“বায়ান্নর দিনগুলো” বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসাধারণ স্মৃতিচারণ, যা তাঁর কারাবাসের সময়কালের অভিজ্ঞতাকে গভীরভাবে তুলে ধরে। এই পোস্টে বায়ান্নর দিনগুলো মূলভাব – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম।
Table of Contents
বায়ান্নর দিনগুলো মূলভাব
“বায়ান্নর দিনগুলো” বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসাধারণ স্মৃতিচারণ, যা তাঁর কারাবাসের সময়কালের অভিজ্ঞতাকে গভীরভাবে তুলে ধরে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুর এই লেখায় তিনি জেলে কাটানো দিনগুলোর কথা ব্যক্ত করেছেন, যেখানে তাঁকে দীর্ঘ সময় বিনা বিচারে আটক রাখা হয়েছিল। সেই সময় তিনি অনশন ধর্মঘটও করেছিলেন, যা ছিল শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের এক শক্তিশালী মাধ্যম। এই স্মৃতিচারণে আমরা জানতে পারি তাঁর অনশনকালে জেল কর্তৃপক্ষের অবহেলা, অনশনরত অবস্থায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা এবং মৃত্যুর প্রাক্কালে তাঁর পরিবারের প্রতি মমতা ও উদ্বেগের কথা। তাঁর বর্ণনায় আমরা দেখতে পাই ২১শে ফেব্রুয়ারির ঘটনার প্রতিচ্ছবি, যখন ঢাকায় ভাষা আন্দোলনের মিছিলে গুলি চালানোর খবর তাঁকে ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন করে তোলে। এই লেখায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তা, আপসহীন মনোভাব এবং স্বাধীনতা ও ন্যায়ের প্রতি তাঁর অগাধ বিশ্বাসের প্রমাণ মেলে। তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকদের নিপীড়নের পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধুর এই অসাধারণ আত্মজীবনী মূলত দেশের প্রতি তাঁর নিঃস্বার্থ ভালোবাসার এবং নিরলস সংগ্রামের উদাহরণ। ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ তাঁর আত্মজীবনী ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ থেকে সংকলিত হয়েছে, যা আমাদের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এবং বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন ও সংগ্রামের এক অমূল্য স্মৃতিচারণ।
বায়ান্নর দিনগুলো মূলভাব (বড় করে)
শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনসংগ্রামের কাহিনীতে ধরা পড়ে এক অদম্য বাঙালির গল্প। বাংলার মানুষকে তাদের ভাষা ও স্বাধীনতার অধিকারের জন্য পথে নামতে দেখেছেন শেখ মুজিব, আর নিজেকে সেভাবেই উত্সর্গ করেছেন।
শুরুর দিকে শেখ মুজিব ও তার সহযোদ্ধা মহিউদ্দিনকে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলায় আটক করা হয়। ফরিদপুর জেলে নেয়া হয় তাদের। প্রতিটি মুহূর্তে তাদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করা হয়, প্রলোভন আর হুমকি দিয়ে। কিন্তু শেখ মুজিব অটল ছিলেন, কেননা তার লড়াই ছিল শুধুই নিজের জন্য নয়, ছিল দেশের মানুষের জন্য। তিনি বুঝেছিলেন, যদি অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেন, তবে তার মতো মানুষও হারিয়ে যাবে, আর দেশের মানুষকেও হার মানতে হবে। অনশন ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিয়ে শেখ মুজিব প্রমাণ করেন যে তিনি জীবন দিয়েও তার অবস্থানে অবিচল থাকতে প্রস্তুত। জেল কর্তৃপক্ষের আপ্রাণ চেষ্টা, নল দিয়ে জোর করে খাবার ঢোকানো — এসব তার শরীরে প্রচণ্ড কষ্ট দিলেও, তার আত্মা ছিল একদম অটুট। তখনকার প্রতিকূল পরিবেশেও তার মনে ছিল একটাই কথা — বাংলার মানুষ যেন ন্যায়বিচার পায়, ভাষার সম্মান পায়।
এদিকে, ঢাকায় ছাত্ররা ভাষার দাবিতে রাস্তায় নামছেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির সেই ঐতিহাসিক দিন। পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান কিছু সাহসী ছাত্র, যাদের রক্তে রঞ্জিত হয় ঢাকা। এই খবর যখন শেখ মুজিবের কাছে পৌঁছায়, তখন তিনি মানসিকভাবে আরও দৃঢ় হন। তিনি উপলব্ধি করেন, এ লড়াই কেবল তার নয়, পুরো জাতির সংগ্রাম। তার মুক্তির দাবি জানিয়ে ফরিদপুরের মানুষ যখন রাস্তায় নামলেন, তখন জেলখানার ভিতরে সেই আওয়াজ এসে শেখ মুজিবের মনোবল আরও বাড়িয়ে দেয়। তিনি বুঝতে পারেন, মানুষ তাকে এবং তার সংগ্রামকে কতটা গভীরভাবে সমর্থন করছে। এই জনসমর্থন তাকে জীবনের প্রতি আরও আশাবাদী করে তোলে। কিছুদিনের মধ্যে, সরকারের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবের মুক্তির আদেশ আসে। জেলখানা থেকে বেরিয়ে আসার সময় তার শরীর ক্ষীণ, কিন্তু চোখে ছিল সেই একই অগ্নি। বাড়ি ফিরে স্ত্রী আর সন্তানের মুখ দেখে তিনি আবার যেন নিজেকে ফিরে পেলেন। তিনি বুঝলেন, তার জীবনের সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি; বরং এটি কেবল শুরু। ভবিষ্যতের জন্য তিনি আরও বড় লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে থাকেন।
শেখ মুজিবের জীবনযুদ্ধের এই কাহিনী বাংলার মাটি, ভাষা এবং সংস্কৃতির জন্য তার নিঃস্বার্থ ত্যাগের প্রমাণ। বাঙালির ইতিহাসের প্রতিটি বাঁকে, তার এই লড়াই আজও অনুপ্রেরণার মশাল হয়ে জ্বলছে। তার এই লড়াই যেন আমাদের জানিয়ে দেয়, যখন মানুষের শক্তি ও সাহস একত্র হয়, তখন কোনো বাধাই তাদের রুখতে পারে না।
Related Posts
- কুহেলী উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী ব্যাখ্যা – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- আমি কিংবদন্তির কথা বলছি কবিতার ব্যাখ্যা ও মূলভাব – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- আঠারো বছর বয়স কবিতার মূলভাব – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- বিদ্রোহী কবিতার ব্যাখ্যা লাইন বাই লাইন -একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন -একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন উত্তর – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- সোনার তরী কবিতার মূলভাব – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- সোনার তরী কবিতার লাইন বাই লাইন ব্যাখ্যা ও মূলভাব – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর -একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- আমি কিংবদন্তির কথা বলছি জ্ঞানমূলক প্রশ্ন উত্তর -একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা