কপোতাক্ষ নদ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর

“কপোতাক্ষ নদ” কবিতায় মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার শৈশবের প্রিয় নদী কপোতাক্ষকে কেন্দ্র করে এক গভীর স্মৃতিমেদুরতা ও দেশপ্রেম প্রকাশ করেছেন। বিদেশে থেকেও তিনি কপোতাক্ষ নদকে ভুলতে পারেননি। নদীর কলকল ধ্বনি তার কল্পনায় বারবার ফিরে আসে এবং তাকে শান্তি দেয়। এই পোস্টে কপোতাক্ষ নদ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর লিখে দিলাম।

কপোতাক্ষ নদ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

১। মধুসূদন দত্ত কবে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন।

২। মধুসূদন দত্ত কোথায় পড়াশোনা শুরু করেন?
উত্তর: মধুসূদন দত্ত স্কুলজীবনের শেষে কলকাতার হিন্দু কলেজে ভর্তি হন।

৩। মধুসূদন দত্ত খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন কোন বছরে?
উত্তর: মধুসূদন দত্ত ১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দে খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত হন।

৪। মধুসূদন দত্তের নতুন নাম কী হয়েছিল?
উত্তর: মধুসূদন দত্তের নামের প্রথমে ‘মাইকেল’ যোগ হয়েছিল।

৫। মধুসূদন দত্তের অমর কীর্তি কী?
উত্তর: মধুসূদন দত্তের অমর কীর্তি হলো ‘মেঘনাদ বধ কাব্য’।

৬। ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবি কে?
উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্ত।

৭। ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতাটি কোথা থেকে গৃহীত হয়েছে?
উত্তর: চতুর্দশপদী কবিতাবলী।

৮। কবি কোথায় বসে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতাটি লিখেছেন?
উত্তর: ফ্রান্সে বসে কবিতাটি লিখেছেন।

৯। “সতত” শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: সর্বদা।

১০। কবি কোন নদীর কথা স্মরণ করেছেন?
উত্তর: কপোতাক্ষ নদ।

১১। কবি কীসের কলকল ধ্বনি শুনতে পান?
উত্তর: কপোতাক্ষ নদের স্রোতের।

১২। ‘বিরলে’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: নিরিবিলি পরিবেশে।

১৩। ‘ভ্রান্তির ছলনে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: কল্পনার মাধ্যমে স্মৃতির পুনরুজ্জীবন।

১৪। “দুগ্ধ-স্রোতোরূপী তুমি” – এখানে নদীকে কীসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?
উত্তর: মায়ের স্তনের সঙ্গে।

১৫। ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবি কি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন?
উত্তর: তিনি আর কখনো কপোতাক্ষ নদ দেখতে পারবেন কি না।

১৬। “প্রজারূপে রাজরূপ সাগরেরে দিতে” – এখানে নদী কীসের প্রতীক?
উত্তর: কর প্রদানকারী প্রজার।

১৭। ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবি কবি কত নদী দেখেছেন?
উত্তর: বহু নদী।

১৮। কবির মতে, কোন নদী তাঁর স্নেহের তৃষ্ণা মেটাতে পারে?
উত্তর: কপোতাক্ষ নদ।

১৯। কবি কপোতাক্ষ নদকে কীভাবে স্মরণ করেছেন?
উত্তর: মায়ার বন্ধনে বাঁধা এক অনন্য নদী হিসেবে।

২০। কবি তাঁর স্মৃতিকে কীভাবে প্রকাশ করেছেন?
উত্তর: শৈশবের স্মৃতির কাতরতায়।

২১। কবি কপোতাক্ষ নদকে কীসের অংশ মনে করেন?
উত্তর: মাতৃভূমির অংশ।

২২। কবি কপোতাক্ষ নদের কাছে কী মিনতি করেছেন?
উত্তর: নদী যেন তাঁকে সস্নেহে স্মরণ করে।

২৩। ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতা কোন শৈলীতে রচিত?
উত্তর: চতুর্দশপদী কবিতার শৈলীতে।

২৪। “তোমার কথা ভাবি” – কবি এই কথাটি কখন বলেন?
উত্তর: নির্জন মুহূর্তে।

২৫। ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কী প্রকাশ পেয়েছে?
উত্তর: কবির দেশপ্রেম এবং মাতৃভূমির প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা।

২৬। কবি কোথায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন?
উত্তর: যশোর জেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে।

২৭। কবি কপোতাক্ষ নদকে কী নামে উল্লেখ করেছেন?
উত্তর: মাতৃভূমি-স্তনের দুধের ধারা।

২৮। “নাম তার, এ প্রবাসে মজি প্রেম-ভাবে” – এখানে “নাম” বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: কপোতাক্ষ নদের নাম।

২৯। কবিতার কোন ধ্বনি কবিকে তার শৈশবে ফিরিয়ে নিয়ে যায়?
উত্তর: নদের কলকল ধ্বনি।

৩০। “চতুর্দশপদী কবিতা” কী ধরনের কবিতা?
উত্তর: এটি ১৪ চরণের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষ ধাঁচের কবিতা।

৩১। “সাগরেরে দিতে” – এখানে সাগরের কাছে কী প্রদান করা হচ্ছে?
উত্তর: বারি-রূপ কর।

৩২। কবি কোন সময় কপোতাক্ষ নদকে বেশি স্মরণ করেন?
উত্তর: নিরিবিলি ও একাকী সময়ে।

৩৩। “মায়া-মন্ত্রধ্বনি” বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: নদীর স্রোতের মধুর ও মায়াময় ধ্বনি।

৩৪। ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার চরণ কয়টি?
উত্তর: চৌদ্দটি চরণ।

৩৫। কবিতায় নদীকে কোন ধরনের সম্পর্কের রূপ দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: প্রজারূপে সাগরের প্রতি কর্তব্যশীল সম্পর্ক।

৩৬। ‘বারি-রূপকর’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘বারি-রূপকর’ এর মাধ্যমে বলা হচ্ছে যে, যেমন প্রজা রাজাকে কর বা রাজস্ব দেয়, তেমনি কপোতাক্ষ নদও সাগরকে জলরূপ কর বা রাজস্ব দিচ্ছে।

৩৭। ‘নিশা’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘নিশা’ শব্দের অর্থ হল রাত্রি বা রাতের সময়।

৩৮। ‘ভ্রান্তি’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘ভ্রান্তি’ শব্দের অর্থ হল ভুল বা বিভ্রান্তি।

৩৯। চতুর্দশপদী কবিতা কী?
উত্তর: চতুর্দশপদী কবিতা বা সনেট হল একটি চৌদ্দ-চরণের কবিতা, যা ভাবের সুনির্দিষ্ট সংহতিতে লেখা হয়।

৪০। চতুর্দশপদী কবিতার প্রথম আট চরণ কী নামে পরিচিত?
উত্তর: চতুর্দশপদী কবিতার প্রথম আট চরণ ‘অষ্টক’ (Octave) নামে পরিচিত।

৪১। চতুর্দশপদী কবিতার পরবর্তী ছয় চরণ কী নামে পরিচিত?
উত্তর: চতুর্দশপদী কবিতার পরবর্তী ছয় চরণ ‘ষষ্টক’ (Sestet) নামে পরিচিত।

৪২। ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার মিলবিন্যাস কী?
উত্তর: ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার মিলবিন্যাস হল কখকখ কখখক গঘগ ঘগঘ।

কপোতাক্ষ নদ কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন

১। ‘স্নেহের তৃষ্ণা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ ‘স্নেহের তৃষ্ণা’ বলতে গভীর মমতা ও ভালোবাসার আকাঙ্ক্ষাকে বোঝানো হয়েছে। কবির শৈশব কেটেছে কপোতাক্ষ নদের তীরে, সেই স্মৃতি তাঁর মনে গেঁথে আছে। তিনি প্রবাসে থেকেও এই নদকে ভুলতে পারেন না। পৃথিবীর নানা নদী দেখলেও কপোতাক্ষের প্রতি তাঁর টান কমেনি। এই নদ যেন মায়ের মতো স্নেহ দিয়ে তাঁকে ঘিরে রেখেছে। তাই তাঁর অন্তরে এই নদীর জন্য এক বিশেষ টান বা আকুলতা কাজ করে। এটাই ‘স্নেহের তৃষ্ণা’।


২। ‘জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে!’— বুঝিয়ে লেখ। [ঢা.বো. ২০২৪]
উত্তরঃ এই চরণে কবি বলেছেন, তিনি প্রবাসে থেকেও কপোতাক্ষ নদের কলকল শব্দ যেন শুনতে পান। বাস্তবে তিনি তা শুনছেন না, কিন্তু মনের ভুলে মনে হয় যেন শুনতে পাচ্ছেন। এই অনুভূতিকে কবি ‘ভ্রান্তির ছলনা’ বলেছেন। কবির মনে নদীর স্মৃতি এতটাই তীব্র যে, সত্যিকারের শব্দ না শুনেও তিনি তা অনুভব করেন। এই অনুভূতির মধ্য দিয়েই তাঁর হৃদয়ের টান বোঝা যায়। এটি একধরনের মানসিক শান্তি দেয়। তাই তিনি মনে করেন, এই ভ্রান্তির ছলনাও তাঁকে আরাম দেয়।


৩। ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবি কপোতাক্ষ নদকে দুগ্ধস্রোতোরূপী বলেছেন কেন? [রা বো ২০২৪]
উত্তরঃ কবি কপোতাক্ষ নদকে দুগ্ধস্রোতোরূপী বা দুধের ধারা বলা নদী রূপে কল্পনা করেছেন। তাঁর কাছে এই নদ শুধু একটি জলধারা নয়, বরং মাতৃস্নেহের প্রতীক। দুধ যেমন মা তাঁর সন্তানকে ভালোবেসে খাওয়ান, তেমনি এই নদীও কবিকে শৈশবে প্রকৃতির মমতায় বড় করেছে। কবির শৈশব কেটেছে নদীর কোলঘেঁষে। তাই নদীর জলের ধারা তাঁর কাছে পবিত্র ও স্নেহময় মনে হয়। নদীর জল যেন তাঁর প্রাণের খোরাক। তিনি মনে করেন, জন্মভূমি এই নদীর মাধ্যমেই তাঁকে জীবনদায়ী স্নেহ দিয়েছে। তাই নদীকে তিনি মা-রূপে কল্পনা করে দুগ্ধস্রোতোরূপী বলেছেন।


৪। “আর কি হে হবে দেখা?” — এ অংশে কবি মনের অভিব্যক্তি ব্যাখ্যা কর। [কু বো ২০২৪]
উত্তরঃ এই চরণে কবি তাঁর মনের গভীর অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। তিনি প্রবাসে আছেন, অনেক দূরে, জন্মভূমির প্রিয় কপোতাক্ষ নদ থেকে। তাই তিনি উদ্বিগ্ন—এই নদীর সঙ্গে আর দেখা হবে কি না। এটি তাঁর এক ধরনের কষ্ট ও অনিশ্চয়তা। স্মৃতিতে নদীর ছবি স্পষ্ট হলেও বাস্তবে আর দেখা হবে কি না, তা তিনি জানেন না। তাঁর মনে নদীকে ঘিরে গভীর ভালোবাসা কাজ করে। এই প্রেম থেকেই তাঁর মনে এই প্রশ্ন জাগে। এটি তাঁর বিচ্ছেদের যন্ত্রণা এবং ফিরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে। কবির স্বদেশপ্রেম ও স্মৃতিমেদুরতা এই চরণে ফুটে উঠেছে।


৫। ‘দুগ্ধ-স্রোতোরূপী তুমি জন্মভূমি-স্তনে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা কর। [ব বো ২০২৪]
উত্তরঃ এই চরণে কবি কপোতাক্ষ নদকে মাতৃসম বলে কল্পনা করেছেন। নদীর জলের ধারা তাঁর কাছে মায়ের দুধের মতো। জন্মভূমি মা-রূপে নদীর মাধ্যমে কবিকে স্নেহ ও পুষ্টি দিয়েছে। ঠিক যেমন সন্তান মায়ের স্তন থেকে দুধ পায়, কবিও পেয়েছেন নদীর স্নেহধারা। এটি শুধুই প্রাকৃতিক জলধারা নয়, বরং কবির কাছে এটি এক পবিত্র সম্পর্ক। কবি এই চরণের মাধ্যমে নদীর সঙ্গে তাঁর আত্মিক সম্পর্ক প্রকাশ করেছেন।

৬। “কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে” বলতে কী বোঝানো হয়েছে? [কু বো ২০২৩]
উত্তরঃ এই চরণে কবি বলছেন, তিনি অনেক নদী দেখেছেন, কিন্তু কপোতাক্ষ নদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা অন্য রকম। সেই মমতা বা স্নেহের তৃষ্ণা আর কোনো নদীর জলে মিটতে পারেনি। কপোতাক্ষ তাঁর শৈশবের স্মৃতি, মায়ের স্নেহের মতো। তাই পৃথিবীর অন্য নদীর সঙ্গে এই নদীর তুলনা হয় না। অন্য নদীর সৌন্দর্য থাকলেও কপোতাক্ষে যে আবেগ, তা অনন্য। তার জলে রয়েছে জন্মভূমির ঘ্রাণ, ভালোবাসা আর আত্মার টান। কবির মনে কপোতাক্ষের স্মৃতি চিরজাগরূক। সেই স্মৃতিই তাঁর ‘স্নেহের তৃষ্ণা’।


৭। ‘লইছে যে নাম তব বঙ্গের সংগীতে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? [ব বো ২০২৩]
উত্তরঃ এই চরণে কবি বোঝাতে চেয়েছেন, কপোতাক্ষ নদ কেবল একটি নদী নয়, এটি বাংলার কাব্য, গান এবং সংস্কৃতির অংশ। নদীটির নাম বাংলার সংগীতে, সাহিত্যে, মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আবেগ, স্মৃতি ও ইতিহাস। এই নদী বাঙালির আবেগে জায়গা করে নিয়েছে। প্রবাসে থেকেও কবি অনুভব করেন, বাংলার মানুষের গান ও হৃদয়ে কপোতাক্ষ নামটি বেঁচে আছে। এটি তাঁর জন্য গর্বের বিষয়। তাই তিনি এই নদীর নামকে সংগীতে গাঁথা মনে করেছেন।


৮। ‘বারি-রূপ কর’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? [কু বো ২০২২]
উত্তরঃ ‘বারি-রূপ কর’ মানে হচ্ছে—জলের আকারে কিছু দেওয়া। এখানে নদীকে প্রজা হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে, আর সাগরকে রাজা। যেমন প্রজা কর দেয়, তেমনই নদী তার জল রাজা সাগরকে দেয়। এটি একটি রূপক বা কাব্যিক কল্পনা। কবি নদীর প্রবাহকে রাজস্ব প্রদানের সঙ্গে তুলনা করেছেন। নদী প্রতিনিয়ত তার জলস্রোত বয়ে নিয়ে গিয়ে সাগরে মিশিয়ে দিচ্ছে। সেই প্রবাহ যেন তার কর্তব্য পালন।


৯। ‘প্রজারূপে রাজরূপ সাগরেরে দিতে বারি-রূপ কর তুমি’ — এর দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে? [রা বো ২০২০]
উত্তরঃ এই চরণে কবি কপোতাক্ষ নদকে প্রজা রূপে দেখেছেন এবং সাগরকে রাজা রূপে কল্পনা করেছেন। ঠিক যেমন প্রজা রাজাকে কর দেয়, তেমন নদী তার জল সাগরকে দেয়। নদীর জলধারা ধীরে ধীরে গড়িয়ে সাগরে গিয়ে মিশে যায়। এই প্রবাহকে কবি কর প্রদান হিসেবে দেখেছেন। এটি একটি চমৎকার রূপক। এর মাধ্যমে কবি প্রকৃতির কার্যপ্রক্রিয়াকে মানুষের সমাজব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা করেছেন। এতে নদীর দায়িত্ববোধ ও নিয়ত প্রবাহিত থাকার ভাব প্রকাশ পেয়েছে।


১০। কবি স্বদেশের জন্য হৃদয়ের কাতরতা বঙ্গবাসীর প্রতি কীভাবে প্রকাশ করেছেন? [কু বো ২০২০]
উত্তরঃ কবি প্রবাসে থেকেও তাঁর জন্মভূমির কথা ভুলতে পারেননি। বিশেষ করে কপোতাক্ষ নদ তাঁর মনে গভীর দাগ কেটেছে। নদীর স্মৃতি তাঁকে বারবার টেনে আনে শৈশবের দিকে। তিনি নদীর কলকল ধ্বনি কানে শুনতে পান, যদিও সেটা বাস্তবে নয়—ভ্রান্তির ছলনায়। তিনি চান, কপোতাক্ষ যেন তাঁর প্রতি সেই স্নেহময় সম্পর্ক বজায় রাখে। নদীর মাধ্যমে কবি তাঁর মাতৃভূমির প্রেম প্রকাশ করেছেন। তিনি চান, বঙ্গবাসী যেন নদীর এই ভালোবাসার গল্প জানে।

১১। কবি কপোতাক্ষ নদকে স্মরণ করেছেন কেন?
উত্তরঃ কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত কপোতাক্ষ নদকে স্মরণ করেছেন তাঁর শৈশবের স্মৃতির কারণে। তিনি এই নদীর তীরে বেড়ে উঠেছেন, তাই এটি তাঁর মনে বিশেষভাবে গেঁথে আছে। প্রবাসে থেকেও তিনি কপোতাক্ষের কলকল ধ্বনি অনুভব করেন। এই নদী তাঁকে মাতৃস্নেহের মতো ভালোবাসা দিয়েছে। অনেক নদী দেখলেও কপোতাক্ষের মতো মমতা কোথাও পাননি। কবির কাছে এই নদী কেবল প্রকৃতির একটি রূপ নয়, বরং তাঁর শিকড়, আত্মার টান। তাই তিনি হৃদয়ের গভীর থেকে নদীটিকে স্মরণ করেন।


১২। কবি বিরলে কেন ভাবেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ ‘বিরলে’ মানে একান্ত নিরিবিলি সময় বা একাকিত্বে। কবি বলেন, তিনি একা থাকলে বা নিঃশব্দ মুহূর্তে কপোতাক্ষ নদকে মনে করেন। প্রবাসে থাকায় সব সময় তাঁর মন দেশমাতৃকার কথা ভাবতে পারে না। কিন্তু যখন তিনি নির্জনে থাকেন, তখন মন আপনাতেই শৈশবের স্মৃতিতে ভেসে যায়। সেই সময় কপোতাক্ষ নদ তাঁর মনে জেগে ওঠে। নদীর কলকল ধ্বনি যেন ভ্রান্তির ছলনায় কানে বাজে। কবি একাকিত্বে কপোতাক্ষের ভালোবাসা ও স্নেহ অনুভব করেন। সেই অনুভব তাঁকে মানসিক শান্তি দেয়। তাই তিনি বিরলে নদীর কথা ভাবেন।


১৩। ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবি আক্ষেপ করে কী বলেছেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ কবিতায় কবি আক্ষেপ করে বলেছেন—তিনি জানেন না, আর কখনও কপোতাক্ষ নদের দেখা পাবেন কি না। প্রবাসজীবনে তিনি নদীটিকে খুব মিস করেন। কিন্তু বাস্তবে তার কাছে ফেরা হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এটি তাঁর এক গভীর ব্যথা ও দুর্দশার প্রকাশ। তিনি শৈশবের প্রিয় নদীর সঙ্গে একাত্ম অনুভব করতেন। সেই নদী আজ দূরে, কেবল স্মৃতিতে রয়ে গেছে। তাই কবির মনে জন্ম নেয় এক ধরনের হাহাকার। এই আক্ষেপের মধ্যে রয়েছে তার মাতৃভূমির প্রতি গভীর ভালোবাসা ও বিচ্ছেদের যন্ত্রণা।


১৪। কবির মনে সংশয় কেন?
উত্তরঃ কবির মনে সংশয় রয়েছে কারণ তিনি প্রবাসে বসে কপোতাক্ষ নদকে স্মরণ করছেন, কিন্তু জানেন না কখনো আর তাঁর সঙ্গে দেখা হবে কি না। বয়স বাড়ছে, সময় পার হচ্ছে। বাস্তবে প্রিয় নদীর কাছে ফেরা হবে কি না, তা অনিশ্চিত। তাই কবির মনে সংশয় ও কষ্ট জমে। এই সংশয় তাঁর হৃদয়ের গভীর বেদনা ও বিচ্ছেদের প্রতিফলন। তিনি চান নদীটি যেন তাঁকে ভুলে না যায়, যেমন তিনি ভুলতে পারছেন না। কবি মনে করেন, হয়তো জীবনে আর দেখা হবে না। এই ভাবনাই তাঁর মনে কষ্ট ও অস্থিরতা সৃষ্টি করে।


১৫। কপোতাক্ষ নদকে মায়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে কেন?
উত্তরঃ কবি তাঁর শৈশব কাটিয়েছেন কপোতাক্ষ নদের পাশে। নদীর জলে, বাতাসে ও পরিবেশে তিনি মাতৃস্নেহের মতো ভালোবাসা পেয়েছেন। যেমন মা সন্তানকে লালন-পালন করেন, তেমনি এই নদীও কবিকে শৈশবে ভালোবেসেছে। তাই কবি কপোতাক্ষকে মায়ের স্তন থেকে প্রবাহিত দুধস্রোতের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এই তুলনায় রয়েছে স্নেহ, আশ্রয় ও ভালোবাসার গভীর অনুভব। প্রবাসে থাকলেও তিনি এই নদীকে ভুলতে পারেন না, যেমন কেউ মা’কে ভুলতে পারে না। তাই তিনি কপোতাক্ষকে মায়ের মতো ভালোবাসেন ও শ্রদ্ধা করেন।


১৬। চতুর্দশপদী কবিতা কাকে বলে? বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ চতুর্দশপদী কবিতা এমন একটি কবিতা, যার ১৪টি চরণ থাকে। ইংরেজিতে একে “Sonnet” বলা হয়। এই কবিতার প্রথম ৮টি চরণকে বলে “অষ্টক” এবং পরের ৬টি চরণকে “ষষ্টক”। সাধারণত অষ্টকে ভাবের সূচনা হয় আর ষষ্টকে তার পরিণতি বা উপসংহার বলা হয়। এই ধরনের কবিতায় নির্দিষ্ট ছন্দ ও মিলের বিন্যাস থাকে। কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা ভাষায় প্রথম সফলভাবে চতুর্দশপদী কবিতা রচনা করেন। তাঁর লেখা ‘কপোতাক্ষ নদ’ একটি চতুর্দশপদী কবিতা।


১৭। কপোতাক্ষ নদের জলরাশিকে ‘স্নেহের তৃষ্ণা’ বলার কারণ কী?
উত্তরঃ কবি কপোতাক্ষ নদকে তাঁর শৈশব ও মাতৃভূমির প্রতীক হিসেবে মনে করেন। তিনি অনেক নদী দেখেছেন, কিন্তু এই নদীর মতো ভালোবাসা বা স্নেহ অন্য কোনো নদীর জলে পাননি। তাই তিনি বলেন, এই নদীর জল যেন তাঁর তৃষ্ণা মেটায়—কিন্তু তা শারীরিক নয়, বরং মনের তৃষ্ণা। এটি হলো ভালোবাসার তৃষ্ণা, স্নেহের প্রয়োজন। কপোতাক্ষের জলে সেই মমতা ও আবেগ আছে যা তাঁকে শান্তি দেয়। এই নদী তাঁকে শৈশবের মায়ার জগতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। তাই এর জলে রয়েছে এক বিশেষ অনুভব। এই আবেগ থেকেই তিনি নদীর জলকে ‘স্নেহের তৃষ্ণা’ নামে অভিহিত করেছেন।


১৮। কপোতাক্ষ নদের কথা কবির সব সময় মনে পড়ে কেন?
উত্তরঃ কারণ, এই নদীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে কবির শৈশব ও মাতৃভূমির স্মৃতি। তিনি প্রবাসে থাকলেও মন পড়ে থাকে বাংলার এই নদীর তীরে। নদীর কলকল শব্দ, প্রকৃতির রূপ আর মাটির গন্ধ তাঁকে টানে। এই টান কেবল আবেগ নয়, এটি তাঁর অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে আছে। যেমন কেউ মা’কে ভুলতে পারে না, তেমনি কবিও এই নদীকে ভুলতে পারেন না। কপোতাক্ষ যেন তাঁর জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। নদীর স্মৃতি তাঁকে আনন্দ ও দুঃখ দুই-ই দেয়। তাই সব সময় তাঁর মনে পড়ে এই প্রিয় নদীর কথা।

আরও পড়ুনঃ 

বন্দনা কবিতার জ্ঞানমূলক ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর

প্রাণ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর

অন্ধবধূ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর

Related Posts