প্রাণ কবিতার জ্ঞানমূলক ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘প্রাণ’ কবিতাটিতে কবি মানবজীবনের মাঝে বেঁচে থাকার আকুতি প্রকাশ করেছেন—মৃত্যু নয়, বরং সৌন্দর্য ও সংগ্রামের মিশেলে মানুষের সুখ-দুঃখের সঙ্গীত রচনা করে অমর হয়ে থাকতে চান। এই পোস্টে প্রাণ কবিতার জ্ঞানমূলক ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর লিখে দিলাম।

প্রাণ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন

১। ‘প্রাণ’ কবিতাটি কে লিখেছেন?
উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

২। ‘প্রাণ’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?
উত্তর: কড়ি ও কোমল কাব্যগ্রন্থ থেকে।

৩। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: ২৫শে বৈশাখ ১২৬৮ বঙ্গাব্দ (৭ই মে ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দ)।

৪। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে।

৫। রবীন্দ্রনাথের পিতার নাম কী?
উত্তর: মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর।

৬। রবীন্দ্রনাথের পিতামহের নাম কী?
উত্তর: প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর।

৭। রবীন্দ্রনাথ কত বছর বয়সে ‘বনফুল’ কাব্য প্রকাশ করেন?
উত্তর: মাত্র পনেরো বছর বয়সে।

৮। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন কবে?
উত্তর: ১৯১৩ সালে।

৯। কোন রচনার জন্য রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার পান?
উত্তর: ইংরেজি সংকলন Gitanjali: Song Offerings

১০। সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী প্রথম এশীয় কে?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

১১। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর: ২২শে শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ (৭ই আগস্ট ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দ)।

১২। ‘প্রাণ’ কবিতায় কবি কী হতে চান?
উত্তর : মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকতে চান

১৩। কবি কোথায় মরতে চান না?
উত্তর : সুন্দর ভুবনে

১৪। কবি কী চাইছেন?
উত্তর : মানবের মাঝে বেঁচে থাকতে

১৫। কবি কোন জিনিসগুলোর মধ্যে বাঁচতে চান?
উত্তর : সূর্যকরে, পুষ্পিত কাননে, মানবের হৃদয়ে

১৬। পৃথিবীতে কী চিরতরঙ্গিত?
উত্তর : প্রাণের খেলা

১৭। কবি কোথায় বাঁচতে চান?
উত্তর: মানবের মাঝে

১৮। “সূর্যকর” বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: সূর্যের আলো

১৯। “পুষ্পিত কানন” কী নির্দেশ করে?
উত্তর: ফুলে ভরা বাগান

২০। “ধরায় প্রাণের খেলা” বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: পৃথিবীতে জীবনের লীলা

২১। “বিরহ মিলন” দিয়ে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: জীবনের সুখ-দুঃখ

২২। কবি কীসের মাধ্যমে অমর হতে চান?
উত্তর: সংগীত রচনার মাধ্যমে

২৩। কবি কী রচনা করতে চান?
উত্তর: অমর আলয়

২৪। “অমর আলয়” বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: চিরস্থায়ী সৃষ্টি

২৫। কবি যদি অমর আলয় রচনা না করতে পারেন তবে কী চান?
উত্তর: মানুষের মাঝে স্থান পেতে

২৬। “তোমারা তুলিবে বলে” – এখানে ‘তোমরা’ কারা?
উত্তর: পরবর্তী প্রজন্ম

২৭। কবি কী ফুটাতে চান?
উত্তর: নব নব সংগীতের কুসুম

২৮। কবি তাঁর সৃষ্টিকে কীসের সাথে তুলনা করেছেন?
উত্তর: ফুলের সাথে

২৯। “হাসি মুখে নিয়ো ফুল” – এখানে ফুল কীসের প্রতীক?
উত্তর: কবির সৃষ্টির

৩০। ফুল শুকালে কী করতে বলেছেন?
উত্তর: ফেলে দিতে

৩১। কবিতাটিতে প্রকৃতির কোন কোন উপাদানের উল্লেখ আছে?
উত্তর: সূর্য, ফুল, কানন

৩২। “প্রাণ” কবিতায় কবি কীসের গান গাইতে চান?
উত্তর: মানব জীবনের গান

৩৩। কবিতাটির ছন্দ কী ধরনের?
উত্তর: অক্ষরবৃত্ত

৩৪। মানবজীবনে কী কী থাকে?
উত্তর : বিরহ, মিলন, হাসি, অশ্রু

৩৫। কবি কী রচনা করতে চান?
উত্তর : সংগীতের মাধ্যমে অমর আলয়

৩৬। কবি সংগীত কী দিয়ে গাঁথতে চান?
উত্তর : মানবের সুখ ও দুঃখ দিয়ে

৩৭। মানুষের মাঝে থাকার জন্য কবি কী চান?
উত্তর : তাদের তুলতে হবে সংগীতের ফুল

৩৮। কবি সকাল-বিকালে কী ফুটাতে চান?
উত্তর : নব নব সংগীতের কুসুম

৩৯। কবির সংগীত কেমন?
উত্তর : ফুলের মতো

৪০। কবি ফুল দেওয়ার পর কী চান?
উত্তর : হাসিমুখে গ্রহণ করতে

৪০। কবিতার মাধ্যমে কবি কী প্রকাশ করেছেন?
উত্তর : নিজের অমরত্বের আকাঙ্ক্ষা

৪১। কবি কোথায় তার অস্তিত্ব রাখতে চান?
উত্তর : মানুষের হৃদয়ে ও সংগীতে

৪২। কবির মতে, মানবজীবন কীসের দ্বারা পরিচালিত?
উত্তর : বিরহ, মিলন, সুখ ও দুঃখ

৪৩। কবি কেন মানবসমাজে থাকতে চান?
উত্তর : কারণ তিনি মানুষের আনন্দ ও বেদনার সঙ্গী হতে চান

৪৪। কবির সংগীত কীভাবে ফুটে ওঠে?
উত্তর : সকাল-বিকালে নব কুসুমের মতো

৪৫। কবি সংগীতের তুলনা কিসের সাথে করেছেন?
উত্তর : ফুলের সঙ্গে

৪৬। কবি সংগীতের মাধ্যমে কী সৃষ্টি করতে চান?
উত্তর : এক অমর আশ্রয়

৪৭। কবির মতে, কীসের মধ্যে জীবন রয়েছে?
উত্তর : প্রকৃতি ও মানবসমাজে

৪৮। কবি সংগীতের ফুল কাদের জন্য উৎসর্গ করেছেন?
উত্তর : মানবসমাজের জন্য

৪৯। কবি কীভাবে সংগীত সৃষ্টি করতে চান?
উত্তর : বিরহ ও মিলনের মাধ্যমে

৫০। ‘সূর্য করে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: সূর্যের কিরণে।

৫১। ‘চিরতরঙ্গিত’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: সর্বদা কল্লোলিত বা বহমান।

৫২। ‘লভি’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: লাভ করি।

৫৩। ‘অমর আলয়’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: অমর সৃষ্টি বা চিরস্থায়ী শিল্পকর্ম।

প্রাণ কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন

১। কবি কেন প্রকৃতির সৌন্দর্যের মধ্যে মরতে চান না?

উত্তর: রবীন্দ্রনাথ এই কবিতায় খুব সুন্দরভাবে বলেছেন যে তিনি শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্যে ডুবে মরতে চান না। তার ইচ্ছা মানুষদের মাঝে বেঁচে থাকার। কারণ প্রকৃতি যদিও সুন্দর, কিন্তু তা স্থায়ী নয়। সূর্যের আলো, ফুলের বাগান সবই একদিন শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পারলে, মানুষের ভালোবাসা পেলে সেটাই চিরকাল বেঁচে থাকার উপায়। কবি চান মানুষের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হতে, তাদের জীবনের গল্পে জায়গা পেতে। এটাই তাকে প্রকৃত অর্থে অমর করে রাখবে।


২। কবি ‘প্রাণের খেলা’ বলতে কী বুঝিয়েছেন?

উত্তর: কবি প্রাণের খেলাকে একটা নদীর মতো চিরন্তন প্রবাহ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। মানুষের জীবনেও যেমন সবসময় কিছু না কিছু ঘটছে, তেমনি প্রাণের এই খেলা কখনই থামে না। এতে আছে মিলন আর বিচ্ছেদের খেলা, আছে হাসি আর কান্নার পালাবদল। কবি এটাকে এমন এক সংগীতের সাথে তুলনা করেছেন যা কখনই শেষ হয় না। মানুষের জীবনের এই উত্থান-পতন, আনন্দ-বেদনার মধ্যেই তিনি প্রাণের সত্যিকারের রূপ দেখতে পান। এই খেলাই মানুষের জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলে।


৩। কবি কেন সংগীতকে অমরত্বের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন?

উত্তর: রবীন্দ্রনাথ সংগীতকে শিল্প ও সৃষ্টিশীলতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তিনি মনে করেন মানুষের সুখ-দুঃখ, আবেগ-অনুভূতিগুলো যদি সংগীতের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়, তাহলে সেগুলো চিরকাল বেঁচে থাকবে। সংগীত শুধু গান নয়, এটি সব ধরনের শিল্পকর্মের প্রতিনিধিত্ব করে। কবি বলতে চেয়েছেন, শিল্পের মাধ্যমেই একজন মানুষ মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকতে পারে। তাঁর বিখ্যাত পঙ্ক্তি “গাঁথিয়া সংগীত অমর আলয়” দিয়ে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে সৃষ্টিশীল কাজই মানুষের চিরস্থায়ী বাসস্থান তৈরি করে দেয়।


৪। কবি কীভাবে পরবর্তী প্রজন্মের সাথে নিজেকে যুক্ত করতে চান?

উত্তর: কবি চান নতুন প্রজন্মের সৃজনশীল কাজের মধ্যে দিয়ে তিনি বেঁচে থাকুন। তিনি বলেছেন, নতুন শিল্পীরা যেন তাঁকে স্মরণ করে নতুন নতুন গান রচনা করে, নতুন শিল্প সৃষ্টি করে। এভাবে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে শিল্পের যে ধারা বয়ে চলে, তার মধ্যেই কবি নিজেকে স্থান দিতে চান। তিনি আশা করেন নতুন শিল্পীরা তাঁর থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে আরও সুন্দর কাজ করবে। এটাই হবে তাঁর প্রকৃত অমরত্ব – যখন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সৃষ্টিকর্মে তাঁর প্রভাব থাকবে।


৫। কবি ‘ফুল’ দিয়ে কী বুঝাতে চেয়েছেন?

উত্তর: এই কবিতায় ফুল একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। ফুল দিয়ে কবি শিল্পকর্মকে বোঝাতে চেয়েছেন। যেমন ফুল খুব সুন্দর কিন্তু ক্ষণস্থায়ী, তেমনি শিল্পকর্মও হতে পারে। কবি বলেছেন, মানুষ যেন তাঁর সৃষ্টিকর্মকে ফুলের মতো গ্রহণ করে, উপভোগ করে। এমনকি যদি সেটা একদিন শুকিয়েও যায়, তবুও যে মুহূর্তে এটি ছিল সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। ফুলের এই রূপক দিয়ে কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে শিল্পের মূল্য তার স্থায়িত্বে নয়, তার সৌন্দর্য ও অর্থপূর্ণতায়।


৬। জীবনের ভালো-মন্দ দুটোকেই মেনে নিতে বলেছেন কেন?

উত্তর: কবি তাঁর কবিতায় খুব সুন্দরভাবে দেখিয়েছেন যে জীবনে শুধু সুখ নয়, দুঃখও আছে। “বিরহ মিলন কত হাসি অশ্রুময়” – এই চরণে তিনি জীবনের এই দ্বৈত সত্যকে প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে, একজন শিল্পীর কাজ হলো জীবনের এই সব দিককেই স্বীকার করে নেওয়া। শুধু সুখের গান নয়, দুঃখের গানও গাওয়া প্রয়োজন। কারণ সম্পূর্ণ জীবনটাই তো সুখ-দুঃখের মিশ্রণ। এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই সত্যিকারের শিল্প সৃষ্টি সম্ভব।


৭। ‘অমর আলয়’ বলতে কবি আসলে কী বুঝিয়েছেন?

উত্তর: অমর আলয় বলতে কবি এমন একটি স্থান বোঝাতে চেয়েছেন যা কখনই ধ্বংস হয় না। তাঁর মতে, শিল্পীর সৃষ্টিকর্মই হলো তার আসল বাসস্থান। যখন একজন শিল্পী ভালো কাজ তৈরি করেন, তখন সেই কাজ তাকে মৃত্যুর পরেও বাঁচিয়ে রাখে। এটি এক ধরনের আধ্যাত্মিক ধারণাও বটে, যেখানে শিল্পী তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে ঈশ্বরের সাথে একাত্মতা লাভ করেন। কবির জন্য এই আলয় নির্মাণই হলো জীবনের প্রধান লক্ষ্য, কারণ এটাই তাকে প্রকৃত অমরত্ব দান করে।


৮। কবির মতে, শিল্পের স্বভাব ক্ষণস্থায়ী-কেন?

উত্তর: কবি খুব সততার সাথে স্বীকার করেছেন যে সব শিল্পকর্ম চিরস্থায়ী নয়। “ফেলে দিয়ো ফুল, যদি সে ফুল শুকায়” – এই চরণে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে অনেক শিল্পকর্ম সময়ের সাথে হারিয়ে যেতে পারে। কিন্তু তবুও সেই শিল্পকর্ম সৃষ্টির মুহূর্তটি খুব মূল্যবান। কবির মতে, শিল্পের স্থায়িত্ব নয়, বরং তার সত্যিকারের অভিব্যক্তিই গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি যদি শিল্পকর্মটি অল্প সময়ের জন্যেই থাকে, তবুও তা সৃষ্টি করার আনন্দই আসল প্রাপ্তি।


৯। কবি কেন মানবিক আবেগকে শিল্পের মূল উপাদান হিসেবে ধরেছেন?

উত্তর: রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন মানুষের আবেগ-অনুভূতিই হলো শিল্পের আসল উপাদান। “মানবের সুখে দুঃখে গাঁথিয়া সংগীত” – এই পঙ্ক্তিতে তিনি স্পষ্ট করেছেন যে শিল্পীর কাজ হলো মানুষের জীবনের সুখ-দুঃখ, আশা-নিরাশাকে শিল্পের মাধ্যমে প্রকাশ করা। কবির দর্শন অনুযায়ী, প্রকৃত শিল্প তখনই তৈরি হয় যখন তা মানুষের হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসে। এই কারণেই তিনি বারবার মানবিক আবেগের কথা বলেছেন, কারণ এগুলোই শিল্পকে সত্যিকারের অর্থবহ করে তোলে।


১০। কবি মৃত্যুকে জয় করার কী উপায় দেখিয়েছেন?

উত্তর: কবি এই কবিতায় মৃত্যুকে জয় করার দুটি পথ দেখিয়েছেন। প্রথমত, তিনি বলেছেন যে সত্যিকারের শিল্পসৃষ্টির মাধ্যমে মানুষ মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকতে পারে। দ্বিতীয়ত, তিনি চান পরবর্তী প্রজন্মের স্মরণে তিনি বেঁচে থাকুন। অর্থাৎ নতুন শিল্পীরা যখন তাঁর থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নতুন কাজ করবে, তখনই তিনি প্রকৃতপক্ষে অমর হবেন। কবি বুঝতে পেরেছিলেন যে প্রকৃত অমরত্ব লাভ করতে হলে শিল্পের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে হবে। এটাই হলো মৃত্যুকে অতিক্রম করার একমাত্র সত্যিকারের উপায়।


১১। “মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে”- ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: কবি এই বাক্যে বলতে চেয়েছেন যে, তিনি মৃত্যুকে ভয় পান না, কিন্তু তিনি পৃথিবী ছেড়ে যেতে চান না। পৃথিবী তাঁর কাছে খুব সুন্দর, এবং তিনি এখানে বাঁচতে চান। এখানে মানুষের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, সবকিছু আছে যা তিনি নিজের সৃষ্টির মাধ্যমে বেঁচে থাকতে চান। তিনি পৃথিবীতে মানুষের মাঝে তার শিল্প সৃষ্টি করে তাদের হৃদয়ে জায়গা করতে চান।


১২। “মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই” কেন বলেছেন?
উত্তর: এখানে কবি মানুষের জীবনের ভেতর একটি স্থায়ী স্থান চাচ্ছেন। তিনি চাইছেন তার সৃষ্টির মধ্যে, তার লেখনীর মাধ্যমে মানুষের মনে তার নাম এবং কাজ চিরকাল বেঁচে থাকুক। মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, সবার মাঝে তার সৃষ্টির মাধ্যমে তিনি বাঁচতে চান। তিনি মানুষের মাঝে বসবাস করতে চান, কারণ মানুষের অনুভূতি ও জীবনের বৈচিত্র্য তাঁকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে।


১৩। কবি “এই সূর্যকরে এই পুষ্পিত কাননে” কেন বাঁচতে চান?
উত্তর: কবি সূর্যকরের এবং পুষ্পিত কাননের মধ্যে বাঁচতে চান কারণ তিনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে থাকতে চান। সূর্য এবং ফুল প্রকৃতির অমর দান, যা জীবনের সমৃদ্ধি এবং সৃষ্টির প্রতীক। কবি এভাবেই প্রকৃতির সাথে একাত্ম হতে চান, যেখানে তার সৃষ্টিকে প্রকৃতির মতো জীবন্ত এবং সুন্দর করে তুলতে পারেন।


১৪। “চিরতরঙ্গিত” শব্দটি দিয়ে কবি কি বুঝিয়েছেন?
উত্তর: “চিরতরঙ্গিত” শব্দটি কবি ব্যবহার করেছেন মানুষের জীবন এবং অনুভূতির গতিশীলতা এবং অস্থিরতা বোঝাতে। জীবন কখনো স্থির থাকে না, তা সবসময় পরিবর্তনশীল, যেমন সমুদ্রে তরঙ্গ সবসময় চলতে থাকে। কবি এই শব্দটির মাধ্যমে জীবনের অবিচ্ছেদ্য গতিশীলতা এবং প্রবাহের কথা বলেছেন। জীবনের সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না সবসময় চলতে থাকে, এবং এগুলোই আমাদের জীবনকে চিরকাল বেঁচে থাকার অনুভূতি দেয়।


১৫। “বিরহ মিলন কত হাসি অশ্রুময়” – ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: কবি জীবনের দুই বিপরীত দিক—বিরহ এবং মিলন—এর কথা বলেছেন। মানুষ তার জীবনে আনন্দ এবং বেদনা, হাসি এবং অশ্রু একসাথে অনুভব করে। একজন মানুষ যখন কিছু হারায়, তখন সে দুঃখ পায়, কিন্তু আবার মিলনের মুহূর্তে আনন্দও অনুভব করে। কবি এই বৈচিত্র্যপূর্ণ অনুভূতির মধ্যে থেকে তার সৃষ্টিকে বাঁচিয়ে রাখতে চান এবং মানুষের জীবনের প্রতিটি অনুভূতি তার রচনায় ফুটিয়ে তুলতে চান।


১৬। “নব নব সঙ্গীতের কুসুম ফুটাই” কেন বলা হয়েছে?
উত্তর: কবি নতুন নতুন সঙ্গীত তৈরি করতে চান, কারণ তিনি জীবনের প্রতি তার অনুভূতিকে প্রকাশ করতে চান। প্রতিনিয়ত নতুন কিছু সৃষ্টি করা, তার সৃষ্টির মধ্যে নতুনত্ব এবং সুন্দর কিছু যোগ করা—এটাই তার লক্ষ্য। “নব নব সঙ্গীতের কুসুম ফুটাই” এর মাধ্যমে কবি তার সৃষ্টিকে জীবন্ত এবং প্রাণবন্ত করতে চান, যেন তার সৃষ্টি মানুষের অনুভূতিকে স্পর্শ করে।


১৭। “হাসি মুখে নিয়ো ফুল, তার পরে হায়”– ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: এই বাক্যে কবি জীবনের অস্থিরতা এবং পরিবর্তনশীলতা তুলে ধরেছেন। ফুল যেমন এক সময় হাসি মুখে গ্রহণ করা হয়, তেমনই জীবনও এক সময় আনন্দের সময় কাটায়, কিন্তু পরে সে আনন্দ আর থাকে না। ফুল যখন শুকিয়ে যায়, তখন আর তা কেউ রাখে না, যেমন জীবনেও একসময় সুখ চলে যায়। কবি এভাবে জীবনের বাস্তবতা ও তার পরিবর্তনকে স্বীকার করেছেন।


১৮। “তোমরা তুলিবে বলে সকাল বিকাল” – ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: কবি এই বাক্যে মানুষের কর্ম এবং সৃষ্টির গুরুত্বকে তুলে ধরেছেন। পৃথিবীতে সবকিছুই মানুষের হাতে। সকাল-বিকালে তারা নতুন নতুন সঙ্গীত, নতুন নতুন সৃষ্টি তৈরি করে, যেন সেই সৃষ্টি মানুষের জীবনকে সুন্দর এবং প্রাণবন্ত করে তুলতে পারে। কবি তার সৃষ্টির মাধ্যমে এই পৃথিবীকে আরও সুন্দর ও অর্থপূর্ণ করতে চান।


১৯। “ফেলে দিয়ো ফুল, যদি সে ফুল শুকায়” – ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: এখানে কবি জীবনের পরিবর্তনশীলতা এবং ক্ষণস্থায়ীতা সম্পর্কে বলছেন। জীবন যেমন এক সময় ফুলের মতো সুন্দর থাকে, তেমনি তা একদিন শুকিয়ে যায়। জীবনের ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ সবকিছুই একদিন শেষ হয়ে যায়। কবি এই মাধ্যমে মানুষকে বুঝাতে চাইছেন যে, যা একসময় সুন্দর ছিল, তা একদিন চলে যায়, এবং সে কারণে জীবনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব হলো, সৃষ্টি এবং সৃষ্টির মধ্যে মানুষের স্থায়ী উপস্থিতি।


Related Posts

Leave a Comment