কাজী নজরুল ইসলামের ‘উমর ফারুক’ কবিতায় কবি খলিফা উমরের শাসনকালে তার মানবিক গুণাবলীর প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। উমর ছিলেন একটি আদর্শ নেতা, যিনি মানুষকে সম্মান এবং ভালোবাসার সঙ্গে শাসন করেছেন। তার মৃত্যুর পরও তার শিক্ষা মানুষকে পথ দেখাচ্ছে। এই পোস্টে উমর ফারুক কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর লিখে দিলাম।
উমর ফারুক কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ১। কাজী পাড়ার চেয়ারম্যান আব্বাস আলী। একবার তার নির্বাচনি এলাকার অধিকাংশ মানুষ ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয়। কিন্তু বানভাসি মানুষ একদিনও চেয়ারম্যান সাহেবের দেখা পেলেন না। কারণ তিনি নাকি ঢাকায় জরুরি কাজে ব্যস্ত আছেন। অসহায় লোকগুলো খোলা আকাশের নিচে বোবা চাউনি মেলে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটায়। বন্যা শেষে একদিন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চেয়ারম্যানের বাগানবাড়ি তল্লাশি করে ত্রাণের প্রচুর টিন ও খাদ্যসামগ্রী উদ্ধার করে। ক. ‘উমর ফারুক’ কবিতা কোন কাব্য থেকে সংকলিত হয়েছে? খ. হজরত উমরকে ‘আমিরুল মুমেনিন’ বলার কারণ কী? গ. চেয়ারম্যান আব্বাস আলী যেদিক থেকে হজরত উমরের সঙ্গে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ তা ব্যাখ্যা কর। ঘ. আব্বাস আলী চেয়ারম্যানকে উমরের মতো আদর্শ মানুষ হতে হলে কী কী করতে হবে ‘উমর ফারুক’ কবিতার আলোকে ব্যাখ্যা কর। |
উত্তরঃ
ক. উমর ফারুক’ কবিতা জিঞ্জীর কাব্য থেকে সংকলিত হয়েছে।
খ. “আমিরুল মুমেনিন” বলতে হজরত উমরকে সর্বকালের মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতা বা সবার নেতা বলা হয়। এই উপাধিটি তাঁর গুণাবলি ও নেতৃত্বের জন্য দেওয়া হয়েছে। হজরত উমর ছিলেন একজন ন্যায়পরায়ণ, শক্তিশালী এবং সাহসী নেতা, যিনি ইসলাম ধর্মের প্রতিষ্ঠা এবং মুসলিমদের কল্যাণে বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। তিনি সর্বদা মুমেনিনদের কল্যাণ এবং ন্যায়ের পথে পরিচালিত করেছিলেন, যার জন্য তাঁকে এই সম্মানজনক উপাধি দেওয়া হয়।
গ. চেয়ারম্যান আব্বাস আলী এবং হজরত উমরের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বৈসাদৃশ্য রয়েছে। হজরত উমর ছিলেন এক আদর্শ নেতা, যিনি তাঁর শাসনের সময় জনগণের প্রতি সর্বদা মনোযোগী ছিলেন। তিনি ছিলেন ন্যায়পরায়ণ, জনগণের প্রতি তাঁর দায়িত্ব ছিল খুব গুরুতর এবং তিনি কখনোই মানুষের কষ্ট বা দুঃখের প্রতি অগোচরে থাকতেন না। তাঁর শাসন ছিল মানুষের কল্যাণের জন্য নিবেদিত, এবং তিনি কখনো নিজের স্বার্থের কথা ভাবেননি। তিনি নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করে জনগণের সেবা করেছেন। অন্যদিকে, আব্বাস আলী চেয়ারম্যান ছিলেন স্বার্থপর, যে কখনোই মানুষের দুঃখ-কষ্টের দিকে খেয়াল রাখেননি। বন্যায় যখন তাঁর এলাকার মানুষ কষ্টে ছিল, তখন তিনি ঢাকায় ছিলেন জরুরি কাজে ব্যস্ত। তিনি জনগণের জন্য ত্রাণ সংগ্রহ না করে নিজের জন্য তা সংগ্রহ করেছিলেন। তিনি নিজের শাসন ক্ষমতা ব্যবহার করে মানুষকে শোষণ করতেন, যা হজরত উমরের আদর্শের বিপরীত। উমর যেখানে ছিল জনগণের জন্য, আব্বাস আলী সেখানে ছিল নিজস্ব স্বার্থে, যা একজন আদর্শ নেতা হওয়ার পথ থেকে অনেক দূরে।
