সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ রচিত ‘একটি তুলসী গাছের কাহিনী’ গল্পে বাড়ির সামনে একটি পুরনো তুলসী গাছ ছিল। যেটিকে নিয়ে সম্পূর্ণ গল্পটি। এই পোস্টে একটি তুলসী গাছের কাহিনী গল্পের মূল বিষয়বস্তু – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম।
Table of Contents
একটি তুলসী গাছের কাহিনী গল্পের মূল বিষয়বস্তু
এই গল্পে কিছু মুসলিম উদ্বাস্তু, যারা দেশভাগের পর নতুন শহরে এসে ঠাঁই খুঁজছিল, একটি পরিত্যক্ত দোতলা বাড়িতে এসে উঠে। বাড়িটি বেওয়ারিশ মনে হলেও একসময় তারা আবিষ্কার করে উঠোনে একটি পুরনো তুলসী গাছ। গাছটি তাদের মনে করিয়ে দেয় যে, এ বাড়িটি একসময় কোনো হিন্দু পরিবারের ছিল। উদ্বাস্তুদের মধ্যে একজন গাছটি উপড়ে ফেলার কথা বলে, কিন্তু অন্যরা তাকে থামায়। তাদের এ অস্বস্তি বোঝায়, কেমন করে বাড়িটির পুরনো বাসিন্দাদের ছায়া যেন তাড়া করছে। কেউ কেউ গোপনে গাছের যত্ন নিতেও শুরু করে। সেদিন থেকে তাদের মনোভাব এবং পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। তাদের নতুন জীবনের স্বপ্নটাও ক্রমশ ম্লান হয়ে যায়, যখন তারা উপলব্ধি করে যে শুধু নতুন একটা আশ্রয়ে গিয়ে তারা তাদের অতীত ভুলতে পারছে না। পুরনো বাড়ির স্মৃতি, তুলসী গাছের প্রতীকী গুরুত্ব, সবই যেন তাদের মনে করিয়ে দেয় যে, নতুন দেশ এবং নতুন জীবন অর্জন করার মধ্যেও পুরনো সম্পর্ক এবং স্মৃতি লেগে থাকে।
একটি তুলসী গাছের কাহিনী গল্পের মূল বিষয়বস্তু বড় করে
দেশভাগের পর অনেক মুসলিম উদ্বাস্তু শরণার্থী হিসেবে কলকাতায় এসে আশ্রয় নিয়েছিল। এই উদ্বাস্তুদের মধ্যে কয়েকজন একসময় এক ছোট্ট শহর থেকে পালিয়ে এসে কলকাতার একটি পুরনো এবং পরিত্যক্ত দোতলা বাড়িতে উঠে। বাড়িটি দেখতে অনেক পুরনো এবং বেওয়ারিশ মনে হলেও তারা জানতো না যে, এখানে একসময় হিন্দু পরিবার বাস করতো।
বাড়ির সামনে একটি পুরনো তুলসী গাছ ছিল। প্রথম প্রথম, এই গাছের দিকে তাদের বিশেষ নজর ছিল না। তবে একদিন তারা গাছের নীচে বসে গল্প করতে করতে সেই গাছটির দিকে নজর দেয়। গাছটি তাদের মনে করিয়ে দেয় যে, এই বাড়িটি একসময় গ্রীষ্মের গরমে গৃহস্থালির পরিচিত দৃশ্যের অংশ ছিল। গাছটির নীচে যে পবিত্রতা ছিল, সেটা যেন আজও সেখানে বিরাজমান।
এক উদ্বাস্তু যুবক, যার নাম সেলিম, গাছটিকে উপড়ে ফেলার প্রস্তাব দিল। সে বলল, “আমরা নতুন জীবন শুরু করতে চাই, পুরনো স্মৃতিগুলো আমাদের পিছনে টেনে ধরছে।” কিন্তু তার কথায় অন্যরা সম্মত হয়নি। তারা বলল, “এটি একটি গাছ, তবে এটি আমাদের অতীতের সঙ্গে জড়িত। আমরা এটিকে উপড়ে ফেললে, আমাদের অতীতকে সম্পূর্ণভাবে মুছে ফেলতে পারব না।”
এই সময়, আরও এক উদ্বাস্তু মহিলার মনে পড়ে গেল তাদের শৈশবের দিনগুলোর কথা। সে বলল, “আমি শুনেছি, তুলসী গাছ পবিত্র। এটি আমাদের পরিবারে সদা হাসিখুশি রাখত। আমাদের উচিত এর যত্ন নেওয়া।” অন্যরা সম্মত হলো। তারা গাছটির পরিচর্যা শুরু করল। গাছটির চারপাশে তারা কিছু ফুলের গাছও লাগাল।
যতদিন যায়, গাছটি আরও বেশি সবুজ হয়ে ওঠে। উদ্বাস্তুদের মনেও এক ধরনের শান্তি বিরাজ করতে শুরু করে। তারা বুঝতে পারে, পুরনো বাড়ির স্মৃতি এবং গাছটির সঙ্গে তাদের জীবন জড়িয়ে আছে। তারা দেখতে পায় যে, শুধুমাত্র নতুন বাড়িতে উঠেই তারা নিজেদের অতীত ভুলতে পারবে না, বরং পুরনো সম্পর্ক, স্মৃতি, এবং প্রথার গুরুত্ব তাদের জীবনে অমলিন হয়ে থাকবে।
তুলসী গাছটি তাদের কাছে একটা প্রতীক হয়ে দাঁড়াল—একটি নতুন জীবন শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে তারা নিজেদের শিকড়, সংস্কৃতি এবং অতীতকে ভুলে যেতে পারবে না। এই গাছটি তাদের ঐক্য, সহানুভূতি এবং স্মৃতির প্রতীক হয়ে ওঠে।
Related Posts
- আঠারো বছর বয়স কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর -একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- অপরিচিতা গল্পের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর (জ্ঞানমূলক প্রশ্ন) – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- রেইনকোট গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর -একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- আমি কিংবদন্তির কথা বলছি অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর -একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- আমার পথ প্রবন্ধের মূলভাব সহজ ভাষায় – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- রেইনকোট গল্পের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- সোনার তরী কবিতার লাইন বাই লাইন ব্যাখ্যা ও মূলভাব – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতার মূলভাব – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা
- আঠারো বছর বয়স কবিতার ব্যাখ্যা – একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা