বন্দে আলী মিয়ার “ময়নামতীর চর” কবিতায় পল্লি-প্রকৃতির বর্ণনায় জীবনের নানা রকম চিত্র, যেখানে নদী, প্রকৃতি, পশু-পাখি, কৃষক, ও সাধারণ মানুষের জীবন একত্রে জীবনধারার নিখুঁত প্রতিচ্ছবি তৈরি করেছে। এই পোস্টে ময়নামতির চর কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন – ৭ম শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম।
Table of Contents
ময়নামতির চর কবিতার প্রশ্ন উত্তর (এক কথায়)
১। ময়নামতীর চর কবিতাটি কে লিখেছেন এবং কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে?
উত্তর: কবিতাটি বন্দে আলী মিয়া লিখেছেন। এটি তাঁর ‘ময়নামতীর চর’ কবিতার বই থেকে নেওয়া হয়েছে।
২। ময়নামতীর চর কবিতায় কবি কীসের বর্ণনা দিয়েছেন ? ময়নামতীর চরটি দেখতে কেমন ?
উত্তর: কবি ময়নামতীর চর কবিতায় পল্লি-প্রকৃতি এবং গ্রামীণ জীবনের বর্ণনা দিয়েছেন। ময়নামতীর চরটি নদীর তীরে অবস্থিত, যেখানে বুনো ঝাউ ও বুড়ো বট গাছ রয়েছে। নদীর পাড়ে চাষি কাজ করছে, কুমির রোদ পোহাচ্ছে এবং গোরু-গরু খাচ্ছে। এটি একটি শান্ত এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ।
৩। ময়নামতীর চর কবিতায় কে, কীভাবে রোদ পোহায় ? কূলে কূলে কোন মাছ চলে ?
উত্তর: কবিতায় কুমিরেরা রোদ পোহায় গায়ে রোদ লাগিয়ে শুয়ে থাকে। কূলে কূলে খরশুলা মাছ চলে।
৪। পালে পালে কোন মাছ চলে ? ছোঁ দিয়ে কে মাছ ধরে ? কোন পাখি কেবলই ঝগড়া করে ?
উত্তর: দাঁড়িকানা মাছ পালে পালে চলে। গাঙচিল ছোঁ দিয়ে মাছ ধরে। শালিক কেবলই ঝগড়া করে, তার কাজ কিছুই নয়।
৫। মুড়ো, সেটি লেজ ছিঁড়ে একে একে গিলে গিলে কে মাছ খায় ? কবিতায় কোন নদীর কথা আছে ?
উত্তর: গাঙচিল মুড়ো (মাছের মাথা) এবং পেটি (মাছের পেট) ছিঁড়ে একে একে গিলে খায়। কবিতায় পদ্মা নদীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
৬। ময়নামতীর চর কবিতায় কাকে স্বাধীনচেতা বলা হয়েছে ? কবিতায় ষাঁড় কী ছিঁড়ে চলে ?
উত্তর: কবিতায় ষাঁড়কে স্বাধীনচেতা বলা হয়েছে। ষাঁড় মাটি মাখা দড়ি ছিঁড়ে চলে, অর্থাৎ তা নিজের স্বাধীনতা বজায় রেখে চলে।
৭। খেতের কোনায় বাঁশ পুতে কোথায় ঘরটি বাঁধা হয়েছে ? নতুন চরের জমিতে কী বুনেছে ?
উত্তর: খেতের কোণায় বাঁশ পুঁতে শূন্যে ঘর বাঁধা হয়েছে। নতুন চরের পলি জমিতে কলাই বুনেছে।
৮। নতুন চরের পলি জমিতে যারা কলাই বুনেছে তারা আর কী করে ? কারা কলাই বুনেছে ?
উত্তর: যারা কলাই বুনেছে, তারা রাতভর আখের খেত পাহারা দেয় এবং খেতের রক্ষায় কাজ করে। কৃষকরা কলাই বুনেছে।
৯। আখের খামার পাহারা দেওয়ার জন্য কী নেড়ে শব্দ করার কথা বলা হয়েছে ?
উত্তর: কবিতায় খড়ের মশাল নেড়ে শব্দ তৈরি করা হয়েছে, যেন সেটা একটি সংকেত বা সতর্কতা হিসেবেও কাজ করে।
১০। ‘ময়নামতীর চর’ কবিতায় কোন ঋতুর কথা বলা হয়েছে ? পদ্মা নদী পার হয়ে কারা এসেছে ?
উত্তর: কবিতায় শীত ঋতুর কথা বলা হয়েছে, যখন কৃষকরা খড়ের মশাল জ্বালাচ্ছে। পদ্মা নদী পার হয়ে বন্য বরাহের পাল এ-পারে এসেছে, যা আখ খেয়ে ধ্বংস করে।
১১। ময়নামতীর চরের এ-পাড়ে কী রয়েছে এবং ও-পাড়ে কী রয়েছে ?
উত্তর: এ-পারে রয়েছে বুনো ঝাউ, আর ও-পারে রয়েছে বুড়ো বট গাছ।
১২। কোন পাখি গোচর পাখির অংশীদার হয়েছে ? বন্য বরাহের পাল এ-পাড়ে আসে কেন ?
উত্তর: বক পাখি গোচর পাখির অংশীদার হয়েছে। বন্য বরাহের পাল এ-পারে আসে কারণ তারা আখ খেয়ে ধ্বংস করে, যা চাষিদের জন্য ক্ষতিকর।
১৩। কী দিয়ে শয্যা রচেছে ? মাঝমাঠে তারা কী জ্বালিয়েছে ? গোচর পাখিরা কী খায় ও কীভাবে খায় ?
উত্তর: শয্যা রচনা হয়েছে বাঁশের বাঁখারি দিয়ে, এবং মাঝমাঠে তারা খড়ের মশাল জ্বালিয়েছে। গোচর পাখিরা গোরুর গায়ে বসে তাদের উকুন খায়, ঠোকর দিয়ে।
১৪। বন্দে আলী মিয়া কত সালে জন্মগ্রহণ এবং কত সালে মৃত্যুবরণ করেন ? তিনি কী নামে পরিচিত ?
উত্তর: বন্দে আলী মিয়া ১৯০৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি শিশু সাহিত্যিক হিসেবে বেশি পরিচিত।
১৫। কে পল্লি-প্রকৃতির বর্ণনায় নিপুণতার পরিচয় দিয়েছেন ?
উত্তর: বন্দে আলী মিয়া পল্লি-প্রকৃতির বর্ণনায় নিপুণতার পরিচয় দিয়েছেন, বিশেষ করে তাঁর ‘ময়নামতীর চর’ কবিতায়।
ময়নামতীর চর কবিতার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১) ‘ময়নামতীর চর’ কবিতার কবি সম্পর্কে লেখ। কবিতার মূলভাব লেখ।
কবি সম্পর্কে:
বন্দে আলী মিয়া ১৯০৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি শিশু সাহিত্যিক
হিসেবে সুপরিচিত। তাঁর বিখ্যাত বইগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘ময়নামতীর চর’, ‘কুঁচবরণ কন্যা’, ‘শিয়াল পণ্ডিতের
পাঠশালা’ ইত্যাদি। কবিতায় পল্লি-প্রকৃতির বর্ণনায় তিনি নিপুণতার পরিচয় দিয়েছেন। কবিতাটি তাঁর
‘ময়নামতীর চর’ নামের কবিতার বই থেকে নেওয়া হয়েছে।
কবিতার মূলভাব:
‘ময়নামতীর চর’ কবিতায় কবি গ্রামীণ জীবনের এক চিত্র তুলে ধরেছেন। নদী, গাছ, পশু, পাখি ও মানুষের জীবনের এক সজীব চিত্র এখানে ফুটে উঠেছে। কবি এই কবিতায় বর্ণনা করেছেন কিভাবে গ্রামীণ পরিবেশে মানুষ দিনযাপন করে, তাদের চাষাবাদ, পশুপালন এবং প্রকৃতির সঙ্গে সমন্বয় করে জীবনের কঠিন সংগ্রাম। এ কবিতার মধ্যে প্রকৃতি এবং জীবনের এক অদ্ভুত ঐক্য দেখা যায়। নদীর দুই তীরে প্রকৃতির বিচিত্র রূপ, পাখিরা গোরুদের সঙ্গে জীবনযাপন এবং মানুষের কঠোর পরিশ্রম—সব কিছুই কবির ভাষায় জীবন্ত হয়ে ওঠে।
২) ‘ময়নামতীর চর’ কবিতায় গোরুর স্বাধীনচেতার প্রকাশ কীভাবে হয় ?
উত্তর: ‘ময়নামতীর চর’ কবিতায় কবি গোরুর স্বাধীনচেতা প্রকৃতি খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। কবি বলেছেন, ষাঁড়টি মাটি মাখা দড়ি ছিঁড়ে চলে, অর্থাৎ ষাঁড়টি কোনো দড়ি বা শৃঙ্খলা মানে না এবং সেটা মুক্তভাবে চলতে থাকে। এটি তার স্বাধীনতার প্রতীক। স্বাধীনচেতা মানে হলো, ষাঁড়টি তার ইচ্ছেমতো চলতে থাকে, তা কোনো বাধার তোয়াক্কা করে না। কবি এখানে গোরুর এই মুক্ত মনোভাব এবং স্বাধীনতার প্রকাশ করেছেন। এটি গোরুর শক্তিশালী ও মুক্ত মনোভাবের প্রতিনিধিত্ব করে।
৩) কবিতায় গাঙচিল মাছ ধরে কিভাবে ? আখের খামার রাতভর পাহারা দিতে হয় কেন ?
উত্তর: কবিতায় গাঙচিল মাছ ধরার দৃশ্যটি অত্যন্ত চমৎকারভাবে বর্ণিত হয়েছে। গাঙচিল মাছ ধরতে ছোঁ দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে, অর্থাৎ, সে দ্রুততার সঙ্গে মাছের দিকে পাখা বাড়িয়ে আছাড়ি আছাড়ি করে মাছকে নিস্তেজ করে ফেলে এবং পরে তা খেয়ে ফেলে। এটি গাঙচিলের শিকার করার নিপুণ দক্ষতা এবং তার প্রকৃতির সঙ্গে মিলিত থাকার ছবি।
আখের খামারের পাহারা দেওয়ার কারণ হলো বন্য শূকর বা বরাহ। এই শূকররা আখ খেতে আসে এবং সেটি খেয়ে ফেলতে পারে। তাই চাষিরা তাদের খামারের আখ রক্ষার জন্য রাতে পাহারা দেয়। যদি পাহারা না দেয়, তবে শূকররা আখের খেতে এসে ক্ষতি করতে পারে, যা চাষিদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। এই কারণে খামারিদের জন্য আখ রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৪) ‘ময়নামতীর চর’ কবিতায় চরের মানুষরা কীভাবে জীবনযাপন করে ?
উত্তর: ‘ময়নামতীর চর’ কবিতায় চরের মানুষদের জীবনযাপন অত্যন্ত পরিশ্রমী এবং প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তারা দৈনন্দিন জীবনে কলাই বুনে, আখের খেতে পাহারা দেয়, এবং গবাদি পশু পালন করে। তাদের জীবন খুবই সাধারণ, তবে কঠিন। তারা প্রকৃতির সঙ্গে এক হয়ে নিজেদের জীবনযাপন করে। শীতে খড়ের মশাল জ্বালিয়ে তারা মাঠে কাজ করে, বসবাসের জন্য বাঁশের বাঁখারি ব্যবহার করে এবং শয্যার জন্য বিচালি বিছায়। চরের মানুষের জীবনযাপন খুবই নিরলস এবং কঠোর হলেও তারা একে অপরের সহায়তায় এবং প্রকৃতির সমর্থনে জীবন কাটায়।
৫) বক পাখিগুলো গোচর পাখির হয়েছে অংশীদার বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ?
উত্তর: কবি এখানে বক পাখি এবং গোচর পাখির মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক বুঝিয়েছেন। গোচর পাখিরা গোরুদের সাথে চলে এবং তাদের গায়ে থাকা উকুন খায়, যাতে গোরুর শরীর পরিষ্কার থাকে। কিন্তু বক পাখি তখন গোচর পাখির অংশীদার হয়ে যায়, অর্থাৎ বক পাখি গোরুর পাশে বসে এবং তাদের গায়ে উকুন খেতে থাকে। কবি এখানে সহযোগিতা ও নির্ভরশীলতা বুঝাতে চেয়েছেন, যেখানে গোরু, পাখি, এবং অন্য প্রাণী একে অপরকে সাহায্য করে, যেন সকলের জীবনযাপন সহজ হয়।
৬) ‘ময়নামতীর চর’ কবিতায় উল্লেখিত দুইটি ফসলের নাম এবং উল্লেখিত ষাঁড়টির দুইটি বৈশিষ্ট্য লেখ।
উত্তর: ফসলের নাম:
১. কলাই – কবিতায় বলা হয়েছে, নতুন চরের পলি জমিতে কলাই বুনেছে।
২. আখ – কবিতায় উল্লেখিত একটি ফসল হচ্ছে আখ, যার খেত পাহারা দিতে হয়।
ষাঁড়টির বৈশিষ্ট্য:
১. স্বাধীনচেতা – ষাঁড়টি মাটি মাখা দড়ি ছিঁড়ে চলে, যা তার স্বাধীনতার প্রকাশ। এটি যে কোনো বাধা মানে না এবং মুক্তভাবে চলতে থাকে, এটি তার স্বাধীনচেতা মনোভাবের পরিচয়।
২. শক্তিশালী – ষাঁড়টি কোনো বাধা ছাড়াই চলতে থাকে, এটি তার শক্তি ও দৃঢ় মনোভাবের প্রকাশ। সে নিজের মতো চলতে থাকে এবং এক মুহূর্তে অন্যদের কোনো প্রভাব না মেনে তার জীবন পরিচালনা করে।
ময়নামতির চর কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
১। রচনামূলক প্রশ্নঃ(দৃশ্যপট নির্ভর )
শিমুলতলী গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ছোট্ট একটি নদী গ্রীষ্মকালে নদীতে চর জাগে। তখন কৃষকেরা বিভিন্ন রকমের শস্য চাষ করে। আবার নদী যখন ভরা থাকে তখন প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। জেলেরা মাছ ধরে। নদীর অনতিদূরে দেখা যায় গোরু, মহিষ ঘাস খায় । প্রকৃতি ও প্রাণের একাত্মতায় গ্রামটি অসাধারণ রূপে সজ্জিত হয়েছে।
(ক) অনুচ্ছেদটির সাথে ‘ময়নামতীর চর’ কবিতার যে সাদৃশ্য রয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।
(খ) অনুচ্ছেদটি এবং ‘ময়নামতীর চর’ কবিতাটির সাথে তোমার জীবনের বা চারপাশের যে মিল রয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ (ক) ‘ময়নামতীর চর’ কবিতা এবং অনুচ্ছেদটির মধ্যে বেশ কিছু মিল রয়েছে। উভয়ই গ্রামীণ জীবন এবং প্রকৃতির চিত্র তুলে ধরে। প্রথমেই, অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে শিমুলতলী গ্রামের পাশ দিয়ে ছোট একটি নদী বয়ে চলে এবং গ্রীষ্মকালে সেখানে চর জাগে। ঠিক একইভাবে, ‘ময়নামতীর চর’ কবিতায়ও নদী এবং তার তীরের বর্ণনা রয়েছে। কবিতায় নদীর চর জাগার কথা এবং তার তীরে কৃষকরা জমি চাষ করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও, অনুচ্ছেদে নদীর ভরা অবস্থায় প্রচুর মাছ পাওয়া যায় এবং জেলেরা মাছ ধরে। কবিতাতেও গাঙচিল মাছ ধরতে দেখা যায় এবং এটি তাদের জীবিকা নির্বাহের উপায়। আরেকটি মিল হলো গোরু ও মহিষের ঘাস খাওয়া। কবিতায় যেমন গোরু চরে এবং গোচর পাখি তাদের সাথে থাকে, তেমনি অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে গোরু ও মহিষ ঘাস খাচ্ছে। দুই ক্ষেত্রেই প্রকৃতি এবং প্রাণীর এক সুন্দর সমন্বয় ফুটে ওঠে, যেখানে মানুষ ও প্রকৃতি একে অপরের সাথে মিলেমিশে চলে। (খ) আমার জীবন এবং আমার চারপাশের পরিবেশও ‘ময়নামতীর চর’ কবিতার সাথে অনেকটা মিলে যায়। আমার গ্রামের কাছেও একটা ছোট নদী আছে, যা গ্রীষ্মে অনেক সময় চর জাগায়, ঠিক যেমন কবিতায় বলা হয়েছে। গ্রীষ্মে আমাদের গ্রামের চাষিরা সেই চরেই ধান, মটর, কলাই চাষ করে। তাই চাষাবাদ, কৃষিকাজ আমাদের জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কবিতার মতো, নদীর তীরে আমাদের গ্রামের গোরু, মহিষেরা ঘাস খেতে বের হয়। প্রায়ই দেখি, গোরুর পেছনে ছোট পাখিরা চলে আসে, যারা গোরুর শরীর থেকে উকুন খায়, ঠিক যেমন কবিতায় গোচর পাখিরা গোরুদের পাশে থাকে।এছাড়া, গ্রীষ্মকালে যখন নদী থেকে মাছ ধরা হয়, আমাদের গ্রামের জেলেরা ঠিক তেমনি নদী বা পুকুরে মাছ ধরে। আমি নিজে দেখতে পাই, নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া মানুষের কঠোর পরিশ্রমের চিত্র—এটা কবিতার গাঙচিল মাছ ধরার দৃশ্যের মতোই। এভাবে, ‘ময়নামতীর চর’ কবিতার সঙ্গে আমার জীবনের অনেক মিল রয়েছে। |
২। রচনামূলক প্রশ্নঃ(দৃশ্যপট নির্ভর
উড়ানীর চর ধুলায় ধূসর/ যোজন জুড়ি।
জলের উপর ভাসিছে ধবল /
বালুর পুরী উড়ানীর চরে কৃষাণ বধূর।
খড়ের ঘর।
ঢাকাই সীমের উড়িছে আচল ।
মাথার পর জাংলা ভরিয়া লাউ এর লতায় ।
লক্ষ্মী সে যেন দুলিছে দোলায়।
ফাল্গুনের হাওয়ায় কলার পাতায়।
নাচিছে ঘুরি। উড়ানী চরের বুকের আঁচল
কৃষাণ-পুরী ।
ক) ওপরের কবিতায় ‘ময়নামতীর চর’ কবিতার যে সাদৃশ্য রয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।
(খ) ‘ময়নামতীর চর’ কবিতার মতো কবিতাংশে শব্দের পরিবর্তন খুঁজে পাও কী ? দুইটি কবিতার চারটি করে শব্দের পরিবর্তন দেখাও ।
উত্তরঃ (ক) উপরের কবিতাটি এবং ‘ময়নামতীর চর’ কবিতার মধ্যে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। উভয় কবিতাই গ্রামীণ পরিবেশ এবং প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর চিত্র তুলে ধরে। প্রথম কবিতায়, ‘উড়ানীর চর’-এ বর্ণিত হয়েছে ধুলায় ধূসর চর, বালুর পুরী, খড়ের ঘর, ঢাকাই সীমের আচল ইত্যাদি, যা এক ধরনের শান্ত, নির্জন গ্রামীণ পরিবেশের চিত্র ফুটিয়ে তোলে। ঠিক যেমন ‘ময়নামতীর চর’ কবিতায় নদীর তীরে কৃষক-চাষি, গোরু, পাখি—এমন অনেক দৃশ্যের বর্ণনা দেয়া হয়েছে।দু’টি কবিতার মধ্যে কৃষাণী এবং কৃষাণ-এর জীবনযাপন এবং তাদের পরিশ্রমের কথা উঠে এসেছে। ‘উড়ানীর চর’-এ কৃষাণী আচল উড়াচ্ছে, তার মাথায় লাউয়ের লতা দিয়ে সাজানো, যা তার আনন্দময় জীবনকে তুলে ধরে। ‘ময়নামতীর চর’-এও চাষাবাদের দৃশ্য দেখা যায়, যেখানে কৃষক জমি চাষ করছে, পশুপালন করছে, এবং নদীর পাখি মাছ ধরছে। উভয় কবিতাতেই প্রকৃতি এবং মানুষের সম্পর্ক খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। (খ) হ্যাঁ, দুটো কবিতাতেই কিছু শব্দের পরিবর্তন বা সাদৃশ্য রয়েছে। ‘উড়ানীর চর’ এবং ‘ময়নামতীর চর’ কবিতার মধ্যে চারটি শব্দের পরিবর্তন:‘ ১। ‘ধুলায় ধূসর’ (উড়ানীর চর) এবং ‘শুকনো গাঙের তট’ (ময়নামতীর চর) – উভয় ক্ষেত্রেই শুষ্ক বা স্ফুটিত ভূমি এবং চরের চিত্র ফুটে উঠছে। ২। ‘বালুর পুরী’ (উড়ানীর চর) এবং ‘নদীর তীর’ (ময়নামতীর চর) – দুই কবিতাতেই নদী বা চর সংলগ্ন বালু এবং তীর শব্দের মাধ্যমে জলাশয় বা চরের স্থান বর্ণনা করা হয়েছে। ৩। ‘খড়ের ঘর’ (উড়ানীর চর) এবং ‘বাঁশের ঘর’ (ময়নামতীর চর) – উভয় কবিতায় গ্রামীণ বাসস্থানের বর্ণনা হয়েছে, যেখানে খড় বা বাঁশ দিয়ে ঘর বানানো হয়। ৪। ‘ফাল্গুনের হাওয়া’ (উড়ানীর চর) এবং ‘শীতের রোদ’ (ময়নামতীর চর) – এই শব্দগুলো ঋতু পরিবর্তন এবং প্রকৃতির পরিবেশকে অনুভূতি দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। যেখানে ফাল্গুনের হাওয়া তাজা বাতাস এবং শীতের রোদ উষ্ণতা সৃষ্টি করে, উভয়ই প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং জীবনের মিষ্টি অনুভূতি প্রকাশ করছে। |
Related Posts
- সপ্তম শ্রেণির মূল্যায়ন নির্দেশিকা pdf ২০২৪ (বার্ষিক পরীক্ষার সিলেবাস)
- গ্রাহক সেবায় ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার প্রশ্ন উত্তর ও বহুনির্বাচনি- ৭ম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি
- নোলক কবিতার মূলভাব, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি – ৭ম শ্রেণির বাংলা
- আমি সাগর পাড়ি দেবো কবিতার প্রশ্ন উত্তর – ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা
- ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৮ম শ্রেণির ১ম ও ২য় অধ্যায় (সবগুলো ছক)
- ৭ম শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৩য় পরিচ্ছেদ-তথ্যমূলক লেখা
- আষাঢ়ের এক রাতে সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর – ৭ম শ্রেণির বাংলা
- বই কেনার জন্য বাবার কাছে টাকা চেয়ে পত্র লেখ
- জীবন ও জীবিকা ৭ম শ্রেণি ৩য় অধ্যায়-আগামীর স্বপ্ন
- সুখী মানুষ গল্পের মূলভাব – মমতাজ উদ্দিন আহমেদ