বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘অপরিচিতা’ গল্পটিতে এক কথায় নারীর মর্যাদা আর আত্মসম্মানের গল্প। এই পোস্টে অপরিচিতা গল্পের মূল কথা সহজ ভাষায় – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম। বড় মূলভাবটি পড়লে ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।
Table of Contents
অপরিচিতা গল্পের মূল কথা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘অপরিচিতা’ গল্পটি নারীর আত্মমর্যাদা এবং সম্মান প্রতিষ্ঠার কথা বলে। এই গল্পে, লেখক দেখিয়েছেন যে নারীর সৌন্দর্য শুধু বাহ্যিক নয়, তার মানসিক শক্তিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। গল্পের মূল চরিত্র কল্যাণী, যিনি তার পিতার সহযোগিতায় বিয়ের প্রথাগত শর্তগুলোর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নিজের মর্যাদা রক্ষা করেন। কল্যাণীর বিয়ে ঠিক হয়েছিল কলকাতার এক এমএ পাশ যুবকের সঙ্গে। কিন্তু সেই যুবকের মামা খুবই নির্লজ্জভাবে পণের টাকা নিয়ে দরাদরি করতে থাকে এবং সন্দেহ প্রকাশ করে, এমনকি গহনার মান যাচাই করায়। এই অপমানজনক আচরণে কল্যাণীর পিতা, শম্ভুনাথ সেন, বিয়ে ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। শম্ভুনাথ সেন তার মেয়েকে অপমান সহ্য করতে দেন না এবং শক্তভাবে এই বিয়েকে প্রত্যাখ্যান করেন। গল্পের শেষাংশে কল্যাণীর চরিত্র এক বলিষ্ঠ নারীর পরিচায়ক হয়ে ওঠে। তার বিদ্রোহ এবং আত্মপ্রকাশ ভবিষ্যতের স্বাধীন নারীর প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। এদিকে, গল্পের বর্ণনাকারী যুবক অনুপম, কল্যাণীর সাহসিকতার মুখে নিজের দীনতা স্বীকার করে।
অপরিচিতা গল্পের মূল কথা বড় করে
গল্প “অপরিচিতা” নারীর মর্যাদাপ্রতিষ্ঠার এক বলিষ্ঠ আখ্যান। এই গল্পে লেখক নারী চরিত্র কল্যাণীকে দৈহিক সৌন্দর্যের গণ্ডির বাইরে এনে মানসিক শক্তি এবং আত্মমর্যাদার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছেন। কল্যাণীর বিদ্রোহ এবং দৃঢ় সংকল্প নারীর সম্মান রক্ষায় তার অটল অবস্থানকে প্রকাশ করে।
গল্পের শুরুতেই দেখা যায়, শম্ভুনাথ সেন তার কন্যা কল্যাণীর বিয়ে ঠিক করেন কলকাতার এক শিক্ষিত যুবকের সাথে। কিন্তু সেই যুবকের অভিভাবক, তার মামা, এক অত্যন্ত নিঃস্বজ্জন চরিত্রের মানুষ। এই লোকটি অত্যন্ত তুচ্ছ আর্থিক লেনদেন এবং পণ নিয়ে অসহ্য নির্লজ্জতার পরিচয় দেয়। সে পণ নিয়ে দরাদরি করে, স্বর্ণালঙ্কারের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে, এমনকি অলঙ্কার পরীক্ষা করার জন্য সেকরা পাঠিয়ে দেয়।
শম্ভুনাথ সেন এই অপমান সহ্য করতে পারেন না। তিনি তার কন্যার আত্মমর্যাদা এবং সম্মান রক্ষার জন্য দৃঢ় সংকল্পে বিয়ে ভেঙে দেন। যখন বিয়ের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন তখন এমন পরিস্থিতিতে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া সমাজে অত্যন্ত সাহসিকতার ব্যাপার ছিল। কিন্তু শম্ভুনাথ সেন কন্যার সম্মানের প্রশ্নে কোনোরকম আপস করেন না।
কল্যাণীর চরিত্র এই গল্পের কেন্দ্রে অবস্থিত, এবং তার মানসিক শক্তি, আত্মসম্মানবোধ এবং দৃঢ় ব্যক্তিত্ব গল্পটিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। কল্যাণী এই বিয়ে ভাঙার পর নারীর শিক্ষার দিকে মনোযোগ দেয় এবং সমাজে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশ নেয়। সে সিদ্ধান্ত নেয়, বিয়ে নয়; বরং নারীর স্বাধীনতা ও সম্মানের জন্য কাজ করে যাবে।
গল্পের বর্ণনাকারী অনুপম, কল্যাণীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও মুগ্ধতা প্রকাশ করে। কল্যাণীর আত্মসম্মানবোধ এবং তার শক্তিশালী অবস্থান অনুপমের মনে মিশ্র অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। সে একদিকে কল্যাণীর প্রতি আকর্ষিত, অন্যদিকে নিজের দুর্বলতা এবং সমাজের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা তাকে কুড়ে কুড়ে খায়। কল্যাণীর এই অবস্থান এবং তার দৃঢ় সংকল্পই তাকে গল্পে “অপরিচিতা” করে তোলে।
আরও পড়ুনঃ বিলাসী গল্পের মূল বিষয়বস্তু সহজ ভাষায়
Related Posts
- বিলাসী গল্পের সারাংশ বা মূল বিষয়বস্তু – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- বায়ান্নর দিনগুলো সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (জ্ঞানমূলক প্রশ্ন উত্তর)
- মাসি পিসি গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর-একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- আমার পথ প্রবন্ধের মূলভাব সহজ ভাষায় – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- রেইনকোট গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর -একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন -একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- একটি তুলসী গাছের কাহিনী গল্পের মূল বিষয়বস্তু – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- তাহারেই পড়ে মনে কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর -একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- আঠারো বছর বয়স কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন -একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা