কপিলদাস মুর্মুর শেষ কাজ অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর

কপিলদাস মুর্মুর সংগ্রাম, বয়সের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করা, ভূমির প্রতি সাঁওতালদের গভীর সম্পর্ক এবং জাতিসত্তার অস্তিত্ব রক্ষার আপসহীন লড়াই এসবই গল্পটির বিষয়বস্তু। এই পোস্টে কপিলদাস মুর্মুর শেষ কাজ অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর লিখে দিলাম।

কপিলদাস মুর্মুর শেষ কাজ অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর

১। গল্পে ‘কপিলদাস মুর্মু’ চরিত্রের বর্ণনা কর।
উত্তর: কপিলদাস মুর্মু একজন বৃদ্ধ সাঁওতাল যিনি নিজের ভূমি আর জাতিসত্তার প্রতি অসীম ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতা অনুভব করেন। তাঁর চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো সংগ্রামী চেতনা এবং আত্মত্যাগী সাহস। বয়সের ভার সত্ত্বেও তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যান। তাঁর এই মনোভাবই তাঁকে জাতিসত্তার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরে।

২। কপিলদাসের সংগ্রামে শিশুরা কীভাবে প্রেরণা যোগায়?
উত্তর: শিশুরা কপিলদাসের গল্প ও কর্মকাণ্ডে বিশেষ আগ্রহী। তাদের মধ্যে কোনো ভয় কিংবা সংশয় নেই; তারা কপিলদাসের প্রতি বিশ্বাস রেখে তাঁকে সম্মান জানায়। এই শিশুদের উৎসাহ আর বিশ্বাস কপিলদাসকে নতুন করে সাহস ও উদ্দীপনা দেয়। তিনি বুঝতে পারেন যে তাঁর লড়াই বৃথা নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই চেতনা বহন করে এগিয়ে যাবে।

৩। কপিলদাস মুর্মুর সংগ্রাম কীভাবে সাঁওতাল জাতিসত্তার প্রতীক ?
উত্তর: কপিলদাসের সংগ্রাম কেবল তাঁর নিজস্ব লড়াই নয়, এটি পুরো সাঁওতাল জাতির ভূমি ও সংস্কৃতি রক্ষার প্রতীক। তাঁর এই আত্মত্যাগী লড়াই সাঁওতালদের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ। তাই কপিলদাসের চরিত্র জাতিসত্তার অস্তিত্ব রক্ষার এক অনড় চেতনাকে প্রতিফলিত করে।

৪। কপিলদাসের অস্ত্র ব্যবহার আত্মমর্যাদার প্রতীকব্যাখ্যা কর।
উত্তর: গল্পে তির-ধনুক কপিলদাসের সংগ্রামের প্রতীকী অস্ত্র। এটি কেবল আত্মরক্ষার হাতিয়ার নয়, বরং তাঁর ঐতিহ্য আর বীরত্বের পরিচায়ক। অস্ত্র হাতে নিয়ে তিনি বুঝিয়ে দেন, বয়স কিংবা শারীরিক সীমাবদ্ধতা তাঁকে দমাতে পারে না। এই তির-ধনুক ব্যবহার করে তিনি নিজের এবং জাতির আত্মমর্যাদার লড়াই চালিয়ে যান।

৫। কপিলদাসের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন ছিল?
উত্তর: সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল কপিলদাসকে একজন বৃদ্ধ এবং অক্ষম মানুষ হিসেবে দেখার। তারা মনে করত, কপিলদাসের পক্ষে আর কিছু করা সম্ভব নয়। এমনকি তাঁকে নিরুৎসাহিতও করত। তবে এই হতাশা এবং উপেক্ষার মাঝেই কপিলদাস নিজেকে প্রমাণ করেন। তিনি দেখিয়ে দেন যে সত্যিকারের সাহস এবং চেতনার কোনো বয়স নেই।

৬। সাঁওতালদের ভূমি রক্ষার ঐতিহ্য কীভাবে গল্পে উঠে এসেছে?
উত্তর: সাঁওতালদের রক্তে মিশে থাকা ভূমি রক্ষার ঐতিহ্য গল্পের কেন্দ্রে রয়েছে। সাঁওতালদের অস্তিত্বই তাদের জমি এবং পরিবেশের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। কপিলদাস মুর্মুর লড়াই সেই ঐতিহ্যেরই এক বীরত্বপূর্ণ উদাহরণ। তিনি নিজের শেষ শক্তি দিয়ে প্রমাণ করেন যে ভূমি রক্ষার চেতনা কখনো মরে না।

৭। কপিলদাস কীভাবে তরুণদের দ্বিধা কাটিয়ে দেন?
উত্তর: তরুণদের মধ্যে ভূমি রক্ষার চেতনা থাকলেও তারা দ্বিধাগ্রস্ত ছিল। কপিলদাস নিজ উদ্যোগে এবং সাহসের সঙ্গে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে এই দ্বিধা ভেঙে দেন। তাঁর আত্মবিশ্বাস এবং সাহস তরুণদের মনে দৃঢ়তা আনে। কপিলদাসের দৃঢ় পদক্ষেপ দেখে তারা উপলব্ধি করে যে লড়াই চালিয়ে যাওয়াই একমাত্র পথ।

৮। কপিলদাসের চরিত্রের নান্দনিকতা ফুটে উঠেছে। ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: কপিলদাসের চরিত্রের নান্দনিকতা তাঁর অক্লান্ত সংগ্রামে এবং বয়সের সীমা অতিক্রম করার চেষ্টায় ফুটে উঠেছে। তাঁর মধ্যে এক ধরনের সহজ সরলতা এবং দৃঢ় সংকল্প আছে। বিশেষ করে মাটির প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা ও আত্মত্যাগী মনোভাব গল্পটিকে আরও সুন্দর এবং প্রভাবশালী করে তুলেছে।

৯। কপিলদাসের সংগ্রামের শেষ পরিণতি কী শিক্ষা দেয়?
উত্তর: কপিলদাসের সংগ্রামের শেষ পরিণতি আমাদের শেখায় যে লড়াইয়ের কোনো নির্দিষ্ট বয়স নেই। নিজের অধিকার রক্ষার চেতনা যতদিন জীবিত থাকবে, ততদিন সংগ্রাম চলতেই থাকবে। তাঁর লড়াইয়ের মাধ্যমে আশার এক দ্যোতনা জাগে যে উন্মুলিতপ্রায় মানুষও সাহসের সঙ্গে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারে।

১০। কপিলদাসের স্মৃতিকথার গল্পে কি গুরুত্ব বহন করে?
উত্তর: কপিলদাসের স্মৃতিকথা তাঁর অতীতের বীরত্বপূর্ণ ঘটনা এবং সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরে। এসব স্মৃতি তাঁকে নতুন লড়াইয়ে অংশ নিতে মানসিক শক্তি জোগায়। একই সঙ্গে তরুণ প্রজন্মকে তাঁদের ঐতিহ্যের কথা মনে করিয়ে দেয়। তাঁর স্মৃতিগুলো কল্পনা আর বাস্তবতার মিশেলে এক বীরত্বগাথা তৈরি করে, যা গল্পকে আরও গভীরতা দেয়।

১১। কপিলদাস কীভাবে নিজের বয়সকে অতিক্রম করেন?
উত্তর: কপিলদাস নিজের শারীরিক দুর্বলতা এবং বয়সজনিত সীমাবদ্ধতা মনের জোরে অতিক্রম করেন। যখন ভূমি হারানোর ভয় চরমে পৌঁছায়, তখন তাঁর মধ্যে সংগ্রামী চেতনা জেগে ওঠে। শিশুদের উৎসাহ এবং নিজের স্মৃতিগুলো তাঁকে নতুন করে প্রাণিত করে। তাই শেষ লড়াইয়ে তিনি নিজের বয়স ভুলে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যান।

১২। ‘কপিলদাস মুর্মুর শেষ কাজগল্পে শিশুদের ভূমিকা কী?
উত্তর: শিশুদের চরিত্র গল্পে আশার প্রতীক। তারা কপিলদাসের প্রতি শ্রদ্ধা ও আগ্রহ দেখিয়ে বোঝায় যে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে সংগ্রামের চেতনা এখনো জীবিত। যখন অন্যরা কপিলদাসকে অবহেলা করে, তখন শিশুরা তাঁকে উৎসাহ দেয়। এই ভূমিকা কপিলদাসকে নতুন চেতনা দেয় এবং গল্পের শেষ পর্যন্ত তাঁকে প্রেরণা জোগায়।

১৩। কপিলদাসের সংগ্রামের সময় তরুণদের মানসিক অবস্থা কেমন ছিল?
উত্তর: তরুণরা ভূমি রক্ষার সংকটে উদ্বিগ্ন ছিল, কিন্তু তারা দ্বিধাগ্রস্ত ও ভীত ছিল। কপিলদাসের দৃঢ় মনোভাব এবং সাহসিকতা দেখে তারা নতুন করে সাহস পায়। কপিলদাসের লড়াই তরুণদের মনে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনে। তারা উপলব্ধি করে যে লড়াই ছাড়া নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করা সম্ভব নয়।

১৪। কপিলদাসের তির ছোড়ার দৃশ্য কী প্রতীক করে?
উত্তর: তির ছোড়ার দৃশ্য কপিলদাসের চেতনার জাগরণ এবং প্রতিরোধের প্রতীক। এটি তাঁর দীর্ঘদিনের নিস্তেজ অবস্থা থেকে মুক্তির চিহ্ন। যখন তিনি তির-ধনুক হাতে শত্রুর দিকে তির ছুঁড়তে থাকেন, তখন এটি শুধু ব্যক্তিগত লড়াই নয়; বরং একটি গোটা সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব রক্ষার প্রতীক হয়ে ওঠে।

১৫। ‘কপিলদাস মুর্মুর শেষ কাজ গল্পে ভূমির গুরুত্ব কতটুকু?
উত্তর: সাঁওতালদের জন্য ভূমি কেবল সম্পত্তি নয়, বরং তাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং অস্তিত্ব সবই ভূমির সঙ্গে জড়িত। কপিলদাসের লড়াই এই ভূমির গুরুত্বকে নতুনভাবে তুলে ধরে। ভূমি হারানোর আশঙ্কায় তাদের সংগ্রাম আরও তীব্র হয় এবং গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।

১৬। কপিলদাসের আত্মত্যাগের সার্থকতা কোথায়?
উত্তর: কপিলদাসের আত্মত্যাগ প্রমাণ করে যে স্বাধীনতা এবং অধিকার রক্ষার জন্য বয়স বা শারীরিক দুর্বলতা কোনো বাধা নয়। তাঁর আত্মত্যাগ পুরো সম্প্রদায়কে চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে এবং পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে সাহস জাগিয়ে তোলে। এই আত্মত্যাগের মাধ্যমে তিনি ভবিষ্যৎ সংগ্রামের ভিত্তি তৈরি করেন।

১৭। কপিলদাসের চরিত্র কীভাবে সমাজের প্রচলিত চিন্তার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়?
উত্তর: সমাজের প্রচলিত ধারণা ছিল যে বৃদ্ধরা কোনো বড় কাজ করতে পারে না। কপিলদাস তাঁর সাহসিকতা দিয়ে এই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেন। তিনি দেখিয়ে দেন যে সংকটে সাহস এবং দৃঢ়তা থাকলে যে কেউ লড়াই করতে পারে। তাঁর এই অবস্থান সমাজের নিস্তেজ ভাবনাকে চ্যালেঞ্জ করে।

১৮। লেখকের ভাষাশৈলী গল্পের শিল্পগুণকে কীভাবে সমৃদ্ধ করেছে?
উত্তর: লেখক সাঁওতালদের কথনভঙ্গি এবং স্থানীয় শব্দ ব্যবহার করে গল্পের আবহকে জীবন্ত করে তুলেছেন। গল্পের বর্ণনা, চরিত্রদের ভাষা এবং পরিবেশের চিত্রায়ণ এতটাই বাস্তবসম্মত যে পাঠকেরা সহজেই সেই সংগ্রামী পরিবেশ অনুভব করতে পারে। এই ভাষাশৈলী গল্পের শিল্পগুণকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।

আরও পড়ুনঃ কপিলদাস মুর্মুর শেষ কাজ জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

Related Posts

Leave a Comment