সুখী মানুষ গল্পের মূলভাব – মমতাজ উদ্দিন আহমেদ

মমতাজ উদ্দিন আহমেদের ‘সুখী মানুষ’ মূলত একটি নাটক। ছোট হওয়ার কারনে একে নাটিকাও বলে। নাটকটি বুঝিয়ে দেয় যে, প্রকৃত সুখ ধনসম্পদে নয় বরং অন্তরের প্রশান্তিতে নিহিত। এই পোস্টে মমতাজ উদ্দিন আহমেদের সুখী মানুষ গল্পের মূলভাব লিখে দিলাম।

সুখী মানুষ গল্পের মূলভাব

নাটকে মোড়ল চরিত্রটি অত্যাচারী, পাপী।। সে তার ক্ষমতা এবং ধনদৌলতের বলে সাধারণ মানুষের ওপর বরাবর অত্যাচার করেছে। প্রথম দৃশ্যে দেখা যায়, এই মোড়ল এখন অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছে আর তার আশেপাশে ছুটে বেড়াচ্ছে তারই কাছের লোকজন—আত্মীয় হাসু মিয়া আর বিশ্বস্ত চাকর রহমত। তাদের সাথে আছে কবিরাজ, যে মোড়লের নাড়ি দেখে তার রোগের গভীরতা বোঝার চেষ্টা করছে। হাসু এই সুযোগে মোড়ল সম্পর্কে কিছু কথা বলে—সে মোড়লকে একদমই পছন্দ করে না। তার কথায় উঠে আসে, কিভাবে মোড়ল সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে, অন্যের গোরু চুরি করে, ধান লুট করে ধনী হয়েছে। হাসু আশঙ্কা প্রকাশ করে, যে কবিরাজ যতই নাড়ি দেখুক না কেন, মোড়লের নিস্তার নেই। রহমত আবার এ কথায় কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারে না। সে এখনও মোড়লের প্রতি অনুগত। এদিকে কবিরাজের কথা শুনে বোঝা যায়, মোড়লের জন্য সাধারণ ওষুধে কিছু হবে না—তার মনে অনেক অশান্তি, অনেক পাপের বোঝা জমে আছে। কবিরাজ বলে, মোড়লকে বাঁচাতে গেলে একমাত্র উপায় হলো একজন সুখী মানুষের জামা। এদিকে মোড়লও মরার ভয়ে আচ্ছন্ন, হাজার টাকার বখশিশের কথা বলে সুখী মানুষের জামা আনতে তাড়াহুড়ো করতে বলে।

দ্বিতীয় দৃশ্যে রহমত আর হাসু পাঁচ গ্রাম ঘুরে বেরিয়ে পড়ে একজন সুখী মানুষের খোঁজে। কিন্তু কাহিনী মোড় নেয় যখন তারা বুঝতে পারে, প্রকৃত সুখী মানুষ পাওয়া আসলেই কতটা কঠিন। অবশেষে এক অন্ধকার বনের ধারে তারা ছোট্ট এক কুঁড়েঘরে এক কাঠুরের সঙ্গে দেখা পায়। এই লোকের কাছে কিছু নেই, তবুও সে নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষ বলে দাবি করে। তার জীবন খুবই সাদামাটা—সারা দিন কাঠ কেটে যা পায়, তাতেই তার চলে। সে এই সহজ জীবনেই খুশি। রহমত আর হাসু তার কাছে সুখী মানুষের জামার জন্য টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করে। কিন্তু অবাক হয়ে তারা জানতে পারে, লোকটির জামাই নেই। তার কোনো সম্পদ নেই, আর সে তাতেই শান্তিতে থাকে। নাটকটি এখানেই একটি গভীর বার্তা দেয়—আমরা সাধারণত ভাবি যে, ধন-সম্পদ আর আরাম-আয়েশেই সুখ আছে। কিন্তু প্রকৃত সুখ যে অন্তরের প্রশান্তিতে, তা এই কাঠুরে প্রমাণ করে দেয়।

সুখী মানুষ গল্পের মূলভাব সংক্ষেপে

নাটকের প্রথম দৃশ্যে মোড়ল চরিত্রটি একজন অত্যাচারী ও পাপী ব্যক্তি হিসেবে ফুটে ওঠে। অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় কাতরাচ্ছে সে। আর তার আশপাশে রয়েছে আত্মীয় হাসু মিয়া, বিশ্বস্ত চাকর রহমত, এবং কবিরাজ। হাসু মোড়লের কুকর্ম নিয়ে তার ক্ষোভ প্রকাশ করে—সে সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার করেছে, গরু চুরি আর ধান লুট করে ধনী হয়েছে। কবিরাজ জানায়, সাধারণ ওষুধে মোড়লের অসুখ ভালো হবে না, কারণ তার মনে অনেক পাপের বোঝা। মোড়লকে বাঁচাতে একমাত্র উপায় হলো সুখী মানুষের জামা আনা, যা তাকে পাপমুক্ত করবে। দ্বিতীয় দৃশ্যে রহমত আর হাসু একজন সুখী মানুষের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে। অবশেষে এক বনবাসী কাঠুরের দেখা পায়, যার কাছে কিছু নেই, তবুও সে নিজেকে সুখী বলে দাবি করে। রহমত ও হাসু তার কাছে জামার জন্য প্রস্তাব করলে জানা যায়, তার কোনো জামাই নেই। নাটকটি এভাবেই বুঝিয়ে দেয় যে, প্রকৃত সুখ ধনসম্পদে নয় বরং অন্তরের প্রশান্তিতে নিহিত।

Related Posts

Leave a Comment