ঘ. ‘উমর ফারুক’ কবিতার আলোকে যদি আব্বাস আলী চেয়ারম্যান আদর্শ মানুষ হতে চান, তবে তাকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ অর্জন করতে হবে। প্রথমত, তিনি জনগণের প্রতি তাঁর দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে শিখবেন। হজরত উমর যেমন জনগণের প্রতি তাঁর কর্তব্য অনুভব করতেন, ঠিক তেমনি আব্বাস আলীকেও জনগণের দুঃখ-কষ্টের প্রতি নজর দিতে হবে এবং তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত, তিনি ন্যায়পরায়ণ হতে হবে। উমরের মতো তাঁকেও কোনো ধরনের পক্ষপাতে বিশ্বাস না করে, সবার প্রতি সমান আচরণ করতে হবে। তৃতীয়ত, আব্বাস আলীকে নিজের স্বার্থ পরিহার করতে হবে এবং জনগণের কল্যাণে নিজের সুখ ত্যাগ করতে হবে। হজরত উমর যেমন ব্যক্তিগত আরাম-আহ্লাদ ত্যাগ করে জনগণের জন্য কাজ করেছেন, তেমনি আব্বাস আলীকে তাঁর ব্যক্তিগত স্বার্থের কথা চিন্তা না করে জনগণের জন্য কাজ করতে হবে। চতুর্থত, তাকে দায়িত্বশীল হতে হবে। বন্যা আক্রান্ত মানুষের সাহায্যে ত্রাণ পাঠানোর ক্ষেত্রে আব্বাস আলী যদি হজরত উমরের মতো দায়িত্ববোধে উদ্বুদ্ধ হন, তাহলে তিনি একজন আদর্শ নেতা হতে পারবেন। অবশেষে, আব্বাস আলীকে তাঁর সিদ্ধান্তগুলোতে সততা এবং নিষ্ঠা অবলম্বন করতে হবে, যেন জনগণ তার উপর আস্থা রাখতে পারে।
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ২। প্রতিবেশী দাসদাসী আত্মীয়-স্বজন ভালোবাসি সবে কহ সুমিষ্ট বচন। দিও না কাহারে দুখ অন্যে দান করি সুখ, নিজেরে মানো গো সুখী, বালক সুজন। ক. ‘সাইমুম কী? খ. খলিফা হজরত উমর (রা) নিজ ভৃত্যকে তাঁর সঙ্গে সমান মর্যাদা দিতে কুণ্ঠিত হননি কেন? ব্যাখ্যা কর। গ. উদ্দীপকের ভাবটি ‘উমর ফারুক’ কবিতার কোন ভাবের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর। ঘ. উদ্দীপকের মূলভাব কবিতার করে, পুরো বিষয়কে নয়।” একটি বিশেষ দিককেই নির্দেশ প্রমাণ কর। |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৩। পরপীড়া পরিহার, পূর্ণ পরিতোষ। সদানন্দে পরিপূর্ণ স্বভাবের কোষ। নাহি চায় আপনার পরিবার সুখ। রাজ্যের কুশলকার্যে সদা হাস্যমুখ। কেবল পরের হিতে প্রেম লাভ যার। মানুষ তারেই বলি, মানুষ কে আর। ক. খলিফা উমর (রা) আবু শাহমাকে কয়টি বেত্রাঘাতের নির্দেশ দেন? খ. ‘মানব-প্রেমিক। আজিকে তোমারে স্মরি।” কে মানবপ্রেমিক? ব্যাখ্যা কর। গ. উদ্দীপকটি উমর ফারুক’ কবিতার কোন দিকটির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর। ঘ. ‘জগতে প্রকৃত মানুষরাই মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসেন।”-উদ্দীপক ও কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ কর। |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৪। মুসলমানদের বিজয় পতাকা আজ ধুলায় লুণ্ঠিত। দিকে দিকে মার খাচ্ছে মুসলমান। অধিকারহীন হয়ে অবহেলায় পড়ে আছে পথের প্রান্তে। মিথ্যার দাপটে সত্যের তরবারি আজ স্তব্দ, সংকীর্ণ হয়ে গেছে চওড়া রাজপথ। অথচ এখনও স্মৃতিতে ভাসে সোনালি দিনের স্মৃতিচিত্র বিশ্বজুড়ে সত্যের জয়। জুলুমের কালো হাত কোথাও নেই। সর্বত্র শান্তির ময়ূর পেখম মেলে সাম্যের গান গায়। ধনী-গরিব সবাই রাজ্যে সমান ক্ষমতার অধিকারী। ফলে গরিব প্রজার মুখে অনাবিল হাসি। অনাবিল শান্তিতে ধরিত্রীর বুক যেন একখন্ড বেহেশতি বাগান।’ আর বর্তমানে সত্য কালো আঁধারে ঢেকে গেছে। তাই মুসলমানদের সোনালি উষ্যর উদয় আবার ঘটাতে চাইলে এখন যোগ্য নেতার প্রয়োজন। ক. আখেরি নবির দক্ষিণ বায়ু কে? খ. সেদিন গিয়াছে-শিয়রের কাছে কহিছে কালের ঘড়ি।”-ব্যাখ্যা কর। গ. উদ্দীপকে উমর ফারুক’ কবিতার কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে? ঘ. “উদ্দীপকটি ‘উমর ফারুক’ কবিতার সমগ্র ভাবের ধারক নয়।”-মন্তব্যটির যথার্থতা মূল্যায়ন কর। |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৫। রাতের দ্বিতীয় প্রহর, দূরের গঞ্জ থেকে বাড়ি ফিরছেন সালাম সাহেব। গঞ্জে তার দুটো আড়ত আছে। অবস্থা বেশ সচ্ছল। একাগ্র মনে হাঁটছেন তিনি। ঝিঁঝিঁ পোকা আর ব্যাঙের ডাক ছাড়া অন্য কোনো শব্দ নেই প্রকৃতিতে। এমন সময় কান্নার আওয়াজ পান তিনি। কান পেতে শোনেন ভেসে আসা শব্দ। পাশের বাড়ি থেকেই কান্না আসছিল। তিনি গিয়ে বিনীতভাবে কান্নার কারণ জানতে চাইলেন। গৃহকর্ত্রী জানালেন তার ছেলের পরীক্ষা। তার ছেলের পরীক্ষার ফি-এর টাকা দেওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। আর ফি না দিলে পরীক্ষা দেওয়া যাবে না। তিনি ছেলেটার পরীক্ষার ফি গৃহকত্রীর হাতে দিয়ে রাতের আঁধারে বাড়ির পথ ধরলেন। ক. ক্ষুধার্ত শিশু দুটিকে ভোলাতে মা কী করলেন? খ. “এসব চাপাইয়া দাও আমার পিঠের ‘পরে।” পক্তিটি ব্যাখ্যা কর। গ. উদ্দীপকের সালাম সাহেবের চরিত্রের সঙ্গে ‘উমর ফারুক’ কবিতার কোন চরিত্রের মিল রয়েছে? ঘ. উদ্দীপকটি উমর ফারুক’ কবিতার আংশিক ভাবের ধারক।”-যথার্থতা বিশ্লেষণ কর। |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৬। মদিনাকে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য পরিখা খননের কাজ চলছে। নবিজি (স) স্বয়ং এ কাজে অংশগ্রহণ করতে চাইলে সাহাবিগণ আপত্তি তুললেন। কিন্তু নবিজি বললেন, “আমি তোমাদের মতোই মানুষ, তোমরা কাজ করবে আর আমি বসে বসে দেখব- এটা হয় না।” তিনি মাটির ঝুড়ি মাথায় তুলে নিলেন। বলা বাহুল্য, নবিজির এমনই মহান আদর্শ তাঁর সাহাবিদের চরিত্রকেও আলোকিত, উদ্ভাসিত করে তুলেছিল। ক. ‘উমর ফারুক’ কবিতায় ক. ‘চীরধারী সম্রাট’ বলা হয়েছে কাকে? খ. ইসলামকে ‘পরশ-মানিক’ বলা হয়েছে কেন? ব্যাখ্যা কর। গ. উদ্দীপকে ‘উমর ফারুক’ কবিতার কোন চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা কর। ঘ. “মহানবির আদর্শ তাঁর সাহাবিদের চরিত্রকেও আলোকিত করেছিল।”