মুহম্মদ শহীদুল্লাহ রচিত ‘সততার পুরস্কার’ গল্পটি, যা মূলত এক ধরনের নীতিগল্প। এখানে সততা ও কৃতজ্ঞতার গুরুত্ব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গল্পটিতে তিনজন ব্যক্তি—একজন ধবলরোগী, একজন টাকওয়ালা, ও একজন অন্ধ—আল্লাহর কৃপায় সুস্থ ও সম্পদশালী হয়ে ওঠেন। এই পোস্টে সততার পুরস্কার গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর লিখে দিলাম।
সততার পুরস্কার গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন
১। ‘সততার পুরস্কার’ গল্পের তিনজনের সমস্যাগুলো কী ছিল?
উত্তর: গল্পের তিনজন প্রধান চরিত্র হলেন—একজন ধবলরোগী, একজন টাকওয়ালা, এবং একজন অন্ধ। ধবলরোগীর গায়ের চামড়া বিকৃত ছিল, টাকওয়ালার মাথায় চুল ছিল না, এবং অন্ধ ব্যক্তি দৃষ্টিশক্তিহীন ছিল। তারা প্রত্যেকেই নিজেদের শারীরিক সমস্যার কারণে সমাজে অবহেলিত ছিল এবং আল্লাহর কৃপা কামনা করত।
২। ফেরেশতা কিভাবে তাদের পরীক্ষা নিতে এলেন?
উত্তর: আল্লাহর আদেশে এক ফেরেশতা মানুষের রূপ ধরে তাদের কাছে আসেন। প্রথমে তিনি তাদের শারীরিক সমস্যা দূর করেন এবং তাদের সম্পদ দান করেন। পরে, এক ভিক্ষুকের ছদ্মবেশে এসে তাদের কাছে সাহায্য চান, যাতে দেখা যায় তারা আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞ কি না।
৩। ফেরেশতা কীভাবে ধবল রোগীর পরীক্ষা নেন?
উত্তর: ফেরেশতা প্রথমে ধবল রোগীর কাছে আসেন এবং তার কাছে জানতে চান সে সবচেয়ে বেশি কী চায়। ধবলরোগী বলেন, তিনি সুস্থ হতে চান যাতে মানুষ তাকে ঘৃণা না করে। ফেরেশতা আল্লাহর কৃপায় তার শরীর ভালো করে দেন এবং তাকে একটি উট দেন, যা ধীরে ধীরে বিশাল সংখ্যায় পরিণত হয়।
৪। টাকওয়ালা ফেরেশতার অনুরোধে কী বলেন?
উত্তর: ফেরেশতা যখন টাকওয়ালার কাছে সাহায্য চান, তখন সে মিথ্যা বলে যে তার কখনো টাক ছিল না এবং সে আগে থেকেই ধনী ছিল। সে ফেরেশতাকে কোনো সাহায্য করতে অস্বীকার করে। এর ফলে ফেরেশতা তাকে সাবধান করেন যে আল্লাহ যদি চান, তবে তাকে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে পারেন।
৫। অন্ধ ব্যক্তি কীভাবে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে?
উত্তর: অন্ধ ব্যক্তি বিনয়ের সঙ্গে স্বীকার করেন যে তিনি একসময় দৃষ্টিশক্তিহীন ছিলেন এবং আল্লাহ তাকে দৃষ্টিশক্তি ও সম্পদ দিয়েছেন। ফেরেশতা যখন তার কাছে সাহায্য চান, তখন তিনি খুশি মনে দান করতে রাজি হন এবং বলেন, আল্লাহর নামে যা ইচ্ছা নেওয়া যেতে পারে।
৬। ধবলরোগী ও টাকওয়ালা কেন মিথ্যা কথা বলেছিল?
উত্তর: ধবলরোগী ও টাকওয়ালা সম্পদ লাভের পর নিজেদের অতীত ভুলে গিয়েছিল এবং অহংকারী হয়ে উঠেছিল। তারা মনে করেছিল, যদি তারা গরিব বা অসুস্থ থাকার কথা স্বীকার করে, তবে তাদের সম্মান কমে যাবে। তারা সম্পদের মোহে পড়ে দান করতে চায়নি।
৭। ‘সততার পুরস্কার’ শিক্ষণীয় দিক কী?
উত্তর: গল্পটি আমাদের সততা, কৃতজ্ঞতা ও দানশীলতার শিক্ষা দেয়। এতে বোঝানো হয়েছে, আল্লাহ যাদের দয়া করেন, তাদের উচিত সেই নেয়ামতের সদ্ব্যবহার করা। যারা অহংকার করে ও মিথ্যা বলে, তারা শেষ পর্যন্ত শাস্তি পায়, আর যারা সত্যবাদী ও দানশীল, তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করে।
৮। ফেরেশতা কীভাবে ধবলরোগী ও টাকওয়ালাকে শাস্তি দেন?
উত্তর: ফেরেশতা যখন ধবলরোগী ও টাকওয়ালার মিথ্যা ও অকৃতজ্ঞতা লক্ষ্য করেন, তখন তিনি বলেন, “আল্লাহ যদি চান, তবে তিনি তোমাদের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেবেন।” এই কথার মধ্য দিয়ে তিনি ইঙ্গিত দেন যে আল্লাহর অনুগ্রহ কৃতজ্ঞ ব্যক্তিদের জন্য, অকৃতজ্ঞদের জন্য নয়।
৯। গল্পে ফেরেশতা কেন অন্ধ ব্যক্তিকে পুরস্কৃত করেন?
উত্তর: অন্ধ ব্যক্তি আল্লাহর কৃপা স্বীকার করে এবং দানের সময় বিনয়ের সাথে বলেন, “আল্লাহ যা দিয়েছেন, তা থেকে আমি খুশি মনে দান করতে রাজি।” তার এই সততা ও কৃতজ্ঞতায় ফেরেশতা খুশি হন এবং বলেন যে আল্লাহ তাকে আরও বরকত দেবেন।
১০। তিনজনকে ফেরেশতা কীভাবে সাহায্য করলেন?
উত্তর: ফেরেশতা আল্লাহর আদেশে মানুষের রূপে তাদের কাছে গেলেন এবং একে একে তিনজনের সমস্যার সমাধান করলেন। ধবলরোগীর গায়ের রং ঠিক করে দিলেন, টাকওয়ালার মাথায় চুল এনে দিলেন, আর অন্ধকে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিলেন। শুধু তাই নয়, তাদের ভাগ্য খুলে দেওয়ার জন্য যথাক্রমে উট, গরু ও ছাগল দিলেন, যা ধীরে ধীরে প্রচুর সম্পত্তিতে পরিণত হলো।
১১। ফেরেশতা কেন আবার তাদের কাছে গেলেন?
উত্তর: ফেরেশতা প্রথমবার তাদের দুঃখ মোচন করেছিলেন, কিন্তু আল্লাহ দেখতে চাইলেন যে তারা কৃতজ্ঞ ও উদার হয়েছে কি না। তাই ফেরেশতা গরিব মানুষের রূপ ধরে গিয়ে তাদের কাছ থেকে সাহায্য চাইলেন, যাতে বোঝা যায় তারা সত্যিই আল্লাহর দানকে স্বীকার করে কি না।
১২। ধবলরোগী আর টাকওয়ালার ব্যবহার কেমন ছিল?
উত্তর: তারা নিজেদের পুরনো দুঃখ-কষ্ট একেবারেই ভুলে গিয়েছিল। ফেরেশতা গরিব মানুষের ছদ্মবেশে তাদের কাছে গিয়ে সাহায্য চাইলে, তারা সম্পদ দিতে অস্বীকার করল। শুধু তাই নয়, তারা মিথ্যা বলে দাবি করল যে তারা কখনো গরিব বা অসুস্থ ছিল না!
১৩। ধবলরোগী কেন ফেরেশতার অনুরোধ ফিরিয়ে দিল?
উত্তর: ধবলরোগী এখন অনেক ধনী হয়ে গেছে। সে আর মনে করতে পারছিল না যে একসময় তার গায়ের রঙ খারাপ ছিল, আর লোকে তাকে ঘৃণা করত। তাই যখন ফেরেশতা সাহায্য চাইতে এলেন, সে অহংকার করে বলল যে তার উটের দাম অনেক, তাই সে কিছু দিতে পারবে না।
১৪। টাকওয়ালা কিভাবে অহংকার দেখাল?
উত্তর: টাকওয়ালা তার পুরনো অবস্থা ভুলে গিয়েছিল। ফেরেশতা যখন তার কাছে গিয়ে একটি গাভি চাইলেন, তখন সে অবিশ্বাসের সাথে বলল, “আমি তো কখনো গরিব ছিলাম না! আমার তো সবসময়ই চুল ছিল!” এই মিথ্যা ও অহংকারই তাকে আসল পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দিল।
১৫। অন্ধ ব্যক্তি ফেরেশতার সাথে কেমন আচারণ করল?
উত্তর: অন্ধ ব্যক্তি কৃতজ্ঞতার সাথে স্বীকার করল যে সে একসময় দৃষ্টিহীন ছিল এবং আল্লাহর দয়া পেয়েছে। তাই সে বলল, “আল্লাহ আমাকে দয়া করেছেন, তাই তোমার যা দরকার নিয়ে যাও। আমি যদি সাহায্য না করি, তবে কৃতজ্ঞতার মূল্য কী?” তার এই উদারতায় ফেরেশতা খুব খুশি হলেন।
১৬। ‘সততার পুরস্কার’ আমাদের কী শেখায়?
উত্তর: গল্পটি আমাদের শেখায় যে মানুষের উচিত কখনো নিজের অতীত ভুলে না যাওয়া। আল্লাহ যে নেয়ামত দেন, তা কৃতজ্ঞতার সাথে গ্রহণ করতে হয় এবং অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নিতে হয়। অহংকার ও মিথ্যাচার করলে তা শেষ পর্যন্ত ধ্বংস ডেকে আনে।
১৭। কেন ধবলরোগী ও টাকওয়ালা তাদের পুরনো অবস্থা ভুলে গেল?
উত্তর: ধবলরোগী ও টাকওয়ালা নিজেদের নতুন অবস্থার মধ্যে এতই মগ্ন হয়ে গেল যে তারা ভুলে গেল একসময় তারা গরিব ও কষ্টে ছিল। তারা মনে করল এই সম্পদ তাদের নিজস্ব প্রাপ্য, আর কারও দয়া বা সাহায্য নয়। এই অহংকারই তাদের দুর্ভাগ্যের কারণ হলো।
১৮। যদি তুমি এই গল্পের কোনো একটি চরিত্র হতে, তবে কোনটি হতে চাইতে?
উত্তর: আমি অন্ধ ব্যক্তির মতো হতে চাইব, কারণ সে একমাত্র সত্যিকারের কৃতজ্ঞ ছিল। সে বুঝেছিল যে আল্লাহর দয়া ছাড়া সে কিছুই ছিল না। তাই যখন তার কাছে সাহায্য চাওয়া হলো, সে বিনা দ্বিধায় দিতে রাজি হলো। এমন উদার মনোভাবই সত্যিকারের মানুষের গুণ।
Related Posts
- গ্রাহক সেবায় ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার প্রশ্ন উত্তর ও বহুনির্বাচনি- ৭ম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি
- ৭ম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার সিলেবাস ২০২৪ PDF সহ
- আমি সাগর পাড়ি দেবো কবিতার প্রশ্ন উত্তর – ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা
- শব্দ থেকে কবিতা গল্পের প্রশ্ন উত্তর ও বহুনির্বাচনি – ৮ম শ্রেণির বাংলা
- পুতুল গল্পের মূলভাব, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি – ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা