রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কাবুলিওয়ালা’ একজন কাবুলিওয়ালার কথা বলা হয়েছে। তাঁর নাম রহমত। তিনি আফগানিস্তানের কাবুল থেকে কলকাতায় এসেছিলেন বাদাম, কিশমিশ আর শুকনো ফল বিক্রি করতে। এই পোস্টে কাবুলিওয়ালা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর – ৭ম শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম।
কাবুলিওয়ালা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ১। উদ্দীপক-১: নতুন দারোয়ান সামাদ মিয়ার সাথে ছেলের বেশি ভাব-বন্ধুত্ব কিছুতেই মেনে নিতে পারেন না আবীরের মা। তিনি স্বামীকে বোঝান বিভিন্ন ফন্দি করে অনেক মানুষ এখন অন্যের বাচ্চা চুরি করে। সামাদ মিয়াও তো একদিন তেমন কিছু করে বসতে পারে। উদ্দীপক-২: বারো বছর আগের ছোট্ট আবীর আজ কলেজ থেকে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় হাসপাতালে। রক্তের জন্য বাবা-মা বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করছেন। খবর পেয়ে সামাদ মিয়া ছুটে এসে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন ‘সাহেব, আবীর বাবার জন্য আমার সব রক্ত নেন, আমার নিজের ছেলেরে হারাইছি, ওরে হারাইলে আমি বাঁচুম না।’ ক. কাবুলিওয়ালার মলিন কাগজটিতে কী ছিল? খ. ‘আমিতো সওদা করিতে আসি না।’- কথাটি বুঝিয়ে লেখ। গ. উদ্দীপক-১ অংশে ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্পের কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে ব্যাখ্যা কর। ঘ. ‘উদ্দীপকের সামাদ মিয়া যেন কাবুলিওয়ালা গল্পের মূল ভাবকেই ধারণ করে আছে।’- বিশ্লেষণ কর। |
উত্তরঃ
ক. কাবুলিওয়ালার মলিন কাগজটিতে তার মেয়ের ছোট হাতের ছাপ ছিল।
খ. এই কথাটি বলেছে কাবুলিওয়ালা। সে তার মেয়ে থেকে বহু দূরে রয়েছে বহু বছর ধরে। অনেক কষ্ট আর অপেক্ষার পরে যখন সে মিনিকে দেখে, তখন বুঝতে পারে যে মেয়ে বড় হয়ে গেছে এবং তাকে আর মনে রাখেনি। তখন কাবুলিওয়ালা বুঝে যায়, তার ভালোবাসা কোনো সওদা বা ব্যবসা নয়—এটা নিঃস্বার্থ, পিতার মনের টান। তাই সে বলে, “আমিতো সওদা করিতে আসি না”—মানে, আমি তো মনের টানেই এসেছি, লাভের আশায় নয়।
গ. উদ্দীপক-১ অংশে, আবীরের মায়ের মাঝে ‘অবিশ্বাস’ ও ‘সন্দেহ’ প্রকাশ পেয়েছে, যা কাবুলিওয়ালা গল্পের মূল ভাবের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। আবীরের মা যখন নতুন দারোয়ান সামাদ মিয়ার সঙ্গে ছেলের সম্পর্ক মেনে নিতে পারছেন না, তখন তিনি এই ধারণা তৈরি করছেন যে সামাদ মিয়া হয়তো ছেলেকে কোনো ক্ষতি করতে পারে, বা কিছু খারাপ উদ্দেশ্যে তার কাছে আসতে পারে। ঠিক তেমনি, কাবুলিওয়ালা গল্পেও প্রথমে রবীন্দ্রনাথের মেয়ে মেয়ে-মনে মনে কাবুলিওয়ালাকে সন্দেহ করেছিল, কিন্তু পরে সে বুঝতে পারে যে, কাবুলিওয়ালা শুধুমাত্র ভালোবাসা ও অভ্যাস থেকে আবীরের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এখানেও মায়ের সন্দেহ এক ধরনের মানসিক অস্থিরতার মধ্যে পড়ে, যা কাবুলিওয়ালার গল্পের মধ্যেও ছিল।
