তাহারেই পড়ে মনে কবিতার ব্যাখ্যা ও সারমর্ম- একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা

‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় সুফিয়া কামাল এভাবে বুঝাতে চেয়েছেন যে, জীবনে দুঃখ ও বিষাদের কারণে আনন্দের সৌন্দর্য কিভাবে ম্লান হয়ে যেতে পারে। এই পোস্টে তাহারেই পড়ে মনে কবিতার ব্যাখ্যা ও সারমর্ম- একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম।

তাহারেই পড়ে মনে কবিতার সারমর্ম

“তাহারেই পড়ে মনে” কবিতাটি ১৯৩৫ সালে ‘মাসিক মোহাম্মদী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এই কবিতায় প্রকৃতি এবং মানবমনের সম্পর্ক গভীরভাবে ফুটে উঠেছে। সাধারণত, প্রকৃতির সৌন্দর্য মানুষের আনন্দের উৎস হলেও কবির মন যদি শোক বা দুঃখে ভারাক্রান্ত থাকে, তাহলে সেই সৌন্দর্য তার কাছে পৌঁছাতে পারে না। কবিতায় কবির ব্যক্তিগত জীবনের দুঃখ প্রকাশিত হয়েছে, বিশেষ করে স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেনের আকস্মিক মৃত্যুর পর কবির অনুভূত শূন্যতা। এই শোকের কারণে কবির মনের মধ্যে এক বিষণ্ণতা সৃষ্টি হয়েছে। বসন্ত এলেও, কবির অন্তরে শীতের করুণ বিদায়ের বেদনা বিরাজমান।

তাহারেই পড়ে মনে কবিতার ব্যাখ্যা

নিচে তাহারেই পড়ে মনে কবিতার ব্যাখ্যা লাইন বাই লাইন দেয়া হলঃ

“হে কবি, নীরব কেন ফাগুন যে এসেছে ধরায়, বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায়?”
এখানে কবি অন্য একজন কবিকে প্রশ্ন করছেন। তিনি জানতে চাইছেন, বসন্ত এসেছে কিন্তু কেন সে কিছু বলতে বা লিখতে পারছে না। কবির মনে যেটা চলছে, সেটার প্রতি তার উদ্বেগ প্রকাশ পায়।

“কহিল সে স্নিগ্ধ আঁখি তুলি- দক্ষিণ দুয়ার গেছে খুলি?”
স্নিগ্ধ চোখের কবি উত্তর দেন। তিনি জানতে চান, দক্ষিণ দিকে কি বসন্তের কোনো চিহ্ন দেখা যাচ্ছে? এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে, কবির মনে কিছু একটা ঘটেছে।

“বাতাবি নেবুর ফুল ফুটেছে কি? ফুটেছে কি আমের মুকুল?”
এখানে কবি প্রশ্ন করছেন, কি কি ফুল ফুটেছে। তিনি বিশেষভাবে বাতাবি লেবু এবং আমের ফুলের কথা উল্লেখ করছেন, যা বসন্তের সৌন্দর্যকে নির্দেশ করে।

“দখিনা সমীর তার গন্ধে গন্ধে হয়েছে কি অধীর আকুল?”
কবি জানতে চান, দক্ষিণ বাতাস কি ফুলের গন্ধে আকুল হয়ে উঠেছে? এখানে প্রকৃতির সৌন্দর্য ও মিষ্টি গন্ধের কথা বলা হচ্ছে।

“এখনো দেখনি তুমি?” কহিলাম, “কেন কবি আজ এমন উন্মনা তুমি? কোথা তব নব পুষ্পসাজ?”
কবি আবার প্রশ্ন করছেন, কেন স্নিগ্ধ চোখের কবি এত বিমূঢ়? তিনি জানেন, বসন্তের সৌন্দর্য তার চারপাশে রয়েছে কিন্তু কেন সে সেগুলি অনুভব করছে না।

“কহিল সে সুদূরে চাহিয়া- অলখের পাথার বাহিয়া”
এখানে কবি বলেন যে, সে দূরে তাকিয়ে আছে এবং কিছু অদৃশ্য সংকেতের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।

“তরী তার এসেছে কি? বেজেছে কি আগমনী গান?”
কবি জানতে চান, কি কোন নৌকা এসেছে? বসন্তের আগমন সম্পর্কে কি কোনো গান বেজে উঠেছে? এ প্রশ্নগুলো বসন্তের আগমনের প্রতীক।

“ডেকেছে কি সে আমারে? শুনি নাই, রাখি নি সন্ধান।”
কবি জানান, তিনি বসন্তের কোনো ডাক শুনতে পাননি এবং এর প্রতি তার কোনো খোঁজ নেই।

“কহিলাম, “ওগো কবি! রচিয়া লহ না আজও গীতি, বসন্ত-বন্দনা তব কণ্ঠে শুনি- এ মোর মিনতি।”
কবি অনুরোধ করেন, বসন্তের গানের রচনা করতে। তিনি চান, স্নিগ্ধ চোখের কবি যেন বসন্তের বন্দনায় সুর মেলান।

“কহিল সে মৃদু মধু-স্বরে- নাই হলো, না হোক এবারে-”
স্নিগ্ধ চোখের কবি জানান, এবারে গান না গাইলেও চলবে। এখানে তার বিমর্ষতা স্পষ্ট।

“আমারে গাহিতে গান, বসন্তেরে আনিতে বরিয়া- রহেনি, সে ভুলেনি তো, এসেছে তা ফাগুনে স্মরিয়া।”
কবি জানান, তিনি বসন্তের গান গাইতে চান কিন্তু মনে করছেন যে, বসন্তকে আনতে পারেননি।

“কহিলাম “ওগো কবি, অভিমান করেছ কি তাই?”
কবি আবার প্রশ্ন করেন, তিনি কি অভিমান করছেন? কবি তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেন।

“যদিও এসেছে তবু তুমি তারে করিলে বৃথাই।”
স্নিগ্ধ চোখের কবি জানান, বসন্ত এসেছে কিন্তু কেন তা অগ্রাহ্য করছেন?

“কহিল সে পরম হেলায়- বৃথা কেন? ফাগুন বেলায়”
স্নিগ্ধ চোখের কবি বলেন, কেন বৃথা বোধ করছেন? বসন্তের সময় ফুল ফুটছে।

“ফুল কি ফোটেনি শাখে? পুষ্পারতি লভেনি কি ঋতুর রাজন?”
এখানে তিনি প্রশ্ন করেন, প্রকৃতিতে কি ফুল ফুটছে না?

“মাধবী কুঁড়ির বুকে গন্ধ নাহি? করে নাই অর্ঘ্য বিরচন?”
কবি বলছেন, মাধবী ফুলের গন্ধ কি নেই? প্রকৃতি কি কোন উপহার দেয়নি?

“হোক, তবু বসন্তের প্রতি কেন এই তব তীব্র বিমুখতা?”
কবি হতাশা প্রকাশ করে জানতে চান, বসন্তের প্রতি কেন এই বিমুখতা?

“কহিলাম, “উপেক্ষায় ঋতুরাজে কেন কবি দাও তুমি ব্যথা?”
কবি জানতে চান, কেন প্রকৃতির প্রতি এমন উপেক্ষা করছেন?

“কহিল সে কাছে সরে আসি- কুহেলি উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী-”
স্নিগ্ধ চোখের কবি একটু কাছে আসেন এবং বলেন, শীতের সন্ন্যাসী মাঘের মতো আমার অবস্থা।

“গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে”
তিনি বলেন, শীত চলে গেছে এবং ফুলহীন পথে চলে যাচ্ছে।

“রিক্ত হস্তে! তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোনো মতে।”
শেষ চরণে কবি জানান, তিনি শূন্য হাতে আছেন এবং তার স্মৃতি ভুলতে পারছেন না।

Related Posts

Leave a Comment