“অতিথির স্মৃতি” গল্পটি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি অতি জনপ্রিয় রচনা। এটি একটি অতিপরিচিত মানবিক সম্পর্কের গল্প, যেখানে একজন মানুষ ও একটি কুকুরের মধ্যে এক ধরনের অদ্ভুত সম্পর্ক তৈরি হয়। এই পোস্টে অতিথির স্মৃতি গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর লিখে দিলাম।
অতিথির স্মৃতি গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন
১। লেখক দেওঘরে কেন এসেছিলেন?
উত্তর: লেখক চিকিৎসকের পরামর্শে বায়ু পরিবর্তনের জন্য দেওঘরে এসেছিলেন। তিনি অসুস্থ ছিলেন এবং সুস্থ হওয়ার জন্য সেখানে কিছু সময় কাটানোর সিদ্ধান্ত নেন। দেওঘরের প্রাকৃতিক পরিবেশ তার স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য সহায়ক বলে মনে করা হয়েছিল।
২। লেখক সকালে কীভাবে সময় কাটাতেন?
উত্তর: লেখক সকালে পাখিদের ডাক শুনে এবং তাদের পর্যবেক্ষণ করে সময় কাটাতেন। তিনি দোয়েল, বুলবুলি, শ্যামা, শালিক এবং টুনটুনি পাখিদের ডাক শুনে প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত হতেন। পাখিদের ডাক শুনে তার মনে হতো যেন তিনি তাদের প্রত্যেককে চিনে ফেলেছেন।
৩। লেখক পাখিদের প্রতি কী অনুভব করতেন?
উত্তর: লেখক পাখিদের প্রতি বিশেষ স্নেহ ও মমতা অনুভব করতেন। তিনি তাদের ডাক শুনে মনে করতেন যেন তাদের প্রত্যেককে চিনে ফেলেছেন এবং তাদের সঙ্গে একটি আত্মীয়তা গড়ে উঠেছে। পাখিদের অনুপস্থিতিতে তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তেন।
৪। হলদে রঙের বেনে বৌ পাখি সম্পর্কে লেখক কী বলেছেন?
উত্তর: হলদে রঙের বেনে বৌ পাখি জোড়া ইউক্যালিপটাস গাছের উঁচু ডালে বসে প্রতিদিন হাজিরা দিত। লেখক তাদের ডাক শুনে আনন্দ পেতেন। একদিন তারা না এলে তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন, কিন্তু তিন দিন পর তাদের ফিরে আসতে দেখে তার মনে শান্তি ফিরে আসে।
৫। প্রশ্ন: লেখক বিকালে কী করতেন?
উত্তর: লেখক বিকালে গেটের বাইরে পথের ধারে বসে লোকজনের চলাফেরা দেখতেন। তিনি বিশেষ করে পীড়িত মেয়েদের দিকে নজর দিতেন, যারা বেরিবেরি রোগে ভুগছিল। তাদের দুঃখ ও সংগ্রাম তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করত।
৬। লেখক দরিদ্র মেয়েটিকে দেখে কী অনুভব করতেন?
উত্তর: লেখক দরিদ্র মেয়েটিকে দেখে গভীর দুঃখ অনুভব করতেন। মেয়েটি শীর্ণ ও ক্লান্ত ছিল, তার কোলে একটি ছোট শিশু ছিল। লেখক তার কষ্ট ও সংগ্রাম দেখে মর্মাহত হতেন এবং মনে করতেন যে সমাজে তার মতো মানুষের জন্য সহানুভূতি ও সাহায্যের প্রয়োজন।
৭। লেখকের সঙ্গে কুকুরটির সম্পর্ক কীভাবে গড়ে উঠল?
উত্তর: লেখক একদিন হঠাৎ লক্ষ্য করেন যে একটি বৃদ্ধ কুকুর তার পিছু নিয়েছে। তিনি কুকুরটিকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন এবং তাকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন। এরপর থেকে কুকুরটি তার অতিথি হয়ে ওঠে এবং তাদের মধ্যে একটি বিশেষ বন্ধন গড়ে উঠে।
৮। কুকুরটি লেখকের বাড়িতে কীভাবে ছিল?
উত্তর: কুকুরটি লেখকের বাড়িতে খুবই শান্ত ও বিনয়ী আচরণ করত। সে লেখকের সঙ্গে থাকতে পছন্দ করত, কিন্তু বাড়ির ভিতরে ঢুকতে ভয় পেত। লেখক তাকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করলেও সে মালিনীর ভয়ে বাইরে বসে থাকত।
৯। মালিনী কুকুরটির প্রতি কী আচরণ করত?
উত্তর: মালিনী কুকুরটির প্রতি বিরূপ আচরণ করত। সে কুকুরটিকে বাগানে ঢুকতে দিত না এবং তাকে তাড়িয়ে দিত। মালিনীর এই আচরণের কারণে কুকুরটি লেখকের বাড়ির বাইরে বসে থাকতে বাধ্য হত।
১০। লেখক কুকুরটিকে কীভাবে সাহায্য করতেন?
উত্তর: লেখক কুকুরটিকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতেন এবং তার সঙ্গে কথা বলতেন। তিনি কুকুরটিকে তার অতিথি হিসেবে গণ্য করতেন এবং তার প্রতি স্নেহ ও দায়িত্ববোধ দেখাতেন। কুকুরটির অসহায়ত্ব তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করত।
১১।লেখক কুকুরটির চোখে কী দেখতে পেয়েছিলেন?
উত্তর: লেখক কুকুরটির চোখে একটি বিষণ্ণতা ও নালিশের ভাব দেখতে পেয়েছিলেন। তিনি মনে করতেন যে কুকুরটি তার কাছে কিছু বলতে চায়, কিন্তু ভাষার অভাবে তা প্রকাশ করতে পারে না। এই দৃশ্য তাকে মর্মাহত করত।
১২। লেখক দেওঘর ছাড়ার পর কী অনুভব করেছিলেন?
উত্তর: লেখক দেওঘর ছাড়ার পর কুকুরটির কথা ভেবে উদ্বিগ্ন ও বিষণ্ণ বোধ করেছিলেন। তিনি ভাবতেন যে কুকুরটি তার অনুপস্থিতিতে কী করবে এবং তার জন্য খাবারের ব্যবস্থা হবে কিনা। এই চিন্তা তাকে ব্যাকুল করে তুলেছিল।
১৩। লেখক কুকুরটির সঙ্গে কীভাবে কথা বলতেন?
উত্তর: লেখক কুকুরটির সঙ্গে মানুষের মতো কথা বলতেন। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করতেন যে সে কী খেয়েছে বা তার কেমন লাগছে। কুকুরটি ল্যাজ নেড়ে তার উত্তরের ইঙ্গিত দিত, যা লেখককে আনন্দ দিত।
১৪। লেখক কুকুরটির জন্য কী ব্যবস্থা করেছিলেন?
উত্তর: লেখক কুকুরটির জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি চাকরদের নির্দেশ দিয়েছিলেন যেন কুকুরটিকে নিয়মিত খাবার দেওয়া হয়। তবে মালিনীর বিরূপ আচরণের কারণে কুকুরটি বাইরে বসে থাকতে বাধ্য হত।
১৫। লেখক কুকুরটির অনুপস্থিতিতে কী করতেন?
উত্তর: লেখক কুকুরটির অনুপস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তেন। তিনি চাকরদের জিজ্ঞাসা করতেন যে কুকুরটি কোথায় আছে এবং তাকে খাওয়ানো হয়েছে কিনা। কুকুরটির জন্য তার এই চিন্তা তার মানবিকতার পরিচয় দেয়।
১৬। লেখকের সঙ্গে কুকুরটির শেষ দেখা কীভাবে হয়েছিল?
উত্তর: লেখক কুকুরটির সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছিল স্টেশনের ফটকের বাইরে। কুকুরটি দাঁড়িয়ে ছিল এবং লেখকের দিকে তাকিয়ে ছিল। লেখক ট্রেনে চড়ে চলে গেলেও কুকুরটির কথা ভেবে তার মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছিল।
১৭। লেখক কুকুরটির জন্য কী চিন্তা করতেন?
উত্তর: লেখক কুকুরটির জন্য খাবারের ব্যবস্থা এবং তার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করতেন। তিনি ভাবতেন যে তার চলে যাওয়ার পর কুকুরটি কী করবে এবং তার জন্য খাবারের ব্যবস্থা হবে কিনা। এই চিন্তা তাকে ব্যাকুল করে তুলেছিল।
১৮। লেখক কুকুরটির সাথে কেমন আচারণ করতেন?
উত্তর: লেখক কুকুরটির সঙ্গে একটি গভীর মানবিক সম্পর্ক অনুভব করেছিলেন। তিনি কুকুরটির প্রতি স্নেহ, মমতা এবং দায়িত্ববোধ দেখাতেন। কুকুরটির সঙ্গে তার এই সম্পর্ক তাকে প্রকৃতি ও জীবনের গভীরতা সম্পর্কে চিন্তা করতে শিখিয়েছিল।