- ‘উমর ফারুক’ কবিতার আলোকে বক্তব্যের মূল্যায়ন কর। |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৭। নিজ সুখ ভুলে গিয়ে ভাবিলে পরের কথা। মুছালে পরের অশ্রু-ঘুচালে পরের ব্যথা। আপনাকে বিলাইয়া দীনদুঃখীদের মাঝে, বিদূরিলে পর দুঃখ সকালে বিকালে সাঁঝে। তবেই পাইবে সুখ আত্মার ভিতরে তুমি, যা রূপিবে তাই পাবে, সংসার যে কর্মভূমি। ক. জেরুজালেম কী? খ. “তোমার স্মৃতি যে আজানের ধ্বনি জানে না মুয়াজ্জিন।”-” ব্যাখ্যা কর। গ. উদ্দীপকটি ‘উমর ফারুক’ কবিতার কোন দিকটির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর। ঘ. “সাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকের মূলভাব ‘উমর ফারুক’ কবিতার মূলভাবকে প্রতিফলিত করে না।”- মন্তব্যটি যথার্থতা প্রমাণ কর। |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৮। হজরত আবু বকর (রা) ছিলেন ইসলামের প্রথম খলিফা। আরব মরুর বুকে যখন অন্ধকারের ভাঁজে ভাঁজে শত্রুর আনাগোনা, তখন তিনি ছিলেন প্রহরীহীন রাজা। রাতের অন্ধকার কী দিনের আলো, দূরে কী কাছে, সর্বত্রই তাঁর শাসন ছিল নির্ভীক। বিশাল রাজ্যের এই রাজার আর্থিক অবস্থা ছিল দীনহীন। তিনি রাজ কোষাগার থেকে কোনো পারিশ্রমিক গ্রহণ করতেন না। অসত্যের শত প্রলোভন তাঁকে কখনো স্পর্শ করতে পারেনি। ন্যায়বিচার আর সাম্য প্রতিষ্ঠাই ছিল তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। ক. অর্ধ পৃথিবী কে শাসন করেছেন? খ. “পড়েছে কুটির, তুমি পড়নি ক’নুয়ে।”- পঙ্ক্তিটি ব্যাখ্যা কর। গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘উমর ফারুক’ কবিতার সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর। ঘ. “তাৎপর্যগত দিক থেকে উদ্দীপকের হজরত আবু বকর (রা) ও কবিতার হজরত উমর একই আদর্শের ধারক”- উক্তিটির সার্থকতা যাচাই কর। |
সৃজনশীল প্রশ্নঃ ৯। ঘটনা-১ : উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা রায়হান সাহেব বাড়ি ফেরার পথে এক রোগা বুড়ো লোককে মাল বোঝাই ঠেলা ঠেলতে দেখলেন। লোকটির কষ্ট দেখে তিনি মুহূর্ত দেরি না করে ঠেলাগাড়িতে হাত লাগালেন এবং গন্তব্যে পৌছে দিলেন। ঘটনা-২: অফিস থেকে বাড়ি ফিরে এসে রায়হান সাহেব দেখেন তাঁর ছেলে অনেক অবৈধ মালামাল ঘরে এনে রেখেছে। তিনি কালবিলম্ব না করে পুলিশ ডেকে হাতেনাতে ধরিয়ে দেন। ক. ‘আমির-উল-মুমেনিন’ শব্দের অর্থ কী? খ. “সাইমুম-ঝড়ে পড়েছে কুটির, তুমি পড়নি ক’নুয়ে” বলতে কৰি কী বুঝিয়েছেন? গ. উদ্দীপকের ঘটনা-২-এর সঙ্গে ‘উমর ফারুক’ কবিতার কোন্ দিকটির সাদৃশ্য রয়েছে তা বর্ণনা কর। ঘ. উদ্দীপকের ঘটনা-১ ও ঘটনা-২-এর মাধ্যমে খলিফার চারিত্রিক মাহাত্ম্যের সমগ্র দিক প্রকাশ পায় কি? যৌক্তিক বিশ্লেষণ কর। |
আরও পড়ুনঃ জীবন বিনিময় কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর