ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার ব্যাখ্যা – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা

১৯৬৯ সালে পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে পূর্ববাংলার মানুষের যে বিশাল গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল, সেই মুহূর্তকে ধরে রাখার জন্যই এই কবিতা। এই পোস্টে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার ব্যাখ্যা – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম।

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার ব্যাখ্যা

কবিতার ব্যাখ্যা ঠিকভাবে বুঝতে আগে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার মূলভাব পড়ে নিন। শামসুর রাহমানের “ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯” কবিতার ব্যাখ্যা:

“আবার ফুটেছে দ্যাখো কৃষ্ণচূড়া থরে থরে শহরের পথে
কেমন নিবিড় হয়ে।”
কবিতার শুরুতেই কবি কৃষ্ণচূড়া ফুলের কথা বলেছেন, যা শহরের পথে পথে ফুটে উঠেছে। এখানে কৃষ্ণচূড়ার উজ্জ্বল লাল রঙ যেন শহিদের রক্তের রং, যা আমাদের অতীত সংগ্রামের কথা মনে করিয়ে দেয়। এই ফুলগুলোর নিবিড় উপস্থিতি আমাদের চেতনার গভীরে গিয়ে পৌঁছায়।

“কখনো মিছিলে কখনো-বা
একা হেঁটে যেতে যেতে মনে হয়—ফুল নয়, ওরা
শহিদের ঝলকিত রক্তের বুদ্বুদ, স্মৃতিগন্ধে ভরপুর।”
কবি বলছেন, শহরের পথে পথে কৃষ্ণচূড়ার গাছের নিচে দাঁড়ালে মনে হয় যেন মিছিলের অংশ হয়ে গেছি। এই ফুলগুলো শহিদদের রক্তের প্রতীক, যা তাদের আত্মত্যাগের স্মৃতিকে জাগ্রত রাখে।

“একুশের কৃষ্ণচূড়া আমাদের চেতনারই রং।”
একুশে ফেব্রুয়ারির শহিদদের রক্ত আমাদের চেতনার রঙ হয়ে উঠেছে। এই কৃষ্ণচূড়া যেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রতিফলিত করছে।

“এ রঙের বিপরীত আছে অন্য রং,
যে-রং লাগে না ভালো চোখে, যে-রং সন্ত্রাস আনে
প্রাত্যহিকতায় আমাদের মনে সকাল-সন্ধ্যায়-
এখন সে রঙে ছেয়ে গেছে পথ-ঘাট, সারা দেশ
ঘাতকের অশুভ আস্তানা।”
কবি এখানে সেই বিপরীত রঙের কথা বলছেন, যা আমাদের ভালো লাগে না। এটি আসলে অত্যাচার এবং সন্ত্রাসের প্রতীক। এই রংটি ঘাতক এবং শোষকদের প্রতিনিধিত্ব করে, যারা দেশকে তাদের খেলার মাঠে পরিণত করেছে।

“আমি আর আমার মতোই বহু লোক
রাত্রি-দিন ভূলুণ্ঠিত ঘাতকের আস্তানায়, কেউ মরা, আধমরা কেউ,
কেউ বা ভীষণ জেদি, দারুণ বিপ্লবে ফেটে পড়া।”
এখানে কবি তাদের কথা বলেছেন, যারা নির্যাতিত, কেউ মরেছে, কেউ আধমরা। তবুও কিছু মানুষ আছে, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ফেটে পড়ছে। তারা ঘাতকদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, বিপ্লবের ডাক দিচ্ছে।

“চতুর্দিকে মানবিক বাগান, কমলবন হচ্ছে তছনছ।”
মানবিক মূল্যবোধের বাগান যেন তছনছ হয়ে গেছে। সমাজের ভালো দিকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ঠিক যেন একটি ফুলের বাগানকে ধ্বংস করা হয়েছে।

“বুঝি তাই উনিশশো উনসত্তরেও
আবার সালাম নামে রাজপথে, শূন্যে তোলে ফ্ল্যাগ,
বরকত বুক পাতে ঘাতকের থাবার সম্মুখে।”
কবি বলছেন যে, আবারো সালাম আর বরকতের মতো মানুষরা রাজপথে নেমে এসেছে, পতাকা হাতে তোলা হয়েছে। বরকত বুক পেতে দিয়েছে ঘাতকদের সামনে, যেন তারা আমাদের স্বাধীনতার পথ তৈরি করতে পারে।

“সালামের চোখ আজ আলোচিত ঢাকা,
সালামের মুখ আজ তরুণ শ্যামল পূর্ব বাংলা।”
সালাম এখন শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি নন, তিনি সমগ্র বাংলাদেশের যুবকদের প্রতীক। তার চোখ যেন ঢাকার আলোকিত পথের প্রতিচ্ছবি। তার মুখ যেন পুরো পূর্ব বাংলার তরুণদের সাহসিকতা।

“দেখলাম রাজপথে, দেখলাম আমরা সবাই জনসাধারণ
দেখলাম সালামের হাত থেকে নক্ষত্রের মতো
ঝরে অবিরত অবিনাশী বর্ণমালা।”
কবি বলছেন, সারা বাংলাদেশ সালামের অবিনাশী চেতনার বর্ণমালা দেখছে। সেই সংগ্রামী চেতনা এখন দেশের প্রতিটি মানুষকে অনুপ্রাণিত করছে।

“আর বরকত বলে গাঢ় উচ্চারণে
এখনো বীরের রক্তে দুঃখিনী মাতার অশ্রুজলে
ফোটে ফুল বাস্তবের বিশাল চত্বরে
হৃদয়ের হরিৎ উপত্যকায়।”
শেষের এই অংশে, কবি বরকতের মাধ্যমে সব মাতাদের কথা বলছেন যারা তাদের সন্তান হারিয়েছে, কিন্তু তবুও তাদের চোখের জল আর বীরদের রক্তের মধ্যে দিয়ে বাস্তবতার ফুল ফুটে ওঠে। এই বীরত্ব যেন আমাদের হৃদয়ের গভীর সবুজে এক বিশাল চত্বর তৈরি করে।

Related Posts

Leave a Comment