‘প্রবাস বন্ধু’ রচনাটি সৈয়দ মুজতবা আলীর আফগানিস্তান ভ্রমণের একটি অভিজ্ঞতার বর্ণনা। লেখক কাবুল শহরের কাছে খাজা মোল্লা গ্রামে বাসা নেন এবং সেখানেই আবদুর রহমান নামের এক দীর্ঘদেহী আফগান চাকর পান। এই পোস্টে প্রবাস বন্ধু গল্পের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর লিখে দিলাম।
Table of Contents
প্রবাস বন্ধু গল্পের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন
১। ‘প্রবাস বন্ধু’ গল্পের লেখক কে?
উত্তরঃ সৈয়দ মুজতবা আলী।
২। ‘প্রবাস বন্ধু’ গল্পেটি সৈয়দ মুজতবা আলীর কোন গ্রন্থের অংশ?
উত্তরঃ ‘দেশে বিদেশে গ্রন্থের পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ।
৩। সৈয়দ মুজতবা আলীর জন্ম সাল কী?
উত্তর: ১৩ই সেপ্টেম্বর, ১৯০৪।
৪।. সৈয়দ মুজতবা আলী কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: আসামভুক্ত শ্রীহট্টের করিমগঞ্জে।
৫। সৈয়দ মুজতবা আলী কবে বিশ্বভারতী থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন?
উত্তর: ১৯২৬ সালে।
৬। সৈয়দ মুজতবা আলী কখন ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন?
উত্তর: ১৯৩২ সালে।
৭। মিশরে সৈয়দ মুজতবা আলী কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন?
উত্তর: আল আজাহার বিশ্ববিদ্যালয়ে।
৮। বরোদা কলেজ কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: মহীশূরে।
৯। সৈয়দ মুজতবা আলী কোন কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন?
উত্তর: বগুড়ার আজিজুল হক কলেজে।
১০। কেন তাঁকে চাকরি ছাড়তে হয়?
উত্তর: পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে প্রবন্ধ লেখার অভিযোগে।
১১। পরে তিনি কোথায় রিডার নিযুক্ত হন?
উত্তর: বিশ্বভারতীতে।
১২। সৈয়দ মুজতবা আলী কবে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর: ১১ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৪ সালে।
১৩। লেখক কোথায় গিয়েছিলেন?
উত্তরঃ আফগানিস্তানের কাবুল শহরে।
১৪। লেখক কোন গ্রামে বাস করতেন?
উত্তরঃ খাজা মোল্লা গ্রামে।
১৫। লেখক কত টাকায় বাসা ভাড়া নেন?
উত্তরঃ মাসে চল্লিশ আফগানি টাকায়।
১৬। আবদুর রহমান কে ছিল?
উত্তরঃ লেখকের আফগান চাকর।
১৭। লেখক আবদুর রহমানকে কী নামে ডাকতেন?
উত্তরঃ হরফুন মৌলা।
১৮। ‘হরফুন মৌলা’ কথার অর্থ কী?
উত্তরঃ সব কাজ জানে এমন ব্যক্তি।
১৯। আবদুর রহমান দেখতে কেমন ছিল?
উত্তরঃ লম্বা, শক্তপোক্ত ও কড়া চেহারার।
২০। আবদুর রহমান কোন জেলার লোক?
উত্তরঃ খোস্ত জেলার।
২১। আবদুর রহমানের রান্না কেমন ছিল?
উত্তরঃ অপূর্ব ও সুস্বাদু।
২২। রান্নায় সে কী বেশি দিত?
উত্তরঃ ঘি।
২৩। আবদুর রহমানের কণ্ঠস্বর কেমন ছিল?
উত্তরঃ গম্ভীর ও জোরালো।
২৪। আবদুর রহমান লেখকের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করত?
উত্তরঃ ভদ্র ও যত্নশীল ব্যবহার করত।
২৫। সে লেখককে কী বলে সম্বোধন করত?
উত্তরঃ হুজুর।
২৬। লেখক চায়ে কী বেশি পছন্দ করতেন?
উত্তরঃ দুধ।
২৭। আবদুর রহমান কতটুকু আতিথেয় ছিল?
উত্তরঃ অত্যন্ত আন্তরিক ও উদার।
২৮। কাবুলের বিখ্যাত খাবার কী?
উত্তরঃ কাবুলি পোলাও।
২৯। আবদুর রহমান বরফ কীভাবে আনত?
উত্তরঃ পাহাড় থেকে কেটে এনে জমিয়ে রাখত।
৩০। ‘রুজ’ কী ধরনের বস্তু?
উত্তর: রুজ গাল রাঙানোর প্রসাধনী।
৩১। লেখক কোন সময় বেশি ঠান্ডা অনুভব করেন?
উত্তরঃ বরফ পড়ার দিনে।
৩২। আবদুর রহমান লেখকের জন্য কী রান্না করত?
উত্তরঃ আফগানি ও ভারতীয় নানা খাবার।
৩৩। লেখকের বাসায় অতিথি এলে আবদুর রহমান কী করত?
উত্তরঃ আন্তরিকভাবে আপ্যায়ন করত।
৩৪। আবদুর রহমান কোন কথায় খুশি হতো?
উত্তরঃ প্রশংসা পেলে।
৩৫। ‘পান্তুয়া’ কী ধরনের খাবার?
উত্তর: চিনির রসে ভেজানো, ঘিয়ে ভাজা রসগোল্লা জাতীয় মিষ্টি।
৩৬। আবদুর রহমান কী ধরনের পোশাক পরত?
উত্তরঃ পাগড়ি ও আফগানি পোশাক।
৩৭। আবদুর রহমান কোন ধর্মাবলম্বী ছিল?
উত্তরঃ মুসলমান।
৩৮। কাবুলের লোকজন কেমন ব্যবহার করত?
উত্তরঃ বন্ধুবৎসল ও অতিথিপরায়ণ।
৩৯। ‘বারকোশ’ কী?
উত্তর: কাঠের তৈরি কানা উঁচু বড় থালা।
৪০। লেখক কেন তাকে ‘হরফুন মৌলা’ বলেন?
উত্তরঃ সে সব ধরনের কাজ পারত।
৪১। আবদুর রহমান লেখকের সঙ্গে কোথায় পরিচিত হয়?
উত্তরঃ লেখক যখন গ্রামে ভাড়া বাসায় ওঠেন।
৪২। আবদুর রহমানের চাকরের পদবী কী ছিল?
উত্তর: ‘হরফুন-মৌলা’ বা ‘সকল কাজের কাজি’।
৪৩। ‘উত্তমার্ধ’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: স্ত্রী বা সহধর্মিণী।
৪৪। আবদুর রহমানের উচ্চতা কত ছিল?
উত্তর: ছয় ফুট চার ইঞ্চি।
৪৫। আবদুর রহমানের হাতের আঙুলগুলিকে কীসের সাথে তুলনা করা হয়েছে?
উত্তর: দুকাঁদি মর্তমান কলা।।
৪৬। আবদুর রহমানের গালের রং কেমন ছিল?
উত্তর: লাল, যেন কেউ থাবড়া মেরে দিয়েছে।
৪৭। কাবুলে বরফ কোথা থেকে আনা হত?
উত্তর: পাগমান পাহাড়ের নিচের গর্ত থেকে, যেখানে শীতকালে বরফ জমিয়ে রাখা হত।
৪৮। কাবুলে কাজের লোকের প্রধান কাজ কী ছিল?
উত্তর: মন্ত্রীর দপ্তরে ঝগড়া-বচসা করা।
৪৯। আবদুর রহমান কী কী রান্না জানত?
উত্তর: পোলাও, কোরমা, কাবাব, ফালুদা।
৫০। ফালুদা বানানোর জন্য বরফ কোথা থেকে আনা হত?
উত্তর: পাগমান পাহাড়ের গর্ত থেকে গাধায় চাপিয়ে।
৫১। লেখক প্রথম রাতে কী কী খাবার পেয়েছিলেন?
উত্তর: দুম্বার কোরমা, শামী কাবাব, কোফতা-পোলাও, মুরগি রোস্ট।
৫২। আবদুর রহমান আঙুর পরিবেশন করার সময় কী করত?
উত্তর: বরফের টুকরো দিয়ে ঘষে ঠান্ডা করত।
৫৩। ‘বপু’ ও ‘তনু’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: বপু মানে বড় দেহ, তনু মানে ক্ষীণ দেহ।
৫৪। আবদুর রহমান পূর্বে কী কাজ করত?
উত্তর: পল্টনে মেসের চার্জে ছিল।
৫৫। পানশির কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: উত্তর-আফগানিস্তানে, আবদুর রহমানের জন্মস্থান।
৫৬। ‘তাগদ’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: তিরস্কার।
৫৭। লেখক শীতকাল কোথায় কাটাতে চেয়েছিলেন?
উত্তর: পানশিরে, কিন্তু শুধু প্রাণ বাঁচানোর জন্য!
৫৮। লেখক আবদুর রহমানকে কীভাবে ডাকতেন?
উত্তর: “আগা আবদুর রহমান” বা “ভীমসেন”।
৫৯। লেখক কেন ভয় পেয়েছিলেন আবদুর রহমানকে নিয়ে?
উত্তর: সে যদি বিগড়ে যায়, তবে তার বিপদ হবে।
৬০। আবদুর রহমান কেন আখরোট ছাড়াচ্ছিল?
উত্তর: লেখক কম খাওয়ায় তার মন খারাপ ছিল।
৬১। আবদুর রহমানের পোশাক কী ছিল?
উত্তর: শিলওয়ার, কুর্তা, ওয়াসকিট।
৬২। ‘পুনরপি’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: পুনরায়।
৬৩। কাবুল নদীর জল কেমন ছিল?
উত্তর: বরফ-গলা জল, এত ঠান্ডা যে মুখে ব্যথা হত।
৬৪। আবদুর রহমানের চোখের বর্ণনা কী?
উত্তর: “চিনেমাটির ডাবরে দুটো পান্তুয়া ভাসছে”।
৬৫। কাবুলে রাত্রিবেলার জন্য কী প্রয়োজন হত?
উত্তর: তাগদ (সতর্কতা) ও হাতিয়ার।
৬৬। আবদুর রহমান কীভাবে বাজার থেকে জিনিসপত্র আনে?
উত্তর: নিজেই বিশাল বোঝা বহন করে।
৬৭। “কার গোয়াল, কে দেয় ধুয়ো”—বাক্যটির অর্থ কী?
উত্তর: কার সম্পদ, সে-ই তার দেখাশোনা করে।
৬৮। লেখক কাবুলে কীভাবে বাসায় ফিরতেন?
উত্তর: আড়াই মাইল রাস্তা ঠান্ডায় হেঁটে।
৬৯। ‘ও রভোয়া’ কোন ভাষার বাক্য?
উত্তর: ‘ও রভোয়া’ ফরাসি ভাষার বাক্য।
৭০। ‘ও রভোয়া’ এর অর্থ কী?
উত্তর: ‘ও রভোয়া’ এর অর্থ হলো “আবার দেখা হবে।”
৭১। ‘মর্তমান কলা’ কোথায় উৎপন্ন হয়?
উত্তর: মায়ানমারের মার্তাবান দ্বীপে।
প্রবাস বন্ধু গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১। আবদুর রহমান তার গোঁফ কামিয়ে ফেলার কথা বলেছিল কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ আবদুর রহমান লেখককে খুব ভালোবাসতেন ও শ্রদ্ধা করতেন। লেখক একদিন মজা করে বলেছিলেন যে আবদুর রহমানের গোঁফ খাওয়ার সময় খাবারের মধ্যে পড়ে যায়। কথাটি শুনে আবদুর রহমান দুঃখ পেয়ে গোঁফ কামিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি মনে করেছিলেন লেখকের অস্বস্তি যেন না হয়। এই ঘটনাটি তার সরল মন ও আন্তরিকতার পরিচয় দেয়। এজন্যই সে গোঁফ ফেলার কথা বলেছিল।
২। “কাবুলের হাওয়া তো হাওয়া নয়, আতসবাজির হক্কা”—কেন একথা বলা হয়েছে? বুঝিয়ে লেখ।
উত্তরঃ এই বাক্যে কাবুলের ঠাণ্ডা ও তীব্র হাওয়ার রূপকে বোঝানো হয়েছে। আফগানিস্তানের আবহাওয়া অত্যন্ত ঠাণ্ডা ও শুষ্ক। লেখক ঠাট্টার ছলে বলেছেন, এই হাওয়া যেন বাতাস নয়, বরং আতসবাজির মতো গায়ে ফুটে ওঠে। হাওয়া এত তীব্র যে শরীরে লেগেই জ্বালার অনুভব হয়। এর মাধ্যমে কাবুলের কঠিন পরিবেশ ও জলবায়ুর ছবি ফুটে উঠেছে। লেখকের ভাষার রসিকতা ও তুলনামূলক চিত্রকল্প এ বাক্যে দেখা যায়।
৩। আবদুর রহমানকে ‘নরদানব’ বলার কারণ কী? ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ আবদুর রহমান ছিলেন বিশালদেহী ও শক্তিশালী একজন মানুষ। তাঁর গায়ের রং, চেহারা ও দৈহিক গঠন অনেকটা ভয়ংকর ও প্রচণ্ড বলবান ব্যক্তির মতো ছিল। তবে ‘নরদানব’ শব্দটি এখানে ভয় দেখানোর জন্য নয়, বরং আদর ও মজা করে ব্যবহার করা হয়েছে। তার মন ছিল কোমল ও সহজ-সরল। বাহ্যিকভাবে কঠোর দেখালেও সে ছিল হৃদয়বান ও স্নেহশীল। লেখক তার বিশাল দেহের তুলনায় সরল হৃদয়ের বৈপরীত্য তুলে ধরেছেন।
৪। “কার গোয়াল, কে দেয় ধুয়ো” বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ এই প্রবাদটির মাধ্যমে লেখক বোঝাতে চেয়েছেন যে অন্যের দায়িত্ব বা কাজ কেউ সহজে করতে চায় না। আফগানিস্তানে কারও গৃহপালিত পশু পালনে কোনো ঝামেলা হলে অন্যরা তা এড়িয়ে চলে। অর্থাৎ নিজের কাজ কেউই অন্যের ঘাড়ে নিতে চায় না। এখানে আবদুর রহমান তার অঞ্চলের মানুষের আচরণ সম্পর্কে এই মন্তব্য করেছেন। এর দ্বারা বোঝা যায় যে সেখানে মানুষ নিজের কাজেই ব্যস্ত থাকে। এটা মানুষের আত্মনির্ভরতা ও দায়িত্ববোধের এক সামাজিক চিত্র।
৫। আফগানিস্তানে কোন ধরনের সংস্কার আছে? ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ আফগানিস্তানে ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে বেশ কিছু রক্ষণশীল সংস্কার দেখা যায়। পুরুষেরা গোঁফ ও দাড়ি রাখাকে মর্যাদার বিষয় বলে মনে করে। নারী-পুরুষের মেলামেশা সীমিত, নারীরা বাইরে খুব একটা দেখা যায় না। অতিথিকে সন্মান দেওয়া ও আপ্যায়ন করাকে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক দায়িত্ব মনে করা হয়। এছাড়া খাবার পরিবেশন, পোশাক-আশাক ও ব্যবহারেও ঐতিহ্যের ছাপ স্পষ্ট। এসব সংস্কার তাদের জীবনযাত্রাকে এক নির্দিষ্ট ছাঁচে গড়ে তুলেছে।
৬। লেখক আবদুর রহমানকে ‘হরফুন-মৌলা’ বলেছেন কেন?
উত্তরঃ ‘হরফুন-মৌলা’ শব্দের অর্থ সব কাজে পারদর্শী বা সবজান্তা ব্যক্তি। আবদুর রহমান রান্না করা, অতিথি আপ্যায়ন, পাহারা দেওয়া, এমনকি লেখকের ব্যক্তিগত কাজে সহযোগিতা—সবকিছুতেই দক্ষ ছিলেন। তিনি শুধু পাহারাদার নয়, একাধারে রাঁধুনি, পরিবেশক, দোভাষী এবং সঙ্গী ছিলেন। লেখক তার এই বহুমুখী দক্ষতা দেখে প্রশংসাসূচকভাবে ‘হরফুন-মৌলা’ বলেছেন। এতে আবদুর রহমানের উদার মন ও পরিশ্রমী স্বভাবেরও পরিচয় মেলে। সে সত্যিই একজন বিশ্বস্ত ও গুণী সহচর ছিল।
৭। “তোমার বপুটার সঙ্গে আমার তনুটা মিলিয়ে দেখো দিকিনি”—বলে লেখক কী বুঝিয়েছেন?
