আঠারো বছর বয়স কবিতার ব্যাখ্যা – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা

সুকান্ত ভট্টাচার্যের “আঠারো বছর বয়স” কবিতাটি আঠারো বছর বয়সের সাহস, তেজ, এবং উদ্দীপনাকে কেন্দ্র করে লেখা। এই পোস্টে আঠারো বছর বয়স কবিতার ব্যাখ্যা – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম।

আঠারো বছর বয়স কবিতার ব্যাখ্যা

সুকান্ত ভট্টাচার্যের “আঠারো বছর বয়স” কবিতার লাইন বাই লাইন ব্যাখ্যা:

১. “আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ
স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি,
আঠারো বছর বয়সেই অহরহ
বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি।”

এই বয়সটিকে কবি “দুঃসহ” বলেছেন, কারণ আঠারো বছরে মানুষ নিজেকে প্রমাণ করার তীব্র ইচ্ছায় সাহসী ঝুঁকি নিতে চায়। এই সময়ে তাদের ভেতর দুঃসাহস উঁকি দেয়, যা তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে এবং জীবনের বড়ো চ্যালেঞ্জ নিতে প্রেরণা জোগায়।

২. “আঠারো বছর বয়সের নেই ভয়
পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাধা,
এ বয়সে কেউ মাথা নোয়াবার নয়—
আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা।”

এই লাইনগুলোতে কবি তরুণদের ভয়হীনতা এবং দৃঢ়তাকে তুলে ধরেছেন। আঠারো বছর বয়সে কেউই মাথা নোয়ায় না এবং যে কোনো বাধাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিতে চায়। এ বয়স কখনো কান্না বা দুর্বলতাকে মেনে নেয় না।

৩. “এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য
বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে,
প্রাণ দেওয়া-নেওয়া ঝুলিটা থাকে না শূন্য
সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে।”

এখানে সুকান্ত আঠারো বছরের উদ্দীপনা ও ত্যাগের ক্ষমতার কথা বলেছেন। এই বয়সের মানুষ জানে কীভাবে আত্মত্যাগ করতে হয় এবং তীব্র গতিতে এগিয়ে যেতে হয়। তারা নিজেদের জীবনকে শপথের মাধ্যমে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকে।

৪. “আঠারো বছর বয়স ভয়ংকর
তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা,
এ বয়সে প্রাণ তীব্র আর প্রখর
এ বয়সে কানে আসে কত মন্ত্রণা।”

এই বয়সটিকে কবি “ভয়ংকর” বলেছেন, কারণ আঠারো বছরে মানুষের প্রাণশক্তি যেমন তীব্র, তেমনই তা অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করার ক্ষমতাও রাখে। এই বয়সে নানা সংকটময় আহ্বান কানে আসে, যা তরুণদের ভেতরের জেদকে আরও বাড়িয়ে দেয়।

৫. “আঠারো বছর বয়স যে দুর্বার
পথে প্রান্তরে ছোটায় বহু তুফান,
দুর্যোগে হাল ঠিকমতো রাখা ভার
ক্ষত-বিক্ষত হয় সহস্ৰ প্রাণ।”

আঠারো বছর বয়সের দুঃসাহসকে কবি দুর্বার তুফানের সঙ্গে তুলনা করেছেন, যা বাধাহীনভাবে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে এ বয়সে বিপদের মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়ে, আর অনেক প্রাণ ক্ষতবিক্ষতও হয়, তবুও তারুণ্যের আবেগ থেমে থাকে না।

৬. “আঠারো বছর বয়সে আঘাত আসে
অবিশ্রান্ত; একে একে হয় জড়ো,
এ বয়স কালো লক্ষ দীর্ঘশ্বাসে
এ বয়স কাঁপে বেদনায় থরোথরো।”

এই বয়সে মানুষ একের পর এক আঘাত পায়, আর এর ফলে তাদের দীর্ঘশ্বাস ও বেদনা জমতে থাকে। কবি এই বয়সের যন্ত্রণাকে এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, যেন এই বয়সটি কান্না এবং বেদনায় পূর্ণ এক জীবনপর্যায়।

৭. “তবু আঠারোর শুনেছি জয়ধ্বনি,
এ বয়স বাঁচে দুর্যোগে আর ঝড়ে,
বিপদের মুখে এ বয়স অগ্রণী
এ বয়স তবু নতুন কিছু তো করে।”

এখানে সুকান্ত তরুণদের বিজয়মুখরতার কথা বলেছেন। তাদের সাহসের কারণে তারা বিপদ এবং ঝড়ের মধ্যে থেকেও নিজেদের স্থির রাখতে পারে। এই বয়সের মানুষ বিপদের সময়ে এগিয়ে আসে এবং নতুন কিছু করার স্বপ্ন দেখে।

৮. “এ বয়স জেনো ভীরু, কাপুরুষ নয়
পথ চলতে এ বয়স যায় না থেমে,
এ বয়সে তাই নেই কোনো সংশয়-
এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে।”

কবির কাছে আঠারো বছর বয়স কখনো কাপুরুষ হতে পারে না। তাদের চলার পথে কোনো বাধাই তাদের থামাতে পারে না। এই বয়সে মানুষের মনে থাকে নির্ভীক আত্মবিশ্বাস। কবির ইচ্ছা, এই সাহসিকতার বয়স দেশের বুকে আরও বেশি করে প্রবাহিত হোক, যেন নতুন প্রজন্ম দেশের অগ্রগতিতে অবদান রাখতে পারে।

এই কবিতায় সুকান্ত আঠারো বছর বয়সের সাহসিকতা ও দৃঢ়তাকে দেশের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে তুলে ধরেছেন। তাঁর মনে বিশ্বাস, এই বয়সের তরুণরাই সমাজের সব বাধা অতিক্রম করে নতুন ভবিষ্যৎ গড়বে।

Related Posts

Leave a Comment