বিদ্রোহী কবিতার মূলভাব সহজ ভাষায় -একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা

কাজী নজরুল ইসলামের “বিদ্রোহী” কবিতাটি বাংলা সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টি, যা কবির বিদ্রোহী চেতনার প্রকাশ ঘটায়। এই পোস্টে বিদ্রোহী কবিতার মূলভাব সহজ ভাষায় -একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম।

বিদ্রোহী কবিতার মূলভাব

কাজী নজরুল ইসলাম রচিত “বিদ্রোহী” কবিতাটি কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অগ্নিবীণা’ (১৯২২) থেকে সংকলিত হয়েছে। অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের দ্বিতীয় কবিতা “বিদ্রোহী”। কাজী নজরুল ইসলামের “বিদ্রোহী” কবিতাটি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এবং বিপ্লবী কাব্যরচনা। এই কবিতায় কবি নিজেকে বিদ্রোহের চিরন্তন প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছেন। কবিতায় কবির আত্মপ্রকাশ এমনভাবে হয়েছে, যেখানে তিনি ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও প্রতিবাদ করেছেন। কবি নিজের বিদ্রোহী চেতনার মাধ্যমে সমাজের অন্যায়, শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। তিনি বিভিন্ন ধর্ম, ঐতিহ্য, ইতিহাস ও পুরাণের শক্তিকে একত্রিত করে নিজের বিদ্রোহী রূপকে সজ্জিত করেছেন। কবি এমন একটি বিশ্ব কল্পনা করেছেন, যেখানে অত্যাচারীর শাসন শেষ হবে, এবং অবিচারহীন একটি পৃথিবী গড়ে উঠবে। বিদ্রোহী কবি জানিয়ে দেন, যতদিন পর্যন্ত উৎপীড়িত মানুষের কান্না শোনা যাবে, ততদিন তিনি শান্ত হবেন না। কবিতায় বিদ্রোহী সত্তার শক্তি ও সংগ্রামের মাধ্যমে ঔপনিবেশিক শাসন কাঁপিয়ে দিয়েছেন নজরুল, যা তাকে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে স্মরণীয় করে তুলেছে।

বিদ্রোহী কবিতার বিষয়বস্তু

কাজী নজরুল ইসলাম রচিত “বিদ্রোহী” কবিতাটি কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অগ্নিবীণা’ (১৯২২) থেকে সংকলিত হয়েছে। অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের দ্বিতীয় কবিতা “বিদ্রোহী”। কাজী নজরুল ইসলামের “বিদ্রোহী” কবিতাটি আসলে এক ধরনের আত্মপ্রকাশ—যেখানে কবি তাঁর বিদ্রোহী সত্তাকে গর্বের সঙ্গে তুলে ধরেন। এখানে তিনি জানান, তিনি কোনো নিয়ম, শৃঙ্খলা বা বিধিনিষেধ মানতে রাজি নন। বরং, তিনি নিজেকে ধ্বংসের শক্তি হিসেবে দেখেন।

কবি বলছেন, পৃথিবীতে যতো অশান্তি ও বিপর্যয় আছে, তিনি তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর বিদ্রোহ কেবল নিজের জন্য নয়, বরং সব ধরনের শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে। কবি শাসকদের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিবাদ জানাচ্ছেন এবং অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে তাঁর এই সংগ্রাম। তিনি বলেন, বিদ্রোহী হওয়া মানেই নিজেকে রক্ষা করা নয়; বরং তা মানবতার জন্য, সব অত্যাচারিত মানুষের পক্ষে কথা বলা। কবির ভাষায়, যতদিন শোষিত মানুষের কান্না থামবে না, ততদিন তিনি শান্তি পাবেন না।

নজরুল বিভিন্ন ধর্ম, পুরাণ ও ইতিহাসের চিত্র তুলে ধরেন, বোঝান যে বিদ্রোহ একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। তিনি নতুন একটি পৃথিবী গড়তে চান যেখানে শান্তি, ন্যায় ও মানবিক মূল্যবোধের জয় হবে। “বিদ্রোহী” কবিতাটি কাজী নজরুলের স্বাধীনতা, মানবিক মর্যাদা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক অবিচল সংগ্রামের বার্তা বহন করে। এটি একটি শক্তিশালী কণ্ঠস্বর, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, বিদ্রোহের মাধ্যমেই আমরা এক নতুন দিগন্তের সন্ধান পেতে পারি।

Related Posts

Leave a Comment