উত্তরঃ এই বাক্যে লেখক মজা করে আবদুর রহমানের বিশাল দেহের সঙ্গে নিজের ক্ষীণ শরীরের তুলনা করেছেন। ‘বপু’ মানে বড় দেহ আর ‘তনু’ মানে ছোট বা চিকন শরীর। লেখকের শরীর ছিল রোগাপাতলা, আর আবদুর রহমান ছিল নরদানবের মতো শক্তিশালী ও বিশাল। তাই লেখক বলতে চেয়েছেন, একজন বিশালদেহী মানুষের সঙ্গে একজন রোগা মানুষকে তুলনা করাটা যেন অসম্ভব। এতে লেখকের রসিকতা ও আত্মপরিচয়ের বোধ ফুটে উঠেছে। এই বাক্যটি আবদুর রহমানের শরীরের প্রতি লেখকের বিস্ময়ের প্রকাশ।
৮। “পেঁজা বরফের গুড়োয় ভর্তি”—বলে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ এই বাক্যে আফগানিস্তানের তুষারপাতের রূপ ফুটে উঠেছে। ‘পেঁজা বরফ’ মানে তুলোর মতো নরম বরফ। বরফ যখন পড়ে তখন তা সবকিছু ঢেকে ফেলে, চারপাশ সাদা হয়ে যায়। যেন পুরো জায়গা এক বিশাল সাদা গুড়োয় ভর্তি। লেখক এর মাধ্যমে কাবুলের শীতকাল ও প্রকৃতির সৌন্দর্যকে তুলে ধরেছেন। এই রূপক ব্যবহার করে তিনি প্রাকৃতিক পরিবেশের তুলনামূলক সৌন্দর্য বর্ণনা করেছেন।
৯। “কাবুল শহরে আমি দুটি নরদানব দেখেছি। তার একটি আবদুর রহমান”—কেন বলেছেন?
উত্তরঃ লেখক এখানে মজা করে ‘নরদানব’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। আফগানিস্তানে তার দেখা সবচেয়ে বিশালদেহী ও শক্তিশালী দুটি মানুষকে তিনি ‘নরদানব’ বলেছেন। তার মতে, আবদুর রহমানের চেহারা ও শরীরের গঠন সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক বড় ও ভয়ংকর ছিল। যদিও চেহারায় সে কঠিন, তার মন ছিল অত্যন্ত কোমল ও স্নেহপরায়ণ। লেখক এই বৈপরীত্যের জন্য তাকে ‘নরদানব’ বলেছেন। এতে লেখকের রসিকতা ও আবদুর রহমানের চরিত্রের বিশেষত্ব ফুটে ওঠে।
১০। মাংসের গামলায় লেখক আলুকে অপাঙ্ক্তেয় বললেন কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ আলু সাধারণভাবে নিরামিষ বা হালকা খাবার হিসেবে ধরা হয়। আর মাংস একটি ভারী ও রসালো খাদ্য। লেখক মজার ছলে বলেছেন, এত রসালো মাংসের সঙ্গে আলুর কোনো মানায় না। যেন কোনো নিম্নমানের অতিথি উচ্চমানের দাওয়াতে গিয়ে বসেছে। এতে লেখক আবদুর রহমানের রান্নায় থাকা প্রচুর মাংসের প্রশংসা করেছেন এবং আলুর অবস্থা একটু ঠাট্টার ছলে ব্যাখ্যা করেছেন। এই রসিক মন্তব্য গল্পের হাস্যরসকে বাড়িয়ে তোলে।
১১। “জুতো বুরুশ থেকে খুনখারাবি”—বলে অধ্যক্ষ জিরার কী বোঝাতে চেয়েছেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ অধ্যক্ষ জিরা বোঝাতে চেয়েছেন, আবদুর রহমান একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তিনি জুতো পালিশ করা থেকে শুরু করে ঝগড়া-ঝাটি বা লড়াই পর্যন্ত সব কিছুতেই পারদর্শী। তার ক্ষমতা শুধু দৈহিক নয়, বাস্তব জীবনের নানা কাজে সে দক্ষ। এভাবে বলতে চাওয়া হয়েছে যে আবদুর রহমান ছিল কাজের মানুষ, সে যেকোনো পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে পারত। এই কথায় তার কর্মদক্ষতা ও সাহসিকতার রূপ দেখা যায়। অধ্যক্ষ তাকে একজন অমূল্য সহকারী হিসেবে দেখেছেন।
১২। “শীতকালটা আমি পানশিরেই কাটাব”—বুঝিয়ে লেখ। [চ. বো. ‘২৪]
উত্তরঃ লেখক কাবুলের প্রচণ্ড ঠাণ্ডা হাওয়ার কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, সেখানে থাকার চেয়ে বরং পানশির উপত্যকায় থাকা ভালো। পানশির তুলনামূলকভাবে কম ঠাণ্ডা এবং প্রাকৃতিকভাবে আরামদায়ক। তাই লেখক ঠাট্টা করে বলছেন, কাবুলের কনকনে হাওয়ার বদলে তিনি পানশিরে শীত কাটাতে চান। এতে তার রসিকতা ও বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটে। লেখকের ভাষায় রস ও ব্যঙ্গ একসাথে ধরা পড়ে। এটি আফগানিস্তানের আবহাওয়ার একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে।
১৩। আবদুর রহমান তার গোঁফ কামিয়ে ফেলার কথা বলেছিল কেন? ব্যাখ্যা কর। [ঢা. বো. ‘২৩]
উত্তরঃ আবদুর রহমান লেখককে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। একদিন লেখক মজা করে বলেন, খাওয়ার সময় তার গোঁফ খাবারের মধ্যে পড়ে যায়। এই কথা শুনে আবদুর রহমান এতটাই কষ্ট পান যে গোঁফ ফেলে দেওয়ার কথা বলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল লেখক যেন কোনো রকম অস্বস্তি না পান। এতে আবদুর রহমানের সরলতা, আন্তরিকতা ও ভালোবাসা বোঝা যায়। তিনি প্রিয়জনের জন্য নিজের চেহারার পরিবর্তন করতেও প্রস্তুত ছিলেন। তার মন ছিল কোমল ও নিঃস্বার্থ।
১৪। “কাবুলের হাওয়া তো হাওয়া নয়, আতসবাজির হক্কা”—কেন একথা বলা হয়েছে? [রা. বো. ‘২৩]
উত্তরঃ এই বাক্যটি লেখক কাবুল শহরের প্রচণ্ড ঠান্ডা বাতাস বোঝাতে ব্যবহার করেছেন। ‘আতসবাজির হক্কা’ মানে খুবই তীব্র, জ্বলন্ত ও বিস্ফোরক কিছু। কাবুলের হাওয়া এত ঠান্ডা যে তা যেন শরীরকে কেটে দেয়। ঠান্ডার তীব্রতা আতসবাজির মতো তীক্ষ্ণ ও যন্ত্রণাদায়ক। লেখক রসিকতার ভঙ্গিতে এই তুলনা করেছেন। এতে কাবুলের শীতপ্রধান পরিবেশ এবং তার অস্বস্তিকর দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।
১৫। লেখক ‘থ’ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন কেন? [য. বো. ‘২৩]
উত্তরঃ লেখক ‘থ’ হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন, কারণ তিনি আবদুর রহমানের আচরণে অবাক ও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন। লেখক মজা করে গোঁফ নিয়ে কিছু বলায় আবদুর রহমান তা গুরুত্ব দিয়ে গোঁফ কাটার সিদ্ধান্ত নেন। এমন আন্তরিক ভালোবাসা, সরলতা ও আত্মত্যাগ দেখে লেখক স্তব্ধ হয়ে যান। আবদুর রহমানের ব্যবহার তাকে মুগ্ধ করে তোলে। তার এই নিঃস্বার্থ আচরণ লেখকের মনে গভীর ছাপ ফেলে। তাই তিনি কিছুক্ষণ কোনো কথা বলতে পারেননি।
১৬। আবদুর রহমানকে নরদানব বলার কারণ কী? ব্যাখ্যা কর। [চ. বো. ‘২৩]
উত্তরঃ আবদুর রহমানকে ‘নরদানব’ বলা হয়েছে তার বিশাল শরীর ও প্রচণ্ড শক্তির জন্য। তার চেহারা ও দেহগঠন ছিল সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক বড় এবং শক্তিশালী। এই দেহবল্লবতার কারণে তাকে প্রথমে ভয়ঙ্কর মনে হলেও, প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন ভীষণ সরল, স্নেহপরায়ণ ও অতিথিপরায়ণ। লেখক এই বৈপরীত্যকে মজার ছলে ‘নরদানব’ শব্দে প্রকাশ করেছেন। এতে তার বাহ্যিক কাঠিন্যের ভেতরের কোমলতা ফুটে ওঠে। লেখক আবদুর রহমানকে শ্রদ্ধা ও স্নেহের চোখে দেখেছেন।
১৭। “অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর”—লেখক কেন এ কথা বলেছেন? [দি. বো. ‘২৩]
উত্তরঃ লেখক আফগানদের মনোবল এবং কঠিন জীবনযাত্রার প্রসঙ্গে এই প্রবাদটি বলেছেন। আফগানরা দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ, দারিদ্র্য ও কষ্টে অভ্যস্ত। তাই তারা দুঃখে কাতর না হয়ে, অভ্যস্ত হয়ে গেছে—একপ্রকার ‘পাথর’ হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষ যেমন ছোট দুঃখে কেঁদে ফেলে, আফগানরা তেমন নয়। তাদের অধিক শোক তাদের অনুভূতিকে স্থির ও শক্ত করেছে। লেখক আফগানদের সাহসিকতা ও ধৈর্যের প্রশংসা করেছেন এই কথার মাধ্যমে।
১৮। “রাত দুটোয় খাবার জুটলে জুটতেও পারে”—লেখক এরূপ ভেবেছেন কেন? [ঢা. বো. ‘১৯]
উত্তরঃ আবদুর রহমানের সময়জ্ঞান খুবই আলাদা ছিল। তিনি কখন কী করবেন, তা নির্দিষ্ট নিয়মে না করে নিজের ইচ্ছেমতো করতেন। এমনকি রাতের খাবারও অনেক দেরিতে পরিবেশন করতেন। একদিন এত দেরি হয় যে লেখক মনে করেন রাত দুইটায় খাবার পেতে পারেন। এই কথা তিনি রসিকতার ছলে বলেছেন। এতে আফগানদের ঢিলেঢালা সময়চর্চা ও অতিথিপরায়ণতার হাস্যরসাত্মক দিক তুলে ধরা হয়েছে।
১৯। “কার গোয়াল, কে দেয় ধুয়ো”—বলে কী বোঝানো হয়েছে? [কু. ব্যে, ‘১৯]
উত্তরঃ এই প্রবাদ দিয়ে বোঝানো হয়েছে—দায়িত্ব যার, কাজ তারই করা উচিত। অন্য কেউ সেই দায়িত্ব পালন করে না বা করতে চায় না। লেখক এই কথাটি বলেছেন আবদুর রহমানকে বুঝাতে, যেন সে নিজের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করে। কারণ গোয়াল কার, তা যদি পরিষ্কার না হয়, তাহলে গরুকে কে খাবার দেবে বা দেখাশোনা করবে? এই কথায় লেখক দায়িত্ববোধ এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনতার মজার মিল খুঁজে পেয়েছেন। এতে বাস্তব জীবনের শিক্ষা আছে।
২০। “এক এক দম নেওয়াতে এক এক বছর আয়ু বাড়বে—এক এক দম ফেলাতে একশটা বেমারি বেরিয়ে যাবে।” ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ এই কথা বলা হয়েছে আফগানিস্তানের বিশুদ্ধ বাতাসের গুণ বোঝাতে। লেখক মনে করেন, কাবুলের প্রকৃতি এত বিশুদ্ধ ও নির্মল যে তা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। শ্বাস নিলে যেন জীবন দীর্ঘ হয় এবং রোগ দূর হয়। এটি আসলে রসিকতার ছলে বলা হলেও এর পেছনে বাস্তব সত্য আছে। বিশুদ্ধ প্রকৃতি ও নির্মল পরিবেশ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। লেখক কাবুলের পরিবেশ নিয়ে নিজের মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন।
আরও পড়ুনঃ শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব প্রবন্ধের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর
Related Posts
- জাদুঘর ভ্রমন ৯ম শ্রেণির বাংলা সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি
- বই কেনার জন্য বাবার কাছে টাকা চেয়ে পত্র লেখ
- একুশের গল্পের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর
- বনের ধারে বরফ পড়া সাজে কবিতার মূলভাব, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি – ৯ম শ্রেণির বাংলা
- একুশের গল্প মূলভাব, বিষয়বস্তু ও বহুনির্বাচনি প্রশ্ন উত্তর