ঘ. উদ্দীপকের সামাদ মিয়া কাবুলিওয়ালা গল্পের মূল ভাবকে ধারণ করেছে তার আন্তরিকতা, ভালোবাসা এবং নিজ সন্তান হারানোর দুঃখের মাধ্যমে। কাবুলিওয়ালার মতো, সামাদ মিয়া তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, তার সন্তানের মতো আবীরের সঙ্গে গভীর ভালোবাসা ও সম্পর্ক গড়ে তোলে। যখন আবীর দুর্ঘটনায় পড়ে, তখন সামাদ মিয়া যেমন কাঁদতে কাঁদতে তার রক্ত দান করার প্রস্তাব দেয়, তেমনি কাবুলিওয়ালা তার ছোট্ট বন্ধুকে গভীর ভালোবাসায় মেলে ধরেছিল। কাবুলিওয়ালার জীবনে যেমন মেয়ে আবীরের প্রতি একটি অসীম ভালোবাসা ছিল, তেমনি সামাদ মিয়া তাঁর প্রাথমিক সম্পর্কের মাধ্যমে আবীরের প্রতি একই ধরনের সহানুভূতি ও ভালোবাসা দেখায়। এই গল্পের মূল বিষয় ছিল মানুষে-মানুষে গভীর সম্পর্ক এবং একে অপরের প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা, যা উদ্দীপকের সামাদ মিয়ার চরিত্রেও প্রতিফলিত হয়েছে।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ২। আসিফ-রুনী দম্পতির কোনো সন্তান নেই। এ নিয়ে তাদের প্রচন্ড কষ্ট। জীবনটা তাদের কাছে অর্থহীন মনে হয়। অবশেষে তারা গ্রামের এক অসহায় দরিদ্র নারীর পুত্রকে দত্তক নেয়। এখন ছেলেকে নিয়েই সারা দিন কাটে আসিফ-রুনীর। ছেলেটি যেন তাদের জীবনে গতি এনে দিয়েছে। ক. রহমত কথায় একটা অনাবশ্যক কী যোগ করে মিনির কথার উত্তর দিত? খ. ‘তাহাদের পুরাতন আলাপ জমাইতে পারিল না।’ কেন? গ. উদ্দীপক এবং ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্পের মধ্যে সাদৃশ্য তুলে ধর। ঘ. “সাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকটি ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্পের সমগ্র ভাব ধারণ করে না।”- মন্তব্যটি যাচাই কর। |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৩। সজলনয়না অন্নপূর্ণার ইচ্ছা করিতে লাগিল, ছেলেটিকে কোলে বসাইয়া বক্ষে চাপিয়া তাহার মস্তক আঘ্রাণ করেন। মতিলাল বাবু ভাবিতে লাগিলেন, ‘এই ছেলেটিকে যদি কোনোমতে কাছে রাখিতে পারি তবে পুত্রের অভাব পূর্ণ হয়।’ ক. কাবুলিওয়ালার নাম কী ছিল? খ. মিনি খেলা রেখে জানালার ধারে ছুটে গেল কেন? বুঝিয়ে লেখ। গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্পের কোন দিকটির মিল রয়েছে? ঘ. “একটি দিকের মিল থাকলেও উদ্দীপকটি কাবুলিওয়ালা’ গল্পের মূল সুর ধারণ করে না।”- মন্তব্যটি যাচাই কর। |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৪। ও যে একটুখানি হলুদ হাসি জড়িয়ে রাখে ঠোঁটে ওকে দেখলে আমার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে ওঠে। বন্ধচোখে ভেসে ওঠে একটি সোনামুখ যে আবীরমাখা স্বপ্ন ছড়ায়, ভরিয়ে দেয় বুক। ক. মিনির বয়স রস কত? খ. মিনিকে পেস্তাবাদাম দেওয়াকে ‘ঘুষ’ বলা হয়েছে কেন? গ. উদ্দীপকে ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্পের যে দিকটি ফুটে উঠেছে, তা ব্যাখ্যা কর। ঘ. “উদ্দীপকের কথক পুরোপুরি কাবুলিওয়ালা হয়ে উঠতে পারেনি”- তোমার মতমাতের পক্ষে যুক্তি তুলে ধর। |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৫। নিঃসন্তান মিনারা বেগম পাশের বাসার পাঁচ বছর বয়সের তাসিনকে খুব আদর করেন। যখন-তখন তাসিনও তার কাছে ছুটে আসে। এ বিষয়টি মোটেই ভালো চোখে দেখেন না তাসিনের দাদি। তিনি মনে করেন, তাসিনের ওপর মিনারা বেগমের কু-দৃষ্টি পড়তে পারে। তাসিনের মা বলেন, “মিনারা বেগম যদি তাসিনকে স্নেহ-মমতা দিয়ে তাঁর মনের সুখ অনুভব করেন তাতে ক্ষতি কী?” ক. ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্পে অত্যন্ত শঙ্কিত স্বভাবের লোকটি কে? খ. মিনির বাবা অন্তঃপুরের বাধা উপেক্ষা করে মিনিকে ডেকে পাঠাল কেন? গ. উদ্দীপকের মিনারা বেগমের সঙ্গে ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্পের সাদৃশ্যপূর্ণ চরিত্র কোনটি? ব্যাখ্যা কর। ঘ. “প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও সন্তানস্নেহের ক্ষেত্রে ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্প ও উদ্দীপকের মূলভাব অভিন্ন” বিশ্লেষণ কর। |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৬। যেখানেতে দেখি যাহা মায়ের মতন আহা একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই মায়ের মতন এত আদর সোহাগ সে তো আর কোনখানে কেহ পাইবে ভাই। ক. ‘লড়কি’ অর্থ কী? খ. মিনি কাবুলিওয়ালাকে দেখে ভয় পেয়েছিল কেন? গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্পের অমিল তুলে ধর। ঘ. “মিল না থাকলেও উদ্দীপকটি ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্পের মতো চিরন্তন সত্যকেই উন্মোচিত করেছে।”- মূল্যায়ন কর। |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৭। মন চলে গেল তিরিশ বছর আগেকার এক শীতের সকালে। এ সময়ে কাবুলিওয়ালারা আসতো বাংলাদেশে কম্বল, শাল, কাশ্মীরি শাড়ি প্রভৃতি বিক্রি করতে। সারা শীত ওরা শহরময় এ মাল নগদ বা ধারে বিক্রি করত, তারপর শীতের শেষে দাম নিয়ে ফিরে চলে যেতো দেশে। কারও কাপড়ের দাম ২/৪ বছরেও শোধ হতো। এ শাড়ি, শাল, কম্বলের সঙ্গে থাকতো নানারকম শুকনো মেওয়া আর কাঠের কৌটায় তুলো দিয়ে ঢাকা আঙুর। ক. কে এক দন্ড কথা না বলে থাকতে পারত না? খ. কাবুলিওয়ালা প্রথমটায় থতমত খেয়ে গেল কেন? গ. উদ্দীপকটির কাবুলিওয়ালাদের সঙ্গে ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্পের কোন চরিত্রের মিল রয়েছে? ঘ. “উদ্দীপকটি ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্পের সম্পূর্ণ বাস্তবতা ধারণ করাতে সক্ষম হয়নি।”- তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দেখাও। |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৮। রমজান মিয়া পার্কে ঘুরে ঘুরে চানাচুর বিক্রি করে। হঠাৎ একদিন একটি ছোট্ট মেয়ে তার কাছে এসে চানাচুর খেতে চায়। মেয়েটির দিকে রমজান মিয়া অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। মেয়েটির মধ্যে সে তার মেয়ে কমলিকে দেখতে পায়। তাই মেয়েটিকে সে যত্ন সহকারে চানাচুর বানিয়ে দেয়। বিনিময়ে তার কাছ থেকে সে কোনো টাকা নেয় না। ক. কাবুলিওয়ালার মাথায় কী ছিল? খ. মিনির বাবার চোখ ছলছল করে উঠল কেন? গ. উদ্দীপকের রমজান মিয়ার সঙ্গে ‘কাবুলি চরিত্রের সাদৃশ্য লক্ষণীয় বলে তুমি মনে কর ৷ ঘ. উদ্দীপক ও ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্প উভয় গভীরতার প্রকাশ ঘটেছে- মন্তব্যটির যথার্থতা বিশ্লেষণ কর। |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৯। এই বাদাম! ডাক শুনলেই সুভা ছুটে যায় জানালার কাছে। বৃদ্ধ বাদামওয়ালাও প্রতিদিন ছোট সুভাকে দেখার জন্য জানালার কাছে আসে। কিন্তু একদিন সুভার বাবা বাদামওয়ালাকে বলে, আর কেউ জানালায় এসে আপনার কাছে বাদাম চাইবে না। বদলির কারণে আমরা কাল দিনাজপুর চলে যাচ্ছি। বাদামওয়ালা সুভার বাবাকে বলে, আমি শুধু বাদাম বিক্রি করার জন্য এখানে আসি না। আসি সুভাকে দেখতে আসি। আমার হারিয়ে যাওয়া ছোট মেয়েটি ঠিক সুভার মতোই ছিল। সে প্রতিদিনের মতো সুভার হাতে বাদাম দিয়ে ছলছল চোখে ফিরে যায়। ক. ‘দ্বার’ শব্দের অর্থ কী? খ. মিনির বাবা প্রথমে রহমতকে চিনতে পারলেন না কেন? বুঝিয়ে লেখ। গ. উদ্দীপকের বাদামওয়ালা ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্পের কোন চরিত্রের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর। ঘ. “নিজ সন্তানকে কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্পের পাশাপাশি উদ্দীপকেও প্রতিফলিত হয়েছে।”- মূল্যায়ন কর। |
আরও পড়ুনঃ লখার একুশে গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর