‘সময়ের প্রয়োজনে’ গল্পটি জহির রায়হানের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত একটি গভীর ও আবেগময় অভিজ্ঞতা। এটি একজন মুক্তিযোদ্ধার দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা, যেখানে যুদ্ধের বিভীষিকা ও মানবিক অনুভূতির মিশ্রণ দেখা যায়। এই পোস্টে জহির রায়হানের সময়ের প্রয়োজনে গল্পের মূলভাব – ৮ম শ্রেণির বাংলা করে দিলাম।
Table of Contents
সময়ের প্রয়োজনে গল্পের মূলভাব (ছোট করে)
গল্পটি একজন মুক্তিযোদ্ধার মানসিক যাত্রা নিয়ে। তিনি যুদ্ধের জন্য এক ক্যাম্পে আসেন, যেখানে যুদ্ধের ভীতিকর দৃশ্য এবং মৃতদেহের উপস্থিতি তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। প্রথমে শোক অনুভব করলেও, যুদ্ধের বাস্তবতায় তা যেন স্বাভাবিক হয়ে যায়।
একদিন, লেখক টিলার উপর দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবেন, কীভাবে সব কিছু পাল্টে গেছে। তিনি শত্রুকে গুলি করার চেষ্টা করেন, কিন্তু মৃত্যুর অনুভূতি তাকে কাঁপিয়ে দেয়। ক্যাম্পে ফিরলে, পরিবার এবং মাতৃস্নেহের কথা মনে পড়ে। যুদ্ধের ব্যথা ও শোকের মধ্যে তিনি উপলব্ধি করেন, জীবন এবং মৃত্যুর মাঝে মানবিক সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম।
যুদ্ধের অন্ধকারে যখন সবার প্রাণ রক্ষার চেষ্টা, তখন লেখকের মনে প্রশ্ন ওঠে—”কেন যুদ্ধ?” তার ভেতরে যুদ্ধের উদ্দেশ্য নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। গল্পটি কেবল যুদ্ধের কাহিনী নয়, বরং মানুষের সম্পর্ক, প্রেম, এবং অস্তিত্বের সন্ধানে একটি গভীর চেতনা। লেখক বুঝতে পারেন, যুদ্ধের বিভীষিকা সত্ত্বেও মানুষের মধ্যে ভালোবাসা এবং সম্পর্ক কখনো ভাঙে না।
সময়ের প্রয়োজনে গল্পের মূলভাব
গল্পটি একটি মুক্তিযোদ্ধার যন্ত্রণাদায়ক যাত্রা এবং তার ভিতরের দ্বন্দ্বের কাহিনী। লেখক যুদ্ধকালীন সময়ের একটি অগ্রবর্তী ক্যাম্পে সংবাদ সংগ্রহ করতে যান, যেখানে তিনি ক্যাম্প-কমান্ডারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ক্যাম্প-কমান্ডার ব্যস্ত থাকায়, তিনি লেখককে একটি পুরানো খাতা পড়ে দেখার পরামর্শ দেন। এই খাতায় একজন মুক্তিযোদ্ধার অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি লেখা রয়েছে, যা যুদ্ধের ভেতরকার বিভীষিকা এবং মানুষের মানবিকতা তুলে ধরে।
যুদ্ধের দৃশ্যগুলি লেখকের মনে গভীর প্রভাব ফেলে। মৃতদেহের দৃশ্য দেখে তিনি প্রথমে প্রচণ্ড শোক অনুভব করেন, কিন্তু যুদ্ধের মধ্যে প্রবেশ করার পর এই অনুভূতিগুলি যেন আস্তে আস্তে ভোঁতা হয়ে যায়। তিনি দেখতে পান, মৃতদেহের উপস্থিতি, রক্তের ধারা—এগুলো এখন যেন তার জন্য স্বাভাবিক হয়ে গেছে। লেখকের কাছে মনে হয়, যুদ্ধের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা মানে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাওয়া।
লেখক যখন রাইফেল কাঁধে নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে দাঁড়িয়ে থাকেন, তখন তিনি অনুভব করেন, পূর্বের সম্পর্কগুলো কেমন যেন ভেঙে গেছে। যারা একসঙ্গে বসে খেত, গল্প করত—আজ তারা শত্রু হয়ে দাঁড়িয়ে। একদিন, লেখক টিলার উপর দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকান। চারপাশের প্রকৃতি, লাউয়ের মাচা, ধানখেত—সবকিছু তার মনে যুদ্ধের বাস্তবতা তুলে ধরে। যুদ্ধের তীব্রতা অনুভব করে তিনি ভাবতে থাকেন, এত কিছু কিভাবে বদলে গেল।
এদিকে, ক্যাম্পের সামনের দিকে লেখক একজন শত্রুকে লক্ষ্য করেন। তার মনে হয়, যদি তাকে হত্যা করতে পারে, তবে সে কিছুটা উল্লাস অনুভব করবে। কিন্তু যখন তিনি গুলি করেন, তখন তার মনে হয়, এই এক মুহূর্তের খুশি আসলে কতটা ক্ষণস্থায়ী। মৃত্যুর প্রতি তার মনোভাব যেন ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে। মৃত্যুর বিরুদ্ধে তার অসহায়ত্ব তাকে বিষণ্ন করে তোলে।
ক্যাম্প-কমান্ডারের সঙ্গে যখন লেখক কথোপকথনে লিপ্ত হন, তখন তিনি বুঝতে পারেন, তিনি যা দেখছেন, সেটি হয়তো সত্যি নয়। তার চিন্তা যে যুদ্ধের চেয়ে আলাদা, সেটিও ভাবনার বিষয়। যুদ্ধের এক অদ্ভুত মাদকতা লেখককে জড়িয়ে ধরে—যেখানে তিনি একজন যুদ্ধের যোদ্ধা হিসেবে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন, আবার অন্যদিকে অনুভব করছেন একটি অদৃশ্য সাহসী অস্তিত্বের।
লেখক আহত হওয়ার পর ক্যাম্পে ফিরে আসে। আহত হওয়ার পর, তিনি নিজেকে একেবারেই অসহায় মনে করেন। শরীরে ব্যথার সঙ্গে সঙ্গে, তিনি পরিবারের কথা ভাবেন। তাঁর মনে পড়ে, মা তাকে কড়া করে ডাকতেন, এবং সে সময়গুলো তার হৃদয়ে গভীর দাগ ফেলে। যুদ্ধের মাঝে যখন তিনি অসহায় হয়ে পড়েন, তখনই তার মনে হয়, তিনি কি আবার মায়ের কাছে ফিরে যেতে পারবেন? কি সে তার সঙ্গীদের সঙ্গে একসঙ্গে আবার নাস্তা করতে পারবে? এইসব চিন্তায় তিনি যুদ্ধের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেন।
মৃতদেহের বিভৎস দৃশ্য, আহত মানুষের কান্না—সবকিছু মিলিয়ে তার মনে একটি বিষণ্ণতা তৈরি করে। তিনি দেখতে পান, যুদ্ধের ভেতর একদিকে মৃত্যু, অপরদিকে বেঁচে থাকার চেষ্টা। সবাই মৃত্যুর ভয় থেকে পালানোর চেষ্টা করছে। লেখক নিজেকে প্রশ্ন করতে শুরু করেন, তারা কেন এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে? কি জন্য এই প্রাণহানী?
একদিন, সেক্টর কমান্ডার ক্যাম্পে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেন, “তোমরা কেন লড়াই করছ?” এই প্রশ্নের উত্তর দিতে লেখক এবং অন্য মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, “দেশের জন্য।” কিন্তু লেখক পরে ভেবে পান, দেশের ধারণা তো শুধুমাত্র ভূগোলের সঙ্গে সম্পর্কিত—এটি তো সীমারেখার পরিবর্তনের সাথে পাল্টায়। তাহলে তারা আসলে কি জন্য লড়াই করছে? যুদ্ধের কারণে সৃষ্টি হওয়া এই সব প্রশ্ন তার মনে অজস্র দ্বন্দ্ব তৈরি করে।
গল্পের এই অংশে লেখক যুদ্ধের ভেতরকার মানসিক চাপ, অস্তিত্বের অনিশ্চয়তা এবং মানবিক সম্পর্কের জটিলতা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেন। যুদ্ধের ময়দানে যেখানে মানুষ একে অপরের শত্রু হয়ে দাঁড়িয়ে, সেখানে মানবিক সম্পর্কের জন্যও কিছু মূল্যবান মুহূর্ত তৈরি হয়। লেখক উপলব্ধি করেন, যুদ্ধের বিভীষিকায় সত্ত্বেও মানুষের মধ্যে যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে, তা কিছুতেই শেষ হয় না।
এইভাবে, লেখকের অভিজ্ঞতা এবং তার মানসিক যাত্রা যুদ্ধের বাস্তবতার একটি শক্তিশালী চিত্রায়ন। গল্পটি শুধুমাত্র একটি যুদ্ধের কাহিনী নয়, বরং এটি মানুষের অনুভূতি, সম্পর্ক এবং অস্তিত্বের সন্ধানে একটি আধ্যাত্মিক যাত্রা। মৃত্যুর বিপরীতে, তারা একে অপরের জন্য বেঁচে থাকার চেষ্টা করে—এটি তাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। যুদ্ধের মাঝে ভাঙন, ভালোবাসা এবং মানবিক সম্পর্কের গুরুত্ব লেখককে একজন মানবিক মুক্তিযোদ্ধার রূপে চিত্রিত করে।
আরও পড়ুনঃ জোঁক গল্পের মূলভাব, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি
আরও পড়ুনঃ একদিন ভোরবেলা গল্পের মূলভাব (সহজ ভাষায়)
Related Posts
- সূচকের গল্প ৭ম শ্রেণির গণিত ১ম অধ্যায় (সবগুলো ছকের সমাধান)
- শব্দ থেকে কবিতা গল্পের মূলভাব হুমায়ুন আজাদের লেখা – ৮ম শ্রেণির বাংলা
- সুখী মানুষ গল্পের মূলভাব – মমতাজ উদ্দিন আহমেদ
- NCTB Class 6 Book 2024-ষষ্ঠ শ্রেণির বই ২০২৪ (মাধ্যমিক ও দাখিল)
- ময়নামতির চর কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন – ৭ম শ্রেণি
- আমাদের লোকশিল্প মূলভাব, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি – ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা
- আমাদের লোকশিল্প বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (MCQ)
- জীবন ও জীবিকা ৭ম শ্রেণি ৩য় অধ্যায়-আগামীর স্বপ্ন
- স্বাস্থ্য সুরক্ষা ৮ম শ্রেণির ২য় অধ্যায়- নিরাপদ খাবার নিরাপদ জীবন
- একদিন ভোরবেলা গল্পের মূলভাব সহজ ভাষায় – ৮ম শ্রেণির বাংলা