেইনকোট গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- বিদ্রোহী কবিতার মূলভাব সহজ ভাষায় -একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- তাহারেই পড়ে মনে কবিতার MCQ PDF সহ প্রশ্ন ও উত্তর
- সাম্যবাদী কবিতার মূলভাব, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি (MCQ)
- লালসালু উপন্যাসের মূলভাব PDF সহ সংক্ষেপে ও সহজ ভাষায়
- রেইনকোট গল্পের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা