মহাদেব সাহার ‘এই অক্ষরে ‘ কবিতায় কবি বাংলা ভাষা ও অক্ষরের শক্তিকে উদযাপন করেছেন। এটি শুধু ভাষা নয়, বরং আমাদের আবেগ, স্মৃতি, স্বপ্ন, সংগ্রাম ও বিজয়েরও প্রতীক। এই পোস্টে এই অক্ষরে কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর লিখে দিলাম।
এই অক্ষরে কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন
১। ‘এই অক্ষরে মাকে মনে পড়ে’ বলতে কবি কি বুঝিয়েছেন?- ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: এই অক্ষরে মাকে মনে পড়ে” বলতে কবি বাংলা ভাষার মাধ্যমে তার মায়ের স্মৃতি জাগ্রত হওয়ার কথা বুঝিয়েছেন। মায়ের কাছ থেকেই আমরা প্রথম বাংলা ভাষা শিখি, তাই বাংলা অক্ষর দেখলে কবির মনে মায়ের স্নেহময় স্মৃতি ভেসে ওঠে। এটি তার হৃদয়ে গভীর আবেগ ও ভালোবাসার সৃষ্টি করে, যা তার মনকে নদীর মতো প্রবাহিত করে তোলে।
২। কবি কেন বাংলা অক্ষরকে “নির্ঝর” এর সাথে তুলনা করেছেন?
উত্তর: কবি বাংলা অক্ষরকে “নির্ঝর” বা ঝরনার সাথে তুলনা করেছেন কারণ, এটি অবিরাম প্রবাহমান। বাংলা ভাষা অতীত থেকে বর্তমান হয়ে ভবিষ্যতের দিকে ছুটে চলেছে। এটি আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে শুরু হয়ে আমাদের মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যেমন ঝরনা কখনো থামে না, তেমনি বাংলা ভাষাও চিরন্তন।
৩। “আকাশেতে লিখে নাম” বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: “আকাশেতে লিখে নাম” বলতে কবি বাংলা অক্ষরের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব বোঝাতে চেয়েছেন। বাংলা ভাষা আমাদের ইতিহাস ও সংগ্রামের সাক্ষী। এটি আকাশের তারার মতো জ্বলজ্বল করে এবং আমাদের পাহারা দেয়। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় আমাদের ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা।
৪। কবির মনে কেন মায়ের কথা আসে বাংলা অক্ষর দেখলে?
উত্তর: কবির মনে মায়ের কথা আসে কারণ, মায়ের কাছ থেকেই আমরা প্রথম বাংলা ভাষা শিখি। মা আমাদের প্রথম শিক্ষক, যিনি আমাদের বাংলা বলতে ও বুঝতে শেখান। তাই বাংলা অক্ষর দেখলে কবির মনে মায়ের স্নেহময় স্মৃতি ভেসে ওঠে এবং তার মন নদীর মতো প্রবাহিত হয়।
৫। “মন হয়ে যায় নদী” বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: “মন হয়ে যায় নদী” বলতে কবি বাংলা অক্ষরের মাধ্যমে তার মনে আবেগের সৃষ্টি হওয়া বোঝাতে চেয়েছেন। নদী যেমন অবিরাম প্রবাহিত হয়, তেমনি বাংলা অক্ষর দেখলে কবির মনেও আবেগের স্রোত বয়ে যায়। এটি তার মনে গভীর অনুভূতি ও স্মৃতির সৃষ্টি করে।
৬। কবি কেন বাংলা অক্ষরকে “সুরের নূপুর” এর সাথে তুলনা করেছেন?
উত্তর: কবি বাংলা অক্ষরকে “সুরের নূপুর” এর সাথে তুলনা করেছেন কারণ, এটি তার মনে গান ও সুরের সৃষ্টি করে। নূপুর যেমন পায়ে পরে সুর বাজায়, তেমনি বাংলা অক্ষরও কবির মনে সুরের মূর্ছনা তোলে। এটি তাকে আনন্দ দেয় এবং তার মনকে উদাস করে তোলে।
৭। কবি কেন বাংলা অক্ষরকে “আত্মীয়-পর” বলেছেন?
উত্তর: কবি বাংলা অক্ষরকে “আত্মীয়-পর” বলেছেন কারণ, এটি শুধু তার নিজের নয়, বরং সব বাঙালির। বাংলা ভাষা আপন-পর সবাইকে একসাথে বেঁধে রাখে এবং সবাইকে কাছে টানে। এটি আমাদের ঐক্য ও সংহতির প্রতীক।
৮। “শিলালিপি লেখা হয়” বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: “শিলালিপি লেখা হয়” বলতে কবি বাংলা ভাষার দীর্ঘস্থায়ী ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব বোঝাতে চেয়েছেন। শিলালিপি যেমন পাথরে খোদাই করে রাখা হয়, তেমনি বাংলা ভাষাও আমাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতির অমূল্য সম্পদ। এটি আমাদের ঐতিহ্য ও গর্বের প্রতীক।
৯। কবি কেন বাংলা ভাষাকে “প্রিয় ভাষা” বলেছেন?
উত্তর: কবি বাংলা ভাষাকে “প্রিয় ভাষা” বলেছেন কারণ, এটি তার হৃদয়ের ভাষা। এই ভাষা তার মনে আশা জাগায়, তাকে স্বপ্ন দেখায় এবং গানের মাধ্যমে মুগ্ধ করে। এটি তার আবেগ, স্মৃতি ও সংগ্রামের অংশ।
১০। কবি কেন বাংলা অক্ষরকে “উদাস কবি” বলেছেন?
উত্তর: কবি বাংলা অক্ষরকে “উদাস কবি” বলেছেন কারণ, এটি তার মনে গান ও স্বপ্নের সৃষ্টি করে। এটি তাকে কল্পনার জগতে নিয়ে যায় এবং তার মনকে উদাস করে তোলে। বাংলা অক্ষর তার মনে সুরের নূপুর বাজায় এবং তাকে আনন্দ দেয়।
১১। কবি কেন বাংলা অক্ষরকে “রূপকথা” এর সাথে তুলনা করেছেন?
উত্তর: কবি বাংলা অক্ষরকে “রূপকথা” এর সাথে তুলনা করেছেন কারণ, এটি তার মনে স্বপ্ন ও কল্পনার জগত তৈরি করে। রূপকথার মতোই বাংলা অক্ষর তাকে এক অন্য জগতে নিয়ে যায়, যেখানে সব কিছু সুন্দর ও সম্ভব।
১২। কবি কেন বাংলা অক্ষরকে “যুদ্ধ করেছি জয়” বলেছেন?
উত্তর: কবি বাংলা অক্ষরকে “যুদ্ধ করেছি জয়” বলেছেন কারণ, বাংলা ভাষার মাধ্যমেই আমরা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে অনুপ্রেরণা পেয়েছি। এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার ছিল। বাংলা ভাষার জন্যই আমরা আমাদের অধিকার আদায় করেছি এবং স্বাধীনতা অর্জন করেছি।
১৩। কবি কেন বাংলা অক্ষরকে “অপরূপ ছবি” বলেছেন?
উত্তর: কবি বাংলা অক্ষরকে “অপরূপ ছবি” বলেছেন কারণ, এটি তার মনে সুন্দর সুন্দর ছবি ভেসে তোলে। বাংলা অক্ষর তার মনকে আনন্দ ও সৌন্দর্যে ভরিয়ে তোলে এবং তাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে।
১৪। কবি কেন বাংলা অক্ষরকে “ডাক নাম ধরে” বলেছেন?
উত্তর: কবি বাংলা অক্ষরকে “ডাক নাম ধরে” বলেছেন কারণ, এটি তার মনে রূপকথা ও স্বপ্নের জগত তৈরি করে। এটি যেন তাকে নাম ধরে ডাকে এবং তার সাথে কথা বলে। এটি তার মনে আবেগ ও অনুভূতির সৃষ্টি করে।
১৫। বাংলা অক্ষর গানে বিমোহিত কেন?
উত্তর: কবি বাংলা অক্ষরকে “গানে বিমোহিত” বলেছেন কারণ, এটি তার মনে গান ও সুরের সৃষ্টি করে। বাংলা অক্ষর তার মনকে আনন্দে ভরিয়ে তোলে এবং তাকে গানের মাধ্যমে মুগ্ধ করে। এটি তার হৃদয়ে সুরের মূর্ছনা তোলে।
১৬। ‘এই অক্ষর’ বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: কবিতায় ‘এই অক্ষর’ বলতে কবি বাংলা বর্ণমালা এবং ভাষাকে বোঝাতে চেয়েছেন। বাংলা ভাষা শুধু কথার বাহন নয়, এটি বাঙালির চেতনার মূলভিত্তি। কবি মনে করেন, বাংলা অক্ষর আমাদের আনন্দ, আবেগ, ইতিহাস ও সংগ্রামের প্রতীক।
১৭। ‘অক্ষরগুলি চায় মুখ তুলি’——ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘অক্ষরগুলি চায় মুখ তুলি’—এই পঙক্তিতে কবি বুঝিয়েছেন, বাংলা ভাষা এবং তার বর্ণমালা কেবল লেখা বা উচ্চারিত হওয়ার জন্য নয়, বরং এটি প্রকাশিত হতে চায়, সম্মানিত হতে চায়। ভাষার প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা এবং তার যথাযথ চর্চার মাধ্যমে এটি বিকশিত হয়।
১৮। কবিতায় মা এবং অক্ষরের মধ্যে সম্পর্ক কী?
উত্তর: কবিতায় কবি বাংলা অক্ষরকে “মায়ের” সঙ্গে তুলনা করেছেন, যা বাঙালির কাছে সবচেয়ে আপন ও শ্রদ্ধার প্রতীক। যেমন মা আমাদের প্রথম কথা শেখান, বাংলা অক্ষরও আমাদের মনের ভাব প্রকাশের প্রধান মাধ্যম। তাই কবির কাছে বাংলা ভাষা মানে মায়ের মতোই গভীর ভালোবাসার উৎস।
১৯। ‘এই অক্ষর আত্মীয়-পর সকলেরে কাছে টানে’—ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: বাংলা ভাষা কেবল একটি যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি আমাদের সাংস্কৃতিক ঐক্যের প্রতীক। ভাষার শক্তি সব ভেদাভেদ ভুলিয়ে দিতে পারে এবং মানুষকে এক সুতোয় বাঁধতে পারে। বাংলা ভাষা আমাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক বন্ধনকে দৃঢ় করে এবং সকলকে এক সূত্রে আবদ্ধ করে।