‘ঐকতান’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনের শেষপ্রান্তে এসে নিজের সাহিত্যকর্ম এবং কবিসত্তার সীমাবদ্ধতা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেছেন। এই পোস্টে ঐকতান কবিতার মূলভাব সহজ ভাষায়- একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম।
Table of Contents
ঐকতান কবিতার মূলভাব সংক্ষেপে
“ঐকতান” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জন্মদিনে’ কাব্যগ্রন্থের ১০ সংখ্যক কবিতা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ঐকতান’ কবিতাটি তার জীবনের শেষপ্রান্তে লেখা এক ধরনের আত্মসমালোচনা ও আত্মোপলব্ধির প্রকাশ। এটি তার ‘জন্মদিনে’ কাব্যগ্রন্থের ১০ সংখ্যক কবিতা, যা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখে। কবি এখানে নিজের সীমাবদ্ধতা ও অপূর্ণতা নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি উপলব্ধি করেছেন যে, এই বিশাল পৃথিবীর অনেক কিছুই তিনি জানতে বা দেখতে পারেননি। সমাজের অনেক সাধারণ মানুষের জীবন, যেমন—চাষি, তাঁতি, জেলে, যারা সমাজের মূল ভিত্তি, তাদের জীবনের সুর তার কবিতায় পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়নি। তিনি সমাজের উচ্চস্থান থেকে এই সাধারণ মানুষের জীবনকে পুরোপুরি বুঝতে পারেননি। কবি মনে করেন, জীবনের সাথে সরাসরি সংযোগ না থাকলে সৃষ্টিশীলতা কৃত্রিম হয়ে যায়। তাই তিনি ভবিষ্যতে এমন একজন কবির আগমন আশা করেছেন, যিনি এই সাধারণ মানুষের জীবন ও যন্ত্রণা কবিতায় তুলে ধরবেন এবং তাদের অনুভূতিকে শিল্পে প্রকাশ করবেন।
ঐকতান কবিতার মূলভাব সহজ ভাষায়
‘ঐকতান’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনের শেষবেলায় এসে নিজের সীমাবদ্ধতা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। তিনি উপলব্ধি করেছেন, এত বড় পৃথিবীতে কত কিছুই না তিনি জানেন না, কত মানুষের জীবন তাঁর অজানা রয়ে গেছে। পৃথিবীর এই বিশাল আয়োজনে তিনি তো কেবল ছোট্ট এক কোণে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এই অপরিসীম অজানার মাঝে তাঁর সাহিত্যজীবন কিছুটা সীমিতই থেকে গেছে। কবি এখানে বলেন, শ্রমজীবী মানুষের জীবনের সাথে তিনি একেবারে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত হতে পারেননি। চাষি যখন মাঠে হাল চষছে, তাঁতি যখন তাঁতে কাপড় বুনছে, কিংবা জেলে যখন নদীতে জাল ফেলছে, তাদের জীবনের বাস্তবতা থেকে তিনি অনেকটাই দূরে ছিলেন। তিনি সমাজের উচ্চস্তরে বসে, সংকীর্ণ জানালার মতো এক খণ্ডিত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তাদের জীবনকে দেখেছেন। এই দেখাটা পুরোপুরি না হওয়ায় তাঁর কবিতায় সেই জীবনের সত্যিকার রূপটা উঠে আসেনি।
রবীন্দ্রনাথ কবিতায় স্বীকার করেছেন, তাঁর সাহিত্যকর্মে একটা ফাঁক থেকে গেছে। যদিও বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতি নিয়ে, বিভিন্ন বিচিত্র বিষয় নিয়ে তাঁর কবিতা লেখা, তবুও সাধারণ মানুষের জীবনের গভীর সুর পুরোপুরি ধরা পড়েনি তাঁর কাব্যে। তিনি মনে করেন, কোনো শিল্পী যদি জীবনের সাথে জীবনের ঐকতান তৈরি করতে না পারেন, তবে সেই শিল্পকর্ম পুরোপুরি সফল হয় না। এই উপলব্ধি থেকেই তিনি নিজের অপূর্ণতা মেনে নিয়েছেন। জীবনের শেষ সময়ে এসে রবীন্দ্রনাথ ভবিষ্যতের একজন কবির প্রতীক্ষা করছেন—যিনি সাধারণ মানুষের সাথে গভীর আত্মীয়তার বন্ধন গড়ে তুলবেন। সেই কবি হবে এমন একজন, যিনি শ্রমজীবী মানুষের জীবনের অন্তর্গত কষ্ট, সুখ, সংগ্রামকে কাব্যে ফুটিয়ে তুলবেন। যিনি সত্যিকারের মানুষের জীবন ও অনুভূতির সঙ্গে ঐকতান তৈরি করবেন।
এই কবিতায় রবীন্দ্রনাথ শুধু নিজের সীমাবদ্ধতার কথাই বলেননি, বরং বাংলা সাহিত্যের একটি বড় সীমাবদ্ধতার কথাও উল্লেখ করেছেন—সাধারণ মানুষের জীবন যে এতদিন সাহিত্যে উপেক্ষিত ছিল, সেই বিষয়টিকে তুলে ধরেছেন। তিনি আশা করেছেন, একদিন এমন একজন কবি আসবেন, যিনি সেই অবজ্ঞিত মানুষের অনুভূতি, যন্ত্রণা এবং স্বপ্নকে ভাষা দেবেন।
Related Posts
- বিদ্রোহী কবিতার ব্যাখ্যা লাইন বাই লাইন -একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- মাসি পিসি গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর-একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- সোনার তরী কবিতার মূলভাব – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার মূলভাব – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- বায়ান্নর দিনগুলো সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (জ্ঞানমূলক প্রশ্ন উত্তর)
- রেইনকোট গল্পের মূলভাব – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- বায়ান্নর দিনগুলো জ্ঞানমূলক প্রশ্ন উত্তর (সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন)
- আমাদের লোকশিল্প বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (MCQ)
- Paragraph The Wonders of The Internet (বাংলা অর্থসহ)
- ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর -একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা